এক সময় চারঘাট ছিলো পাদুকা শিল্পের এক নিবেদিত প্রাণভূমি। এখানকার গলি-বসতির পরতে পরতে লুকিয়ে ছিলো স্যান্ডেল-জুতা তৈরির এক নিরলস ইতিহাস যেখানে ঘামে-গন্ধে-গোলায় তৈরি হতো হাজারো পায়ের বন্ধু। চামড়ার কাঁচা গন্ধ, আঠার ঝাঁজ, মেশিনের ঠকঠক শব্দ সব মিলিয়ে যেন একটা আলাদা জীবনই ছিলো এখানে। আজ সেই চেনা গ্রামটাই যেন নিজের ছায়ায় নিজেকে খুঁজে ফেরে। বিদেশি রাবারের চকচকে স্যান্ডেল এসে কেড়ে নিয়েছে এখানকার মাটি ছোঁয়া জুতা-স্যান্ডেলের আত্মা। দাম কম, ঝকঝকে রঙ, বাজারে সস্তা বিজ্ঞাপনসব মিলে হারিয়ে যাচ্ছে কারিগরের হাতের উষ্ণতা, হারিয়ে যাচ্ছে হাতের কাজ বলে কিছু একটার গর্ব।
গেল বছরও যেসব হাতে প্রতিদিন ১৫-২০ জোড়া স্যান্ডেল তৈরি হতো, আজ সেসব হাতে মোবাইল ফোনের স্ক্রোল, চায়ের কাপ কিংবা শুধু শূন্যতা।
এক সময়ের হাজারো কারিগরের গর্জন যেন সঙ্কুচিত হয়ে ঠেকে গেছে মাত্র কয়েকশ গলায়। কেউ মাছ ধরেন, কেউ রিকশা চালান, কেউ বা শহর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে নিজের হাতের শিল্পটা পেছনে ফেলে।
দেশি শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার এই যে নির্মম পরিণতি, এর পেছনে আছে আমদানি নীতির ফাঁক, বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতা, এবং সবচেয়ে বড় কথা দেশি পণ্যের প্রতি নিজেদের উদাসীনতা। চারঘাটের এই ক্ষদ্র শিল্পকে যদি ন্যায্য পুঁজি, আধুনিক যন্ত্রপাতি, বিপণন সহায়তা আর প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত তবে গল্পটা ভিন্ন হতো। এই পল্লীর এক কারিগর জীবন দাস বলেন, বাবার হাত ধরে শেখা কাজটা, আজ নিজেই ছেলে-মেয়েকে শিখাই না। কষ্ট লাগে। শিল্পটা চোখের সামনে মরছে, কিছু করতে পারছি না। এই কষ্ট শুধুই পেটের নাড়ীর এক শিল্পীর অন্তর্লীন যন্ত্রণা। নিজের হাতে তৈরি কিছু জিনিস মানুষের পায়ে উঠবে, রাস্তায় হাঁটবে এই যে ছোট্ট স্বপ্ন, সেটা যখন ধীরে ধীরে মরে যায়, তখন সেটা শুধুই পেশা হারানো নয় এ এক আত্মপরিচয়ের ক্ষয়।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাদুকা পল্লী এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। একসময় এই পল্লীতে ৭০-৭৫টি কারখানা। প্রতিদিন তৈরী হতো কয়েকশ জোড়া স্যান্ডেল-জুতা। এখন দিনে ৫০ জোড়া জুতা-স্যান্ডেল তৈরী হচ্ছে না বললেই চলে। এখানকার তৈরি স্যান্ডেল ও জুতা উত্তরাঞ্চালসহ দেশের নানা প্রান্তের দোকানগুলোতে সোভা পেত।
এখন কেবল বিক্রি হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে। তারপরেও ক্রেতা সঙ্কট। বিদেশী রাবারের স্যান্ডেলের দাপটে এখন চারঘাটে তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে একসময়ের কর্মব্যস্ত এই শিল্পপল্লীতে নেমে এসেছে মন্দার ছায়া। এককসময়ে যেখানে কয়েক হাজার কারিগর রাত-দিন জুতা-স্যান্ডেল তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন, এখন সেখানে নেমে এসেছে কয়েকশতে। গড়ে ২-৩শ কারিগর এখন এ পেশায় নিয়োজিত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী রাবারের স্যান্ডেলের কারণে ধুঁকছে চারঘাটের এ পাদুকা পল্লী। মেশিনে তৈরী রাবারের স্যান্ডেলের কাছে পেরে উঠতে পারছে না হাতে ও আঠা দিয়ে তৈরী চারঘাটের স্যান্ডেল। ফলে দিনকে দিনকে ব্যবসা কমছেই। চারঘাটের বড়াল নদীর পাড়ের এ পল্লীতে এখন ৭-৮ টি কারখানা চালু আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদী। সবুজেঘেরা এ গ্রামটিতে নদীর পাড় ঘিরেই রয়েছে ৭-৮টি জুতা-স্যান্ডেলের