alt

সরকারের আশ্বাসে শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

মঙ্গলবার সরকার সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উল্লাস -সংবাদ

টানা আন্দোলনের মুখে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে আজই ক্লাসে ফিরে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

২ ধাপে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

আজই শ্রেণীকক্ষে ফিরছেন শিক্ষকরা

‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফেরার আশা প্রধান উপদেষ্টার

বাসা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ শতাংশ ভাতা পাবেন। এর মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে সাড়ে ৭ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা। বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার,(২১ অক্টোবর ২০২৫) শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ১০ম দিনে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী বেতন স্কেলে বর্ণিত অতিরিক্ত সুবিধাটি সমন্বয় করতে হবে। এমপিও নীতিমালা ও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে হবে। বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বকেয়া পাবেন না।’

এ ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে বলে জানিয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, এ ভাতাসংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যত কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফেরার আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টার

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নব উদ্যমে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অবদান রাখবেন বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সরকার দুই ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এরপর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তবে বাস্তবতা হল, ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতিশীল হলেও এখনই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর মত সামর্থ্য অর্থনীতিতে ফেরেনি। তাই সরকারকে বাস্তবতার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে, আগামী বছরের জুলাই থেকে বাড়ি ভাড়া আরও সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে ছিলেন- শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিন দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল

এমপিও শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে তিন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবিগুলো হলো- মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ১০ম দিনে তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা আবারও পুননির্ধারণ করা হল। তবে তাদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা অপরিবর্তিত থাকছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সিআর) আবরারসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দুপুর পৌনে ১টায় শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিও শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বাস্তবসম্মত ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হল, বেসরকারি এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে? শিক্ষকরা আমাদের দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তাদের যে বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ঠ রকমভাবে কম।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিআর আবরার বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি। যতই আমরা চাই না কেন আমাদের মনে রাখতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সময় দেশের দায়িত্ব নিয়েছে তখন অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভঙ্গুর ছিল, সে অবস্থান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে কখনোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘সংশয় ছিল না’ মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘তবে আমাদের সম্পদের বিবেচনায় তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা (৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) নির্ধারিত হয়েছিল।’

এ সময় শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বুধবার (আজ) থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রেণীকক্ষে ফেরার ঘোষণা দেন।

এছাড়া এমপিও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ করতে এবং এমপিও শিক্ষকদের বদলি চালু করতে শিক্ষা উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান আজিজী।

ভাতা আগে যা বেড়েছিল

প্রথম দফায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। গত ৫ অক্টোবর এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।

এরপর গত ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়। ১২ অক্টোবর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন।

এর মধ্যেই ১৯ অক্টোবর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্ধারণ করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণে নিজেদের দাবিতে অনড় অবস্থান নেন।

এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পেতেন, যা দুই দফায় বাড়িয়ে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করা হয়েছে।

এমপিও শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেতেন। তবে গত মে মাসে বাড়ানোর পর শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।

ছবি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আমন খেতে কারেন্ট পোকা ছড়িয়ে পড়েছে

ছবি

নারী গণমাধ্যমকর্মীর আত্মহত্যা: সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি

ছবি

দারিদ্র্য দমাতে পারেনি সালমানের অদম্য স্পৃহা, এবার কামিল পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫

ছবি

২৯ বছর পর স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

ছবি

মেহেরপুরে নিখোঁজ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

বরুড়ায় বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

ঝিনাইদহে ৭ দফা দাবিতে সওজ কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেরপুরে জোরপূর্বক জায়গা দখলের অভিযোগ

ছবি

ধোবাউড়ায় অনলাইন গেইমে আসক্ত শিশু-কিশোর, হুমকির মুখে ভবিষৎ প্রজন্ম

ছবি

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

ছবি

নড়াইলে প্রকল্পের অগ্রগতি অবহিতকরণ ও পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

কেশবপুরে আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি আবাদে ব্যস্ত কৃষক

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে অসহায় ব্যক্তিদের পাশে চরহাজারী যুব সংঘ

গজারিয়ায় ফসলের সঠিক পরিচর্যা বিষয়ে মতবিনিময়

ছবি

সিরাজদিখানে গাড়ি চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

ছবি

আদালতের নির্দেশে কবর থেকে ৪ মরদেহ উত্তোলন

ছবি

মনপুরায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সাঘাটায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

