alt

শ্রীমঙ্গলে বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি: ইতিহাস, স্থাপত্য ও হারানো ঐতিহ্য

সংগ্রাম দত্ত, শ্রীমঙ্গল : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তবে এই সবের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বনগাঁও গ্রামের ‘কামিনী ভবন’। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এ জমিদারবাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়, তবু এটি শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে।

১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে, তখনকার পশ্চিমবঙ্গের যশোর জেলার বনগাঁও থেকে জমিদার কুঞ্জ বিহারী সেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনায় আসেন। সিন্দুরখান ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় তিনি কুঞ্জবন গ্রাম স্থাপন করেন এবং জমিদারি প্রথা চালু করেন। পরে তার জ্যেষ্ঠপুত্র কামিনী বিরাহী সেন বনগাঁও গ্রামে ‘কামিনী ভবন’ নামের এক মনোমুগ্ধকর বাড়ি নির্মাণ করেন।

কামিনী ভবন এক তলা বিশিষ্ট তিন কক্ষের বাড়ি, যা আসামের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাড়ির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতের আসাম ও কলকাতা থেকে আনা বিশেষ মালামাল এবং লোহার বারান্দার নকশা। বাড়ির পূর্ব দিকে কাচারি ঘর ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র এবং পশ্চিম দিকে জলসা ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। জলসা ঘরে কলকাতার বাইজিরা নাচ-গান পরিবেশন করতেন, এবং পাশেই শানবাঁধা পুকুর ঘাট ছিল, যেখানে জমিদার পরিবারের গোসল হতো।

কামিনী ভবন শুধুই জমিদার পরিবারের বসবাসের কেন্দ্র ছিল না, এটি গ্রামের প্রশাসনিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কাচারি ঘরে খাজনা আদায় হতো এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দিত। সমাজকর্মী কংকন পুরকায়স্থ টিটু জানান, এক সময় জমিদারবাড়ি এত সম্মানিত ছিল যে, গ্রামের মানুষ সেখানে চলাচলের সময় জুতা বা ছাতা ব্যবহার করতো না।

বর্তমানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কামিনী ভবনও ধ্বংসপ্রায়। মূল ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও জলসা ঘর, কাচারি ঘর এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের কোনো চিহ্ন রয়ে যায়নি। পাশের বিশাল বটগাছটি এখনও ছায়া দান করছে, তবে কুঞ্জ বিহারী সেন খনন করা দিঘিটি ভরাট হয়ে গেছে। অনুপম সেন বাবলা জানান, ‘এখন প্রজন্ম বদলেছে, জমিদারি নেই, এবং বাড়িটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি এ অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয়দের মতে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ এবং পর্যটন ও শিক্ষামূলক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

৩৫০ বছরের ইতিহাস বহন করা বনগাঁওয়ের ‘কামিনী ভবন’ শুধু পুরনো বাড়ি নয়, এটি শ্রীমঙ্গলের জীবন্ত ইতিহাস। সময়ের ক্ষয়ক্ষতি ও অবহেলার কারণে এটি বিলীন হওয়ার পথে, কিন্তু সচেতনতা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

ছবি

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহর ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পাসপোর্ট নিতে এসে গ্রেপ্তার ফারইস্টের নজরুল, ৫ দিনের রিমান্ড

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮০৩ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪ জন

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের দায়ে একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

ঘোড়াশালে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল

ছবি

বেনাপোলে ধরা পড়লো মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা কোটি টাকার মালামাল

ছবি

সাপে কাটা রোগীদের জন্য রামেকে দেশের প্রথম বিশেষ ওয়ার্ড

ছবি

নরসিংদীতে ঘুমন্ত মা ও সন্তানদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন, দগ্ধ ৫

ছবি

ট্রাকের চাপায় সহপাঠীর মৃত্যু: ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ছবি

মানিকগঞ্জে স্বর্ণ কারিগরদের মানবেতর জীবন যাপন

ছবি

সাদুল্লাপুরে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ

ছবি

আয়নাবাজি সিনেমার মতো মামার বদলে কারাগারে ভাগনে!