কারখানা। বাঁশ-টিনের ঘরে গড়ে উঠা এসব কারখানায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জুতা-স্যান্ডেল তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন কারিগররা। অনেকেই বাড়ির কাজের পাশাপাশি কারখানায় গিয়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করে বাড়তি টাকা আয় করেন। কারখানাগুলো জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করে থরে থরে সাজানো রয়েছে। শ্রমিকদের কাউকে মাটিতে বসে আবার কাউকে মেশিনের সামনে টুলে বসে কাজ করতে দেখা যায়। ফলে মেশিনের চিন চিন শব্দ আর কাঠের ঠক ঠক শব্দে রাত-দিন মেতে থাকে এ গ্রামটি।
একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ গড়ে দুই ডজন (২৪ জোড়া) স্যান্ডেল আর এক জোড়া জুতা তৈরী করতে পারেন। এর বিনিময়ে তাঁরা গড়ে ৬-৭শ টাকা আয় করতে পারেন। তবে এর জন্য তাঁদের সময় দিতে হয় ১২-১৪ ঘন্টা।
শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ৪০-৫০ বছর আগে এখানে ছিল ৭০-৭৫টি কারখানা। তবে দিনের পর দিন এসব কারখানা কমেই যাচ্ছে। এখন ৭-৮টিতে নেমে এসেছে। তবে ঈদের আগে মৌসুমী আরও কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠে প্রতি বছর। ঈদ মৌসুম শেষে সেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
সাকিব সরকার নামের একজন কারিগর জানান, তিনি রাজশাহী কলেজের স্নাতকের ছাত্র। কলেজ বন্ধ থাকলে বা অবসরে এসে তিনি স্যান্ডেল তৈরী করেন। এক জোড়া স্যান্ডেল তৈরী করে তিনি ২৫-৩০ টাকা। সেই হিসেবে গড়ে তিনি দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারেন।
সুজুর আলী নামের আরেকজন কারিগর বলেন, আমি জমিতেও কাজ করি। অবসর সময়ে এসে কারখানায় কাজ করি। কেউ কেউ নিয়মিতও করেন এ কাজ। তবে ১২-১৪ ঘন্টা টানা করলেও একজন দুই জোড়ার বেশি স্যান্ডেল তৈরী করতে পারেন না।
রাজ ‘সু’ কারখানার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে রাবারের স্যান্ডেল। মেশিনে তৈরী বিদেশী রাবারের স্যান্ডেল অনেকটা টেকশই। কিন্তু হাতে তৈরী চারঘাটের পাদুকা পল্লীর চামড়ার স্যান্ডেল সেউ তুলনায় কম টেকে। ফলে ভারতীয় স্যান্ডেলের চাহিদা দিন দিন বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কমছে চারঘাটের চামড়ার তৈরী স্যান্ডেলের।
তিনি আরও বলেন, রাবারের তৈরী স্যান্ডেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেইদিক থেকে চামড়ার তৈরী স্যান্ডেল শরীরের জন্য উপকারই বয়ে আনে। তার পরেও ভারতীয় স্যান্ডেলের দাপটে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারকানাগুলো। অনেক ব্যবসায়ী ঋণ-দেনার দায়ে কারখানা বন্ধ করে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন।
রাজিব ‘সু’ কারখানার মালিক সোহেল রানা বলেন, আমরা কারখানায় একসময় ৭০-৮০ জন শ্রমিক ছিল। এখন গড়ে ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। আমরা পাইকারদের চাহিদামতো আবার কখনো নিজেদেও পছন্দমতো ডিজাইনে জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করি। সেগুলো পাইকাররা কিনে নিয়ে গিয়ে দোকানে বিক্রি করেন। আমাদের লাভ হোক না হোক, পাইকাররা লাভ ছাড়া বিক্রি করেন না।
ন্যাশনাল সু কারখানার মালিক মকছেদ আলী বলেন, পাশের দেশ ভারত থেকে কমদামে ঝকঝকে ডিজাইনের স্যান্ডেল বাজারে প্রবেশ করতেই স্থানীয় কারিগরদের কষ্টার্জিত পণ্য পিছিয়ে পড়ে। ক্রেতারা ঝুঁকছেন আমদানিকৃত জুতা-স্যান্ডেলের দিকে। ফলে দেশীয় পাদুকা বাজার হারাচ্ছে ঐতিহ্য ও কদর।
