মানিকগঞ্জ পৌর শহরের পোড়রা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামান্য বৃষ্টিতেই খেলার মাঠ ও সামনের পথ পানিতে ডুবে যায়। এতে শুধু লেখাপড়াই নয়, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলার শিক্ষার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
বর্তমানে ৭০৫ জন শিক্ষার্থী ও ১৪ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। তবে জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা।
কিছুদিনের টানা বৃষ্টির পর সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ভবনের সামনের মাঠজুড়ে পানি জমে আছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পানি ও কাদামাখা পথ ধরে বিদ্যালয় ভবনে প্রবেশ করছে। মাঠে খেলাধুলা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোও কষ্টকর। আবার মাঠে জমে থাকা পানির কারণে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের বাসাবাড়ির পানি ও কাদার মিশ্রণে তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিদ্যালয়ের একাধিক শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ স্পষ্ট, আর প্রধান ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম জানায়, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ ভরে যায় পানিতে। তখন আমরা পানি পাড়িয়েই ক্লাসে যাই। খেলাধুলা বন্ধ থাকে। আমাদের শরীরচর্চা হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিহা রোজা বলে, ‘কাদা আর দুর্গন্ধ হয়। ক্লাসে বসে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খেলতে পারিনা। সব সময় ক্লাসেই বসে থাকি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীপা মণ্ডল বলেন, ‘একজন শিশুর বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা অপরিহার্য। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর আমাদের চলাচলেও অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আরেকজন সহকারী শিক্ষক জুবায়ের রহমান যোগ করেন, ‘আমাদের প্রধান ভবনটাও ঝুঁকিপূর্ণ। আর মাঠে পানি জমে থাকায় অভিভাবকরাও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এমন পরিবেশে পড়াশোনার প্রতি শিশুদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’
অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়া করা ভোগান্তির হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি ও কাদা পার হয়ে যেতে হয়। এভাবে কীভাবে শিশুদের পড়াশোনা টিকবে? ওরা এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যেতে চায় না। আমরা চাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বার্থে দ্রুত স্কুলের মাঠটিকে সংস্কার করা হোক।’
আরেকজন অভিভাবক কনক ইয়াসমিন জানান, ‘আমরা চাই সন্তানরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও অংশ নিক। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে খেলাধুলা একেবারেই বন্ধ। এটা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আগে আমরা এই স্কুলের মাঠে বসেই অপেক্ষা করতাম। আর এখন আমাদের রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, ‘অবকাঠামোগত দুর্বলতা, কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কারণে এখন এটি শিশুদের জন্য দুঃসহ পরিবেশ তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, দুর্গন্ধে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না, আর অভিভাবকরা প্রতিদিনের ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মাঝে আমরা মাঠের পানি বের করে দেওয়ার জন্য পাইপ লাগিয়েছিলাম। পরে সেটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আবারো শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জেনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে পানি নিষ্কাশন ও মাঠ সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শেখ মেজবাহ উল সাবেরিন বলেন, ‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অপরিহার্য অংশ। তাই এ মাঠ সংস্কারের বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমার দপ্তরের যেকোনো উপযুক্ত প্রকল্পের আওতায় খুব দ্রুত মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। যেহেতু আমি এ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, তাই বিদ্যালয়টিকে আরও সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে সাজানোর জন্য আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
মানিকগঞ্জ পৌর শহরের পোড়রা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামান্য বৃষ্টিতেই খেলার মাঠ ও সামনের পথ পানিতে ডুবে যায়। এতে শুধু লেখাপড়াই নয়, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলার শিক্ষার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
বর্তমানে ৭০৫ জন শিক্ষার্থী ও ১৪ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। তবে জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা।
কিছুদিনের টানা বৃষ্টির পর সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ভবনের সামনের মাঠজুড়ে পানি জমে আছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পানি ও কাদামাখা পথ ধরে বিদ্যালয় ভবনে প্রবেশ করছে। মাঠে খেলাধুলা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোও কষ্টকর। আবার মাঠে জমে থাকা পানির কারণে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের বাসাবাড়ির পানি ও কাদার মিশ্রণে তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিদ্যালয়ের একাধিক শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ স্পষ্ট, আর প্রধান ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম জানায়, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ ভরে যায় পানিতে। তখন আমরা পানি পাড়িয়েই ক্লাসে যাই। খেলাধুলা বন্ধ থাকে। আমাদের শরীরচর্চা হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিহা রোজা বলে, ‘কাদা আর দুর্গন্ধ হয়। ক্লাসে বসে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খেলতে পারিনা। সব সময় ক্লাসেই বসে থাকি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীপা মণ্ডল বলেন, ‘একজন শিশুর বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা অপরিহার্য। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর আমাদের চলাচলেও অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আরেকজন সহকারী শিক্ষক জুবায়ের রহমান যোগ করেন, ‘আমাদের প্রধান ভবনটাও ঝুঁকিপূর্ণ। আর মাঠে পানি জমে থাকায় অভিভাবকরাও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এমন পরিবেশে পড়াশোনার প্রতি শিশুদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’
অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়া করা ভোগান্তির হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি ও কাদা পার হয়ে যেতে হয়। এভাবে কীভাবে শিশুদের পড়াশোনা টিকবে? ওরা এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যেতে চায় না। আমরা চাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বার্থে দ্রুত স্কুলের মাঠটিকে সংস্কার করা হোক।’
আরেকজন অভিভাবক কনক ইয়াসমিন জানান, ‘আমরা চাই সন্তানরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও অংশ নিক। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে খেলাধুলা একেবারেই বন্ধ। এটা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আগে আমরা এই স্কুলের মাঠে বসেই অপেক্ষা করতাম। আর এখন আমাদের রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, ‘অবকাঠামোগত দুর্বলতা, কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কারণে এখন এটি শিশুদের জন্য দুঃসহ পরিবেশ তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, দুর্গন্ধে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না, আর অভিভাবকরা প্রতিদিনের ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মাঝে আমরা মাঠের পানি বের করে দেওয়ার জন্য পাইপ লাগিয়েছিলাম। পরে সেটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আবারো শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জেনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে পানি নিষ্কাশন ও মাঠ সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শেখ মেজবাহ উল সাবেরিন বলেন, ‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অপরিহার্য অংশ। তাই এ মাঠ সংস্কারের বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমার দপ্তরের যেকোনো উপযুক্ত প্রকল্পের আওতায় খুব দ্রুত মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। যেহেতু আমি এ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, তাই বিদ্যালয়টিকে আরও সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে সাজানোর জন্য আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।’