চুয়াডাঙ্গা : অসাধু মৎস্যজীবীরা নদীর বুকে পেতেছে কারেন্ট জালের ফাঁদ -সংবাদ
চুয়াডাঙ্গার প্রাণপ্রবাহ মাথাভাঙ্গা নদী আজ হুমকির মুখে। একদিকে নদী বাচাও আন্দোলন চলছে বছরের পর বছর, অন্যদিকে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী নদীর বুকে গেথে দিচ্ছে বাশের আড়াআড়ি বাধ, আর ফাঁদ পেতেছে চিকন সুতি ও কারেন্ট জালে। এই ফাঁদের শিকার হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক মাছ, আর ধ্বংসের পথে দেশীয় প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা।
দামুড়হুদা উপজেলার বাস্তপুর, সুবলপুর ও আমডাঙ্গা ঘুরে দেখা গেছে ভয়াবহ এক চিত্র নদীর বুকজুড়ে একের পর এক বাশের বাধ, তার মাঝখানে কারেন্ট জালের জালচক্র। এসব বাধের কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোত প্রায় থমকে গেছে। পানি না বইলে নদীর তলদেশে জমছে পলি, দ্রুত কমে যাচ্ছে নাব্যতা। চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রাণের নদী যেন ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে মানুষের হাতেই।
বাস্তপুর গ্রামের শাহারতপাড়ায় নদীর মাঝ বরাবর বিশাল বাধ গড়ে তুলেছেন স্থানীয় আক্তার হাসান ও কলিম নামের দুজন মৎস্যজীবী। সুবলপুরের গাঙপাড়ার মসজিদের নিচে একইভাবে বাধ বসিয়েছেন লক্ষণ হালদার ও তার সহযোগীরা। আমডাঙ্গা গ্রামের গোসলাঘাটের নিচে জয়দেব হালদারসহ আরও কয়েকজন মিলে নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে তুলেছেন ছোট-বড় ডজনখানেক বাধ দিয়ে। ফলে এখন সেই নদীপথে নৌকা নয়, দেখা মেলে শুধু বাঁশের জঙ্গল আর ঝুলন্ত জালের গহ্বর।
স্থানীয় জেলেরা জানান, এসব বাধে দিনে রাতে চলে মাছ ধরার উৎসব। চিকন সুতি ও কারেন্ট জালে ডিমওয়ালা মা মাছ থেকে শুরু করে ছোট পোনা পর্যন্ত কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। ফলস্বরূপ, প্রতি বছর দেশীয় মাছের পরিমাণ ভয়াবহভাবে কমছে।
মাথাভাঙ্গা নদী বাচাও আন্দোলনের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুনসি বলেন,আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীটিকে বাঁচাতে আন্দোলন করছি। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে নদীর বুক দখল হচ্ছে, তাতে নদী রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাথাভাঙ্গা শুধু একটি নদী নয় এটাই চুয়াডাঙ্গার প্রাণ, আমাদের অক্সিজেন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মহলদার জানান, আমরা বিষয়টি জানি। ইতোমধ্যে অবৈধ বাধ উচ্ছেদের জন্য অভিযান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তিথি মিত্র বলেন,মাথাভাঙ্গা নদী আমাদের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে অবৈধভাবে বাধ দিলে নদীর প্রবাহ ব্যাহত হয়, নাব্যতা কমে, আর দেশীয় মাছের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। প্রশাসন খুব শিগগিরই এসব অবৈধ বাধ ভেঙে দেবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
মাথাভাঙ্গা নদী একসময় ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর আশীর্বাদ। এখন সেই নদী বাচাতে মানুষেরই লড়াই। যদি এখনই সবাই এগিয়ে না আসে, আগামী প্রজন্ম হয়তো জানবেই না চুয়াডাঙ্গায় কোনো একসময় এমন এক নদী ছিল, যার বুক জুড়ে বইতো জীবনের স্রোত।
