কিশোরগঞ্জ : করিমগঞ্জের সিংরইল বিলে পদ্মফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কাড়ে -সংবাদ
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সিংরইল বিলে এবারো ফুটেছে পদ্ম ফুল। সে ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন সেখানে। তবে মূল রাস্তা থেকে বিলে যাওয়ার এক কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে পর্যটকদের। রাস্তাটি উন্নয়ন করলে বিলটি পর্যটক স্পট হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া রাস্তাটি পাকা করা হলে ওই বিলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পরিবহন করতে পারবে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে। দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নে খয়রতহাটি গ্রামের পিছনে সিংরইল বিলের অবস্থান। প্রায় ৭৫ একর জায়গা জুড়ে প্রকৃতিগত ভাবে গড়ে উঠেছে এ বিলটি। চারদিকে সবুজ শ্যামল গ্রামে ঘেরা বিলটি যেনো প্রকৃতির অপার সৃষ্টি। সিংরইল বিলে প্রতিবছরের মতো এবারো ফুটেছে লাখো গোলাপী পদ্মফুল। দূর থেকে বিলের দিকে চোখ ফেরাতেই যেন মন জুড়িয়ে যায়। সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা সকাল বিকেলে বিলের পাড়ে জড়ো হচ্ছেন। প্রকৃতিপ্রেমিদের প্রতি জলে ফোটা পদ্মফুল বাতাসে পাপড়ি মেলে নিজেকে যেন মেলে ধরেছেন। এই বিলের মতো এতো পদ্মফুল এক সাথে কোথাও দেখেনি বলে অনেকেই জানান। বিলটিতে বোরো আবাদের পর বর্ষার শুরুতেই পদ্মফুলের গাছগুলো বেড়ে উঠে। আষাঢ় মাস থেকে সেখানে পদ্মফুল ফুটে। তবে আশ্বিন কার্তিক মাসে বিলটিতে লাখো পদ্মফুল ফুটে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ধারণ করে। সেই সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটকরা বিলটি ঘুরে মুগ্ধ হন। আবার অনেকেই পরিবারের লোকদেরকে পদ্মফুল দেখানোর জন্য ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল না ছিঁড়ার সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আবার পদ্মফুলের গাছগুলো সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। পদ্মফুলের পাশাপাশি বিলটিতে প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয়। সবকিছু মিলিয়ে বিলটি এলাকাবাসীর কাছে আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
সিংরইল বিলে বহুকাল ধরেই পদ্মফুল ফুটে আসছে। বিলের বিরল এ দৃশ্যের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলেও দূরের লোকদের অজানা ছিল। চার বছর আগে সংবাদসহ একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ বিলের পদ্মফুলের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর থেকেই বিলে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। বহু দূর থেকেও পর্যটকরা সেখানে ছুটে আসছেন। পদ্মফুলের বাহার দেখে তারা মুগ্ধ হচ্ছেন। তবে অনেক পর্যটক পদ্মফুল তুলে স্বজনদেরকে উপহার দিতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিলের সৌর্ন্দয বিনস্ট হচ্ছে বলে স্থানীয় সমাজকর্মী রাহুল বিশ^াস জানান। তিনি জানান, প্রতিদিন কম করে হলে চার হাজার পদ্মফুল তোলে নেয়া হচ্ছে। এতে বিলের রূপ নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান। কবি ও ছড়াকার শাহজাহান কবীর জানান, তিনি অনেক বিলে পদ্মফুল ফোটার দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু সিংরইল বিলের মতো এতো পদ্মফুল ফুটতে তিনি দেখেননি । প্রকৃতির এ অপরূপ দৃশ্য দেখে তিনি নিজেকে যেনো হারিয়ে ফেলেন বলে জানান।
এদিকে দূরদূরান্ত থেকে পদ্মফুল দেখতে আসা পর্যটকরা যাওয়ার রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে দর্শনার্থীদের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় লোকজন রাস্তাটিকে কিছু ইট সুরকি ফেলে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেছেন। এরপরও রাস্তাটি কাঁচা ও মাঝে মাঝে গর্ত থাকায় সেখানে কোনো যানবাহন চলাচল করে না বলে জানা গেছে।
দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটির উন্নয়ন হলে একদিকে পদ্মফুল দেখতে আসা পর্যটকদের যেমন সুবিধা হবে, তেমনী কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পরিবহন করে তাদের বাড়িতে নিতে পারবে। স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, বিলে আসার রাস্তাটি একেবারেই খারাপ ছিল। এলাকাবাসী নিজেরাই রাস্তাটিতে কিছু ইট ও সুরকি ফেলেছে। রাস্তা খারাপ থাকায় বিল থেকে উৎপাদিত পণ্য বাড়িতে নিতে কৃষকদের খুবই কষ্ট হয় বলে তিনি জানান।
গুজাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাসুদ জানান, সিংরইল বিলের রাস্তা উন্নয়নসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি পর্যটকদের সুবিধার জন্যে যা যা করনীয় তা করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
