আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ রোধে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
যারা মাঠের দিকে যাচ্ছেন অথবা ফিরছেন তাদের অধিকাংশের পিঠে ঝোলানো কীটনাশক স্প্রে করার মেশিন। সকল মাঠের চিত্র প্রায় একই রকম। কারণ তারা নিজেদের খেতের পোকা দমনে ব্যস্ত। কেননা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মাঠের পর মাঠের আমন ধান খেতে কারেন্ট পোকা (সবুজ গাছ ফড়িং) ও পচা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন কৃষকদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারেন্ট পোকা ও পচা রোগ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে
বিকেলে ভালো খেত দেখে এসে পরের দিন সকালে দেখছেন ধানগাছ শুকিয়ে গেছে
মাইকিংয়ে পরামর্শ প্রচারে নেমেছে একাধিক কীটনাশক কোম্পানি
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রেতে নির্মল পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ ঠেকাতে ধানখেতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন পরিস্থিতি এমন যে, বিকেলে ভাল খেত দেখে এসে পরের দিন সকালে গেলে দেখা যাচ্ছে ধানগাছগুলো মরে শুকিয়ে গেছে।
কাজেই ধানখেতে পোকার আক্রমণের তীব্রতায় কৃষকরা খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অথচ কৃষি কর্মকর্তারা এটাকে দেখছেন ব্যতিক্রম হিসেবে। কৃষকদের অভিযোগ, তাদের এমন বিপদের মুহূর্তে পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের ঠিকমতো পাশে পাচ্ছেন না। তবে কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির পক্ষ থেকে এমন অবস্থায় কি করণীয়, তার পরামর্শ দিতে প্রচার মাইক বের করে হাটে-মাঠে কৃষকদেরকে সচেতন করে চলছে।
অন্যদিকে মাঠে অত্যাধিক পরিমাণে কীটনাশক ছেটানোর কারণে নিরাপদ খাদ্য ও নির্মল পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার ইশ্বরবা, পাঁচ শ্রীরামপুর, আলাইপুর, সিংদহ, কমলাপুর, শ্রীরামপুর, নরেন্দ্রপুর, নিয়ামতপুর, বারোপাখিয়া, বলরামপুর, ভোলপাড়া, বিনোদপুর, কামালহাটসহ আরও বেশকিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে- কৃষকরা তাদের ধান খেত বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা কীটনাশক স্প্রে করার মেশিন পিঠে ঝুলিয়ে জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পানিতে গুলিয়ে স্প্রে করছেন। এদিকে
পোকার আক্রমণের তীব্রতায় দিশেহারা কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রচার করতে দেখা গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলাটিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৮ হাজার ৭শ’ ৩৪ হেক্টর জমিতে আমন করা হয়েছে।
একাধিক কৃষক জানান, বাদামি রঙের এক ধরনের ছোট ছোট পোকা ধানগাছের নরম কা-ে বসে ছিদ্র করে রস চুষে নিচ্ছে। এরপর ওই কা- শুকিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত খেত থেকে আশপাশের খেতগুলোতে এ পোকা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে এবং মাঠের পর মাঠের ধানখেত এভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তারা বলেন, বিগত দিনেও এ রোগের আক্রমণ দেখা গেছে। তখন কীটনাশক স্প্রে করলে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, কিন্ত এ বছর সপ্তাহে ১ বারের স্থলে ৩ বার স্প্রে করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক রেকবুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমের প্রথমদিকে মাঠে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন কারেন্ট পোকায় ধরেছে। যা মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। বিকেলে ভালো খেত দেখে বাড়ি এসে পরের দিন গেলে দেখা যাচ্ছে ধানগাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। সময় যত পার হচ্ছে এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ইতোমধ্যে তাদের মাঠের বেশকিছু খেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে।
কামালহাট গ্রামের কৃষক স্বরজিত বিশ্বাস জানান, ধানখেতগুলোতে প্রতিবছর কিছু কীটপতঙ্গের আক্রমণ থাকেই। কিন্ত এ বছর বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) ও পচা রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকগুণ বেশি। যে কারণে খেত বাঁচাতে কৃষকদের এখন ঘুম নেই। সকলের নজর এখন নিজের খেতের দিকে। কৃষকরা আক্রান্ত খেতে যেমন স্প্রে করছেন তেমন আক্রান্ত হওয়ার আগেও খেত বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছেনা।
শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মোজাহারুল ইসলাম জানান, পোকা দমনে এ বছর স্প্রে করেও ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কীটনাশকে মনে হচ্ছে বেশি একটা কাজ করছে না। ফলে একটু বেশি করেই খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। তারপরও কি হবে জানি না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনির সঙ্গে সরাসরি কথা বললে তিনি জানান, চলতি আমন মৌসুমের প্রথমদিকে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সে সময়ে কৃষকরা অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করেছেন। এর সঙ্গে বাদামি গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকা আসার ব্যাপারটা বেশ সম্পর্কযুক্ত। রোগ বালাইয়ের প্রশ্নে তিনি বিচ্ছিন্ন কিছু আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে এড়িয়ে যান।
মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার ও পরিবেশের প্রশ্নে তিনি বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার অবশ্যই নির্মল পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। সে কারণে প্রাথমিকভাবে তারা ফেরোমন ট্রাপ (যা পোকা মারার ফাঁদ) ব্যবহারের কথা বলে থাকেন। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ রোধে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
