ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের প্রাণচাঞ্চল্য। কেউ ফসলে আগাছা বাছাই করছেন, কেউ পোকামাকড় দমনে ওষুধ ছিটাচ্ছেন,আবার কেউ সেচের পানিতে ফসল সজীব রাখছেন।মাঠ গুলো সবুজ ফসলের সমারোহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই জনপদের।প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজির বাজারে উঠলেও,সে সময় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার দর কমে আসে। এখন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই সবজি বাজারে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন।মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে,ফলে কৃষকেরা অধিক লাভের আশা করছেন।
সরজমিনে বেলাব উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বারৈচা গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা বিভিন্ন সবজি খেতের পরিচর্চা করছেন। কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন চারা রোপনের জন্য। ইতোমধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়া ও ধনে পাতা, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন আগাম সবজির চাষ হয়েছে। উর্বর বালুমিশ্রিত দোআঁশ মাটিতে এসব ফসল ভালো ফলন দেয়। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে এসব সবজি বিক্রি করে তারা ভালো লাভ পান, তাই আগাম সবজি চাষে তারা আগ্রহী। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে এসব সবজি বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানায় কৃষকরা।
রায়পুরা উপজেলার জঙ্গলি শিবপুর গ্রামের কৃষক আলি হোসেন বলেন, আমি প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করি।এবার লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভালোভাবে বীজ রোপন করা যায়নি। জমিতে পানি লেগে ছিল। ভাবছিলাম শীতে আগাম সবজি বাজারে তুলব ভালো দাম পাব, কিন্তু এবার আর তা হবে না। আবহাওয়া অনুকলে থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও মুলা তুলব। দাম ভালো থাকলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
পলাশ উপজেলার সেকান্দরদী গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও বেগুন,সিম লাগিয়েছি। এখন নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার আর পোকামাকড় দমন করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফসল ভালোই হবে আশা করি।
শিবপুর উপজেলার কুন্দার পাড়া গ্রামের কৃষক ইসমাঈল মিয়া। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ তলা চারার চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সময়মতো বীজতলা তৈরি করলেও বৃষ্টিতে পানি জমে অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে বীজ বপন করতে হয়েছে, এতে খরচ ও শ্রম দুই-ই বেড়েছে। কেউ কেউ প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসানের মুখেও পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ -পরিচালক মোহাম্মদ আজিজল হক বলেন, জেলার কৃষকরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। তারা ফসলের রোগবালাই দমন,সার ও সেচ ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন। জেলায় এবছর ১০ হাজার৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করছে।কিছু জায়গায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে,তবে এখন আবহাওয়া অকুলে থাকায় কৃষকরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার,কীটনাশক ও কারিগরি পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান,মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে,ফলে কৃষকেরা অধিক লাভ হওয়ার কারণে কৃষকরা এখন ধীরে ধীরে আগাম সবজির দিকে ঝুঁকছেন। এতে পরিবারের আয় বাড়ছে, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের প্রাণচাঞ্চল্য। কেউ ফসলে আগাছা বাছাই করছেন, কেউ পোকামাকড় দমনে ওষুধ ছিটাচ্ছেন,আবার কেউ সেচের পানিতে ফসল সজীব রাখছেন।মাঠ গুলো সবুজ ফসলের সমারোহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই জনপদের।প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজির বাজারে উঠলেও,সে সময় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার দর কমে আসে। এখন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই সবজি বাজারে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন।মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে,ফলে কৃষকেরা অধিক লাভের আশা করছেন।
সরজমিনে বেলাব উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বারৈচা গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা বিভিন্ন সবজি খেতের পরিচর্চা করছেন। কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন চারা রোপনের জন্য। ইতোমধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়া ও ধনে পাতা, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন আগাম সবজির চাষ হয়েছে। উর্বর বালুমিশ্রিত দোআঁশ মাটিতে এসব ফসল ভালো ফলন দেয়। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে এসব সবজি বিক্রি করে তারা ভালো লাভ পান, তাই আগাম সবজি চাষে তারা আগ্রহী। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে এসব সবজি বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানায় কৃষকরা।
রায়পুরা উপজেলার জঙ্গলি শিবপুর গ্রামের কৃষক আলি হোসেন বলেন, আমি প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করি।এবার লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভালোভাবে বীজ রোপন করা যায়নি। জমিতে পানি লেগে ছিল। ভাবছিলাম শীতে আগাম সবজি বাজারে তুলব ভালো দাম পাব, কিন্তু এবার আর তা হবে না। আবহাওয়া অনুকলে থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও মুলা তুলব। দাম ভালো থাকলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
পলাশ উপজেলার সেকান্দরদী গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও বেগুন,সিম লাগিয়েছি। এখন নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার আর পোকামাকড় দমন করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফসল ভালোই হবে আশা করি।
শিবপুর উপজেলার কুন্দার পাড়া গ্রামের কৃষক ইসমাঈল মিয়া। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ তলা চারার চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সময়মতো বীজতলা তৈরি করলেও বৃষ্টিতে পানি জমে অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে বীজ বপন করতে হয়েছে, এতে খরচ ও শ্রম দুই-ই বেড়েছে। কেউ কেউ প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসানের মুখেও পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ -পরিচালক মোহাম্মদ আজিজল হক বলেন, জেলার কৃষকরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। তারা ফসলের রোগবালাই দমন,সার ও সেচ ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন। জেলায় এবছর ১০ হাজার৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করছে।কিছু জায়গায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে,তবে এখন আবহাওয়া অকুলে থাকায় কৃষকরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার,কীটনাশক ও কারিগরি পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান,মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে,ফলে কৃষকেরা অধিক লাভ হওয়ার কারণে কৃষকরা এখন ধীরে ধীরে আগাম সবজির দিকে ঝুঁকছেন। এতে পরিবারের আয় বাড়ছে, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।