ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জয়পুরহাটে হিমাগারের আলু নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ী। জেলায় এ বছর ২১টি হিমাগারে আলু মজুদ করা হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার মে:টন। বেশি লাভের আশায় এই মজুদ আলু এখন বলতে গেলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । হিমাগারে গত বছর এ সময়ে প্রতি বস্তা আলুর দাম ছিল ৩০০০-৩২০০ টাকা , কিন্তু সেই আলুই এবার প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০- মাত্র ৬০০ টাকায়। যার ফলে এবার আলু চাষাবাদ কমানোর কথা ভাবছেন আলু চাষীরা। পাশাপাশি তারা বলছেন,আলু নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার কালাই উপজেলার আওরা গ্রামের আলু চাষী আজিজুল হক জানান, গেল বছর প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছিলাম, সেখান থেকে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছি। সেই আলু বিক্রি করতে এসেছি, কিন্তু ক্রেতা নেই, কেউ কিনছে না। অনেক কষ্টে ২০ বস্তা বিক্রি করে হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়ে মাত্র ১৫০০ টাকা পেলাম। আমি ৫০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলাম যে, কিছু আলু বিক্রি করে সার-বীজ কিনে এবার চলতি মৌসুমে আলু চাষাবাদ করবো। কিন্তু এসে দেখি এক বস্তা আলু বিক্রি করে ৯০-১০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আমার আশায় গুড়েবালি, ভাবছি এবার সব জমিতে সরিষা চাষাবাদ করবো , আলু টোটালি বাদ। আর যদিও কিছু লাগায় ও তা কেবল খাওয়ার জন্য।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম জানান, ৫০ বস্তা আলু রেখেছি হিমাগারে। মনে করলাম কিছু আলু বিক্রি করে সার-বীজ কিনে চলতি এ সিজনে নতুন আলু চাষ করবো। কিন্তু দেখছি দাম নেই, এক বস্তা আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৯০-১০০ টাকা । তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন, আর আলু নয়, এবার ঝারে সরিষা (সব জমিতে)। গেল বছর এ সম হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত অর্ধেক আলুও বের হনি। এতে করে আমরা শঙ্কটে আছি। কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আলু মজুদ করে লোকসানে পড়েছেন। ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে লোন নিয়ে- আবার কেউবা গরূ-ছাগল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখে হিমাগারে আলু রেখেছিলেন। এখন তাদের অবস্থাও ওই একরকম পথে বসার মতো।
এম ইশরাত হিমাগা’র মৌসুমি আলু ব্যবসায়ী আতোয়ার রহমান জানান, ৮শ বস্তা আলু রেখেছিলাম, সব মিলিয়ে বস্তা প্রতি খরচ হয়ে ছিল ১৪৫০-১৫০০ টাকা। এখন সে আলু প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা। ফলে বস্তা প্রতি লোকসান গুনছেন হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। এম ইশরাত হিমাগা’র ম্যানেজার রাইহান জানান, গেল বছর এই সময়ে হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্তঅর্ধেক আলুও বের হয়নি। এতে করে আমরা চরম শঙ্কটে আছি। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাদিকুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় গত বছর আলু চাষাবাদ ও ফলন বেশি হওয়ায় এবার আলুর দাম কম। আর এবার আলুর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া ২২ টাকা কেজি দরে সরকারের আলু কেনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরই লাগানো শুরূ হবে নতুন আলু।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
জয়পুরহাটে হিমাগারের আলু নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ী। জেলায় এ বছর ২১টি হিমাগারে আলু মজুদ করা হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার মে:টন। বেশি লাভের আশায় এই মজুদ আলু এখন বলতে গেলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । হিমাগারে গত বছর এ সময়ে প্রতি বস্তা আলুর দাম ছিল ৩০০০-৩২০০ টাকা , কিন্তু সেই আলুই এবার প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০- মাত্র ৬০০ টাকায়। যার ফলে এবার আলু চাষাবাদ কমানোর কথা ভাবছেন আলু চাষীরা। পাশাপাশি তারা বলছেন,আলু নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার কালাই উপজেলার আওরা গ্রামের আলু চাষী আজিজুল হক জানান, গেল বছর প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছিলাম, সেখান থেকে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছি। সেই আলু বিক্রি করতে এসেছি, কিন্তু ক্রেতা নেই, কেউ কিনছে না। অনেক কষ্টে ২০ বস্তা বিক্রি করে হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়ে মাত্র ১৫০০ টাকা পেলাম। আমি ৫০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলাম যে, কিছু আলু বিক্রি করে সার-বীজ কিনে এবার চলতি মৌসুমে আলু চাষাবাদ করবো। কিন্তু এসে দেখি এক বস্তা আলু বিক্রি করে ৯০-১০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আমার আশায় গুড়েবালি, ভাবছি এবার সব জমিতে সরিষা চাষাবাদ করবো , আলু টোটালি বাদ। আর যদিও কিছু লাগায় ও তা কেবল খাওয়ার জন্য।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম জানান, ৫০ বস্তা আলু রেখেছি হিমাগারে। মনে করলাম কিছু আলু বিক্রি করে সার-বীজ কিনে চলতি এ সিজনে নতুন আলু চাষ করবো। কিন্তু দেখছি দাম নেই, এক বস্তা আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৯০-১০০ টাকা । তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন, আর আলু নয়, এবার ঝারে সরিষা (সব জমিতে)। গেল বছর এ সম হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত অর্ধেক আলুও বের হনি। এতে করে আমরা শঙ্কটে আছি। কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আলু মজুদ করে লোকসানে পড়েছেন। ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে লোন নিয়ে- আবার কেউবা গরূ-ছাগল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখে হিমাগারে আলু রেখেছিলেন। এখন তাদের অবস্থাও ওই একরকম পথে বসার মতো।
এম ইশরাত হিমাগা’র মৌসুমি আলু ব্যবসায়ী আতোয়ার রহমান জানান, ৮শ বস্তা আলু রেখেছিলাম, সব মিলিয়ে বস্তা প্রতি খরচ হয়ে ছিল ১৪৫০-১৫০০ টাকা। এখন সে আলু প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা। ফলে বস্তা প্রতি লোকসান গুনছেন হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। এম ইশরাত হিমাগা’র ম্যানেজার রাইহান জানান, গেল বছর এই সময়ে হিমাগার থেকে বেশিরভাগ আলু বের করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্তঅর্ধেক আলুও বের হয়নি। এতে করে আমরা চরম শঙ্কটে আছি। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাদিকুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় গত বছর আলু চাষাবাদ ও ফলন বেশি হওয়ায় এবার আলুর দাম কম। আর এবার আলুর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া ২২ টাকা কেজি দরে সরকারের আলু কেনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরই লাগানো শুরূ হবে নতুন আলু।