যারা মাঠের দিকে যাচ্ছেন অথবা ফিরছেন তাদের অধিকাংশের পিঠে ঝোলানো কীটনাশক স্প্রে করার মেশিন। সকল মাঠের চিত্র প্রায় একই রকম। কারণ তারা নিজেদের খেতের পোকা দমনে ব্যস্ত। কেননা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মাঠের পর মাঠের আমন ধান খেতে কারেন্ট পোকা (সবুজ গাছ ফড়িং) ও পচা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন কৃষকদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারেন্ট পোকা ও পচা রোগ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে
বিকেলে ভালো খেত দেখে এসে পরের দিন সকালে দেখছেন ধানগাছ শুকিয়ে গেছে
মাইকিংয়ে পরামর্শ প্রচারে নেমেছে একাধিক কীটনাশক কোম্পানি
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রেতে নির্মল পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ ঠেকাতে ধানখেতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন পরিস্থিতি এমন যে, বিকেলে ভাল খেত দেখে এসে পরের দিন সকালে গেলে দেখা যাচ্ছে ধানগাছগুলো মরে শুকিয়ে গেছে।
কাজেই ধানখেতে পোকার আক্রমণের তীব্রতায় কৃষকরা খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অথচ কৃষি কর্মকর্তারা এটাকে দেখছেন ব্যতিক্রম হিসেবে। কৃষকদের অভিযোগ, তাদের এমন বিপদের মুহূর্তে পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের ঠিকমতো পাশে পাচ্ছেন না। তবে কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির পক্ষ থেকে এমন অবস্থায় কি করণীয়, তার পরামর্শ দিতে প্রচার মাইক বের করে হাটে-মাঠে কৃষকদেরকে সচেতন করে চলছে।
অন্যদিকে মাঠে অত্যাধিক পরিমাণে কীটনাশক ছেটানোর কারণে নিরাপদ খাদ্য ও নির্মল পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার ইশ্বরবা, পাঁচ শ্রীরামপুর, আলাইপুর, সিংদহ, কমলাপুর, শ্রীরামপুর, নরেন্দ্রপুর, নিয়ামতপুর, বারোপাখিয়া, বলরামপুর, ভোলপাড়া, বিনোদপুর, কামালহাটসহ আরও বেশকিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে- কৃষকরা তাদের ধান খেত বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা কীটনাশক স্প্রে করার মেশিন পিঠে ঝুলিয়ে জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পানিতে গুলিয়ে স্প্রে করছেন। এদিকে
পোকার আক্রমণের তীব্রতায় দিশেহারা কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রচার করতে দেখা গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলাটিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৮ হাজার ৭শ’ ৩৪ হেক্টর জমিতে আমন করা হয়েছে।
একাধিক কৃষক জানান, বাদামি রঙের এক ধরনের ছোট ছোট পোকা ধানগাছের নরম কা-ে বসে ছিদ্র করে রস চুষে নিচ্ছে। এরপর ওই কা- শুকিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত খেত থেকে আশপাশের খেতগুলোতে এ পোকা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে এবং মাঠের পর মাঠের ধানখেত এভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তারা বলেন, বিগত দিনেও এ রোগের আক্রমণ দেখা গেছে। তখন কীটনাশক স্প্রে করলে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, কিন্ত এ বছর সপ্তাহে ১ বারের স্থলে ৩ বার স্প্রে করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে কষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক রেকবুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমের প্রথমদিকে মাঠে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন কারেন্ট পোকায় ধরেছে। যা মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। বিকেলে ভালো খেত দেখে বাড়ি এসে পরের দিন গেলে দেখা যাচ্ছে ধানগাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। সময় যত পার হচ্ছে এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ইতোমধ্যে তাদের মাঠের বেশকিছু খেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে।
কামালহাট গ্রামের কৃষক স্বরজিত বিশ্বাস জানান, ধানখেতগুলোতে প্রতিবছর কিছু কীটপতঙ্গের আক্রমণ থাকেই। কিন্ত এ বছর বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) ও পচা রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকগুণ বেশি। যে কারণে খেত বাঁচাতে কৃষকদের এখন ঘুম নেই। সকলের নজর এখন নিজের খেতের দিকে। কৃষকরা আক্রান্ত খেতে যেমন স্প্রে করছেন তেমন আক্রান্ত হওয়ার আগেও খেত বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছেনা।
শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মোজাহারুল ইসলাম জানান, পোকা দমনে এ বছর স্প্রে করেও ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কীটনাশকে মনে হচ্ছে বেশি একটা কাজ করছে না। ফলে একটু বেশি করেই খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। তারপরও কি হবে জানি না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনির সঙ্গে সরাসরি কথা বললে তিনি জানান, চলতি আমন মৌসুমের প্রথমদিকে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সে সময়ে কৃষকরা অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করেছেন। এর সঙ্গে বাদামি গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকা আসার ব্যাপারটা বেশ সম্পর্কযুক্ত। রোগ বালাইয়ের প্রশ্নে তিনি বিচ্ছিন্ন কিছু আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে এড়িয়ে যান।
মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার ও পরিবেশের প্রশ্নে তিনি বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার অবশ্যই নির্মল পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। সে কারণে প্রাথমিকভাবে তারা ফেরোমন ট্রাপ (যা পোকা মারার ফাঁদ) ব্যবহারের কথা বলে থাকেন। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।