চান্দিনায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ

ছবি

কেন্দুয়ায় ছাত্রদলের নেতা দিদারকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার

ছবি

পীরগাছায় হাত ধোয়া দিবস উৎযাপন

ছবি

ভাঙ্গুড়ায় নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে ছাগল ও ঘরনির্মাণ সামগ্রী বিতরণ

ছবি

রাউজানে শ্যামা পূজা উপলক্ষে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা, বস্ত্র বিতরণ

ছবি

পাঁচবিবিতে চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, ধ্বংস

ছবি

অযত্ন অবেলায় দুমকিতে পড়ে আছে কোটি টাকার ফেরি

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক-হেলাপার নিহত

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ৭ বাংলাদেশি আটক

ছবি

কাঠালিয়ায় দূষণ প্রতিরোধে র‌্যালি

ছবি

বড়াইগ্রামে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

বাইশারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু

ছবি

মোরেলগঞ্জে গোপালপুর মহাবিদ্যালয়ের ১৮ পরীক্ষার্থীর একজনও পাশ করেননি

ছবি

শাহজাদপুরে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

ছবি

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলা

ছবি

সাতক্ষীরায় নবজাতককে পানিতে ফেলে হত্যা, মা গ্রেপ্তার

ছবি

সেনবাগে আনসার ভিডিপি ব্যাংকে দুর্নীতি, ম্যানেজার পলাতক

ছবি

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের ঝরেপড়া রোধে ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ

tab

সরকারের আশ্বাসে শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার সরকার সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উল্লাস -সংবাদ

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

টানা আন্দোলনের মুখে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে আজই ক্লাসে ফিরে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

২ ধাপে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

আজই শ্রেণীকক্ষে ফিরছেন শিক্ষকরা

‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফেরার আশা প্রধান উপদেষ্টার

বাসা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ শতাংশ ভাতা পাবেন। এর মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে সাড়ে ৭ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা। বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার,(২১ অক্টোবর ২০২৫) শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ১০ম দিনে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী বেতন স্কেলে বর্ণিত অতিরিক্ত সুবিধাটি সমন্বয় করতে হবে। এমপিও নীতিমালা ও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে হবে। বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বকেয়া পাবেন না।’

এ ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে বলে জানিয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, এ ভাতাসংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যত কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘নব উদ্যমে’ শ্রেণীকক্ষে ফেরার আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টার

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নব উদ্যমে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অবদান রাখবেন বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সরকার দুই ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এরপর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তবে বাস্তবতা হল, ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতিশীল হলেও এখনই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর মত সামর্থ্য অর্থনীতিতে ফেরেনি। তাই সরকারকে বাস্তবতার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে, আগামী বছরের জুলাই থেকে বাড়ি ভাড়া আরও সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে ছিলেন- শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিন দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল

এমপিও শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে তিন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবিগুলো হলো- মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ১০ম দিনে তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা আবারও পুননির্ধারণ করা হল। তবে তাদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা অপরিবর্তিত থাকছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সিআর) আবরারসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দুপুর পৌনে ১টায় শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিও শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বাস্তবসম্মত ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হল, বেসরকারি এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে? শিক্ষকরা আমাদের দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তাদের যে বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ঠ রকমভাবে কম।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিআর আবরার বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি। যতই আমরা চাই না কেন আমাদের মনে রাখতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সময় দেশের দায়িত্ব নিয়েছে তখন অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভঙ্গুর ছিল, সে অবস্থান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে কখনোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘সংশয় ছিল না’ মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘তবে আমাদের সম্পদের বিবেচনায় তাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা (৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) নির্ধারিত হয়েছিল।’

এ সময় শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বুধবার (আজ) থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রেণীকক্ষে ফেরার ঘোষণা দেন।

এছাড়া এমপিও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ করতে এবং এমপিও শিক্ষকদের বদলি চালু করতে শিক্ষা উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান আজিজী।

ভাতা আগে যা বেড়েছিল

প্রথম দফায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। গত ৫ অক্টোবর এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।

এরপর গত ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়। ১২ অক্টোবর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন।

এর মধ্যেই ১৯ অক্টোবর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্ধারণ করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণে নিজেদের দাবিতে অনড় অবস্থান নেন।

এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পেতেন, যা দুই দফায় বাড়িয়ে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করা হয়েছে।

এমপিও শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেতেন। তবে গত মে মাসে বাড়ানোর পর শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।

back to top