মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ -সংবাদ
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনার পর ‘বিচারের উদ্যোগ না নিয়ে’ ওই এলাকায় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিতরা ‘কেন সেটা বাড়তে দিলো’ সেই প্রশ্ন তুলেছেন মহিলা সমিতির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ এবং প্রতিবাদকারী বিচার প্রার্থীদের ওপর ‘হামলা ও হত্যার’ প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার,(৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া বলেন, ‘ধর্ষণ একটি ক্রিমিনাল অপরাধ, এটা বাংলাদেশের আইন বলে। সরকার নাকি ধর্ষণের বিচারের জন্য কঠিন থেকে কঠিন বিচারের ব্যবস্থা করছেন। অথচ ধর্ষণের বিচারের জন্য মানুষকে দাবি জানাতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তাহলে সরকার যে আইন করেন, সরকার যে বক্তব্য দেন, সেই বক্তব্য কেন বাস্তবায়িত হয় না? এর পিছনে কারণ কী?’
তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচার কেন চাইতে হবে? বলা হচ্ছে যে, ধর্ষণ প্রমাণ করা যায় নাই। কেন, আলামত ছিল না? আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। ধর্ষণকে ক্রিমিনাল একটা গুরুত্বপূর্ণ অফেন্স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ধর্ষণকে নানাভাবে ভাবা হচ্ছে। সেখানে আমরা জানি যে আলামত পাওয়াটা খুবই কঠিন।
তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষণের যে শিকার, তাকে কেন প্রমাণ করতে হবে? ধর্ষক যে ধর্ষণ করে নাই, তার প্রমাণ দিতে হবে, এই আলামত আমরা চাই। যার নামে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে আমরা ধরি না কেন? তার আশপাশে এদিক সেদিক আমরা ঘুরে বেড়াই। এরকম করতে করতে আমরা একপর্যায়ে মানুষকে উত্তেজিত করে, মানুষকে দিয়ে অপরাধ করানোর চেষ্টা করি।’
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে খেত থেকে এক মারমা কিশোরীকে ‘অচেতন অবস্থায়’ উদ্ধারের পর সেই রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার বাবা। পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে। এই আন্দোলন এক সময় সহিংস হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। গত রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘যে ঘটনাটা খাগড়াছড়িতে হয়েছে। আমরা জানি যে, পার্বত্য এলাকায় শান্তি রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছেন? প্রথমে যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটল, তখন কেন সেনাবাহিনী সে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করার উদ্যোগ নিল না? কেন সেটাকে বাড়তে দিল? যার কারণে একটা সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নিল। এই বিষয়গুলোতে এত নির্লিপ্ততা সরকারের! এত নির্লিপ্ততা! এই নির্লিপ্ততার কারণটা কী? শুধুমাত্র নির্বাচন করে বাংলাদেশের মানুষ একেবারে পার পেয়ে যাবে? যে জনগোষ্ঠী আপনারা তৈরি করছেন, যে অপরাধে ভরা সমাজ আপনারা তৈরি করছেন, তার মধ্যে কেউ এক ফোঁটা নিরাপদ থাকতে পারবে না।’
মহিলা সমিতির সভাপতি বলেন- ‘আজকে আমি এখানে দাঁড়িয়ে মনে করছি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই হারিয়ে যাওয়া কল্পনার কথা, যে কল্পনা বলেছিল যে আজকে পাহাড়ে যে ধর্ষণ হচ্ছে সেই ধর্ষণ সমতলেও নেমে আসবে। আজকে আমরা দেখি, সমতলে হাজার হাজার তরুণী আমাদেও, প্রতিদিন কতো ধর্ষণের কেস করতে হয়। আমি মনে করি, যখন একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়, সেই ধর্ষণের শিকার হয় রাষ্ট্র, সেই ধর্ষণের শিকার হয় রাষ্ট্রনায়করা, সেই ধর্ষণের শিকার হয় এদেশের সব মানুষ, আমরা নারী সমাজ তো হইই।’ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, যারা অপরাধী তারা সহজেই পার পেয়ে যায়। তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে যখন এই মার্মা কিশোরীর ধর্ষণের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে, তার শহরের লোকেরা যখন ফুঁসে উঠেছে, পাহাড়ি আদিবাসী সম্প্রদায় যখন ফুঁসে উঠেছে, তখন আমরা দেখলাম যে সেই ধর্ষণের যে অপরাধ, সেই অপরাধটা হারিয়ে গেল। সেই অপরাধটা সামনে এলো না। যারা প্রতিবাদকারী, আন্দোলনকারী, তাদের ওপরে আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেমে পড়েছে। অন্যদের মধ্যে মহিলা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সংগঠনের নেত্রী রেখা সাহা, রেহানা ইমু, সেলিনা পারভীন মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনার পর ‘বিচারের উদ্যোগ না নিয়ে’ ওই এলাকায় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিতরা ‘কেন সেটা বাড়তে দিলো’ সেই প্রশ্ন তুলেছেন মহিলা সমিতির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ এবং প্রতিবাদকারী বিচার প্রার্থীদের ওপর ‘হামলা ও হত্যার’ প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার,(৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া বলেন, ‘ধর্ষণ একটি ক্রিমিনাল অপরাধ, এটা বাংলাদেশের আইন বলে। সরকার নাকি ধর্ষণের বিচারের জন্য কঠিন থেকে কঠিন বিচারের ব্যবস্থা করছেন। অথচ ধর্ষণের বিচারের জন্য মানুষকে দাবি জানাতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তাহলে সরকার যে আইন করেন, সরকার যে বক্তব্য দেন, সেই বক্তব্য কেন বাস্তবায়িত হয় না? এর পিছনে কারণ কী?’
তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচার কেন চাইতে হবে? বলা হচ্ছে যে, ধর্ষণ প্রমাণ করা যায় নাই। কেন, আলামত ছিল না? আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। ধর্ষণকে ক্রিমিনাল একটা গুরুত্বপূর্ণ অফেন্স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ধর্ষণকে নানাভাবে ভাবা হচ্ছে। সেখানে আমরা জানি যে আলামত পাওয়াটা খুবই কঠিন।
তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষণের যে শিকার, তাকে কেন প্রমাণ করতে হবে? ধর্ষক যে ধর্ষণ করে নাই, তার প্রমাণ দিতে হবে, এই আলামত আমরা চাই। যার নামে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে আমরা ধরি না কেন? তার আশপাশে এদিক সেদিক আমরা ঘুরে বেড়াই। এরকম করতে করতে আমরা একপর্যায়ে মানুষকে উত্তেজিত করে, মানুষকে দিয়ে অপরাধ করানোর চেষ্টা করি।’
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে খেত থেকে এক মারমা কিশোরীকে ‘অচেতন অবস্থায়’ উদ্ধারের পর সেই রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার বাবা। পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে। এই আন্দোলন এক সময় সহিংস হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। গত রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘যে ঘটনাটা খাগড়াছড়িতে হয়েছে। আমরা জানি যে, পার্বত্য এলাকায় শান্তি রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছেন? প্রথমে যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটল, তখন কেন সেনাবাহিনী সে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করার উদ্যোগ নিল না? কেন সেটাকে বাড়তে দিল? যার কারণে একটা সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নিল। এই বিষয়গুলোতে এত নির্লিপ্ততা সরকারের! এত নির্লিপ্ততা! এই নির্লিপ্ততার কারণটা কী? শুধুমাত্র নির্বাচন করে বাংলাদেশের মানুষ একেবারে পার পেয়ে যাবে? যে জনগোষ্ঠী আপনারা তৈরি করছেন, যে অপরাধে ভরা সমাজ আপনারা তৈরি করছেন, তার মধ্যে কেউ এক ফোঁটা নিরাপদ থাকতে পারবে না।’
মহিলা সমিতির সভাপতি বলেন- ‘আজকে আমি এখানে দাঁড়িয়ে মনে করছি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই হারিয়ে যাওয়া কল্পনার কথা, যে কল্পনা বলেছিল যে আজকে পাহাড়ে যে ধর্ষণ হচ্ছে সেই ধর্ষণ সমতলেও নেমে আসবে। আজকে আমরা দেখি, সমতলে হাজার হাজার তরুণী আমাদেও, প্রতিদিন কতো ধর্ষণের কেস করতে হয়। আমি মনে করি, যখন একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়, সেই ধর্ষণের শিকার হয় রাষ্ট্র, সেই ধর্ষণের শিকার হয় রাষ্ট্রনায়করা, সেই ধর্ষণের শিকার হয় এদেশের সব মানুষ, আমরা নারী সমাজ তো হইই।’ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, যারা অপরাধী তারা সহজেই পার পেয়ে যায়। তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে যখন এই মার্মা কিশোরীর ধর্ষণের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে, তার শহরের লোকেরা যখন ফুঁসে উঠেছে, পাহাড়ি আদিবাসী সম্প্রদায় যখন ফুঁসে উঠেছে, তখন আমরা দেখলাম যে সেই ধর্ষণের যে অপরাধ, সেই অপরাধটা হারিয়ে গেল। সেই অপরাধটা সামনে এলো না। যারা প্রতিবাদকারী, আন্দোলনকারী, তাদের ওপরে আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেমে পড়েছে। অন্যদের মধ্যে মহিলা সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সংগঠনের নেত্রী রেখা সাহা, রেহানা ইমু, সেলিনা পারভীন মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।