অনিশ্চিত সরিষার আবাদ
সিরাজগঞ্জ : কাটাগাঙে এলাকায় অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে ধরা হয় মাছ -সংবাদ
সিরাজগঞ্জের চলনবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি, এটি শস্য ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবেও সারা দেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। তাড়াশ উপজেলার পশ্চিমে বিস্তৃর্ণ চলনবিল। অক্টোবরের শেষে বিলের পানি নামে কাটাগাঙ দিয়ে। কিন্তু এ বছর উপজেলার সগুনা ইউনিয়নে কুন্দইল থেকে মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের ৮নং ব্রিজ পর্যন্ত কাটাগাঙে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র ছয়টি পয়েন্টে অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে মাছ ধরায় পানি নিষ্কাষণে চলছে ধীর গতি। দ্রুত পানি নামতে না পারায় রবিশষ্য, বিশেষ করে সরিষার আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে করে বিলের বিশাল একটি অংশে সরিষার আবাদ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাদের দাবি প্রশাসন দ্রুত এসব অবৈধ সোঁতিজাল অপসারণ করে তাদের কে রবিশষ্যের আবাদের সুযোগ করে দিবেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চলনবিলের সিংড়া, গুরুদাসপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বর্ষার পানি নিষ্কাশন হয় কাটাগাঙ দিয়ে। বিগত সরকারের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কাটাগাঙ সংষ্কার করা হয়। আর এই কাটাগাঙ দিয়েই আশ্বিনের মাসের শেষে হতেই সব পানি নেমে যায়। তাই এ অঞ্চলের কৃষক বোরোধান চাষের আগে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে লাভবান হয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ সোঁতিজাল পাতায় তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব আবাদী জমির সিংহভাগ পড়েছে চলনবিল অংশে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুন্দইল ব্রিজের দক্ষিণ পাশে কাটাগাঙে অবৈধ সোঁতিজাল পেতে মাছ শিকার করছে কুন্দইল গ্রামের প্রভাবশালী একটি মহল। তারা সংঘবদ্ধভাবে কাটাগাঙের দুপাশে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশের চাটা, খোলপা ও মিহি কারেন্টজাল দিয়ে সোঁতিজাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছে। এসব জালে শুধু মাছ নয় বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণি নির্বিচারে মারা পড়ছে। এতে করে পানির প্রবাহের ধীরগতির পাশাপাশি চলনবিলের জীববৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়েছে। কুন্দইল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ৮নং ব্রিজ পর্যন্ত মোট ছয়/সাতটি সোঁতিজাল পেতে প্রভাবশালীরা মাছ ধরছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।স্থানীয় আমজাদ হোসেন, হফিজুল জানান, অবৈধ সোঁতিজালের কারণে বিলের পানি নামতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে সরিষার আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না করলে এ অঞ্চলের কৃষকদের সমূহ ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শমিষ্ঠা সেন গুপ্ত বলেন, সোঁতিজালে কারণে পানি ধীর গতিতে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের সরিষা লাগাতে দেরি হচ্ছে। যেহেতু কৃষক সরিষার পরে বোরো ধান লাগায় তাই সরিষা লাগাতে দেরি হলে বোরো ধান আবাদে বিঘ্ন হতে পারে। এর ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকারম হোসেন বলেন, শিগগিরই উল্লেখিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ সোতি জালগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, চলনবিলের পানি নামার শেষের দিকে মাছ শিকার করতে বিভিন্ন অবৈধজাল পাতেন এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। এতে করে একদিকে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয় অপরদিকে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। যা প্রাণপ্রকৃতির উপর বড় ধরণের আঘাত। আমারা এসব অবৈধ সোঁতিজাল উচ্ছেদ করতে মৎস্য বিভাগের সাথে আলোচনা করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
অনিশ্চিত সরিষার আবাদ
সিরাজগঞ্জ : কাটাগাঙে এলাকায় অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে ধরা হয় মাছ -সংবাদ
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
সিরাজগঞ্জের চলনবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি, এটি শস্য ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবেও সারা দেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। তাড়াশ উপজেলার পশ্চিমে বিস্তৃর্ণ চলনবিল। অক্টোবরের শেষে বিলের পানি নামে কাটাগাঙ দিয়ে। কিন্তু এ বছর উপজেলার সগুনা ইউনিয়নে কুন্দইল থেকে মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের ৮নং ব্রিজ পর্যন্ত কাটাগাঙে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র ছয়টি পয়েন্টে অবৈধ সোঁতিজাল দিয়ে মাছ ধরায় পানি নিষ্কাষণে চলছে ধীর গতি। দ্রুত পানি নামতে না পারায় রবিশষ্য, বিশেষ করে সরিষার আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে করে বিলের বিশাল একটি অংশে সরিষার আবাদ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাদের দাবি প্রশাসন দ্রুত এসব অবৈধ সোঁতিজাল অপসারণ করে তাদের কে রবিশষ্যের আবাদের সুযোগ করে দিবেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চলনবিলের সিংড়া, গুরুদাসপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বর্ষার পানি নিষ্কাশন হয় কাটাগাঙ দিয়ে। বিগত সরকারের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কাটাগাঙ সংষ্কার করা হয়। আর এই কাটাগাঙ দিয়েই আশ্বিনের মাসের শেষে হতেই সব পানি নেমে যায়। তাই এ অঞ্চলের কৃষক বোরোধান চাষের আগে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে লাভবান হয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ সোঁতিজাল পাতায় তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব আবাদী জমির সিংহভাগ পড়েছে চলনবিল অংশে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুন্দইল ব্রিজের দক্ষিণ পাশে কাটাগাঙে অবৈধ সোঁতিজাল পেতে মাছ শিকার করছে কুন্দইল গ্রামের প্রভাবশালী একটি মহল। তারা সংঘবদ্ধভাবে কাটাগাঙের দুপাশে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশের চাটা, খোলপা ও মিহি কারেন্টজাল দিয়ে সোঁতিজাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছে। এসব জালে শুধু মাছ নয় বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণি নির্বিচারে মারা পড়ছে। এতে করে পানির প্রবাহের ধীরগতির পাশাপাশি চলনবিলের জীববৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়েছে। কুন্দইল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ৮নং ব্রিজ পর্যন্ত মোট ছয়/সাতটি সোঁতিজাল পেতে প্রভাবশালীরা মাছ ধরছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।স্থানীয় আমজাদ হোসেন, হফিজুল জানান, অবৈধ সোঁতিজালের কারণে বিলের পানি নামতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে সরিষার আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না করলে এ অঞ্চলের কৃষকদের সমূহ ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শমিষ্ঠা সেন গুপ্ত বলেন, সোঁতিজালে কারণে পানি ধীর গতিতে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের সরিষা লাগাতে দেরি হচ্ছে। যেহেতু কৃষক সরিষার পরে বোরো ধান লাগায় তাই সরিষা লাগাতে দেরি হলে বোরো ধান আবাদে বিঘ্ন হতে পারে। এর ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকারম হোসেন বলেন, শিগগিরই উল্লেখিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ সোতি জালগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, চলনবিলের পানি নামার শেষের দিকে মাছ শিকার করতে বিভিন্ন অবৈধজাল পাতেন এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। এতে করে একদিকে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয় অপরদিকে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। যা প্রাণপ্রকৃতির উপর বড় ধরণের আঘাত। আমারা এসব অবৈধ সোঁতিজাল উচ্ছেদ করতে মৎস্য বিভাগের সাথে আলোচনা করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।