মানিকগঞ্জ : ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের তাড়াইল এলাকার নদীর ওপরে অর্ধনির্মিত সেতু -সংবাদ
মানিকগঞ্জের ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার সংযোগস্থল তাড়াইল বেড়িবাঁধ সড়ক। এই সড়কের একটি সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই উপজেলার হাজার-হাজার লোকজনকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়ার কাজেও চরম দুর্ভোগ পোহতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের তাড়াইল এলাকার বেড়িবাঁধ সড়কের মাঝপথে নদীর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধনির্মিত একটি সেতু। সেতুর পিলার বসানোর কাজ শেষ হলেও আর কোনো নির্মাণ কার্যক্রম নেই। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। স্থানীয়দের উদ্যোগে নদীর দুই পাড়ে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই এখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘিওর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান মাকসুদ। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন সেতুটির নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার লোকজন যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এ সড়ক দিয়ে ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার মানুষরা চলাচল করেন। সেতুটি চালু হলে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। তাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইফা আক্তার বলে, প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয় লাগে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে যায়। অনেক সময় জুতা খুলে হাতে নিয়ে পার হতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলেই পানিতে পড়ে যেতে হবে। অনেকে পড়েও যান। বইখাতা ভিজে যায়। তখন খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষক শামসুর রহমান বলেন, এই পথে আমরা ধান, পাট, সবজি ট্রলিতে করে বাজারে নিয়ে যেতাম। এখন সেতু না থাকায় ট্রলি যেতে পারে না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে দুই কিলোমিটার ঘুরে বাজার বা হাটে যেতে হয়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে এর কাজ বন্ধ আছে। আমরা চাই দ্রুত সেতুর কাজ শেষ হোক। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদেক হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার বড় একটি অংশের বাসিন্দারা চলাচল করেন।
হরিরামপুরের অনেক ব্যবসায়ী ঘিওর হাট, তরা কিংবা শিবালয়ের বরংগাইলে যাতায়াত করেন। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এখন দুই উপজেলার অনেক ব্যবসার যোগসূত্র প্রায় বিচ্ছিন্ন। এত করে খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে গেছে। স্থানীয় গৃহবধূ রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা বাজার করতে বা বাচ্চাদের স্কুলে নিতে গেলেই ভয় লাগে। এক হাতে বাচ্চা, আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে সাঁকো পার হওয়া অনেক কষ্টের। তাছাড়া, কেউ অসুস্থ হলে এই সাঁকো দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে গেছে। আমরা অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। তাড়াইল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা বহু বছর ধরে এই সেতুর আশায় আছি। কাজ শুরু হয়েছিল ভালোভাবে, কিন্তু এখন থেমে আছে। দ্রুত কাজ শেষ না হলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।
বানিয়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, প্রতিদিন শতশত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য বহনকারী সবাই বিপাকে পড়েছেন। জনগনের ভোগান্তি দেখে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে দেই। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে এলজিইডির কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এলাকার অভিজ্ঞ মহল এবং সুশিল সমাজের প্রতিনিধিগন দ্রুত সেতুটি নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মানিকগঞ্জ : ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের তাড়াইল এলাকার নদীর ওপরে অর্ধনির্মিত সেতু -সংবাদ
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
মানিকগঞ্জের ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার সংযোগস্থল তাড়াইল বেড়িবাঁধ সড়ক। এই সড়কের একটি সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই উপজেলার হাজার-হাজার লোকজনকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়ার কাজেও চরম দুর্ভোগ পোহতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের তাড়াইল এলাকার বেড়িবাঁধ সড়কের মাঝপথে নদীর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধনির্মিত একটি সেতু। সেতুর পিলার বসানোর কাজ শেষ হলেও আর কোনো নির্মাণ কার্যক্রম নেই। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। স্থানীয়দের উদ্যোগে নদীর দুই পাড়ে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই এখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘিওর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান মাকসুদ। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন সেতুটির নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার লোকজন যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এ সড়ক দিয়ে ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার মানুষরা চলাচল করেন। সেতুটি চালু হলে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। তাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইফা আক্তার বলে, প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয় লাগে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে যায়। অনেক সময় জুতা খুলে হাতে নিয়ে পার হতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলেই পানিতে পড়ে যেতে হবে। অনেকে পড়েও যান। বইখাতা ভিজে যায়। তখন খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষক শামসুর রহমান বলেন, এই পথে আমরা ধান, পাট, সবজি ট্রলিতে করে বাজারে নিয়ে যেতাম। এখন সেতু না থাকায় ট্রলি যেতে পারে না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে দুই কিলোমিটার ঘুরে বাজার বা হাটে যেতে হয়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে এর কাজ বন্ধ আছে। আমরা চাই দ্রুত সেতুর কাজ শেষ হোক। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাদেক হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার বড় একটি অংশের বাসিন্দারা চলাচল করেন।
হরিরামপুরের অনেক ব্যবসায়ী ঘিওর হাট, তরা কিংবা শিবালয়ের বরংগাইলে যাতায়াত করেন। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এখন দুই উপজেলার অনেক ব্যবসার যোগসূত্র প্রায় বিচ্ছিন্ন। এত করে খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে গেছে। স্থানীয় গৃহবধূ রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা বাজার করতে বা বাচ্চাদের স্কুলে নিতে গেলেই ভয় লাগে। এক হাতে বাচ্চা, আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে সাঁকো পার হওয়া অনেক কষ্টের। তাছাড়া, কেউ অসুস্থ হলে এই সাঁকো দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে গেছে। আমরা অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। তাড়াইল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা বহু বছর ধরে এই সেতুর আশায় আছি। কাজ শুরু হয়েছিল ভালোভাবে, কিন্তু এখন থেমে আছে। দ্রুত কাজ শেষ না হলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।
বানিয়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, প্রতিদিন শতশত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য বহনকারী সবাই বিপাকে পড়েছেন। জনগনের ভোগান্তি দেখে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে দেই। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে এলজিইডির কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এলাকার অভিজ্ঞ মহল এবং সুশিল সমাজের প্রতিনিধিগন দ্রুত সেতুটি নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।