রাজশাহী : চায়না দুয়ারি জাল নিষিদ্ধের দাবিতে জেলেদের মানববন্ধন -সংবাদ
চায়না দুয়ারি জালের সূক্ষ্ম ফাঁকে আটকে যাচ্ছে শুধু মাছ নয়, আটকে যাচ্ছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন, জেলেরা বলছেন আমরাই নিজের সর্বনাশ করছি। তারা বলছেন দরকার প্রকৃত সচেতনতা, শক্ত মনোভাব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। না হলে পোনা নয়, হারিয়ে যাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে জলজ জীববৈচিত্র। এ যেন নদীর বুক থেকে স্বপ্ন ছিঁড়ে নেওয়ার গল্প। একজন জেলের আর্থিক অসহায়তা আর অব্যবস্থাপনার সুযোগে পুরো একটি প্রজন্মের প্রাণ থেমে গেল। নদী কাঁদে, মাছ কাঁদে, কাঁদে ভবিষ্যতের হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা।
আষাঢ়-শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় ভরা পদ্মা, তখন সেই নদীর বুকে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। মা মাছ ডিম ছাড়ে, নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভেসে ওঠে লক্ষ-কোটি পোনা। এ যেন নদীর জীবনীশক্তির উচ্ছ্বাস, প্রকৃতির এক নিঃশব্দ উৎসব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই আশার উৎসবেই নেমে এসেছে সর্বনাশের অন্ধকার। চোখে স্বল্প লাভের মোহ, কিন্তু হাতছাড়া হচ্ছে ভবিষ্যতের কোটি টাকার সম্ভাবনা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-খাড়ি ও বিল ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এবং দেশীয় মাছের প্রজনন ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে চায়না দুয়ারি জালসহ মাছ ধরার ক্ষতিকর বিদেশি সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করার দাবিতে বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীর স্থানীয় জেলেরা মানববন্ধন ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে গ্রীন কোয়ালিশন (সবুজ সংহতি) ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে চায়না দুয়ারি জালসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। জেলেরা ঐতিহ্যবাহী মাছ শিকার করার উপকরণ খোরা জাল, ব্রীত্তি, পলো/ ডুবি, ধুন্দি, কুড়ি জাল, বালচা জাল, ফাঁদ জাল, চাঁই / ছই, ডুবচাঁই, পলো / ডুবি, বিনকি/বেহুঁদি, চুঙ্গি, খলই, কাঁটা ফাঁদ, বাশের খাদুন, বাঁশের পাচা ইত্যাদি নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে চায়না জাল বন্ধের জন্য দাবি করেন।
মানববন্ধনে মাঠ পর্যায়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলেদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন-বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় সকল নদ-নদী, খাল বিলে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়।
একইসাথে নদীতে মাছ ধরতে রাসায়নিক হানিটোপ ব্যবহার করা হয়। যার বেশিরভাগ আমদানি করে চায়না থেকে। চায়না দুয়ারি জাল অত্যন্ত চিকন ফাঁস এবং সকল ধরনের মাছের পোনা পর্যন্ত আটকে মরে যায। এর ফলে মাছসহ জলজপ্রাণবৈচিত্র দিনে দিনে বিলপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মৎস সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ৪.৫ সেন্টিমিটার বা তদপেক্ষা কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের ফাঁস বিশিষ্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও রাজশাহীর নদ-নদী, খাল এবং জলাভূমিতে প্রকাশ্যে চায়না দুয়ারি বা চিকন নেট বা কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের জলজ প্রতিবেশে দেশি মাছের প্রজাতির পাশাপাশি অগণিত জলজ উদ্ভিদ, পাখি, ব্যাঙ ও কচ্ছপ, জলজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং জলজ বাস্তুংস্থান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রাজশাহী : চায়না দুয়ারি জাল নিষিদ্ধের দাবিতে জেলেদের মানববন্ধন -সংবাদ
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
চায়না দুয়ারি জালের সূক্ষ্ম ফাঁকে আটকে যাচ্ছে শুধু মাছ নয়, আটকে যাচ্ছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন, জেলেরা বলছেন আমরাই নিজের সর্বনাশ করছি। তারা বলছেন দরকার প্রকৃত সচেতনতা, শক্ত মনোভাব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। না হলে পোনা নয়, হারিয়ে যাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে জলজ জীববৈচিত্র। এ যেন নদীর বুক থেকে স্বপ্ন ছিঁড়ে নেওয়ার গল্প। একজন জেলের আর্থিক অসহায়তা আর অব্যবস্থাপনার সুযোগে পুরো একটি প্রজন্মের প্রাণ থেমে গেল। নদী কাঁদে, মাছ কাঁদে, কাঁদে ভবিষ্যতের হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা।
আষাঢ়-শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় ভরা পদ্মা, তখন সেই নদীর বুকে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। মা মাছ ডিম ছাড়ে, নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভেসে ওঠে লক্ষ-কোটি পোনা। এ যেন নদীর জীবনীশক্তির উচ্ছ্বাস, প্রকৃতির এক নিঃশব্দ উৎসব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই আশার উৎসবেই নেমে এসেছে সর্বনাশের অন্ধকার। চোখে স্বল্প লাভের মোহ, কিন্তু হাতছাড়া হচ্ছে ভবিষ্যতের কোটি টাকার সম্ভাবনা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-খাড়ি ও বিল ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এবং দেশীয় মাছের প্রজনন ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে চায়না দুয়ারি জালসহ মাছ ধরার ক্ষতিকর বিদেশি সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করার দাবিতে বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীর স্থানীয় জেলেরা মানববন্ধন ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে গ্রীন কোয়ালিশন (সবুজ সংহতি) ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে চায়না দুয়ারি জালসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। জেলেরা ঐতিহ্যবাহী মাছ শিকার করার উপকরণ খোরা জাল, ব্রীত্তি, পলো/ ডুবি, ধুন্দি, কুড়ি জাল, বালচা জাল, ফাঁদ জাল, চাঁই / ছই, ডুবচাঁই, পলো / ডুবি, বিনকি/বেহুঁদি, চুঙ্গি, খলই, কাঁটা ফাঁদ, বাশের খাদুন, বাঁশের পাচা ইত্যাদি নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে চায়না জাল বন্ধের জন্য দাবি করেন।
মানববন্ধনে মাঠ পর্যায়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলেদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন-বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় সকল নদ-নদী, খাল বিলে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়।
একইসাথে নদীতে মাছ ধরতে রাসায়নিক হানিটোপ ব্যবহার করা হয়। যার বেশিরভাগ আমদানি করে চায়না থেকে। চায়না দুয়ারি জাল অত্যন্ত চিকন ফাঁস এবং সকল ধরনের মাছের পোনা পর্যন্ত আটকে মরে যায। এর ফলে মাছসহ জলজপ্রাণবৈচিত্র দিনে দিনে বিলপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মৎস সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ৪.৫ সেন্টিমিটার বা তদপেক্ষা কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের ফাঁস বিশিষ্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও রাজশাহীর নদ-নদী, খাল এবং জলাভূমিতে প্রকাশ্যে চায়না দুয়ারি বা চিকন নেট বা কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের জলজ প্রতিবেশে দেশি মাছের প্রজাতির পাশাপাশি অগণিত জলজ উদ্ভিদ, পাখি, ব্যাঙ ও কচ্ছপ, জলজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং জলজ বাস্তুংস্থান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।