কিশোরগঞ্জ : করিমগঞ্জের সিংরইল বিলে পদ্মফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কাড়ে -সংবাদ
সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সিংরইল বিলে এবারো ফুটেছে পদ্ম ফুল। সে ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন সেখানে। তবে মূল রাস্তা থেকে বিলে যাওয়ার এক কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশায় চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে পর্যটকদের। রাস্তাটি উন্নয়ন করলে বিলটি পর্যটক স্পট হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া রাস্তাটি পাকা করা হলে ওই বিলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পরিবহন করতে পারবে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে। দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নে খয়রতহাটি গ্রামের পিছনে সিংরইল বিলের অবস্থান। প্রায় ৭৫ একর জায়গা জুড়ে প্রকৃতিগত ভাবে গড়ে উঠেছে এ বিলটি। চারদিকে সবুজ শ্যামল গ্রামে ঘেরা বিলটি যেনো প্রকৃতির অপার সৃষ্টি। সিংরইল বিলে প্রতিবছরের মতো এবারো ফুটেছে লাখো গোলাপী পদ্মফুল। দূর থেকে বিলের দিকে চোখ ফেরাতেই যেন মন জুড়িয়ে যায়। সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা সকাল বিকেলে বিলের পাড়ে জড়ো হচ্ছেন। প্রকৃতিপ্রেমিদের প্রতি জলে ফোটা পদ্মফুল বাতাসে পাপড়ি মেলে নিজেকে যেন মেলে ধরেছেন। এই বিলের মতো এতো পদ্মফুল এক সাথে কোথাও দেখেনি বলে অনেকেই জানান। বিলটিতে বোরো আবাদের পর বর্ষার শুরুতেই পদ্মফুলের গাছগুলো বেড়ে উঠে। আষাঢ় মাস থেকে সেখানে পদ্মফুল ফুটে। তবে আশ্বিন কার্তিক মাসে বিলটিতে লাখো পদ্মফুল ফুটে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ধারণ করে। সেই সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটকরা বিলটি ঘুরে মুগ্ধ হন। আবার অনেকেই পরিবারের লোকদেরকে পদ্মফুল দেখানোর জন্য ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল না ছিঁড়ার সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আবার পদ্মফুলের গাছগুলো সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। পদ্মফুলের পাশাপাশি বিলটিতে প্রতি বছর অর্ধকোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয়। সবকিছু মিলিয়ে বিলটি এলাকাবাসীর কাছে আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
সিংরইল বিলে বহুকাল ধরেই পদ্মফুল ফুটে আসছে। বিলের বিরল এ দৃশ্যের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলেও দূরের লোকদের অজানা ছিল। চার বছর আগে সংবাদসহ একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে এ বিলের পদ্মফুলের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর থেকেই বিলে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। বহু দূর থেকেও পর্যটকরা সেখানে ছুটে আসছেন। পদ্মফুলের বাহার দেখে তারা মুগ্ধ হচ্ছেন। তবে অনেক পর্যটক পদ্মফুল তুলে স্বজনদেরকে উপহার দিতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিলের সৌর্ন্দয বিনস্ট হচ্ছে বলে স্থানীয় সমাজকর্মী রাহুল বিশ^াস জানান। তিনি জানান, প্রতিদিন কম করে হলে চার হাজার পদ্মফুল তোলে নেয়া হচ্ছে। এতে বিলের রূপ নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান। কবি ও ছড়াকার শাহজাহান কবীর জানান, তিনি অনেক বিলে পদ্মফুল ফোটার দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু সিংরইল বিলের মতো এতো পদ্মফুল ফুটতে তিনি দেখেননি । প্রকৃতির এ অপরূপ দৃশ্য দেখে তিনি নিজেকে যেনো হারিয়ে ফেলেন বলে জানান।
এদিকে দূরদূরান্ত থেকে পদ্মফুল দেখতে আসা পর্যটকরা যাওয়ার রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে দর্শনার্থীদের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় লোকজন রাস্তাটিকে কিছু ইট সুরকি ফেলে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেছেন। এরপরও রাস্তাটি কাঁচা ও মাঝে মাঝে গর্ত থাকায় সেখানে কোনো যানবাহন চলাচল করে না বলে জানা গেছে।
দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটির উন্নয়ন হলে একদিকে পদ্মফুল দেখতে আসা পর্যটকদের যেমন সুবিধা হবে, তেমনী কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পরিবহন করে তাদের বাড়িতে নিতে পারবে। স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, বিলে আসার রাস্তাটি একেবারেই খারাপ ছিল। এলাকাবাসী নিজেরাই রাস্তাটিতে কিছু ইট ও সুরকি ফেলেছে। রাস্তা খারাপ থাকায় বিল থেকে উৎপাদিত পণ্য বাড়িতে নিতে কৃষকদের খুবই কষ্ট হয় বলে তিনি জানান।
গুজাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাসুদ জানান, সিংরইল বিলের রাস্তা উন্নয়নসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি পর্যটকদের সুবিধার জন্যে যা যা করনীয় তা করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।