alt

বৃষ্টিতে বাড়লো স্থানীয় প্রজাতির মাছ, প্রাণ পেল কালীগঞ্জের কুটির শিল্প

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কালীগঞ্জে পৌর শহরে বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে -সংবাদ

গত ১০-১২ বছরের তুলনায় এবারে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্ষাকালে মাঠঘাট ভাসানোর মতো বৃষ্টি হয়নি। যে অল্প বৃষ্টি হতো, তা দেশীয় মাছের বংশবিস্তারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে বাজারে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছের সরবরাহও ছিল অত্যন্ত সীমিত।

তবে এবার চলতি বর্ষা মৌসুমজুড়েই ছিল লাগাতার বৃষ্টি। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ফসলি জমি, খাল-বিল, নদী ও খানা-খন্দে সৃষ্টি হয়েছে মাছের আদর্শ আবাসস্থল। ফলে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ হয়েছে।

বর্ষা শেষে পানি নামতে শুরু করলে, সেই মাছগুলো নিচু জলাভূমি, খাল-বিল ও খানা-খন্দে জমা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়ভাবে দেশি মাছ শিকারের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে মাছ ধরার দেশীয় উপকরণ বা যন্ত্রপাতির চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।

বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দোয়াড়ি, ঘুনি, খুললে, পলো, বানে, চারো, দুড়ে প্রভৃতি যন্ত্রপাতির কদর এখন ব্যাপক। কালীগঞ্জ শহরের দোকানগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ভিড় জমিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। দাম কিছুটা বেশি হলেও বিক্রি থেমে নেই। ক্রেতাদের ভাষ্য- এক-দুই দিনের মাছেই যন্ত্রের দাম উঠে আসে, আর মাছ ধরার আনন্দ তো আছেই।

সরজমিনে গত শুক্রবার কালীগঞ্জ শহরের কুটির শিল্পে তৈরি মাছ ধরার যন্ত্রপাতির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। শুধু দোকানদার নয়, অনেক কারিগর নিজের তৈরি পণ্য সড়কের পাশে বসে বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ী বিমল দাস অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে মুক্ত জলাশয়ে যতটুকু মাছ জন্মেছে, তার অনেকটাই রেনু অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও ‘চায়না দোয়াড়ি’র কারণে। এসব জালে রেনু পোনা থেকে বড় মাছ পর্যন্ত সব ধরা পড়ে, যা দেশি মাছের প্রজনন চক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অথচ বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্রপাতিতে এমন ক্ষতি হয় না।

তিনি জানান, তাদের বিক্রি করা যন্ত্রাংশের একটি অংশ স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, বাকিগুলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী, যশোরের মনিরামপুর ও নড়াইল থেকে আনানো হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. শাহীন আলম জানান, ‘এবারের বর্ষা মৌসুমে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জলাশয়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছ জন্মেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াড়ি বিক্রি করে। খবর পেলেই মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় আমরা যৌথ অভিযান চালাই।

তিনি আরও জানান, এ মৌসুমে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চায়না দোয়াড়ি উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী গোপাল দাস জানান, ‘চায়না দোয়াড়ির দাপটে গত ১২-১৪ বছর ধরে কুটির শিল্পের কারিগররা খুব খারাপ সময় পার করেছেন। কিন্তু এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাঠঘাট পানিতে ভরে গিয়েছিল। এখন পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকারে বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্র ছাড়া গতি নেই। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’

তার ভাষায়, ‘এই যন্ত্রপাতিতে এখন ধরা পড়ছে- কই, মাগুর, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, পাবদা, শৈল, গচ্চি, তোড়া পাকালসহ নানা ধরনের দেশি মাছ।’

উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর সুকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের পরিবার অনেক প্রজন্ম ধরে এই কাজ করছে। বিগত কয়েক বছর মাছ না থাকায় যন্ত্রপাতির বিক্রি ছিল না বললেই চলে। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বছর এত চাহিদা যে, রাত-দিন কাজ করেও কুলাতে পারছি না। বলতে পারেন, এবার আমরা কিছুটা টাকার মুখ দেখতে পেরেছি।’

