চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়ায় শীতকালীন সবজি চাষের সার্বিক প্রেক্ষাপট পরিদর্শন করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহনাজ ফেরদৌসী -সংবাদ
প্রতিবছর বর্ষাকালে অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমেআসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বুকচিড়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী এলাকার জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। এর ফলে নদীর তীরের জমি গুলোতে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এসব উর্বর জমির অধিকাংশে একসময় তামাক চাষ হতো। সেই তামাক চাষিরা এখন ঝুঁকছেন রকমারি সবজি চাষে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিবিড় নজরদারি ও মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ক্রমান্বয়ে মাতামুহুরী নদীর তীরে এবং চকরিয়া উপজেলার বিস্তৃত জমিতে এখন তামাকের বিকল্প শীতকালীন সবজি আলু, সরিষা, ভুট্টা, চীনাবাদামসহ বিভিন্ন রকমের রবিশস্য ফসলের চাষ জায়গা করে নিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতের সময় ঘনিয়ে আসার আগমুহূর্তে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় কৃষকেরা চলতি রবিশস্য মৌসুম তথা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন। আউশধান কর্তনের পর সেই জমিতে বেশিরভাগ কৃষক সবজি চাষে নেমে পড়েছেন। কৃষকেরা বর্তমানে সবজি খেতে চারা রোপণ ও গাছে আসা ফলনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় ব্লক ভিত্তিক নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসাররা স্থানীয় কৃষকদের পাশে থেকে শীতকালীন সবজি চাষে জমি তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ, পরিচর্যা সববিষয়ে দেখভাল করছেন।
প্রতিদিন দাপ্তরিক কাজ শেষে সময় পেলে নিজেই কৃষকের শীতকালীন সবজি চাষের সার্বিক প্রেক্ষাপট পরিদর্শনে গিয়ে চাষে ভালো ফলন উৎপাদন বিষয়ে নানাবিধ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার। করছেন মাঠ তদারকি। অনুরূপভাবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সবজি চাষের ব্লক ভিত্তিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানাজ ফেরদৌসী। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোরশেদ আহমদ, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার জনাব মো. মহিউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসার।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার (হিসাব) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি রবিশস্য মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর বা ৭ হাজার ৬৫৭ একর জমিতে শীতকালীন রকমারি সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করেছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে চাষের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সুত্রে জানা যায়, গতবছর রবিশস্য মৌসুমে উৎপাদন ভালো হওয়ায় সবজি বিক্রি করে চকরিয়ার কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন। এই মনোভাসনা থেকে এবছরও শীত শুরুর আগেই ফুলকপি, মুলা, বেগুন, বাঁধাকপি, পটল,শিম, টমেটো, করলা, ধনিয়া ও লাউসহ রকমারি শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। বর্তমানে চাষিরা খেতে চারা রোপণ ও গাছে আসা সবজির ফলন পরিচর্যায় পুরোদমে সময় দিচ্ছেন।
চকরিয়া পৌরসভার আমানচর এলাকার কৃষক আবু তাহের জানান, শীত মৌসুমে বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে বেশিরভাগ কৃষক শীত শুরু হওয়ার আগেই সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিবছর তারা শীতের আগে বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে করে কৃষকেরা ভালো লাভবান হন বলে জানান কৃষক আবু তাহের।
চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করা হয়। ওই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ নবী বলেন, ফুলকপি, টমেটো, বেগুনসহ শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করে আমি কয়েকবছর ধরে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছি। আগে বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রি করতাম। এখন পাইকাররা ফসলের ক্ষেতে এসে ভালোমানের ফলন দেখে ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। বিএমচর ইউনিয়নের জমিগুলো মাতামুহুরী নদী লাগোয়া হওয়ায় বন্যার সময় পলি জমে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেকারণে এখানে সবজি চাষ ভালো হয়।
মাতামুহুরী নদীর তীরে চকরিয়া পৌরসভার মৌলভীরচরে নিজের জমিতে প্রতিবছর সবজি চাষ করেন সৌখিন কৃষক চকরিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক নুরুল আবছার বাদশা। তিনি বলেন, ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে এবছর শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। আবহাওয়ার বৈরী আচরণ ঠিক থাকলে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি। দাম ভালো পেলে ১ লাখ টাকার মতো লাভ থাকবে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধার বদৌলতে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমি গুলোতে প্রতিবছর ভালো ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে। কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসলের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন।
