ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের বৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়া দোকানগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জেলায় ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে গেছেন। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ‘কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি’ এই কর্মসূচি শুরু করে, যার ফলে জেলা শহরের অধিকাংশ ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সকালে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। পরে তারা সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ছানাউল হক ভূইয়া, পৌর শাখার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও খোকন খানসহ অন্যান্যরা।
ছানাউল হক ভূইয়া বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজ মার্কেটে ১৪টি দোকান বৈধভাবে বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করছে। প্রতিটি দোকানের জন্য ২৮ হাজার টাকা করে সিকিউরিটি মানি জমা দেওয়া হয় এবং নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করা হচ্ছে। তবু সম্প্রতি বরাদ্দকৃত দোকানগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা তার ভাষায় “অমানবিক ও অন্যায্য।”
তিনি অভিযোগ করেন, দোকান স্থানান্তরের জন্য ব্যবসায়ীরা আগের চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাস সময় চাইলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে ন্যায়সঙ্গত সমাধান দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
জানা গেছে, জেলা শহরে সদর হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। ফার্মেসিগুলো বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বিজয়নগরের শান্তামোড়া গ্রামের মনির মিয়া জানান, “বাবাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছিলাম। ডাক্তার সাতটি ইনজেকশন দিয়েছেন, কিন্তু ফার্মেসি বন্ধ থাকায় কোনো জায়গায় ইনজেকশন নিতে পারছি না।”
তার আক্ষেপ, “বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে আন্দোলন হয় না যে ওষুধপত্র বন্ধ থাকে, এমনটা শুধু বাংলাদেশেই হয়।”
সদর উপজেলার সুলতানপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, “ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিতে গিয়ে দেখি সব দোকান বন্ধ। এতে আমরা ভীষণ সমস্যায় পড়েছি।”
কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পৌর শাখার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, “১৯৮৩ সাল থেকে মহিলা কলেজ মার্কেটের দোকানগুলো আমাদের ভাড়ায় রয়েছে। নিয়মিত ভাড়া দিয়েও আমাদের অবৈধ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় সব ফার্মেসি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অবস্থান কর্মসূচিও অব্যাহত রাখব।”
অন্যদিকে, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে কলেজের সামনে দোকান উচ্ছেদ ও নতুন ফটক নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল হান্নান খন্দকার বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক নয়। শিক্ষা ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি এসেছে। কলেজের সীমানাপ্রাচীর ও ফটক নির্মাণের জন্য বরাদ্দও এসেছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় অর্থ ফেরত গেছে। এখন আবার নতুন বরাদ্দ এসেছে।”
তিনি আরও জানান, “মহিলা কলেজের সামনের দোকানগুলো সরকারি খাস জমিতে (১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত), যা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া এখানে ব্যবসা চালানো আইনসিদ্ধ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় দোকান বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতে পারে না, তাই আমরা বরাদ্দ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের বৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়া দোকানগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জেলায় ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে গেছেন। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ‘কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি’ এই কর্মসূচি শুরু করে, যার ফলে জেলা শহরের অধিকাংশ ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সকালে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। পরে তারা সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ছানাউল হক ভূইয়া, পৌর শাখার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও খোকন খানসহ অন্যান্যরা।
ছানাউল হক ভূইয়া বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজ মার্কেটে ১৪টি দোকান বৈধভাবে বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করছে। প্রতিটি দোকানের জন্য ২৮ হাজার টাকা করে সিকিউরিটি মানি জমা দেওয়া হয় এবং নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করা হচ্ছে। তবু সম্প্রতি বরাদ্দকৃত দোকানগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা তার ভাষায় “অমানবিক ও অন্যায্য।”
তিনি অভিযোগ করেন, দোকান স্থানান্তরের জন্য ব্যবসায়ীরা আগের চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাস সময় চাইলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে ন্যায়সঙ্গত সমাধান দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
জানা গেছে, জেলা শহরে সদর হাসপাতালসহ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। ফার্মেসিগুলো বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বিজয়নগরের শান্তামোড়া গ্রামের মনির মিয়া জানান, “বাবাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছিলাম। ডাক্তার সাতটি ইনজেকশন দিয়েছেন, কিন্তু ফার্মেসি বন্ধ থাকায় কোনো জায়গায় ইনজেকশন নিতে পারছি না।”
তার আক্ষেপ, “বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে আন্দোলন হয় না যে ওষুধপত্র বন্ধ থাকে, এমনটা শুধু বাংলাদেশেই হয়।”
সদর উপজেলার সুলতানপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, “ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিতে গিয়ে দেখি সব দোকান বন্ধ। এতে আমরা ভীষণ সমস্যায় পড়েছি।”
কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পৌর শাখার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, “১৯৮৩ সাল থেকে মহিলা কলেজ মার্কেটের দোকানগুলো আমাদের ভাড়ায় রয়েছে। নিয়মিত ভাড়া দিয়েও আমাদের অবৈধ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় সব ফার্মেসি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অবস্থান কর্মসূচিও অব্যাহত রাখব।”
অন্যদিকে, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে কলেজের সামনে দোকান উচ্ছেদ ও নতুন ফটক নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল হান্নান খন্দকার বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক নয়। শিক্ষা ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি এসেছে। কলেজের সীমানাপ্রাচীর ও ফটক নির্মাণের জন্য বরাদ্দও এসেছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় অর্থ ফেরত গেছে। এখন আবার নতুন বরাদ্দ এসেছে।”
তিনি আরও জানান, “মহিলা কলেজের সামনের দোকানগুলো সরকারি খাস জমিতে (১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত), যা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া এখানে ব্যবসা চালানো আইনসিদ্ধ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় দোকান বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতে পারে না, তাই আমরা বরাদ্দ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।”