মেঘনা-পদ্মায় ইলিশ জালে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নদীর পাঙ্গাসের এমনই চাকচিক্য নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার প্রথম দিন দেখা যায় -সংবাদ
ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর, প্রথম দিন রোববার, (২৬ অক্টোবর ২০২৫)ই চাঁদপুরের নদ-নদীতে ইলিশসহ অন্যসব মাছের সঙ্গে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম দামে ইলিশ ও পাঙ্গাস কিনতে পেরে অনেকটা স্বস্তিতে। যদিও ইলিশ ও পাঙ্গাসের এই চাকচিক্য হয়তো বা আর দু’একদিন থাকতে পারে, কারণ ইলিশের এবারের মৌসুম প্রায় শেষপর্যায়ে। এমনটাই বলছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের মেঘনা ও মুন্সীগঞ্জ-শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে জাল ফেলেও আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। তার পরিবর্তে জেলের জালে উঠে আসছে পাঙ্গাস। দাম ভালো পাওয়ায় ইলিশ না পাওয়ার আক্ষেপ কমছে। খুশি জেলেরা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার জানান, ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের অভিযান শেষ হয় ২৬ অক্টোবর। প্রথম দিন এই অবতরণ কেন্দ্রে ৬শ’-৭শ’ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। এর সঙ্গে ৩০-৪০ মন নদীর পাঙ্গাসও এসেছে।
চাঁদপুর মাছঘাটে আসা সিংহভাগ ইলিশই ছোট সাইজের। অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার মোটামুটি মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কড়াকড়ির মধ্যে গেছে। তবুও অনেক জায়গায় লুকোচুরি করে মাছ ধরা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ২৬ অক্টোবর (রোববার,) চাঁদপুর মাছঘাটে প্রচুর মাছের সমাগম হয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। ইলিশের পাশাপাশি প্রচুর পাঙ্গাস উঠছে। বিগত মার্চ এপ্রিল মাসে জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমের সময় পাঙ্গাসের পোনাগুলো সুরক্ষিত থাকায় এ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার ফলে জেলেরা একসঙ্গে যখন নদীতে নেমেছে এবং একইসঙ্গে তাদের মাছ ঘাটে এনেছে এজন্য বাজারে প্রচুর নদীর পাঙ্গাস একসঙ্গে পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ৩ অক্টোবর মধ্যরাত দীর্ঘ ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রমটি চাঁদপুর জেলায় খুব সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরাসহ জেলা প্রশাসক বিভিন্ন জেলেপাড়ায় গিয়ে অনেকগুলো মতবিনিময় সভা, জনসচেতনতা সভা করেছেন। জেলেদের বোঝানো হয়েছে যে ইলিশ নামক এ সম্পদটি তাদের এবং সম্পদটি রক্ষা করতে পারলে তাদেরই লাভ হবে। জেলেরাও সেটা বুঝতে পেরেছে তারাও স্বপ্রণোদিতভাবে নদীতে নামে নাই। তারপরও আইন ভঙ্গ করে যে সব জেলে নদীতে নেমেছে তারা শাস্তির আওতায় এসেছে।
এ সময়ের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ৬৭টি মোবাইল কোর্ট ৪৬৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৩টি মামলা করেছে। ১২৫ জনকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের অনেক সংস্থা যেমন- জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলেই এ সুফল পাওয়া গেছে।
এদিকে, চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটের আড়তদার ফারুক চোকদার জানান, ইলিশের ন্যায় পাঙ্গাস মাছের পোনা সময় মতো সংরক্ষণ করা গেলে বড় বড় পাঙ্গাস মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে মৎস্য দপ্তরের নজরদারি জোরদার করতে হবে।
মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারি বলেন, ইলিশের জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় পাঙ্গাস মাছও স্থানীয় নদ-নদীতে ধরা পড়ছে। রোববার, চাঁদপুর ঘাটে ছোট বড় মিলিয়ে ১-১৫০ পাঙ্গাস মাছের দেখা মিলেছে। একেকটা পাঙ্গাস মাছের সাইজ হবে ৭-৮ কেজি থেকে ১০-১২ কেজি। ইলিশের আমদানি ও বেশি দেখা গেছে। তবে ছোট ইলিশের সংখ্যাই বেশি।
কার্তিক মাসের শেষ দিকে অন্য বছরগুলোর মতো এবার শীত শুরু না হলেও দড়জায় কড়া নাড়ছে। এসময়টা স্বাভাবিকভাবেই চাঁদপুরের নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আনাগোনা শুরু হবার কথা। এবারও তার ব্যাতিক্রম না হলেও সংখ্যায় অনেক বেশি। ২২ দিনের আহরণ ও বিপণন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে চাঁদপুর শরীয়তপুর মুন্সিগঞ্জ বেষ্টিত পদ্মা মেঘনা নদ-নদীতে ইলিশের সঙ্গে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের সঙ্গে মৎস্যজীবীগণও অনেকটাই স্বস্তিতে এবার।
এবার নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আধিক্যের কারণে বড় সাইজের মাছ ৭শ’-সাড়ে ৭শ’ টাকা এবং মাঝারি থেকে ছোট আকারের প্রতি কেজি ৬শ’ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
তবে আগে পরে এসব পাঙ্গাস প্রতি কেজি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়েছে বলে আড়তদার ও মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীদের মতে, ২০১৯ সালে মূল প্রজননকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসমূহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনু পোনার সঙ্গে একই এলাকায় ১৭-২০% পযন্ত অন্যা মাছের রেনুও পোনা পাওয়া গছে। ফলে ইলিশ আহরণ নিষদ্ধকালীন ২২ দিনে উপলক্ষে অন্য মাছের নিরাপদ প্রজননও সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হচ্ছ। যা দেশে অন্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও যথেষ্ঠ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে মৎস্য গবষেনা ইনস্টটিউিট।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মেঘনা-পদ্মায় ইলিশ জালে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নদীর পাঙ্গাসের এমনই চাকচিক্য নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার প্রথম দিন দেখা যায় -সংবাদ
রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর, প্রথম দিন রোববার, (২৬ অক্টোবর ২০২৫)ই চাঁদপুরের নদ-নদীতে ইলিশসহ অন্যসব মাছের সঙ্গে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম দামে ইলিশ ও পাঙ্গাস কিনতে পেরে অনেকটা স্বস্তিতে। যদিও ইলিশ ও পাঙ্গাসের এই চাকচিক্য হয়তো বা আর দু’একদিন থাকতে পারে, কারণ ইলিশের এবারের মৌসুম প্রায় শেষপর্যায়ে। এমনটাই বলছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের মেঘনা ও মুন্সীগঞ্জ-শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে জাল ফেলেও আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। তার পরিবর্তে জেলের জালে উঠে আসছে পাঙ্গাস। দাম ভালো পাওয়ায় ইলিশ না পাওয়ার আক্ষেপ কমছে। খুশি জেলেরা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার জানান, ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের অভিযান শেষ হয় ২৬ অক্টোবর। প্রথম দিন এই অবতরণ কেন্দ্রে ৬শ’-৭শ’ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। এর সঙ্গে ৩০-৪০ মন নদীর পাঙ্গাসও এসেছে।