ছবি

ডেঙ্গু: একমাসে হাসপাতালে ভর্তি ১৫ হাজারের বেশি, মৃত্যু ৭৬ জন

ছবি

খাগড়াছড়ির ঘটনা বাড়তে দেয়া হলো কেন: ফওজিয়া মোসলেম

ছবি

বেসরকারি ব্যবস্থাপনাতেও ৩টি হজ প্যাকেজ

ছবি

বাংলাদেশি ২টি ট্রলার ও ১৪ জেলেকে আটক করেছে আরাকান আর্মি

ছবি

পর্যটন খাতে সম্ভাবনার হাতছানি চান্দিনার ‘ঘুরগার বিল’

ছবি

সিলেটে ভূমিকম্প: বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কা

ছবি

বেনাপোল বন্দর: ভারত থেকে ২১ দিনে ৭,১০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি

ছবি

খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় তদন্ত কমিটি, অবরোধ তুললেই ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

ছবি

মই বেয়ে উঠতে হয় ব্রিজে দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ

ছবি

মঠবাড়িয়ায় সার উত্তোলন না করেই বিক্রি করে দেন বিসিআইসি ডিলার

ছবি

কলাপাড়ায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ৮০ পরিবারকে গৃহনির্মাণ সামগ্রী বিতরণ

ছবি

বেতাগীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে টাস্কফোর্স কমিটির সভা

ছবি

ইয়াবার ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, আহত ২

ছবি

এক বছরে গ্রাম আদালতে ২৩৩৫ মামলার নিষ্পত্তি

ছবি

সৈয়দপুরে চীনের প্রস্তাবিত ১০০০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাটির খেলনা হারিয়ে যাচ্ছে

ছবি

কালিহাতীতে সাঁতার শিখতে গিয়ে মৃত্যু

ছবি

আলফাডাঙ্গার হরি মন্দিরে ২৫১টি প্রতিমায় পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব

ছবি

ত্রিশ বছর গান গেয়ে পত্রিকা বিক্রেতা আব্দুল গফফারের

ছবি

যশোরে পুলিশ পরিচয়ে সোনা ডাকাতির ঘটনায় চারজন আটক

ছবি

তারাগঞ্জে বিআরডি’র সুফল ভোগীর প্রশিক্ষণ

ছবি

চরম হতাশায় ভুগছেন কালিতলা গ্রোয়েনে বাঁধের টঙ্গ দোকানিরা

ছবি

রাজবাড়ীতে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৩ লাখ ১২ হাজার শিশু

ছবি

ধনবাড়ীতে ৩৫টি মন্দিরে দুর্গোৎসব

ছবি

গজারিয়ায় নদীতে ঝোঁপ ফেলে মাছ মারায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ

ছবি

লালপুরে বিএনপির গণসংযোগ ও পথসভা

ছবি

বরেন্দ্র অঞ্চলে টেকসই ধান উৎপাদন বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

ছবি

আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মা মেয়ের মৃত্যু, আহত ৬

ছবি

চুয়াডাঙ্গা খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

সালথায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধা নিহত

ছবি

তেতুলিয়ায় স্বপ্ন সারথি গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন

ছবি

আগের মতো এক ব্যক্তিদর্শী ধরণের কোনো নির্বাচন হবে না : উপদেষ্টা

ছবি

টেলিগ্রাম কেবলই স্মৃতি

ছবি

রায়পুরে কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ

ছবি

বিদেশি স্যান্ডেলের দাপটে দেশি পাদুকা শিল্পের গ্রাম কালুহাটি আজ চুপচাপ

tab

বৃষ্টিতে বাড়লো স্থানীয় প্রজাতির মাছ, প্রাণ পেল কালীগঞ্জের কুটির শিল্প

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

কালীগঞ্জে পৌর শহরে বাঁশ ও বেত দিয়ে মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে -সংবাদ

