যশোরের কেশবপুরে রহস্যে ঘেরা খান জাহান আলী দীঘির (খাঞ্জেলি) দক্ষিন পাশের একটি মাটির ঢিবিকে দাবি করা হয় আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের মাজার। যার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে প্রাচীন যুগ থেকে বোরহান খানের মাজারের নামে মাটির ঢিবিতে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে এখানে বসে শতশত ভক্তের মিলন মেলা। এখানে কেউ আসেন রোগ মুক্তি কামনায় মানদ শোধ দিতে, আবার শত শত ভক্তরা আসেন বোরহান খানের মাজারে আমল, জিকির ও ধ্যান করতে। এসময় তাবারকের আয়োজনও হয়ে থাকে।
কেশবপুর শহর থেকে গোলাঘাটা সড়ক ধরে দক্ষিণে ৫ কিলোমিটার গেলে বুড়িভদ্রা নদী অববাহিকায় খান জাহান আলী দীঘির অবস্থান। লোকমুখে শোনা যায়, দীঘিটি এক রাতেই দৈবিকভাবে খনন করা হয়েছিল। যাহা পরষ্পরায় খান জাহান আলী দীঘি বা খাঞ্জেলি দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। আজও এই দীঘি ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করে। পূর্বকাল থেকে বহু নারী-পুরুষ এখানে বিভিন্ন ধরণের কামনা-বাসনা ব্যক্ত করতে আসেন। যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান আছে। তবে এর খনন প্রক্রিয়াটিই রহস্যময়।
মাজারের খাদেম আকাম আলী দপ্তরী জানান, তিনি ৬৫ বছর ধরে মাজারটি দেখভাল করছেন। দীঘিসহ তার চারপাশের সরকারি খাস জমির মধ্যে ২০০ বিঘা জমিতে খাঞ্জেলি দীঘি রয়েছে। দীঘির দক্ষিন পাশে রয়েছে আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের দরবার শরিফ ও মাজার। মাজারের ওপর রয়েছে একটি মরা পাপড় গাছে লতা জাতীয় একটি অলৌকিক গাছ। লাল সালু কাপড় দিয়ে মাজারের কবর আচ্ছাদন করে রাখা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে এখানে বার বসে। শুক্রবারে ২শ’ ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে ৪ থেকে ৫শ’ ভক্তের আগমন ঘটে। দিন দিন লোক সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভক্তরা এখানে বিভিন্ন রোগ মুক্তি কামনায় মানদ শোধ, ছদকা, মাদুলি, অলৌকিক গাছের শিকড় নেয়াসহ আমল, জিকির, ধ্যান করে থাকেন। এতলোক সমাগমের পরও মাজারটি চরমভাবে অবহেলিত। মাজারের সামনের গর্তটি ভরাট করা খুই প্রয়োজন। সরকার দীঘি ইজারা দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করলেও দীঘির কোনো উন্নয়ন হয়নি। দীঘিতে নেই কোনো পাকাঘাট, ভক্তদের জন্যে ওয়াস রুম, টয়লেট। এতে ভক্তদের অসুবিধায় পড়তে হয়। মাজারটি আজও অরক্ষিত।
বাগেরহাটে খান জাহান আলীর মাজার শরিফের শিলালিপি অনুযায়ী, তিনি ১৩৬৯ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। খান জাহান আলী বা উলুগ খান (রহ:) ছিলেন একজন আধ্যাত্নিক সাধক, মুসলিম ধর্ম প্রচারক, সুফি ও আউলিয়া। তিনি মূলত মুসলিম ধর্ম প্রচারক হিসেবে খলিফাতাবাদের (বর্তমান বাংলাদেশ) খান-ই-আজম ছিলেন। তিনি যশোরে কিছুদিন অবস্থান করার পর খুলনা হয়ে বাগেরহাট যান। তিনি ১৪৫৯ সাল পর্যন্ত মূলত বাগেরহাটের স্থানীয় শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে সুপেয় পানির উৎস্য হিসেবে ৩৬০টি দীঘি খনন ও ৩৬০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ ও দীঘি তার মধ্যে অন্যতম।
কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রউফ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের মাজার সিলেট শহরের দক্ষিন পূর্ব সীমান্তে সুরমা নদীর তীরের টুলটিকর কুশিঘাট এলকায় ঐতিহাসিক বাড়িতে অবস্থিত। সেখানে প্রতিবছর মেলা বসে। খান জাহান আলী দীঘির পাড়ে কোন বোরহান খানের মাজার তা আমার বোধগম্য নয়। তবে খান জাহান আলী দীঘিটি তার সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। বিদ্যানন্দকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ইতোপূর্বের সরকার এখানে আগত লোকদের চিত্ত বিনোদনের জন্য পাকা সড়ক, দোলনা, গোলচত্বর, হাতি, হরিণের মূর্তিসহ হরেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি সম্প্রতি খান জাহান আলী দীঘিসহ মাজারটি পরিদর্শন করেছেন বলে সেখানকার খাদেম জানিয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
