পড়ালেখা চালাতে হিমশিম খাওয়া অসহায় পরিবারের সহায়ক শক্তি সালমান ফারসী বুলু
বাবা-মায়ের সঙ্গে মেধাবী সালমান ফারসী বুলু -সংবাদ
কুড়িগ্রামের অদম্য মেধাবী সালমান ফারসী বুলু। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে দরিদ্র এ শিক্ষার্থী। এখন লক্ষ্য মেডিকেলে কলেজে ভর্তি। কিন্তু পথটা সহজ নয়, এটা স্পষ্ট জানেন বুলু। একদিকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি অন্যদিকে দারিদ্র।
দিনমজুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের টানাপোড়েন আরও বেড়ে যায়। তখন ৮ম শ্রেণীর ছাত্র বড় ভাই দুলু মিয়া পড়ালেখায় ইতি টানেন। কাঠমিস্ত্রি হয়ে সংসারের হাল ধরেন। সালমান ফারসী বুলু তখনও অনেকটাই ছোট। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে,
অভাব-অনটনে হয়তো বড় ভাইয়ের মতো তারও মাঝপথে পড়ালেখা ছাড়তে হবে।
কিন্তু তার ইচ্ছাটা দমেনি। মাদ্রাসা থেকে যাতে ঝড়ে পড়তে না হয়, সেজন্য নিজেই নিলেন অনেকটা দায়িত্ব। সময় সময়ে দিনমজুরি করে অল্প কিছু আয় করতেন। যা সংসারে কিছুটা কাজে লাগে। আর ছোট থেকেই সালমান ফারসী প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছিল। তাই তার পড়াশোনায় বড় ভাইসহ স্বশিক্ষিত বাবা-মা কখনোই বাধা দেননি।
সালমান ফারসী পড়াশোনার খরচ জোটাতে প্রতি বছর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ২-৩ মাস শ্রমের কাজে চলে যেত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তায় মাটির কাজ ও রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতো তার কিছুটা পরিবারকে দিয়ে বাকিটা পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করতো। শিক্ষকরা মাদ্রাসায় ক্লাস ফাঁকি দেয়ায় রাগারাগি করলেও শ্রম-ঘামের কথা কাউকে বলতো না সে। এভাবেই মেধাবী এ শিক্ষার্থী এগিয়ে চলেছেন নিজ লক্ষ্যপূরণে।
সরজমিনে মেধাবী এ শিক্ষার্থীর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও গৃহিণী দুলালী বেগম দম্পতির ছোট সন্তান। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট হওয়ায় আদরের কমতি নেই। পরিবারের সম্বল বলতে মাথা গোঁজার ৮ শতক বসতভিটা। প্রতিদিনের আয়ের ওপর চলে সংসারটি। এমন সংসারে আলোর প্রদীপ নিয়ে জন্ম নিয়েছে সালমান ফারসী বুলু। সে পড়াশোনা করে বড়ভিটা বাজারে অবস্থিত ‘শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায়’। বর্তমানে সে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করছে।
আলাপকালে সালমান ফারসী বুলু জানায়, নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বুঝতে পারি এসএসসিতে ফরম ফিলাপের টাকা যোগার করতে না পারলে পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি পরিবারে অর্থ সংকটের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কায়িক শ্রমের কাজে লেগে পরেছে। তারা আর পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারেনি। এজন্য নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য বাইরে কাজ করতে যাই। তারপর টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। তবে শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এতদূর এগুতে পারতাম না। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। যদিও আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। ঝুঁকি থাকার কারণে বিশ^বিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোনো বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
সবার কাছে দোয়া চায় সালমান বুলু। সালমানের মা দুলালী বেগম জানান, সবাই বলতেছিল ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে এখন আরও পড়াতে হবে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিল। আমাদের কোনো টাকা নাই, ওকে ভর্তির জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা দরকার। এই অবস্থায় বাড়িতে একটা খড়ের গাদা ছিল সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এরপর একমাত্র গরুটাও বিক্রি করে ১২ শতক জমি বন্দক নিয়েছি। এছাড়া এখন আমাদের হাতে আর কোনো কিছু নাই।
সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত আমি পড়াশোনা করতে পেরেছি। সালমান ফারসী খুব মেধাবী। আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। আমার ছোট ভাই যাতে পড়াশোনা করতে পারে সে ব্যাপারে যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। তবে সামর্থবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, আমার বয়স হয়েছে কাজ করতে পারি না। এখন কষ্ট করে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন আপনারা সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।
শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্ররাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া জানান, গত বছর আমাদের মাদ্রাসা থেকে সালমান ফারসী বুলু এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার এইচএসসি কামিল পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবারসহ প্রতিবেশীদের। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। মেধাবী এ ছেলেটির স্বপ্নপূরণে সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। যোগাযোগে ০১৭৯৮৯২২৯৯৬ (সালমান ফারসী বুলু)।
