কালীগঞ্জে পৌর শহরে বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে -সংবাদ
গত ১০-১২ বছরের তুলনায় এবারে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্ষাকালে মাঠঘাট ভাসানোর মতো বৃষ্টি হয়নি। যে অল্প বৃষ্টি হতো, তা দেশীয় মাছের বংশবিস্তারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে বাজারে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছের সরবরাহও ছিল অত্যন্ত সীমিত।
তবে এবার চলতি বর্ষা মৌসুমজুড়েই ছিল লাগাতার বৃষ্টি। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ফসলি জমি, খাল-বিল, নদী ও খানা-খন্দে সৃষ্টি হয়েছে মাছের আদর্শ আবাসস্থল। ফলে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ হয়েছে।
বর্ষা শেষে পানি নামতে শুরু করলে, সেই মাছগুলো নিচু জলাভূমি, খাল-বিল ও খানা-খন্দে জমা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়ভাবে দেশি মাছ শিকারের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে মাছ ধরার দেশীয় উপকরণ বা যন্ত্রপাতির চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দোয়াড়ি, ঘুনি, খুললে, পলো, বানে, চারো, দুড়ে প্রভৃতি যন্ত্রপাতির কদর এখন ব্যাপক। কালীগঞ্জ শহরের দোকানগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ভিড় জমিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। দাম কিছুটা বেশি হলেও বিক্রি থেমে নেই। ক্রেতাদের ভাষ্য- এক-দুই দিনের মাছেই যন্ত্রের দাম উঠে আসে, আর মাছ ধরার আনন্দ তো আছেই।
সরজমিনে গত শুক্রবার কালীগঞ্জ শহরের কুটির শিল্পে তৈরি মাছ ধরার যন্ত্রপাতির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। শুধু দোকানদার নয়, অনেক কারিগর নিজের তৈরি পণ্য সড়কের পাশে বসে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ী বিমল দাস অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে মুক্ত জলাশয়ে যতটুকু মাছ জন্মেছে, তার অনেকটাই রেনু অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও ‘চায়না দোয়াড়ি’র কারণে। এসব জালে রেনু পোনা থেকে বড় মাছ পর্যন্ত সব ধরা পড়ে, যা দেশি মাছের প্রজনন চক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অথচ বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্রপাতিতে এমন ক্ষতি হয় না।
তিনি জানান, তাদের বিক্রি করা যন্ত্রাংশের একটি অংশ স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, বাকিগুলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী, যশোরের মনিরামপুর ও নড়াইল থেকে আনানো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. শাহীন আলম জানান, ‘এবারের বর্ষা মৌসুমে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জলাশয়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছ জন্মেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াড়ি বিক্রি করে। খবর পেলেই মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় আমরা যৌথ অভিযান চালাই।
তিনি আরও জানান, এ মৌসুমে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চায়না দোয়াড়ি উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী গোপাল দাস জানান, ‘চায়না দোয়াড়ির দাপটে গত ১২-১৪ বছর ধরে কুটির শিল্পের কারিগররা খুব খারাপ সময় পার করেছেন। কিন্তু এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাঠঘাট পানিতে ভরে গিয়েছিল। এখন পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকারে বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্র ছাড়া গতি নেই। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’
তার ভাষায়, ‘এই যন্ত্রপাতিতে এখন ধরা পড়ছে- কই, মাগুর, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, পাবদা, শৈল, গচ্চি, তোড়া পাকালসহ নানা ধরনের দেশি মাছ।’
উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর সুকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের পরিবার অনেক প্রজন্ম ধরে এই কাজ করছে। বিগত কয়েক বছর মাছ না থাকায় যন্ত্রপাতির বিক্রি ছিল না বললেই চলে। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বছর এত চাহিদা যে, রাত-দিন কাজ করেও কুলাতে পারছি না। বলতে পারেন, এবার আমরা কিছুটা টাকার মুখ দেখতে পেরেছি।’