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এক সময় চারঘাট ছিলো পাদুকা শিল্পের এক নিবেদিত প্রাণভূমি। এখানকার গলি-বসতির পরতে পরতে লুকিয়ে ছিলো স্যান্ডেল-জুতা তৈরির এক নিরলস ইতিহাস যেখানে ঘামে-গন্ধে-গোলায় তৈরি হতো হাজারো পায়ের বন্ধু। চামড়ার কাঁচা গন্ধ, আঠার ঝাঁজ, মেশিনের ঠকঠক শব্দ সব মিলিয়ে যেন একটা আলাদা জীবনই ছিলো এখানে। আজ সেই চেনা গ্রামটাই যেন নিজের ছায়ায় নিজেকে খুঁজে ফেরে। বিদেশি রাবারের চকচকে স্যান্ডেল এসে কেড়ে নিয়েছে এখানকার মাটি ছোঁয়া জুতা-স্যান্ডেলের আত্মা। দাম কম, ঝকঝকে রঙ, বাজারে সস্তা বিজ্ঞাপনসব মিলে হারিয়ে যাচ্ছে কারিগরের হাতের উষ্ণতা, হারিয়ে যাচ্ছে হাতের কাজ বলে কিছু একটার গর্ব।
গেল বছরও যেসব হাতে প্রতিদিন ১৫-২০ জোড়া স্যান্ডেল তৈরি হতো, আজ সেসব হাতে মোবাইল ফোনের স্ক্রোল, চায়ের কাপ কিংবা শুধু শূন্যতা।
এক সময়ের হাজারো কারিগরের গর্জন যেন সঙ্কুচিত হয়ে ঠেকে গেছে মাত্র কয়েকশ গলায়। কেউ মাছ ধরেন, কেউ রিকশা চালান, কেউ বা শহর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে নিজের হাতের শিল্পটা পেছনে ফেলে।
দেশি শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার এই যে নির্মম পরিণতি, এর পেছনে আছে আমদানি নীতির ফাঁক, বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতা, এবং সবচেয়ে বড় কথা দেশি পণ্যের প্রতি নিজেদের উদাসীনতা। চারঘাটের এই ক্ষদ্র শিল্পকে যদি ন্যায্য পুঁজি, আধুনিক যন্ত্রপাতি, বিপণন সহায়তা আর প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত তবে গল্পটা ভিন্ন হতো। এই পল্লীর এক কারিগর জীবন দাস বলেন, বাবার হাত ধরে শেখা কাজটা, আজ নিজেই ছেলে-মেয়েকে শিখাই না। কষ্ট লাগে। শিল্পটা চোখের সামনে মরছে, কিছু করতে পারছি না। এই কষ্ট শুধুই পেটের নাড়ীর এক শিল্পীর অন্তর্লীন যন্ত্রণা। নিজের হাতে তৈরি কিছু জিনিস মানুষের পায়ে উঠবে, রাস্তায় হাঁটবে এই যে ছোট্ট স্বপ্ন, সেটা যখন ধীরে ধীরে মরে যায়, তখন সেটা শুধুই পেশা হারানো নয় এ এক আত্মপরিচয়ের ক্ষয়।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাদুকা পল্লী এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। একসময় এই পল্লীতে ৭০-৭৫টি কারখানা। প্রতিদিন তৈরী হতো কয়েকশ জোড়া স্যান্ডেল-জুতা। এখন দিনে ৫০ জোড়া জুতা-স্যান্ডেল তৈরী হচ্ছে না বললেই চলে। এখানকার তৈরি স্যান্ডেল ও জুতা উত্তরাঞ্চালসহ দেশের নানা প্রান্তের দোকানগুলোতে সোভা পেত।
এখন কেবল বিক্রি হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে। তারপরেও ক্রেতা সঙ্কট। বিদেশী রাবারের স্যান্ডেলের দাপটে এখন চারঘাটে তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে একসময়ের কর্মব্যস্ত এই শিল্পপল্লীতে নেমে এসেছে মন্দার ছায়া। এককসময়ে যেখানে কয়েক হাজার কারিগর রাত-দিন জুতা-স্যান্ডেল তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন, এখন সেখানে নেমে এসেছে কয়েকশতে। গড়ে ২-৩শ কারিগর এখন এ পেশায় নিয়োজিত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী রাবারের স্যান্ডেলের কারণে ধুঁকছে চারঘাটের এ পাদুকা পল্লী। মেশিনে তৈরী রাবারের স্যান্ডেলের কাছে পেরে উঠতে পারছে না হাতে ও আঠা দিয়ে তৈরী চারঘাটের স্যান্ডেল। ফলে দিনকে দিনকে ব্যবসা কমছেই। চারঘাটের বড়াল নদীর পাড়ের এ পল্লীতে এখন ৭-৮ টি কারখানা চালু আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদী। সবুজেঘেরা এ গ্রামটিতে নদীর পাড় ঘিরেই