গ্রামবাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ হিসেবে পরিচিত মাটির খেলনা। একসময় দুর্গাপূজা এলেই শিশুদের প্রিয় উপহার ছিল এটি। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তির পথে। টাঙ্গাইলের কুমারপল্লীগুলোতে এ সময় যখন মাটির খেলনার সরগরম বাজার জমার কথা ছিল, সেখানে আজ বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।
বিগত কয়েক দশক আগেও ঈদ, বৈশাখী ও পূজার সময় মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, নৌকা, পালকি, হাতি, ঘোড়া, টিয়াপাখি, হাঁস, আম, কাঁঠালসহ নানা রঙের কারুকার্য করা খেলনা শিশুদের হাতে অনবদ্য উপহার হিসেবে বিক্রি হতো। তবে আজকের দিনে প্লাস্টিকের যুগে শিশুদের আগ্রহ প্লাস্টিকের খেলনার দিকে ঝুকে গেছে। এর ফলে মাটির মৃৎশিল্পের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
টাঙ্গাইলের কুমোরপাড়া এনায়েতপুর, বাসাখানপুর, তারুটিয়া এলাকাগুলো কুমারপল্লী হিসেবে পরিচিত। এক সময় দুর্গাপূজার আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত থাকত এসব কুমারপল্লীতে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা। কুমোরড়া এসব খেলা সামগ্রী বিক্রি করে ভাল লাভবান হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব কুমারপল্লীতে মাত্র ১৫-২০টি করে পরিবার এই শিল্পে টিকে আছেন। সেখানে এবার প্রতিমা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপূজায় শিশুদের প্রিয় উপহারগুলো বিক্রি না হওয়ার কারণে কুমোররা আর মাটির তৈরি খেলনা বানান না।
পালপাড়ার কুমার উৎপল পাল বলেন, আগে পূজার সময় প্রচুর খেলনা বানাতাম। এখন প্লাস্টিকের খেলনার কারণে বিক্রি হয় না, সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিখিল চন্দ্র পাল বলেন, মাটির খেলনা বানাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু দাম খুব কম পাওয়া যায়, বিক্রিও হয় না আগের মতো। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রতিমা রাণী নামে এক কুমারী বলেন, কয়েক বছর আগে ৫ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হতো। এখন ২ হাজার টাকাও বিক্রি হয় না। আমরা চাই এই শিল্প বাঁচুক, এজন্য সরকারের সাহায্য প্রয়োজন। ঝিনুক রাণী পাল বলেন, মাটির কাজ একসময় আমাদের সংসারের ভরসা ছিল। এখন উৎসবের সময়ও বিক্রি কম হয়। সহজ ঋণ ও বাজারজাত করার সুযোগ পেলে হয়তো আবার কাজ শুরু করা যাবে।
অন্যদিকে জামাল হোসেন, আক্তার মিয়াসহ অনেকেই জানান, আমাদের ছোটবেলায় মাটির খেলনাই ছিল ভরসা। এখন পুরনো সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে। আমাদের এখনকার ছেলে-মেয়েরা কেউ মাটির তৈরি খেলনা দিয়ে খেলতে চায় না। সে কারনেই তাদেরকে কিনে দেয়া হয় না।
মাটির খেলনা শিল্পের এই অবনতির ফলে শুধু ঐতিহ্যের ক্ষতি হচ্ছে না। বরং বহু পরিবার জীবিকার সংকটে পড়ছে। তাই দেশের গ্রামীণ শিল্পের এই অমূল্য অংশ বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা এবং নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ।
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গ্রামবাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ হিসেবে পরিচিত মাটির খেলনা। একসময় দুর্গাপূজা এলেই শিশুদের প্রিয় উপহার ছিল এটি। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তির পথে। টাঙ্গাইলের কুমারপল্লীগুলোতে এ সময় যখন মাটির খেলনার সরগরম বাজার জমার কথা ছিল, সেখানে আজ বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।
বিগত কয়েক দশক আগেও ঈদ, বৈশাখী ও পূজার সময় মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, নৌকা, পালকি, হাতি, ঘোড়া, টিয়াপাখি, হাঁস, আম, কাঁঠালসহ নানা রঙের কারুকার্য করা খেলনা শিশুদের হাতে অনবদ্য উপহার হিসেবে বিক্রি হতো। তবে আজকের দিনে প্লাস্টিকের যুগে শিশুদের আগ্রহ প্লাস্টিকের খেলনার দিকে ঝুকে গেছে। এর ফলে মাটির মৃৎশিল্পের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
টাঙ্গাইলের কুমোরপাড়া এনায়েতপুর, বাসাখানপুর, তারুটিয়া এলাকাগুলো কুমারপল্লী হিসেবে পরিচিত। এক সময় দুর্গাপূজার আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত থাকত এসব কুমারপল্লীতে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা। কুমোরড়া এসব খেলা সামগ্রী বিক্রি করে ভাল লাভবান হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব কুমারপল্লীতে মাত্র ১৫-২০টি করে পরিবার এই শিল্পে টিকে আছেন। সেখানে এবার প্রতিমা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপূজায় শিশুদের প্রিয় উপহারগুলো বিক্রি না হওয়ার কারণে কুমোররা আর মাটির তৈরি খেলনা বানান না।
পালপাড়ার কুমার উৎপল পাল বলেন, আগে পূজার সময় প্রচুর খেলনা বানাতাম। এখন প্লাস্টিকের খেলনার কারণে বিক্রি হয় না, সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিখিল চন্দ্র পাল বলেন, মাটির খেলনা বানাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু দাম খুব কম পাওয়া যায়, বিক্রিও হয় না আগের মতো। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রতিমা রাণী নামে এক কুমারী বলেন, কয়েক বছর আগে ৫ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হতো। এখন ২ হাজার টাকাও বিক্রি হয় না। আমরা চাই এই শিল্প বাঁচুক, এজন্য সরকারের সাহায্য প্রয়োজন। ঝিনুক রাণী পাল বলেন, মাটির কাজ একসময় আমাদের সংসারের ভরসা ছিল। এখন উৎসবের সময়ও বিক্রি কম হয়। সহজ ঋণ ও বাজারজাত করার সুযোগ পেলে হয়তো আবার কাজ শুরু করা যাবে।
অন্যদিকে জামাল হোসেন, আক্তার মিয়াসহ অনেকেই জানান, আমাদের ছোটবেলায় মাটির খেলনাই ছিল ভরসা। এখন পুরনো সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে। আমাদের এখনকার ছেলে-মেয়েরা কেউ মাটির তৈরি খেলনা দিয়ে খেলতে চায় না। সে কারনেই তাদেরকে কিনে দেয়া হয় না।
মাটির খেলনা শিল্পের এই অবনতির ফলে শুধু ঐতিহ্যের ক্ষতি হচ্ছে না। বরং বহু পরিবার জীবিকার সংকটে পড়ছে। তাই দেশের গ্রামীণ শিল্পের এই অমূল্য অংশ বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা এবং নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ।