ঢাকা-সিলেট সড়কপথে ছয় লেন ও চার লেনের চলমান প্রকল্পের কারণে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা -সংবাদ
ঢাকা থেকে সিলেট পথে ছয় লেন ও চার লেনের দুটি বৃহৎ প্রকল্প চললেও সড়কে প্রতিদিনের যানজট, ভাঙাচোরা ও দীর্ঘ প্রকল্পজটিলতার ফলে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বাড়ছে। নির্মাণকাজের ধীরগতি, ভূমি অধিগ্রহণ ঝামেলা ও মাঝপথে কয়েক মাসের নির্মাণ বিরতি- এসব কারণে একাধিক অংশে চলাচল অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।
ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা; কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা; চলমান কাজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০.৫৮ কিলোমিটার। ছয় লেন প্রকল্পে প্রতিবেদনের সময়কে পর্যন্ত আনুমানিক অগ্রগতি মাত্র ১৫-১৬%; চার লেন প্রকল্পে কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী প্রায় ৬০% কাজ শেষ। সরকারি পরিবর্তনের পর চার লেন প্রকল্প প্রায় তিন মাস স্থগিত ছিল; সেই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকশ’ কর্মী দেশে ফেরায় কাজ বিলম্বিত হয়। নির্মাণকাজের কারণে নিয়মিত রুট সংস্কার বেকায়দায় পড়ে; ফলে পুরনো সড়কেও বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ ও জমে থাকা কাদায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।
সাধারণত ঢাকা-সিলেট রুটে গাড়ি কিংবা বাসে যাত্রা ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা; বাস্তবতায় এখন অনেক ক্ষেত্রে সময় দ্বিগুণ বা ততোধিক লাগছে। নির্মাণ, মাটিভরাট, চালান রাখা ও বৃষ্টির সঙ্গে জমে থাকা কাদার কারণে গাড়ির গতি ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে; বিশেষত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল বিশ্বরোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে প্রতিদিন কঠোর জ্যাম দেখা যায়। বড় উৎসবকালে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়লে একই রুট পেরোতে ১৬-১৮ ঘণ্টাও লেগে যায় বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন।
ভোগান্তির ওপরে আরও সমস্যা যোগ হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা, বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গাড়িতে আটকে থেকে কষ্ট পাচ্ছেন; এক সময়ের তুলনায় ঢাকা-সিলেট রুটে বিমান ভাড়াও বাড়ার খবর আছে, কারণ ট্রেন/বাসে প্রশস্ত সিট পাওয়া না গেলে মানুষ বিমানকেই বেছে নিচ্ছেন।
প্রকল্পের দেরির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, সরকারি পর্যায়ে পরিবর্তনজনিত বিরতি ও বিদেশি ঠিকাদার কর্মীদের অপ্রত্যাশিত প্রস্থান। একাধিক জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ভরাট ও রাস্তার নির্মাণকাজ ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়া চলমান বড় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে সেই সড়কে দৈনন্দিন জরুরি সংস্কারও স্থগিত রাখা হয়েছে ফলে পুরনো অংশগুলোতে দ্রুতভাবে গর্ত তৈরি হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরনো সড়ককে পুরোপুরি আলাদা করে বাড়তি ব্যয় করা নিরাপদ নয়, তাছাড়া প্রকল্পটি নতুন রূপে পুনঃনির্মাণ হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কিছু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জট কাটতে শুরু করেছে এবং কাজ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে; তবু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় আছে এবং প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভাঙাচোরা পথ ও কাদায় গতি কমার ফলে ট্রাফিকের ঘনত্ব বাড়ছে; চাকার বিপরীতে অস্থিরতা বাড়ায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দীর্ঘ সময় সড়কে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের দৈনন্দিন কর্মব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে; ব্যবসায়ী ও পথচারীর সময়-খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রেলপথে ভর্তুকি না থাকায় বা অতিরিক্ত বগি না থাকায় চাপ বেড়ে
বিমান ভাড়া বাড়ছে ফলে ন্যূনতম ভ্রমণ ব্যয়ও বাড়ছে।
পরিবেশ ও পথগত বাস্তবতা
নির্মাণকাজের কারণে সড়কের একপাশে মাটি, বালু ও নির্মাণ সামগ্রী সরাসরি রাখা হচ্ছে, বৃষ্টিতে এসব মিশে গিয়ে পুরো লেন কাদাময় হচ্ছে। একাধিক স্থানে কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ চলায় সড়ক সরু হয়ে যাচ্ছে; এতে প্রতিদিনই ধরে বাড়ছে দীর্ঘজট। একই সঙ্গে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা ছোট দোকানপাটও যানজট বাড়াচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল শহরের মুদ্রণবিদ এর স্বত্বাধিকারী ও তাজপুর কলেজের অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন যে, ‘ঢাকা থেকে সিলেট যেতে যেখানে লাগার কথা ৭-৮ ঘণ্টা, সেখানে এখন সময় লাগছে অবিশ্বাস্য ১৭-১৮ ঘণ্টা! নারী, শিশু ও অসুস্থ রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে মারাত্মক কষ্ট ভোগ করছেন।’