রয়েছে ৭-৮টি জুতা-স্যান্ডেলের কারখানা। বাঁশ-টিনের ঘরে গড়ে উঠা এসব কারখানায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জুতা-স্যান্ডেল তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন কারিগররা। অনেকেই বাড়ির কাজের পাশাপাশি কারখানায় গিয়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করে বাড়তি টাকা আয় করেন। কারখানাগুলো জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করে থরে থরে সাজানো রয়েছে। শ্রমিকদের কাউকে মাটিতে বসে আবার কাউকে মেশিনের সামনে টুলে বসে কাজ করতে দেখা যায়। ফলে মেশিনের চিন চিন শব্দ আর কাঠের ঠক ঠক শব্দে রাত-দিন মেতে থাকে এ গ্রামটি।
একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ গড়ে দুই ডজন (২৪ জোড়া) স্যান্ডেল আর এক জোড়া জুতা তৈরী করতে পারেন। এর বিনিময়ে তাঁরা গড়ে ৬-৭শ টাকা আয় করতে পারেন। তবে এর জন্য তাঁদের সময় দিতে হয় ১২-১৪ ঘন্টা।
শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ৪০-৫০ বছর আগে এখানে ছিল ৭০-৭৫টি কারখানা। তবে দিনের পর দিন এসব কারখানা কমেই যাচ্ছে। এখন ৭-৮টিতে নেমে এসেছে। তবে ঈদের আগে মৌসুমী আরও কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠে প্রতি বছর। ঈদ মৌসুম শেষে সেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
সাকিব সরকার নামের একজন কারিগর জানান, তিনি রাজশাহী কলেজের স্নাতকের ছাত্র। কলেজ বন্ধ থাকলে বা অবসরে এসে তিনি স্যান্ডেল তৈরী করেন। এক জোড়া স্যান্ডেল তৈরী করে তিনি ২৫-৩০ টাকা। সেই হিসেবে গড়ে তিনি দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারেন।
সুজুর আলী নামের আরেকজন কারিগর বলেন, আমি জমিতেও কাজ করি। অবসর সময়ে এসে কারখানায় কাজ করি। কেউ কেউ নিয়মিতও করেন এ কাজ। তবে ১২-১৪ ঘন্টা টানা করলেও একজন দুই জোড়ার বেশি স্যান্ডেল তৈরী করতে পারেন না।
রাজ ‘সু’ কারখানার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে রাবারের স্যান্ডেল। মেশিনে তৈরী বিদেশী রাবারের স্যান্ডেল অনেকটা টেকশই। কিন্তু হাতে তৈরী চারঘাটের পাদুকা পল্লীর চামড়ার স্যান্ডেল সেউ তুলনায় কম টেকে। ফলে ভারতীয় স্যান্ডেলের চাহিদা দিন দিন বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কমছে চারঘাটের চামড়ার তৈরী স্যান্ডেলের।
তিনি আরও বলেন, রাবারের তৈরী স্যান্ডেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেইদিক থেকে চামড়ার তৈরী স্যান্ডেল শরীরের জন্য উপকারই বয়ে আনে। তার পরেও ভারতীয় স্যান্ডেলের দাপটে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারকানাগুলো। অনেক ব্যবসায়ী ঋণ-দেনার দায়ে কারখানা বন্ধ করে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন।
রাজিব ‘সু’ কারখানার মালিক সোহেল রানা বলেন, আমরা কারখানায় একসময় ৭০-৮০ জন শ্রমিক ছিল। এখন গড়ে ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। আমরা পাইকারদের চাহিদামতো আবার কখনো নিজেদেও পছন্দমতো ডিজাইনে জুতা-স্যান্ডেল তৈরী করি। সেগুলো পাইকাররা কিনে নিয়ে গিয়ে দোকানে বিক্রি করেন। আমাদের লাভ হোক না হোক, পাইকাররা লাভ ছাড়া বিক্রি করেন না।
ন্যাশনাল সু কারখানার মালিক মকছেদ আলী বলেন, পাশের দেশ ভারত থেকে কমদামে ঝকঝকে ডিজাইনের স্যান্ডেল বাজারে প্রবেশ করতেই স্থানীয় কারিগরদের কষ্টার্জিত পণ্য পিছিয়ে পড়ে। ক্রেতারা ঝুঁকছেন আমদানিকৃত জুতা-স্যান্ডেলের দিকে। ফলে দেশীয় পাদুকা বাজার হারাচ্ছে ঐতিহ্য ও কদর।