হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) : মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তুপ -সংবাদ
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ বাজারে প্রবেশের প্রধান তিনটি মহাসড়কপথে ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধে নাকাল এলাকাবাসী ও যাত্রীসাধারণ। বাজারে প্রবেশের প্রায় প্রতিটি পথেই দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
বাজারে প্রবেশের তিনটি প্রধান স্থানে যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে হাজীগঞ্জ–রামগঞ্জ সড়কের পাশে একটি বড় ময়লার স্তুপ দীর্ঘদিন ধরে মুক্তভাবে পড়ে আছে, চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের মিঠুনিয়া ব্রিজের পাশে বড় ময়লার স্তূপে প্রতিদিন বাজার ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা ময়লার স্তুপ থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ ও পচা পানি, যা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার কোনো নির্ধারিত ডাম্পিং পয়েন্ট না থাকায় লোকজন বাধ্য হয়ে এই তিন স্থানে ময়লা ফেলছেন। ফলে শুধু দুর্গন্ধ নয়, বর্ষাকালে ওই স্থানগুলো মশা ও মাছির আখড়ায় পরিণত হয়।
৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুন্নবী সুমন তপাদার বলেন, আমরা বারবার পৌরসভাকে অনুরোধ করেছি যেন নির্দিষ্ট একটি স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এখনো কোনো স্থায়ী ডাম্পিং স্পট নির্ধারণ করা হয়নি। হাজীগঞ্জের প্রধান তিন প্রবেশপথ এখন দুর্গন্ধে ভরে গেছে।
অন্যদিকে ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারের শত শত মানুষ এই তিন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন। বাজারে প্রবেশের সময় দুর্গন্ধে অনেকেই নাক-মুখ চেপে রাখতে বাধ্য হন। এটি শুধু নোংরামি নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ময়লা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। দ্রুত বিকল্প ডাম্পিং স্পট নির্ধারণ করে সেখানকার ময়লা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক জানান, আমরা নতুন একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ জন্য স্থান নির্ধারণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাধ্যমে তিনটি প্রবেশপথের ময়লা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুলগ্রামীর এক শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ওই রাস্তাগুলোর পাশ দিয়ে গেলে নাক চেপে যেতে হয়। অনেক সময় গাড়ি থেকে নামলে জুতোতেও ময়লা লাগে।
আরেক ছাত্রী তানজিলা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে রেললাইনের দিকে সবসময় দুর্গন্ধ আসে। এতে ক্লাসের মনোযোগ নষ্ট হয়, অনেক সময় বমি পর্যন্ত আসে।
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই পরিস্থিতি শুধু নান্দনিকতা নষ্ট করছে না, বরং এটি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে। শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট, ত্বকজনিত সমস্যা এবং ডায়রিয়ার মতো রোগ ছড়াতে পারে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সুমন বলেন, “ছোট বাচ্চারা প্রতিদিন এই রাস্তাগুলো ব্যবহার করে। তারা অবুঝভাবে ওই ময়লার পাশ দিয়ে হাঁটে। এতে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এলাকাবাসী মো. খোরশেদ আলম বলেন, বাজারে ঢোকার পথে ময়লা পড়ে থাকতে দেখে অনেক বাইরের লোক হাজীগঞ্জ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পায়। পৌরসভা চাইলে সপ্তাহে দু’দিন পরিষ্কার করলে এই দুর্ভোগ কমে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে তা শুধু দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে না, বরং স্থানীয় পানি ও বায়ুর মান নষ্ট করে ফেলে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জনস্বার্থে স্থানীয় সচেতন মহল পৌর প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছে। তারা চায়, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত ময়লা অপসারণ, এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা যেন জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়—যাতে হাজীগঞ্জ বাজারের প্রবেশপথগুলো আবারও পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) : মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তুপ -সংবাদ
সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ বাজারে প্রবেশের প্রধান তিনটি মহাসড়কপথে ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধে নাকাল এলাকাবাসী ও যাত্রীসাধারণ। বাজারে প্রবেশের প্রায় প্রতিটি পথেই দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
বাজারে প্রবেশের তিনটি প্রধান স্থানে যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে হাজীগঞ্জ–রামগঞ্জ সড়কের পাশে একটি বড় ময়লার স্তুপ দীর্ঘদিন ধরে মুক্তভাবে পড়ে আছে, চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের মিঠুনিয়া ব্রিজের পাশে বড় ময়লার স্তূপে প্রতিদিন বাজার ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা ময়লার স্তুপ থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ ও পচা পানি, যা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার কোনো নির্ধারিত ডাম্পিং পয়েন্ট না থাকায় লোকজন বাধ্য হয়ে এই তিন স্থানে ময়লা ফেলছেন। ফলে শুধু দুর্গন্ধ নয়, বর্ষাকালে ওই স্থানগুলো মশা ও মাছির আখড়ায় পরিণত হয়।
৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুন্নবী সুমন তপাদার বলেন, আমরা বারবার পৌরসভাকে অনুরোধ করেছি যেন নির্দিষ্ট একটি স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করে। কিন্তু এখনো কোনো স্থায়ী ডাম্পিং স্পট নির্ধারণ করা হয়নি। হাজীগঞ্জের প্রধান তিন প্রবেশপথ এখন দুর্গন্ধে ভরে গেছে।
অন্যদিকে ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারের শত শত মানুষ এই তিন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন। বাজারে প্রবেশের সময় দুর্গন্ধে অনেকেই নাক-মুখ চেপে রাখতে বাধ্য হন। এটি শুধু নোংরামি নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ময়লা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। দ্রুত বিকল্প ডাম্পিং স্পট নির্ধারণ করে সেখানকার ময়লা সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক জানান, আমরা নতুন একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ জন্য স্থান নির্ধারণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাধ্যমে তিনটি প্রবেশপথের ময়লা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুলগ্রামীর এক শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ওই রাস্তাগুলোর পাশ দিয়ে গেলে নাক চেপে যেতে হয়। অনেক সময় গাড়ি থেকে নামলে জুতোতেও ময়লা লাগে।
আরেক ছাত্রী তানজিলা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে রেললাইনের দিকে সবসময় দুর্গন্ধ আসে। এতে ক্লাসের মনোযোগ নষ্ট হয়, অনেক সময় বমি পর্যন্ত আসে।
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই পরিস্থিতি শুধু নান্দনিকতা নষ্ট করছে না, বরং এটি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে। শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট, ত্বকজনিত সমস্যা এবং ডায়রিয়ার মতো রোগ ছড়াতে পারে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সুমন বলেন, “ছোট বাচ্চারা প্রতিদিন এই রাস্তাগুলো ব্যবহার করে। তারা অবুঝভাবে ওই ময়লার পাশ দিয়ে হাঁটে। এতে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এলাকাবাসী মো. খোরশেদ আলম বলেন, বাজারে ঢোকার পথে ময়লা পড়ে থাকতে দেখে অনেক বাইরের লোক হাজীগঞ্জ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পায়। পৌরসভা চাইলে সপ্তাহে দু’দিন পরিষ্কার করলে এই দুর্ভোগ কমে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে তা শুধু দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে না, বরং স্থানীয় পানি ও বায়ুর মান নষ্ট করে ফেলে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জনস্বার্থে স্থানীয় সচেতন মহল পৌর প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছে। তারা চায়, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত ময়লা অপসারণ, এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা যেন জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়—যাতে হাজীগঞ্জ বাজারের প্রবেশপথগুলো আবারও পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।