সৈয়দপুর (নীলফামারী) : শীতের আগমনে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা -সংবাদ
শীতের আগমনে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। এ কাজে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন গ্রামের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অভাবী পরিবারের নারীরা। গ্রাম ও শহর শীতের আগমনে শুরু হয় কাঁথা সেলাইয়ের এ কাজ। তারা ঘরে বসে আয় করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পরিবারের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ স্বচ্ছলতা আনছেন সংসারে। সরজমিনে সৈয়দপুর পৌরসভা ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এসব নারীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করছেন। নারীরা মাদুর পেতে পুরনো কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন কাঁথা। কেউবা গাছের নিচে কিংবা বারান্দায় বসে কাঁথা সেলাই করছেন।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের আলেয়া খাতুন জানান, স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। নাতনিকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। শীতের সময় কাঁথা সেলাই করে আমার সংসার চলে। সাধারণ ব্যবহারি কাপড়ে এরুপ কাঁথা সেলাই করতে ৮/১০ দিন লেগে যায়। তবে আকার ভেদে কাঁথা তৈরিতে সময় কমবেশি হয়ে থাকে। একটি রেন কাঁথা তৈরিতে ৫শ থেকে ৭শ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন তিনি। বাড়তি আয়ের জন্যই এই কাঁথা সেলাই বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর পৌরসভার কয়া গোলাহাট এলাকার গৃহবধূ সিতারা বেগম, রওশনী ও চাঁদনী বেগম বলেন, পুরনো অথবা নতুন কাপড় দিয়ে মূলত এসব কাঁথা তৈরি করা হয়। প্রথমে নতুন পুরাতন কাপড়ের কয়েকটি স্তর এক সাথে করে সেলাই করা হয়। যদি নকশী কাঁথা হয় তাহলে আগে বিভিন্ন নকশার ছক আঁকাতে হয়। আর এ ছকের ওপর বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে সুজনি ফোঁড়, কাঁথা ফোড় ও বকুল ঝাড় কাঁথা তৈরি করা হয়। আরেক গৃহবধু নুরজাহান ও শবনম পারভীন বলেন, কাঁথা শুধু বাড়ির জন্যই তৈরি করি তা নয়। আমরা অনেকে মজুরি হিসেবেও কাঁথা সেলাই করে দিই। ৪ বাই ৬ ফুট আকারের কাঁথা ৫শ থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৮শ, ৯শ টাকা পর্যন্ত মজুরি হয়ে থাকে। অবসর সময়ে এক একটি কাঁথা তৈরিতে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন সময় লেগে যায়। আর এ থেকে যে বাড়তি আয় হয় তা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে ব্যয় করা হয়।
সৈয়দপুর শহরের নারী উদ্যোক্তা প্রভাষক শিউলী বেগম বলেন, এক সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য ছিল নকশি কাঁথা। গ্রামের মেয়েরা তাদের মনের মাধুরি মিশিয়ে সেলাই করতেন। যেখানে প্রতিটি ফোঁড়ে গেঁথে থাকত প্রিয়জনদের বলা না বলা কথা। সেইসব নকশী কাঁথা এখন অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। নকশী কাঁথা না হলেও সাধারণ কাঁথা এখনো শীতের আগে শহর-গ্রামের নারীরা তৈরি করে আসছেন। তিনি বলেন, এসব কাঁথার শোরুম তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কারুকাজ করা কাঁথা বড় বড় শপিংমলে যাচ্ছে। যারা এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নীলফামারী জেলা বিসিক কর্মকর্তা নূরেল হক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁথা তৈরিসহ নানা কাজে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে সাহায্য ও সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : শীতের আগমনে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা -সংবাদ
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
শীতের আগমনে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। এ কাজে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন গ্রামের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অভাবী পরিবারের নারীরা। গ্রাম ও শহর শীতের আগমনে শুরু হয় কাঁথা সেলাইয়ের এ কাজ। তারা ঘরে বসে আয় করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পরিবারের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ স্বচ্ছলতা আনছেন সংসারে। সরজমিনে সৈয়দপুর পৌরসভা ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এসব নারীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করছেন। নারীরা মাদুর পেতে পুরনো কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন কাঁথা। কেউবা গাছের নিচে কিংবা বারান্দায় বসে কাঁথা সেলাই করছেন।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের আলেয়া খাতুন জানান, স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। নাতনিকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। শীতের সময় কাঁথা সেলাই করে আমার সংসার চলে। সাধারণ ব্যবহারি কাপড়ে এরুপ কাঁথা সেলাই করতে ৮/১০ দিন লেগে যায়। তবে আকার ভেদে কাঁথা তৈরিতে সময় কমবেশি হয়ে থাকে। একটি রেন কাঁথা তৈরিতে ৫শ থেকে ৭শ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন তিনি। বাড়তি আয়ের জন্যই এই কাঁথা সেলাই বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর পৌরসভার কয়া গোলাহাট এলাকার গৃহবধূ সিতারা বেগম, রওশনী ও চাঁদনী বেগম বলেন, পুরনো অথবা নতুন কাপড় দিয়ে মূলত এসব কাঁথা তৈরি করা হয়। প্রথমে নতুন পুরাতন কাপড়ের কয়েকটি স্তর এক সাথে করে সেলাই করা হয়। যদি নকশী কাঁথা হয় তাহলে আগে বিভিন্ন নকশার ছক আঁকাতে হয়। আর এ ছকের ওপর বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে সুজনি ফোঁড়, কাঁথা ফোড় ও বকুল ঝাড় কাঁথা তৈরি করা হয়। আরেক গৃহবধু নুরজাহান ও শবনম পারভীন বলেন, কাঁথা শুধু বাড়ির জন্যই তৈরি করি তা নয়। আমরা অনেকে মজুরি হিসেবেও কাঁথা সেলাই করে দিই। ৪ বাই ৬ ফুট আকারের কাঁথা ৫শ থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৮শ, ৯শ টাকা পর্যন্ত মজুরি হয়ে থাকে। অবসর সময়ে এক একটি কাঁথা তৈরিতে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন সময় লেগে যায়। আর এ থেকে যে বাড়তি আয় হয় তা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে ব্যয় করা হয়।
সৈয়দপুর শহরের নারী উদ্যোক্তা প্রভাষক শিউলী বেগম বলেন, এক সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য ছিল নকশি কাঁথা। গ্রামের মেয়েরা তাদের মনের মাধুরি মিশিয়ে সেলাই করতেন। যেখানে প্রতিটি ফোঁড়ে গেঁথে থাকত প্রিয়জনদের বলা না বলা কথা। সেইসব নকশী কাঁথা এখন অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। নকশী কাঁথা না হলেও সাধারণ কাঁথা এখনো শীতের আগে শহর-গ্রামের নারীরা তৈরি করে আসছেন। তিনি বলেন, এসব কাঁথার শোরুম তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কারুকাজ করা কাঁথা বড় বড় শপিংমলে যাচ্ছে। যারা এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নীলফামারী জেলা বিসিক কর্মকর্তা নূরেল হক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁথা তৈরিসহ নানা কাজে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে সাহায্য ও সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।