কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের উপদ্রব থেকে রোপা আমন ধান রক্ষায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলোক ফাঁদ। বিশেষ করে ফসলের ক্ষতি করে এমন কারেন্ট পোকা, গান্ধি পোকা, মাজরা পোকা, চুঙ্গি পোকা ও বাদামী ঘাস ফড়িং দমনে জমিতে আলোক ফাঁদ/ পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার পাঙ্গাশী ইউনিয়নের আঞ্চলিক সড়কে নওদা শালুওয়া এলাকায় এ পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ধামাই নগর, সোনাখাড়া, ধুবিল, ঘুড়কা, চান্দাইকোনা, ধানগড়া, নলকা, পাঙ্গাশী, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন ও রায়গঞ্জ পৌরসভায় এ বছর ১৯ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে কাটারী ভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি-৪৯, ব্রিথ৫১, ব্রি-৩৪ ও ব্রিথ৩৬ জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধানগড়া ইউনিয়নের বুলাকি পুর গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন, বেল্লাল হোসেন, রায়গঞ্জ পৌরসভার বেতুয়া মহল্লার আব্দুল আহেদ, সাদ্দাম হোসেনসহ একাধিক চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রোপা আমন জমিতে রাসায়নিক সার দেয়ার পর থেকে বাদামী ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষার্থে কখনো কখনো কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তবে এ উপজেলার অনেক জায়গায় রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে/ কম করে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত আলোর মাধ্যমে রোপা আমন ধানের ক্ষেতে আলোক ফাঁদ বা ডাল পুঁতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
মূলত সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে রোপা আমন ক্ষেতের মাঝখানে অথবা পোকা আসে এমন জায়গায় শক্ত বাঁশ - কাঠ কিংবা ৩ টি লোহার দন্ড দিয়ে কাঠামো বানিয়ে সেখানে ১ টি পাত্রের মধ্যে পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার মিশানো হয়। পরে লোহা বাঁশ -কাঠের মাথায় ১ টি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ফাঁদ তৈরি করা হয়। আর বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুক্ষণ পর আলোর সাহায্যে ঐ পাত্রে আসতে শুরু করে উপকারি ও অপকারি পোকা। তখন সেখানে থাকা কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপকারি ও অপকারি পোকা নিরুপন করেন।
সেখানে উপকারি পোকা বেশি থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়কে প্রতিহত করতে পারলে সেখানকার রোপা আমন জমিতে আর কীটনাশক ব্যবহার করেন না।আর উপকারি পোকা কম থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়কে প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলে তখন কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা পত্র মোতাবেক প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এতে কৃষক যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করাই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষতিকারক কীটনাশক থেকে রক্ষা পায় উপকারি পোকা। এটিই আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতির সুফল।
অপরদিকে চান্দাইকোনা ইউনিয়নের রৌদ্র পুর গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, জমিতে ডাল পুঁতে ও আলোক ফাঁদ তৈরি করে তিনি তার জমিতে পোকা দমনে সফলতা পেয়েছেন। একই ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলোক ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অল্প পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন রোপা আমনের জমিতে। এতে তার কীটনাশক খরচ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের কম হয়েছে। এমন কথা বলেন, ধানগড়া ইউনিয়নের করিলা বাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান ও আব্দুল করিম।
রায়গঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জুলফিকার আলী ও পাঙ্গাশী ইউনিয়নের নওদা শালুওয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মুঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, রোপা আমনের ফসলি জমিতে পোতা ডাল গুলোর উপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এতে কৃষক কীটনাশকের খরচ কমিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম।
এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, পোকা-মাকড় ফসল নষ্ট করতে না পারে তার জন্য কৃষকদের আলোক ফাঁদ/ পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকা মাকড় নিধনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষক তার সুফলও পেয়েছেন। ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যয় অনেক কমে গেছে। যে কারণে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের উপদ্রব থেকে রোপা আমন ধান রক্ষায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আলোক ফাঁদ। বিশেষ করে ফসলের ক্ষতি করে এমন কারেন্ট পোকা, গান্ধি পোকা, মাজরা পোকা, চুঙ্গি পোকা ও বাদামী ঘাস ফড়িং দমনে জমিতে আলোক ফাঁদ/ পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার পাঙ্গাশী ইউনিয়নের আঞ্চলিক সড়কে নওদা শালুওয়া এলাকায় এ পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ধামাই নগর, সোনাখাড়া, ধুবিল, ঘুড়কা, চান্দাইকোনা, ধানগড়া, নলকা, পাঙ্গাশী, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন ও রায়গঞ্জ পৌরসভায় এ বছর ১৯ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে কাটারী ভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি-৪৯, ব্রিথ৫১, ব্রি-৩৪ ও ব্রিথ৩৬ জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধানগড়া ইউনিয়নের বুলাকি পুর গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন, বেল্লাল হোসেন, রায়গঞ্জ পৌরসভার বেতুয়া মহল্লার আব্দুল আহেদ, সাদ্দাম হোসেনসহ একাধিক চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রোপা আমন জমিতে রাসায়নিক সার দেয়ার পর থেকে বাদামী ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষার্থে কখনো কখনো কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তবে এ উপজেলার অনেক জায়গায় রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে/ কম করে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত আলোর মাধ্যমে রোপা আমন ধানের ক্ষেতে আলোক ফাঁদ বা ডাল পুঁতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
মূলত সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে রোপা আমন ক্ষেতের মাঝখানে অথবা পোকা আসে এমন জায়গায় শক্ত বাঁশ - কাঠ কিংবা ৩ টি লোহার দন্ড দিয়ে কাঠামো বানিয়ে সেখানে ১ টি পাত্রের মধ্যে পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার মিশানো হয়। পরে লোহা বাঁশ -কাঠের মাথায় ১ টি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ফাঁদ তৈরি করা হয়। আর বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুক্ষণ পর আলোর সাহায্যে ঐ পাত্রে আসতে শুরু করে উপকারি ও অপকারি পোকা। তখন সেখানে থাকা কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপকারি ও অপকারি পোকা নিরুপন করেন।
সেখানে উপকারি পোকা বেশি থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়কে প্রতিহত করতে পারলে সেখানকার রোপা আমন জমিতে আর কীটনাশক ব্যবহার করেন না।আর উপকারি পোকা কম থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়কে প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলে তখন কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা পত্র মোতাবেক প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এতে কৃষক যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করাই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষতিকারক কীটনাশক থেকে রক্ষা পায় উপকারি পোকা। এটিই আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতির সুফল।
অপরদিকে চান্দাইকোনা ইউনিয়নের রৌদ্র পুর গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, জমিতে ডাল পুঁতে ও আলোক ফাঁদ তৈরি করে তিনি তার জমিতে পোকা দমনে সফলতা পেয়েছেন। একই ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলোক ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অল্প পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন রোপা আমনের জমিতে। এতে তার কীটনাশক খরচ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের কম হয়েছে। এমন কথা বলেন, ধানগড়া ইউনিয়নের করিলা বাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান ও আব্দুল করিম।
রায়গঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জুলফিকার আলী ও পাঙ্গাশী ইউনিয়নের নওদা শালুওয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মুঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, রোপা আমনের ফসলি জমিতে পোতা ডাল গুলোর উপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এতে কৃষক কীটনাশকের খরচ কমিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম।
এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, পোকা-মাকড় ফসল নষ্ট করতে না পারে তার জন্য কৃষকদের আলোক ফাঁদ/ পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকা মাকড় নিধনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষক তার সুফলও পেয়েছেন। ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যয় অনেক কমে গেছে। যে কারণে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।