চান্দিনার ‘ঘুরগার বিল’ ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় বাড়ছে -সংবাদ
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কোল ঘেঁষে বিস্তৃত এক স্বপ্নপুরীর নাম ‘ঘুরগার বিল’। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর দর্শণার্থীদের অপূর্ব মিলনমেলায় গড়ে উঠেছে এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি। বৃষ্টির মৌসুম এলেই যেন ঘুরগার বিল তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দেয় প্রকৃতি পিপাসু মানুষের চোখে। নীল আকাশের ছায়া, স্বচ্ছ পানিতে ভেসে ওঠা লাল-সাদা শাপলার মাঝে ভেসে বেড়ানো নৌকায় যেন ছবির মতো নয়নাভিরাম এক জীবন্ত দৃশ্যপট।
কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি এবং চাঁদপুরের কচুয়া-
তিন উপজেলার মিলনস্থলেই ঘুরগার বিল
সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়তই ভিড় বাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের
কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া- এই তিন উপজেলার মিলনস্থলে অবস্থিত এই ঘুরগার বিল। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর কাছে এটি মাছের জন্য প্রসিদ্ধ হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ফলে এটি হয়ে উঠেছে দূর-দূরান্তের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন এই বিলে। নৌকায় করে ঘুরে দেখা, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ, ছবি তোলা কিংবা শুধুই নির্জনতায় কিছুটা সময় কাটানোর মধ্যেই যেন বিলের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য সব রকম চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত।
বর্ষার শুরুতেই ঘুরগার বিল ভরে যায় নানা রঙের শাপলায়। বিশাল জলাভূমিতে লাল, সাদা শাপলার এমন বৈচিত্র্য সাধারণত সচরাচর দেখা মেলা ভার। এসব শাপলা শুধু চোখের আরামই দেয় না, পর্যটকদের মনে এনে দেয় অপার অনুভূতির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির নানা পাখি ও জলজ উদ্ভিদ বিলে যুক্ত করেছে জীববৈচিত্র্যের নতুন মাত্রা।
ঘুরগার বিল এক সময় ছিল দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য। এক সময় বিলের পানিতে নেমে হাঁটা ছিল প্রায় অসম্ভব, কারণ তখন ওই বিলে মাছই ছিল রাজা। আজ সেই চিত্র কিছুটা বদলেছে। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে, তবে দেশীয় মাছের অস্তিত্ব এখনও রয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মাছের পাশাপাশি এখন পর্যটনই হচ্ছে বেশ কিছু পরিবারের নতুন আয়ের উৎস।
পর্যটকদের উপস্থিতি দিনে দিনে বাড়লেও এখানে সরকারি বা বেসরকারি পর্যটন উন্নয়ন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। স্থানীয়ভাবে কিছু নৌকাঘাট, দোকানপাট গড়ে উঠেছে বটে, তবে পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামাগার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা পরিবেশ ব্যবস্থাপনার কোনো সুসংগঠিত রূপ এখনও দেখা যায় না।
স্থানীয়দের মতে, যদি পরিকল্পিতভাবে এই বিলে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়, তাহলে এটি হয়ে উঠতে পারে কুমিল্লার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। কর্মসংস্থান হতে পারে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
চান্দিনা সদর থেকে ঘুরতে যাওয়া জাকির হোসেন জানান, বিলটি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় পর্যটকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
বিলের নৌকার মাঝি বিল্লাল হোসেন জানান- বর্ষা মৌসুমেই এখানে পর্যটকরা আসে। এই মৌসুমে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার প্রচুর ভিড় থাকে। তখন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়। অন্যদিন গড়ে কমপক্ষে হাজার টাকা আয় করি। তবে এই বিলে ড্রেজার চালানোর কারণে অনেক অসুবিধাও হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, ঘুরগার বিলে এখন প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। তাই আমরা ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা করছি। বেচা-কেনা ভালো, তবে পর্যটকদের জন্য বসার স্থান ও বাচ্চাদের জন্য কিছু রাইড হলে মানুষ আরও দ্বিগুণ বাড়তো।
চান্দিনা উপজেলার গলাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম দর্জি জানান, ঘুরগার বিল এখন কেবল একটি জলাভূমি নয়, এটি সম্ভাবনার নাম। এর শাপলা ফুল, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিল হতে পারে দেশের পর্যটন মানচিত্রে এক উজ্জ্বল সংযোজন। প্রয়োজন শুধু প্রশাসনের সুদৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট পথচলা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, ‘ঘুরগা বিল’ এলাকাটি নিঃসন্দেহে একটি ভ্রমনের জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরাও স্থানটি পরিদর্শন করি এবং সেখানের চলাচলের প্রধান সড়কটি এলজিইডি’র আওতায় নেয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বিলটির সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করার চেষ্টা করবো।