এভাবে চকরিয়ার কৃষকেরা প্রতিবছর শতকোটি টাকার খাদ্য শস্য উৎপাদন করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসলেও স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার চকরিয়ার কৃষি এবং কৃষকেরা স্বার্থে
একটি হিমাগার স্থাপন করেনি। সেকারণে কৃষকেরা প্রতিবছর সিংহভাগ ফসল পঁচে যাবার ভয়ে পানির দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে চকরিয়া উপজেলার কৃষকের জন্য একটি হিমাগার চাই, কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদপ্তরের কাছে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার দাবি জানাচ্ছি।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, শীতকালীন সবজির দাম বাজারে সবসময় ভালো পাওয়া যায়। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে চকরিয়া উপজেলার কৃষকরা রবিশস্য মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, শীতকালীন সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। আমরা চাষের শুরু থেকে মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে সবজি ক্ষেত কোনো ধরণের পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, চলতি রবিশস্য মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন রকমারি সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ রিপোর্ট অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ২ শত ৮০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট জমিতে রোপণ শেষ করে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, আবাদযোগ্য জমির পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন স্থানে পতিত জমি পড়ে থাকতো সেখানেও সবজি চাষ করা হচ্ছে। সেইজন্য চলতি রবিশস্য মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি অধিদফতর কতৃক প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চকরিয়া উপজেলার ৫৯০ জন কৃষক- কৃষাণীর মাঝে শীতকালীন সবজির বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
উচ্চ ফলনশীল এসব সবজির বীজ পেয়ে গরিব চাষিরা বাড়ির আঙিনায় ও বিভিন্ন পতিত জায়গায় মৌসুমী সবজি চাষ করে যেমন লাভের মুখ দেখছেন, ঠিক তেমনি তাদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চকরিয়া (কক্সবাজার) : চকরিয়ায় শীতকালীন সবজি চাষের সার্বিক প্রেক্ষাপট পরিদর্শন করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহনাজ ফেরদৌসী -সংবাদ
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
প্রতিবছর বর্ষাকালে অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমেআসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বুকচিড়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী এলাকার জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। এর ফলে নদীর তীরের জমি গুলোতে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এসব উর্বর জমির অধিকাংশে একসময় তামাক চাষ হতো। সেই তামাক চাষিরা এখন ঝুঁকছেন রকমারি সবজি চাষে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিবিড় নজরদারি ও মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ক্রমান্বয়ে মাতামুহুরী নদীর তীরে এবং চকরিয়া উপজেলার বিস্তৃত জমিতে এখন তামাকের বিকল্প শীতকালীন সবজি আলু, সরিষা, ভুট্টা, চীনাবাদামসহ বিভিন্ন রকমের রবিশস্য ফসলের চাষ জায়গা করে নিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতের সময় ঘনিয়ে আসার আগমুহূর্তে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় কৃষকেরা চলতি রবিশস্য মৌসুম তথা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন। আউশধান কর্তনের পর সেই জমিতে বেশিরভাগ কৃষক সবজি চাষে নেমে পড়েছেন। কৃষকেরা বর্তমানে সবজি খেতে চারা রোপণ ও গাছে আসা ফলনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় ব্লক ভিত্তিক নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসাররা স্থানীয় কৃষকদের পাশে থেকে শীতকালীন সবজি চাষে জমি তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ, পরিচর্যা সববিষয়ে দেখভাল করছেন।
