মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তবে এই সবের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বনগাঁও গ্রামের ‘কামিনী ভবন’। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এ জমিদারবাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়, তবু এটি শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে।
১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে, তখনকার পশ্চিমবঙ্গের যশোর জেলার বনগাঁও থেকে জমিদার কুঞ্জ বিহারী সেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনায় আসেন। সিন্দুরখান ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় তিনি কুঞ্জবন গ্রাম স্থাপন করেন এবং জমিদারি প্রথা চালু করেন। পরে তার জ্যেষ্ঠপুত্র কামিনী বিরাহী সেন বনগাঁও গ্রামে ‘কামিনী ভবন’ নামের এক মনোমুগ্ধকর বাড়ি নির্মাণ করেন।
কামিনী ভবন এক তলা বিশিষ্ট তিন কক্ষের বাড়ি, যা আসামের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাড়ির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতের আসাম ও কলকাতা থেকে আনা বিশেষ মালামাল এবং লোহার বারান্দার নকশা। বাড়ির পূর্ব দিকে কাচারি ঘর ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র এবং পশ্চিম দিকে জলসা ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। জলসা ঘরে কলকাতার বাইজিরা নাচ-গান পরিবেশন করতেন, এবং পাশেই শানবাঁধা পুকুর ঘাট ছিল, যেখানে জমিদার পরিবারের গোসল হতো।
কামিনী ভবন শুধুই জমিদার পরিবারের বসবাসের কেন্দ্র ছিল না, এটি গ্রামের প্রশাসনিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কাচারি ঘরে খাজনা আদায় হতো এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দিত। সমাজকর্মী কংকন পুরকায়স্থ টিটু জানান, এক সময় জমিদারবাড়ি এত সম্মানিত ছিল যে, গ্রামের মানুষ সেখানে চলাচলের সময় জুতা বা ছাতা ব্যবহার করতো না।
বর্তমানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কামিনী ভবনও ধ্বংসপ্রায়। মূল ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও জলসা ঘর, কাচারি ঘর এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের কোনো চিহ্ন রয়ে যায়নি। পাশের বিশাল বটগাছটি এখনও ছায়া দান করছে, তবে কুঞ্জ বিহারী সেন খনন করা দিঘিটি ভরাট হয়ে গেছে। অনুপম সেন বাবলা জানান, ‘এখন প্রজন্ম বদলেছে, জমিদারি নেই, এবং বাড়িটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি এ অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয়দের মতে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ এবং পর্যটন ও শিক্ষামূলক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৩৫০ বছরের ইতিহাস বহন করা বনগাঁওয়ের ‘কামিনী ভবন’ শুধু পুরনো বাড়ি নয়, এটি শ্রীমঙ্গলের জীবন্ত ইতিহাস। সময়ের ক্ষয়ক্ষতি ও অবহেলার কারণে এটি বিলীন হওয়ার পথে, কিন্তু সচেতনতা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তবে এই সবের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বনগাঁও গ্রামের ‘কামিনী ভবন’। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এ জমিদারবাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়, তবু এটি শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে।
১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে, তখনকার পশ্চিমবঙ্গের যশোর জেলার বনগাঁও থেকে জমিদার কুঞ্জ বিহারী সেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনায় আসেন। সিন্দুরখান ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় তিনি কুঞ্জবন গ্রাম স্থাপন করেন এবং জমিদারি প্রথা চালু করেন। পরে তার জ্যেষ্ঠপুত্র কামিনী বিরাহী সেন বনগাঁও গ্রামে ‘কামিনী ভবন’ নামের এক মনোমুগ্ধকর বাড়ি নির্মাণ করেন।
কামিনী ভবন এক তলা বিশিষ্ট তিন কক্ষের বাড়ি, যা আসামের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাড়ির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতের আসাম ও কলকাতা থেকে আনা বিশেষ মালামাল এবং লোহার বারান্দার নকশা। বাড়ির পূর্ব দিকে কাচারি ঘর ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র এবং পশ্চিম দিকে জলসা ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। জলসা ঘরে কলকাতার বাইজিরা নাচ-গান পরিবেশন করতেন, এবং পাশেই শানবাঁধা পুকুর ঘাট ছিল, যেখানে জমিদার পরিবারের গোসল হতো।
কামিনী ভবন শুধুই জমিদার পরিবারের বসবাসের কেন্দ্র ছিল না, এটি গ্রামের প্রশাসনিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কাচারি ঘরে খাজনা আদায় হতো এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দিত। সমাজকর্মী কংকন পুরকায়স্থ টিটু জানান, এক সময় জমিদারবাড়ি এত সম্মানিত ছিল যে, গ্রামের মানুষ সেখানে চলাচলের সময় জুতা বা ছাতা ব্যবহার করতো না।
বর্তমানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কামিনী ভবনও ধ্বংসপ্রায়। মূল ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও জলসা ঘর, কাচারি ঘর এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের কোনো চিহ্ন রয়ে যায়নি। পাশের বিশাল বটগাছটি এখনও ছায়া দান করছে, তবে কুঞ্জ বিহারী সেন খনন করা দিঘিটি ভরাট হয়ে গেছে। অনুপম সেন বাবলা জানান, ‘এখন প্রজন্ম বদলেছে, জমিদারি নেই, এবং বাড়িটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি এ অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয়দের মতে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ এবং পর্যটন ও শিক্ষামূলক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৩৫০ বছরের ইতিহাস বহন করা বনগাঁওয়ের ‘কামিনী ভবন’ শুধু পুরনো বাড়ি নয়, এটি শ্রীমঙ্গলের জীবন্ত ইতিহাস। সময়ের ক্ষয়ক্ষতি ও অবহেলার কারণে এটি বিলীন হওয়ার পথে, কিন্তু সচেতনতা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।