চান্দিনার ‘ঘুরগার বিল’ ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় বাড়ছে -সংবাদ
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কোল ঘেঁষে বিস্তৃত এক স্বপ্নপুরীর নাম ‘ঘুরগার বিল’। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর দর্শণার্থীদের অপূর্ব মিলনমেলায় গড়ে উঠেছে এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি। বৃষ্টির মৌসুম এলেই যেন ঘুরগার বিল তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দেয় প্রকৃতি পিপাসু মানুষের চোখে। নীল আকাশের ছায়া, স্বচ্ছ পানিতে ভেসে ওঠা লাল-সাদা শাপলার মাঝে ভেসে বেড়ানো নৌকায় যেন ছবির মতো নয়নাভিরাম এক জীবন্ত দৃশ্যপট।
কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি এবং চাঁদপুরের কচুয়া-
তিন উপজেলার মিলনস্থলেই ঘুরগার বিল
সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়তই ভিড় বাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের
কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া- এই তিন উপজেলার মিলনস্থলে অবস্থিত এই ঘুরগার বিল। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর কাছে এটি মাছের জন্য প্রসিদ্ধ হিসেবে পরিচিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ফলে এটি হয়ে উঠেছে দূর-দূরান্তের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন এই বিলে। নৌকায় করে ঘুরে দেখা, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ, ছবি তোলা কিংবা শুধুই নির্জনতায় কিছুটা সময় কাটানোর মধ্যেই যেন বিলের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য সব রকম চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত।
বর্ষার শুরুতেই ঘুরগার বিল ভরে যায় নানা রঙের শাপলায়। বিশাল জলাভূমিতে লাল, সাদা শাপলার এমন বৈচিত্র্য সাধারণত সচরাচর দেখা মেলা ভার। এসব শাপলা শুধু চোখের আরামই দেয় না, পর্যটকদের মনে এনে দেয় অপার অনুভূতির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির নানা পাখি ও জলজ উদ্ভিদ বিলে যুক্ত করেছে জীববৈচিত্র্যের নতুন মাত্রা।
ঘুরগার বিল এক সময় ছিল দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য। এক সময় বিলের পানিতে নেমে হাঁটা ছিল প্রায় অসম্ভব, কারণ তখন ওই বিলে মাছই ছিল রাজা। আজ সেই চিত্র কিছুটা বদলেছে। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে, তবে দেশীয় মাছের অস্তিত্ব এখনও রয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মাছের পাশাপাশি এখন পর্যটনই হচ্ছে বেশ কিছু পরিবারের নতুন আয়ের উৎস।
পর্যটকদের উপস্থিতি দিনে দিনে বাড়লেও এখানে সরকারি বা বেসরকারি পর্যটন উন্নয়ন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। স্থানীয়ভাবে কিছু নৌকাঘাট, দোকানপাট গড়ে উঠেছে বটে, তবে পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামাগার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা পরিবেশ ব্যবস্থাপনার কোনো সুসংগঠিত রূপ এখনও দেখা যায় না।
স্থানীয়দের মতে, যদি পরিকল্পিতভাবে এই বিলে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়, তাহলে এটি হয়ে উঠতে পারে কুমিল্লার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। কর্মসংস্থান হতে পারে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
চান্দিনা সদর থেকে ঘুরতে যাওয়া জাকির হোসেন জানান, বিলটি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ায় পর্যটকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
বিলের নৌকার মাঝি বিল্লাল হোসেন জানান- বর্ষা মৌসুমেই এখানে পর্যটকরা আসে। এই মৌসুমে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার প্রচুর ভিড় থাকে। তখন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়। অন্যদিন গড়ে কমপক্ষে হাজার টাকা আয় করি। তবে এই বিলে ড্রেজার চালানোর কারণে অনেক অসুবিধাও হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, ঘুরগার বিলে এখন প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। তাই আমরা ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা করছি। বেচা-কেনা ভালো, তবে পর্যটকদের জন্য বসার স্থান ও বাচ্চাদের জন্য কিছু রাইড হলে মানুষ আরও দ্বিগুণ বাড়তো।
চান্দিনা উপজেলার গলাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম দর্জি জানান, ঘুরগার বিল এখন কেবল একটি জলাভূমি নয়, এটি সম্ভাবনার নাম। এর শাপলা ফুল, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিল হতে পারে দেশের পর্যটন মানচিত্রে এক উজ্জ্বল সংযোজন। প্রয়োজন শুধু প্রশাসনের সুদৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট পথচলা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, ‘ঘুরগা বিল’ এলাকাটি নিঃসন্দেহে একটি ভ্রমনের জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরাও স্থানটি পরিদর্শন করি এবং সেখানের চলাচলের প্রধান সড়কটি এলজিইডি’র আওতায় নেয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বিলটির সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করার চেষ্টা করবো।