প্রতিদিন দাপ্তরিক কাজ শেষে সময় পেলে নিজেই কৃষকের শীতকালীন সবজি চাষের সার্বিক প্রেক্ষাপট পরিদর্শনে গিয়ে চাষে ভালো ফলন উৎপাদন বিষয়ে নানাবিধ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার। করছেন মাঠ তদারকি। অনুরূপভাবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সবজি চাষের ব্লক ভিত্তিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানাজ ফেরদৌসী। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোরশেদ আহমদ, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার জনাব মো. মহিউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসার।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার (হিসাব) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি রবিশস্য মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর বা ৭ হাজার ৬৫৭ একর জমিতে শীতকালীন রকমারি সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করেছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে চাষের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সুত্রে জানা যায়, গতবছর রবিশস্য মৌসুমে উৎপাদন ভালো হওয়ায় সবজি বিক্রি করে চকরিয়ার কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন। এই মনোভাসনা থেকে এবছরও শীত শুরুর আগেই ফুলকপি, মুলা, বেগুন, বাঁধাকপি, পটল,শিম, টমেটো, করলা, ধনিয়া ও লাউসহ রকমারি শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। বর্তমানে চাষিরা খেতে চারা রোপণ ও গাছে আসা সবজির ফলন পরিচর্যায় পুরোদমে সময় দিচ্ছেন।
চকরিয়া পৌরসভার আমানচর এলাকার কৃষক আবু তাহের জানান, শীত মৌসুমে বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে বেশিরভাগ কৃষক শীত শুরু হওয়ার আগেই সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিবছর তারা শীতের আগে বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে করে কৃষকেরা ভালো লাভবান হন বলে জানান কৃষক আবু তাহের।
চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করা হয়। ওই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ নবী বলেন, ফুলকপি, টমেটো, বেগুনসহ শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করে আমি কয়েকবছর ধরে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছি। আগে বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রি করতাম। এখন পাইকাররা ফসলের ক্ষেতে এসে ভালোমানের ফলন দেখে ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। বিএমচর ইউনিয়নের জমিগুলো মাতামুহুরী নদী লাগোয়া হওয়ায় বন্যার সময় পলি জমে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেকারণে এখানে সবজি চাষ ভালো হয়।
মাতামুহুরী নদীর তীরে চকরিয়া পৌরসভার মৌলভীরচরে নিজের জমিতে প্রতিবছর সবজি চাষ করেন সৌখিন কৃষক চকরিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক নুরুল আবছার বাদশা। তিনি বলেন, ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে এবছর শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। আবহাওয়ার বৈরী আচরণ ঠিক থাকলে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি। দাম ভালো পেলে ১ লাখ টাকার মতো লাভ থাকবে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধার বদৌলতে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমি গুলোতে প্রতিবছর ভালো ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে। কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসলের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন।
এভাবে চকরিয়ার কৃষকেরা প্রতিবছর শতকোটি টাকার খাদ্য শস্য উৎপাদন করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসলেও স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার চকরিয়ার কৃষি এবং কৃষকেরা স্বার্থে
একটি হিমাগার স্থাপন করেনি। সেকারণে কৃষকেরা প্রতিবছর সিংহভাগ ফসল পঁচে যাবার ভয়ে পানির দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে চকরিয়া উপজেলার কৃষকের জন্য একটি হিমাগার চাই, কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদপ্তরের কাছে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার দাবি জানাচ্ছি।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, শীতকালীন সবজির দাম বাজারে সবসময় ভালো পাওয়া যায়। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে চকরিয়া উপজেলার কৃষকরা রবিশস্য মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, শীতকালীন সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। আমরা চাষের শুরু থেকে মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে সবজি ক্ষেত কোনো ধরণের পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, চলতি রবিশস্য মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন রকমারি সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ রিপোর্ট অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ২ শত ৮০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট জমিতে রোপণ শেষ করে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, আবাদযোগ্য জমির পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন স্থানে পতিত জমি পড়ে থাকতো সেখানেও সবজি চাষ করা হচ্ছে। সেইজন্য চলতি রবিশস্য মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি অধিদফতর কতৃক প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চকরিয়া উপজেলার ৫৯০ জন কৃষক- কৃষাণীর মাঝে শীতকালীন সবজির বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
উচ্চ ফলনশীল এসব সবজির বীজ পেয়ে গরিব চাষিরা বাড়ির আঙিনায় ও বিভিন্ন পতিত জায়গায় মৌসুমী সবজি চাষ করে যেমন লাভের মুখ দেখছেন, ঠিক তেমনি তাদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।