পড়ালেখা চালাতে হিমশিম খাওয়া অসহায় পরিবারের সহায়ক শক্তি সালমান ফারসী বুলু
বাবা-মায়ের সঙ্গে মেধাবী সালমান ফারসী বুলু -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
কুড়িগ্রামের অদম্য মেধাবী সালমান ফারসী বুলু। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে দরিদ্র এ শিক্ষার্থী। এখন লক্ষ্য মেডিকেলে কলেজে ভর্তি। কিন্তু পথটা সহজ নয়, এটা স্পষ্ট জানেন বুলু। একদিকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি অন্যদিকে দারিদ্র।
দিনমজুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের টানাপোড়েন আরও বেড়ে যায়। তখন ৮ম শ্রেণীর ছাত্র বড় ভাই দুলু মিয়া পড়ালেখায় ইতি টানেন। কাঠমিস্ত্রি হয়ে সংসারের হাল ধরেন। সালমান ফারসী বুলু তখনও অনেকটাই ছোট। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে,
অভাব-অনটনে হয়তো বড় ভাইয়ের মতো তারও মাঝপথে পড়ালেখা ছাড়তে হবে।
কিন্তু তার ইচ্ছাটা দমেনি। মাদ্রাসা থেকে যাতে ঝড়ে পড়তে না হয়, সেজন্য নিজেই নিলেন অনেকটা দায়িত্ব। সময় সময়ে দিনমজুরি করে অল্প কিছু আয় করতেন। যা সংসারে কিছুটা কাজে লাগে। আর ছোট থেকেই সালমান ফারসী প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছিল। তাই তার পড়াশোনায় বড় ভাইসহ স্বশিক্ষিত বাবা-মা কখনোই বাধা দেননি।
সালমান ফারসী পড়াশোনার খরচ জোটাতে প্রতি বছর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ২-৩ মাস শ্রমের কাজে চলে যেত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তায় মাটির কাজ ও রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতো তার কিছুটা পরিবারকে দিয়ে বাকিটা পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করতো। শিক্ষকরা মাদ্রাসায় ক্লাস ফাঁকি দেয়ায় রাগারাগি করলেও শ্রম-ঘামের কথা কাউকে বলতো না সে। এভাবেই মেধাবী এ শিক্ষার্থী এগিয়ে চলেছেন নিজ লক্ষ্যপূরণে।
সরজমিনে মেধাবী এ শিক্ষার্থীর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও গৃহিণী দুলালী বেগম দম্পতির ছোট সন্তান। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট হওয়ায় আদরের কমতি নেই। পরিবারের সম্বল বলতে মাথা গোঁজার ৮ শতক বসতভিটা। প্রতিদিনের আয়ের ওপর চলে সংসারটি। এমন সংসারে আলোর প্রদীপ নিয়ে জন্ম নিয়েছে সালমান ফারসী বুলু। সে পড়াশোনা করে বড়ভিটা বাজারে অবস্থিত ‘শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায়’। বর্তমানে সে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করছে।
আলাপকালে সালমান ফারসী বুলু জানায়, নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বুঝতে পারি এসএসসিতে ফরম ফিলাপের টাকা যোগার করতে না পারলে পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি পরিবারে অর্থ সংকটের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কায়িক শ্রমের কাজে লেগে পরেছে। তারা আর পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারেনি। এজন্য নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য বাইরে কাজ করতে যাই। তারপর টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। তবে শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এতদূর এগুতে পারতাম না। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। যদিও আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। ঝুঁকি থাকার কারণে বিশ^বিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোনো বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
সবার কাছে দোয়া চায় সালমান বুলু। সালমানের মা দুলালী বেগম জানান, সবাই বলতেছিল ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে এখন আরও পড়াতে হবে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিল। আমাদের কোনো টাকা নাই, ওকে ভর্তির জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা দরকার। এই অবস্থায় বাড়িতে একটা খড়ের গাদা ছিল সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এরপর একমাত্র গরুটাও বিক্রি করে ১২ শতক জমি বন্দক নিয়েছি। এছাড়া এখন আমাদের হাতে আর কোনো কিছু নাই।
সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত আমি পড়াশোনা করতে পেরেছি। সালমান ফারসী খুব মেধাবী। আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। আমার ছোট ভাই যাতে পড়াশোনা করতে পারে সে ব্যাপারে যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। তবে সামর্থবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, আমার বয়স হয়েছে কাজ করতে পারি না। এখন কষ্ট করে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন আপনারা সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।
শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্ররাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া জানান, গত বছর আমাদের মাদ্রাসা থেকে সালমান ফারসী বুলু এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার এইচএসসি কামিল পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবারসহ প্রতিবেশীদের। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। মেধাবী এ ছেলেটির স্বপ্নপূরণে সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। যোগাযোগে ০১৭৯৮৯২২৯৯৬ (সালমান ফারসী বুলু)।