যশোরের কেশবপুরে রহস্যে ঘেরা খান জাহান আলী দীঘির (খাঞ্জেলি) দক্ষিন পাশের একটি মাটির ঢিবিকে দাবি করা হয় আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের মাজার। যার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে প্রাচীন যুগ থেকে বোরহান খানের মাজারের নামে মাটির ঢিবিতে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে এখানে বসে শতশত ভক্তের মিলন মেলা। এখানে কেউ আসেন রোগ মুক্তি কামনায় মানদ শোধ দিতে, আবার শত শত ভক্তরা আসেন বোরহান খানের মাজারে আমল, জিকির ও ধ্যান করতে। এসময় তাবারকের আয়োজনও হয়ে থাকে।
কেশবপুর শহর থেকে গোলাঘাটা সড়ক ধরে দক্ষিণে ৫ কিলোমিটার গেলে বুড়িভদ্রা নদী অববাহিকায় খান জাহান আলী দীঘির অবস্থান। লোকমুখে শোনা যায়, দীঘিটি এক রাতেই দৈবিকভাবে খনন করা হয়েছিল। যাহা পরষ্পরায় খান জাহান আলী দীঘি বা খাঞ্জেলি দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। আজও এই দীঘি ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করে। পূর্বকাল থেকে বহু নারী-পুরুষ এখানে বিভিন্ন ধরণের কামনা-বাসনা ব্যক্ত করতে আসেন। যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান আছে। তবে এর খনন প্রক্রিয়াটিই রহস্যময়।
মাজারের খাদেম আকাম আলী দপ্তরী জানান, তিনি ৬৫ বছর ধরে মাজারটি দেখভাল করছেন। দীঘিসহ তার চারপাশের সরকারি খাস জমির মধ্যে ২০০ বিঘা জমিতে খাঞ্জেলি দীঘি রয়েছে। দীঘির দক্ষিন পাশে রয়েছে আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের দরবার শরিফ ও মাজার। মাজারের ওপর রয়েছে একটি মরা পাপড় গাছে লতা জাতীয় একটি অলৌকিক গাছ। লাল সালু কাপড় দিয়ে মাজারের কবর আচ্ছাদন করে রাখা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে এখানে বার বসে। শুক্রবারে ২শ’ ও অমাবশ্যা, পূর্ণিমার রাতে ৪ থেকে ৫শ’ ভক্তের আগমন ঘটে। দিন দিন লোক সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভক্তরা এখানে বিভিন্ন রোগ মুক্তি কামনায় মানদ শোধ, ছদকা, মাদুলি, অলৌকিক গাছের শিকড় নেয়াসহ আমল, জিকির, ধ্যান করে থাকেন। এতলোক সমাগমের পরও মাজারটি চরমভাবে অবহেলিত। মাজারের সামনের গর্তটি ভরাট করা খুই প্রয়োজন। সরকার দীঘি ইজারা দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করলেও দীঘির কোনো উন্নয়ন হয়নি। দীঘিতে নেই কোনো পাকাঘাট, ভক্তদের জন্যে ওয়াস রুম, টয়লেট। এতে ভক্তদের অসুবিধায় পড়তে হয়। মাজারটি আজও অরক্ষিত।
বাগেরহাটে খান জাহান আলীর মাজার শরিফের শিলালিপি অনুযায়ী, তিনি ১৩৬৯ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। খান জাহান আলী বা উলুগ খান (রহ:) ছিলেন একজন আধ্যাত্নিক সাধক, মুসলিম ধর্ম প্রচারক, সুফি ও আউলিয়া। তিনি মূলত মুসলিম ধর্ম প্রচারক হিসেবে খলিফাতাবাদের (বর্তমান বাংলাদেশ) খান-ই-আজম ছিলেন। তিনি যশোরে কিছুদিন অবস্থান করার পর খুলনা হয়ে বাগেরহাট যান। তিনি ১৪৫৯ সাল পর্যন্ত মূলত বাগেরহাটের স্থানীয় শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে সুপেয় পানির উৎস্য হিসেবে ৩৬০টি দীঘি খনন ও ৩৬০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ ও দীঘি তার মধ্যে অন্যতম।
কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রউফ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, আধ্যাত্নিক সাধক বোরহান খানের মাজার সিলেট শহরের দক্ষিন পূর্ব সীমান্তে সুরমা নদীর তীরের টুলটিকর কুশিঘাট এলকায় ঐতিহাসিক বাড়িতে অবস্থিত। সেখানে প্রতিবছর মেলা বসে। খান জাহান আলী দীঘির পাড়ে কোন বোরহান খানের মাজার তা আমার বোধগম্য নয়। তবে খান জাহান আলী দীঘিটি তার সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। বিদ্যানন্দকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ইতোপূর্বের সরকার এখানে আগত লোকদের চিত্ত বিনোদনের জন্য পাকা সড়ক, দোলনা, গোলচত্বর, হাতি, হরিণের মূর্তিসহ হরেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি সম্প্রতি খান জাহান আলী দীঘিসহ মাজারটি পরিদর্শন করেছেন বলে সেখানকার খাদেম জানিয়েছেন।