চাঁদপুর মাছঘাটে আসা সিংহভাগ ইলিশই ছোট সাইজের। অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার মোটামুটি মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কড়াকড়ির মধ্যে গেছে। তবুও অনেক জায়গায় লুকোচুরি করে মাছ ধরা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ২৬ অক্টোবর (রোববার,) চাঁদপুর মাছঘাটে প্রচুর মাছের সমাগম হয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। ইলিশের পাশাপাশি প্রচুর পাঙ্গাস উঠছে। বিগত মার্চ এপ্রিল মাসে জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমের সময় পাঙ্গাসের পোনাগুলো সুরক্ষিত থাকায় এ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার ফলে জেলেরা একসঙ্গে যখন নদীতে নেমেছে এবং একইসঙ্গে তাদের মাছ ঘাটে এনেছে এজন্য বাজারে প্রচুর নদীর পাঙ্গাস একসঙ্গে পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ৩ অক্টোবর মধ্যরাত দীর্ঘ ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রমটি চাঁদপুর জেলায় খুব সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরাসহ জেলা প্রশাসক বিভিন্ন জেলেপাড়ায় গিয়ে অনেকগুলো মতবিনিময় সভা, জনসচেতনতা সভা করেছেন। জেলেদের বোঝানো হয়েছে যে ইলিশ নামক এ সম্পদটি তাদের এবং সম্পদটি রক্ষা করতে পারলে তাদেরই লাভ হবে। জেলেরাও সেটা বুঝতে পেরেছে তারাও স্বপ্রণোদিতভাবে নদীতে নামে নাই। তারপরও আইন ভঙ্গ করে যে সব জেলে নদীতে নেমেছে তারা শাস্তির আওতায় এসেছে।
এ সময়ের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ৬৭টি মোবাইল কোর্ট ৪৬৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৩টি মামলা করেছে। ১২৫ জনকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের অনেক সংস্থা যেমন- জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলেই এ সুফল পাওয়া গেছে।
এদিকে, চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটের আড়তদার ফারুক চোকদার জানান, ইলিশের ন্যায় পাঙ্গাস মাছের পোনা সময় মতো সংরক্ষণ করা গেলে বড় বড় পাঙ্গাস মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে মৎস্য দপ্তরের নজরদারি জোরদার করতে হবে।
মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারি বলেন, ইলিশের জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় পাঙ্গাস মাছও স্থানীয় নদ-নদীতে ধরা পড়ছে। রোববার, চাঁদপুর ঘাটে ছোট বড় মিলিয়ে ১-১৫০ পাঙ্গাস মাছের দেখা মিলেছে। একেকটা পাঙ্গাস মাছের সাইজ হবে ৭-৮ কেজি থেকে ১০-১২ কেজি। ইলিশের আমদানি ও বেশি দেখা গেছে। তবে ছোট ইলিশের সংখ্যাই বেশি।
কার্তিক মাসের শেষ দিকে অন্য বছরগুলোর মতো এবার শীত শুরু না হলেও দড়জায় কড়া নাড়ছে। এসময়টা স্বাভাবিকভাবেই চাঁদপুরের নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আনাগোনা শুরু হবার কথা। এবারও তার ব্যাতিক্রম না হলেও সংখ্যায় অনেক বেশি। ২২ দিনের আহরণ ও বিপণন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে চাঁদপুর শরীয়তপুর মুন্সিগঞ্জ বেষ্টিত পদ্মা মেঘনা নদ-নদীতে ইলিশের সঙ্গে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের সঙ্গে মৎস্যজীবীগণও অনেকটাই স্বস্তিতে এবার।
এবার নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আধিক্যের কারণে বড় সাইজের মাছ ৭শ’-সাড়ে ৭শ’ টাকা এবং মাঝারি থেকে ছোট আকারের প্রতি কেজি ৬শ’ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
তবে আগে পরে এসব পাঙ্গাস প্রতি কেজি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়েছে বলে আড়তদার ও মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীদের মতে, ২০১৯ সালে মূল প্রজননকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসমূহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনু পোনার সঙ্গে একই এলাকায় ১৭-২০% পযন্ত অন্যা মাছের রেনুও পোনা পাওয়া গছে। ফলে ইলিশ আহরণ নিষদ্ধকালীন ২২ দিনে উপলক্ষে অন্য মাছের নিরাপদ প্রজননও সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হচ্ছ। যা দেশে অন্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও যথেষ্ঠ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে মৎস্য গবষেনা ইনস্টটিউিট।