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত ১০-১২ বছরের তুলনায় এবারে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্ষাকালে মাঠঘাট ভাসানোর মতো বৃষ্টি হয়নি। যে অল্প বৃষ্টি হতো, তা দেশীয় মাছের বংশবিস্তারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে বাজারে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছের সরবরাহও ছিল অত্যন্ত সীমিত।

তবে এবার চলতি বর্ষা মৌসুমজুড়েই ছিল লাগাতার বৃষ্টি। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ফসলি জমি, খাল-বিল, নদী ও খানা-খন্দে সৃষ্টি হয়েছে মাছের আদর্শ আবাসস্থল। ফলে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ হয়েছে।

বর্ষা শেষে পানি নামতে শুরু করলে, সেই মাছগুলো নিচু জলাভূমি, খাল-বিল ও খানা-খন্দে জমা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়ভাবে দেশি মাছ শিকারের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে মাছ ধরার দেশীয় উপকরণ বা যন্ত্রপাতির চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।

বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দোয়াড়ি, ঘুনি, খুললে, পলো, বানে, চারো, দুড়ে প্রভৃতি যন্ত্রপাতির কদর এখন ব্যাপক। কালীগঞ্জ শহরের দোকানগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ভিড় জমিয়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। দাম কিছুটা বেশি হলেও বিক্রি থেমে নেই। ক্রেতাদের ভাষ্য- এক-দুই দিনের মাছেই যন্ত্রের দাম উঠে আসে, আর মাছ ধরার আনন্দ তো আছেই।

সরজমিনে গত শুক্রবার কালীগঞ্জ শহরের কুটির শিল্পে তৈরি মাছ ধরার যন্ত্রপাতির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। শুধু দোকানদার নয়, অনেক কারিগর নিজের তৈরি পণ্য সড়কের পাশে বসে বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ী বিমল দাস অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে মুক্ত জলাশয়ে যতটুকু মাছ জন্মেছে, তার অনেকটাই রেনু অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও ‘চায়না দোয়াড়ি’র কারণে। এসব জালে রেনু পোনা থেকে বড় মাছ পর্যন্ত সব ধরা পড়ে, যা দেশি মাছের প্রজনন চক্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অথচ বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্রপাতিতে এমন ক্ষতি হয় না।

তিনি জানান, তাদের বিক্রি করা যন্ত্রাংশের একটি অংশ স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, বাকিগুলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী, যশোরের মনিরামপুর ও নড়াইল থেকে আনানো হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস. এম. শাহীন আলম জানান, ‘এবারের বর্ষা মৌসুমে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে জলাশয়গুলোতে দেশি প্রজাতির মাছ জন্মেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াড়ি বিক্রি করে। খবর পেলেই মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় আমরা যৌথ অভিযান চালাই।

তিনি আরও জানান, এ মৌসুমে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চায়না দোয়াড়ি উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী গোপাল দাস জানান, ‘চায়না দোয়াড়ির দাপটে গত ১২-১৪ বছর ধরে কুটির শিল্পের কারিগররা খুব খারাপ সময় পার করেছেন। কিন্তু এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাঠঘাট পানিতে ভরে গিয়েছিল। এখন পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকারে বাঁশ-বেতের তৈরি যন্ত্র ছাড়া গতি নেই। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’

তার ভাষায়, ‘এই যন্ত্রপাতিতে এখন ধরা পড়ছে- কই, মাগুর, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, পাবদা, শৈল, গচ্চি, তোড়া পাকালসহ নানা ধরনের দেশি মাছ।’

উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর সুকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের পরিবার অনেক প্রজন্ম ধরে এই কাজ করছে। বিগত কয়েক বছর মাছ না থাকায় যন্ত্রপাতির বিক্রি ছিল না বললেই চলে। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বছর এত চাহিদা যে, রাত-দিন কাজ করেও কুলাতে পারছি না। বলতে পারেন, এবার আমরা কিছুটা টাকার মুখ দেখতে পেরেছি।’

back to top