রাজশাহীর প্রাণপ্রবাহ ছিল যে বারনই নদ, আজ তা পরিণত হয়েছে বিষাক্ত এক নর্দমায়। শহরের হাসপাতাল, কলকারখানা ও শিল্পাঞ্চলের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ড্রেন ও খালের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে নদীতে। ফলে নদীর পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে উঠেছে। শুধু মানুষ নয়, নদের মাছও মরছে, হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা। রাজশাহী শহরের অপরিশোধিত বর্জ্যে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে বারনই নদ। এই নদীর পানি ব্যবহার করায় রাজশাহী ও নাটোর জেলার নদী পাড়ের প্রায় তিন লাখ মানুষ নানা জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাজশাহীর বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ অনুযায়ী, শিশু-বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ দাদ, ফাঙ্গাস, স্ক্যাবিস, খোসপাঁচড়া ও জকইচে আক্রান্ত। ব্যয়বহুল চিকিৎসায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। পাশাপাশি, নদের মাছ মারা যাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা। রাজশাহী শহরের হাসপাতাল, শিল্প এলাকা ও কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি ড্রেন, দুয়ারি খাল ও মহনন্দখালী খালের মাধ্যমে নওহাটায় গিয়ে বারনই নদে মিশছে। এতে নদের পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়েছে।
পবা উপজেলার নওহাটায় শত শত মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত। ভ্যানচালক শাহীন আলম বলেন, আমাদের মহল্লায় পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত। এক বছর ধরে আমি ও পরিবারের তিনজন ভুগছি, চিকিৎসাতেও কাজ হয়নি। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা রুবিনা বেগম জানান, তাঁর পরিবারের ছয়জন দেড় বছর ধরে আক্রান্ত।
রাজশাহী সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, বারনই নদের পানি ব্যবহার ও মাছ খাওয়ার কারণে চর্মরোগ ছড়াচ্ছে। জনগণকে এই পানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে সকাল ১০টা সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মানব বন্ধন্ধনে বক্তারা বলেন, পদ্মা নদী শুধু রাজশাহীর জীবন-প্রকৃতি নয়, এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধেরও অংশ। পদ্মা নদী উদ্ধার হলে রাজশাহী যানজটমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব আধুনিক শহরে রূপ নিতে পারবে। বক্তারা আরও বলেন, দেশের প্রায় সব নদ-নদী এখন দখল ও দূষণের কবলে। অবৈধ স্থাপনা এবং দখল-দূষণের কারণে পদ্মার স্বাভাবিক প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অবিলম্বে পদ্মার অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদী খনন, বর্জ্য ও পলিথিন অপসারণের দাবি জানান বক্তারা। তাঁদের মতে, নদী টিকলে পরিবেশ টিকবে; আর নদী বাঁচলে পরিবেশও বাঁচবে। রাজশাহীর প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদ্মা নদীকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সকাল ১০টা সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী কমিটির উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন পরিবেশকর্মী, শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী জেলার সভাপতি ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, বাপা রাজশাহী জেলার ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম নবী রনি, সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজকর্মী সম্রাট রায়হান এবং সাংবাদিক ও সমাজসেবক মো. অলিউর রহমান বাবু। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী সতর্ক করে বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে জরুরি ভিত্তিতে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করতে হবে, নইলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে।
রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাসুদ জানান, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন জানান, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন চলছে।
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
রাজশাহীর প্রাণপ্রবাহ ছিল যে বারনই নদ, আজ তা পরিণত হয়েছে বিষাক্ত এক নর্দমায়। শহরের হাসপাতাল, কলকারখানা ও শিল্পাঞ্চলের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ড্রেন ও খালের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে নদীতে। ফলে নদীর পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে উঠেছে। শুধু মানুষ নয়, নদের মাছও মরছে, হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা। রাজশাহী শহরের অপরিশোধিত বর্জ্যে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে বারনই নদ। এই নদীর পানি ব্যবহার করায় রাজশাহী ও নাটোর জেলার নদী পাড়ের প্রায় তিন লাখ মানুষ নানা জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাজশাহীর বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ অনুযায়ী, শিশু-বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ দাদ, ফাঙ্গাস, স্ক্যাবিস, খোসপাঁচড়া ও জকইচে আক্রান্ত। ব্যয়বহুল চিকিৎসায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। পাশাপাশি, নদের মাছ মারা যাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা। রাজশাহী শহরের হাসপাতাল, শিল্প এলাকা ও কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি ড্রেন, দুয়ারি খাল ও মহনন্দখালী খালের মাধ্যমে নওহাটায় গিয়ে বারনই নদে মিশছে। এতে নদের পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়েছে।
পবা উপজেলার নওহাটায় শত শত মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত। ভ্যানচালক শাহীন আলম বলেন, আমাদের মহল্লায় পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত। এক বছর ধরে আমি ও পরিবারের তিনজন ভুগছি, চিকিৎসাতেও কাজ হয়নি। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা রুবিনা বেগম জানান, তাঁর পরিবারের ছয়জন দেড় বছর ধরে আক্রান্ত।
রাজশাহী সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, বারনই নদের পানি ব্যবহার ও মাছ খাওয়ার কারণে চর্মরোগ ছড়াচ্ছে। জনগণকে এই পানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে সকাল ১০টা সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মানব বন্ধন্ধনে বক্তারা বলেন, পদ্মা নদী শুধু রাজশাহীর জীবন-প্রকৃতি নয়, এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধেরও অংশ। পদ্মা নদী উদ্ধার হলে রাজশাহী যানজটমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব আধুনিক শহরে রূপ নিতে পারবে। বক্তারা আরও বলেন, দেশের প্রায় সব নদ-নদী এখন দখল ও দূষণের কবলে। অবৈধ স্থাপনা এবং দখল-দূষণের কারণে পদ্মার স্বাভাবিক প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অবিলম্বে পদ্মার অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদী খনন, বর্জ্য ও পলিথিন অপসারণের দাবি জানান বক্তারা। তাঁদের মতে, নদী টিকলে পরিবেশ টিকবে; আর নদী বাঁচলে পরিবেশও বাঁচবে। রাজশাহীর প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদ্মা নদীকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সকাল ১০টা সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী কমিটির উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন পরিবেশকর্মী, শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী জেলার সভাপতি ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, বাপা রাজশাহী জেলার ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম নবী রনি, সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজকর্মী সম্রাট রায়হান এবং সাংবাদিক ও সমাজসেবক মো. অলিউর রহমান বাবু। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী সতর্ক করে বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে জরুরি ভিত্তিতে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করতে হবে, নইলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে।
রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাসুদ জানান, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন জানান, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন প্রকল্প প্রণয়ন চলছে।