কালীগঞ্জে পৌর শহরে বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে -সংবাদ
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ১০-১২ বছরের তুলনায় এবারে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্ষাকালে মাঠঘাট ভাসানোর মতো বৃষ্টি হয়নি। যে অল্প বৃষ্টি হতো, তা দেশীয় মাছের বংশবিস্তারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে বাজারে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছের সরবরাহও ছিল অত্যন্ত সীমিত।
তবে এবার চলতি বর্ষা মৌসুমজুড়েই ছিল লাগাতার বৃষ্টি। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ফসলি জমি, খাল-বিল, নদী ও খানা-খন্দে সৃষ্টি হয়েছে মাছের আদর্শ আবাসস্থল। ফলে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ হয়েছে।
বর্ষা শেষে পানি নামতে শুরু করলে, সেই মাছগুলো নিচু জলাভূমি, খাল-বিল ও খানা-খন্দে জমা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়ভাবে দেশি মাছ শিকারের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে মাছ ধরার দেশীয় উপকরণ বা যন্ত্রপাতির চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দোয়াড়ি, ঘুনি, খুললে, পলো, বানে, চারো, দুড়ে প্রভৃতি যন্ত্রপাতির কদর এখন ব্যাপক। কালীগঞ্জ শহরের দোকানগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ভিড় জমিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। দাম কিছুটা বেশি হলেও বিক্রি থেমে নেই। ক্রেতাদের ভাষ্য- এক-দুই দিনের মাছেই যন্ত্রের দাম উঠে আসে, আর মাছ ধরার আনন্দ তো আছেই।
সরজমিনে গত শুক্রবার কালীগঞ্জ শহরের কুটির শিল্পে তৈরি মাছ ধরার যন্ত্রপাতির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। শুধু দোকানদার নয়, অনেক কারিগর নিজের তৈরি পণ্য সড়কের পাশে বসে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ী বিমল দাস অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে মুক্ত জলাশয়ে যতটুকু মাছ জন্মেছে, তার অনেকটাই রেনু অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও ‘চায়না দোয়াড়ি’র কারণে। এসব জালে রেনু পোনা থেকে বড় মাছ পর্যন্ত সব ধরা পড়ে, যা দেশি মাছের প্রজনন চক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অথচ বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্রপাতিতে এমন ক্ষতি হয় না।
তিনি জানান, তাদের বিক্রি করা যন্ত্রাংশের একটি অংশ স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, বাকিগুলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী, যশোরের মনিরামপুর ও নড়াইল থেকে আনানো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. শাহীন আলম জানান, ‘এবারের বর্ষা মৌসুমে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জলাশয়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছ জন্মেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াড়ি বিক্রি করে। খবর পেলেই মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় আমরা যৌথ অভিযান চালাই।
তিনি আরও জানান, এ মৌসুমে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চায়না দোয়াড়ি উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী গোপাল দাস জানান, ‘চায়না দোয়াড়ির দাপটে গত ১২-১৪ বছর ধরে কুটির শিল্পের কারিগররা খুব খারাপ সময় পার করেছেন। কিন্তু এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাঠঘাট পানিতে ভরে গিয়েছিল। এখন পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকারে বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্র ছাড়া গতি নেই। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’
তার ভাষায়, ‘এই যন্ত্রপাতিতে এখন ধরা পড়ছে- কই, মাগুর, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, পাবদা, শৈল, গচ্চি, তোড়া পাকালসহ নানা ধরনের দেশি মাছ।’
উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর সুকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের পরিবার অনেক প্রজন্ম ধরে এই কাজ করছে। বিগত কয়েক বছর মাছ না থাকায় যন্ত্রপাতির বিক্রি ছিল না বললেই চলে। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বছর এত চাহিদা যে, রাত-দিন কাজ করেও কুলাতে পারছি না। বলতে পারেন, এবার আমরা কিছুটা টাকার মুখ দেখতে পেরেছি।’