চুয়াডাঙ্গা : অসাধু মৎস্যজীবীরা নদীর বুকে পেতেছে কারেন্ট জালের ফাঁদ -সংবাদ
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গার প্রাণপ্রবাহ মাথাভাঙ্গা নদী আজ হুমকির মুখে। একদিকে নদী বাচাও আন্দোলন চলছে বছরের পর বছর, অন্যদিকে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী নদীর বুকে গেথে দিচ্ছে বাশের আড়াআড়ি বাধ, আর ফাঁদ পেতেছে চিকন সুতি ও কারেন্ট জালে। এই ফাঁদের শিকার হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক মাছ, আর ধ্বংসের পথে দেশীয় প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা।
দামুড়হুদা উপজেলার বাস্তপুর, সুবলপুর ও আমডাঙ্গা ঘুরে দেখা গেছে ভয়াবহ এক চিত্র নদীর বুকজুড়ে একের পর এক বাশের বাধ, তার মাঝখানে কারেন্ট জালের জালচক্র। এসব বাধের কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোত প্রায় থমকে গেছে। পানি না বইলে নদীর তলদেশে জমছে পলি, দ্রুত কমে যাচ্ছে নাব্যতা। চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রাণের নদী যেন ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে মানুষের হাতেই।
বাস্তপুর গ্রামের শাহারতপাড়ায় নদীর মাঝ বরাবর বিশাল বাধ গড়ে তুলেছেন স্থানীয় আক্তার হাসান ও কলিম নামের দুজন মৎস্যজীবী। সুবলপুরের গাঙপাড়ার মসজিদের নিচে একইভাবে বাধ বসিয়েছেন লক্ষণ হালদার ও তার সহযোগীরা। আমডাঙ্গা গ্রামের গোসলাঘাটের নিচে জয়দেব হালদারসহ আরও কয়েকজন মিলে নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে তুলেছেন ছোট-বড় ডজনখানেক বাধ দিয়ে। ফলে এখন সেই নদীপথে নৌকা নয়, দেখা মেলে শুধু বাঁশের জঙ্গল আর ঝুলন্ত জালের গহ্বর।
স্থানীয় জেলেরা জানান, এসব বাধে দিনে রাতে চলে মাছ ধরার উৎসব। চিকন সুতি ও কারেন্ট জালে ডিমওয়ালা মা মাছ থেকে শুরু করে ছোট পোনা পর্যন্ত কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। ফলস্বরূপ, প্রতি বছর দেশীয় মাছের পরিমাণ ভয়াবহভাবে কমছে।
মাথাভাঙ্গা নদী বাচাও আন্দোলনের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুনসি বলেন,আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীটিকে বাঁচাতে আন্দোলন করছি। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে নদীর বুক দখল হচ্ছে, তাতে নদী রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাথাভাঙ্গা শুধু একটি নদী নয় এটাই চুয়াডাঙ্গার প্রাণ, আমাদের অক্সিজেন।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মহলদার জানান, আমরা বিষয়টি জানি। ইতোমধ্যে অবৈধ বাধ উচ্ছেদের জন্য অভিযান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তিথি মিত্র বলেন,মাথাভাঙ্গা নদী আমাদের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে অবৈধভাবে বাধ দিলে নদীর প্রবাহ ব্যাহত হয়, নাব্যতা কমে, আর দেশীয় মাছের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। প্রশাসন খুব শিগগিরই এসব অবৈধ বাধ ভেঙে দেবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
মাথাভাঙ্গা নদী একসময় ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর আশীর্বাদ। এখন সেই নদী বাচাতে মানুষেরই লড়াই। যদি এখনই সবাই এগিয়ে না আসে, আগামী প্রজন্ম হয়তো জানবেই না চুয়াডাঙ্গায় কোনো একসময় এমন এক নদী ছিল, যার বুক জুড়ে বইতো জীবনের স্রোত।