ঢাকা-সিলেট সড়কপথে ছয় লেন ও চার লেনের চলমান প্রকল্পের কারণে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা -সংবাদ
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা থেকে সিলেট পথে ছয় লেন ও চার লেনের দুটি বৃহৎ প্রকল্প চললেও সড়কে প্রতিদিনের যানজট, ভাঙাচোরা ও দীর্ঘ প্রকল্পজটিলতার ফলে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বাড়ছে। নির্মাণকাজের ধীরগতি, ভূমি অধিগ্রহণ ঝামেলা ও মাঝপথে কয়েক মাসের নির্মাণ বিরতি- এসব কারণে একাধিক অংশে চলাচল অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।
ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা; কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা; চলমান কাজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০.৫৮ কিলোমিটার। ছয় লেন প্রকল্পে প্রতিবেদনের সময়কে পর্যন্ত আনুমানিক অগ্রগতি মাত্র ১৫-১৬%; চার লেন প্রকল্পে কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী প্রায় ৬০% কাজ শেষ। সরকারি পরিবর্তনের পর চার লেন প্রকল্প প্রায় তিন মাস স্থগিত ছিল; সেই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকশ’ কর্মী দেশে ফেরায় কাজ বিলম্বিত হয়। নির্মাণকাজের কারণে নিয়মিত রুট সংস্কার বেকায়দায় পড়ে; ফলে পুরনো সড়কেও বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ ও জমে থাকা কাদায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।
সাধারণত ঢাকা-সিলেট রুটে গাড়ি কিংবা বাসে যাত্রা ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা; বাস্তবতায় এখন অনেক ক্ষেত্রে সময় দ্বিগুণ বা ততোধিক লাগছে। নির্মাণ, মাটিভরাট, চালান রাখা ও বৃষ্টির সঙ্গে জমে থাকা কাদার কারণে গাড়ির গতি ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে; বিশেষত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল বিশ্বরোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে প্রতিদিন কঠোর জ্যাম দেখা যায়। বড় উৎসবকালে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়লে একই রুট পেরোতে ১৬-১৮ ঘণ্টাও লেগে যায় বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন।
ভোগান্তির ওপরে আরও সমস্যা যোগ হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা, বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গাড়িতে আটকে থেকে কষ্ট পাচ্ছেন; এক সময়ের তুলনায় ঢাকা-সিলেট রুটে বিমান ভাড়াও বাড়ার খবর আছে, কারণ ট্রেন/বাসে প্রশস্ত সিট পাওয়া না গেলে মানুষ বিমানকেই বেছে নিচ্ছেন।
প্রকল্পের দেরির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, সরকারি পর্যায়ে পরিবর্তনজনিত বিরতি ও বিদেশি ঠিকাদার কর্মীদের অপ্রত্যাশিত প্রস্থান। একাধিক জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ভরাট ও রাস্তার নির্মাণকাজ ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়া চলমান বড় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে সেই সড়কে দৈনন্দিন জরুরি সংস্কারও স্থগিত রাখা হয়েছে ফলে পুরনো অংশগুলোতে দ্রুতভাবে গর্ত তৈরি হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরনো সড়ককে পুরোপুরি আলাদা করে বাড়তি ব্যয় করা নিরাপদ নয়, তাছাড়া প্রকল্পটি নতুন রূপে পুনঃনির্মাণ হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কিছু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জট কাটতে শুরু করেছে এবং কাজ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে; তবু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় আছে এবং প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভাঙাচোরা পথ ও কাদায় গতি কমার ফলে ট্রাফিকের ঘনত্ব বাড়ছে; চাকার বিপরীতে অস্থিরতা বাড়ায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দীর্ঘ সময় সড়কে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের দৈনন্দিন কর্মব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে; ব্যবসায়ী ও পথচারীর সময়-খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রেলপথে ভর্তুকি না থাকায় বা অতিরিক্ত বগি না থাকায় চাপ বেড়ে
বিমান ভাড়া বাড়ছে ফলে ন্যূনতম ভ্রমণ ব্যয়ও বাড়ছে।
পরিবেশ ও পথগত বাস্তবতা
নির্মাণকাজের কারণে সড়কের একপাশে মাটি, বালু ও নির্মাণ সামগ্রী সরাসরি রাখা হচ্ছে, বৃষ্টিতে এসব মিশে গিয়ে পুরো লেন কাদাময় হচ্ছে। একাধিক স্থানে কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ চলায় সড়ক সরু হয়ে যাচ্ছে; এতে প্রতিদিনই ধরে বাড়ছে দীর্ঘজট। একই সঙ্গে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা ছোট দোকানপাটও যানজট বাড়াচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল শহরের মুদ্রণবিদ এর স্বত্বাধিকারী ও তাজপুর কলেজের অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন যে, ‘ঢাকা থেকে সিলেট যেতে যেখানে লাগার কথা ৭-৮ ঘণ্টা, সেখানে এখন সময় লাগছে অবিশ্বাস্য ১৭-১৮ ঘণ্টা! নারী, শিশু ও অসুস্থ রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে মারাত্মক কষ্ট ভোগ করছেন।’