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাড়ছে এইডস রোগী ২৬ জনের মৃত্যু

ছবি

রামপালে এক নারীকে পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা

ছবি

সাঘাটায় ব্র্যাকের এডুকেশন মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সভা

ছবি

কুমিল্লার বরুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজনের মৃত্যু

ছবি

মাদারীপুরে কৃষকরা পেল সার-বীজ

ছবি

আদমদীঘির সাবেক এমপি কছিম উদ্দিন আহম্মেদের ইন্তেকাল

ছবি

শাহজাদপুরে কবরস্থান থেকে এক রাতে ১৬ টি কঙ্কাল চুরি

ছবি

সাদুল্লাপুরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের পর পুত্রবধূকে শ্লীলতাহানি, এলাকায় উত্তেজনা

ছবি

রাজশাহীর পদ্মায় জীববৈচিত্রের জাগরণ কুমির ও পাখির মিলনে প্রাণবন্ত প্রকৃতি

ছবি

মাদারগঞ্জ কৃষি অফিসের পতিত জমি এখন সবজি বাগান

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত

ছবি

মোংলার পশুর নদী থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

কাঁচপুর সেন্টারের সুপারভাইজার লোকমান হোসেন এর ইন্তেকাল

ছবি

বিরামপুরে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে জেগে উঠল পরাজয়ের ইতিহাস

ছবি

ধনবাড়ীতে ঘরে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা, থানায় অভিযোগ

ছবি

কাঠালিয়ায় ভেলা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ছবি

মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে চকরিয়ার ২ কিশোর মিয়ানমারে জিম্মি

কক্সবাজারে পর্যটকের মৃত্যু, নারীসহ আটক ৪

ছবি

বেতাগীর কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

বিএনপি থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগে ফয়জুল করিম

ছবি

সাঘাটায় যুবদল নেতা সাইফুল গ্রেপ্তার

ছবি

বেগমগঞ্জে পিস্তলসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

ছবি

চিফ প্রসিকিউটরের অভিযোগ: শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সংস্থায় উসকানিমূলক কার্যকলাপ চালান

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭৬২ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২ জন

tab

শ্রীমঙ্গলে বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি: ইতিহাস, স্থাপত্য ও হারানো ঐতিহ্য

সংগ্রাম দত্ত, শ্রীমঙ্গল

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তবে এই সবের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বনগাঁও গ্রামের ‘কামিনী ভবন’। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এ জমিদারবাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়, তবু এটি শ্রীমঙ্গলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে।

১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে, তখনকার পশ্চিমবঙ্গের যশোর জেলার বনগাঁও থেকে জমিদার কুঞ্জ বিহারী সেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগনায় আসেন। সিন্দুরখান ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় তিনি কুঞ্জবন গ্রাম স্থাপন করেন এবং জমিদারি প্রথা চালু করেন। পরে তার জ্যেষ্ঠপুত্র কামিনী বিরাহী সেন বনগাঁও গ্রামে ‘কামিনী ভবন’ নামের এক মনোমুগ্ধকর বাড়ি নির্মাণ করেন।

কামিনী ভবন এক তলা বিশিষ্ট তিন কক্ষের বাড়ি, যা আসামের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাড়ির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতের আসাম ও কলকাতা থেকে আনা বিশেষ মালামাল এবং লোহার বারান্দার নকশা। বাড়ির পূর্ব দিকে কাচারি ঘর ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র এবং পশ্চিম দিকে জলসা ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। জলসা ঘরে কলকাতার বাইজিরা নাচ-গান পরিবেশন করতেন, এবং পাশেই শানবাঁধা পুকুর ঘাট ছিল, যেখানে জমিদার পরিবারের গোসল হতো।

কামিনী ভবন শুধুই জমিদার পরিবারের বসবাসের কেন্দ্র ছিল না, এটি গ্রামের প্রশাসনিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কাচারি ঘরে খাজনা আদায় হতো এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দিত। সমাজকর্মী কংকন পুরকায়স্থ টিটু জানান, এক সময় জমিদারবাড়ি এত সম্মানিত ছিল যে, গ্রামের মানুষ সেখানে চলাচলের সময় জুতা বা ছাতা ব্যবহার করতো না।

বর্তমানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কামিনী ভবনও ধ্বংসপ্রায়। মূল ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও জলসা ঘর, কাচারি ঘর এবং দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের কোনো চিহ্ন রয়ে যায়নি। পাশের বিশাল বটগাছটি এখনও ছায়া দান করছে, তবে কুঞ্জ বিহারী সেন খনন করা দিঘিটি ভরাট হয়ে গেছে। অনুপম সেন বাবলা জানান, ‘এখন প্রজন্ম বদলেছে, জমিদারি নেই, এবং বাড়িটি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায়।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগান ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি এ অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয়দের মতে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ এবং পর্যটন ও শিক্ষামূলক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

৩৫০ বছরের ইতিহাস বহন করা বনগাঁওয়ের ‘কামিনী ভবন’ শুধু পুরনো বাড়ি নয়, এটি শ্রীমঙ্গলের জীবন্ত ইতিহাস। সময়ের ক্ষয়ক্ষতি ও অবহেলার কারণে এটি বিলীন হওয়ার পথে, কিন্তু সচেতনতা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

back to top