ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় গলাচিপার চরাঞ্চল এখন অতিথি পাখিদের কলধ্বনিতে মুখর। গোটা চরাঞ্চলজুড়ে অতিথি পাখিদের দলবদ্ধভাবে বিচরণের এমন দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। শুধু দ্বীপ চরগুলোতেই নয়, উপজেলার বিস্তৃত নদ-নদীতেও এমন দৃশ্য অবলোকন এখন সহজ ব্যাপার। পাখিদের জলকেলি, খুনসুটি আর কিচিরমিচির কলতানে সৃষ্টি হওয়া আবহে পাখিপ্রেমীদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে।
পরবাসী বিহঙ্গকুল প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার তাগিদে প্রতি বছর শীত মৌসুমে শীতপ্রধান দেশ থেকে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে অত্র এলাকার চরবাংলা, চরশিবা, চরবিশ্বাস, চরকাজল, চরকলাগাছিয়া, মাঝেরচরসহ ছোট-বড় অসংখ্য দ্বীপ-বালুচর এবং চর সংশ্লিষ্ট বিস্তৃত নদ-নদীতেও। সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শুধু ডানায় ভর করেই এসব পাখি এসে থাকে। একটানা পথ চলার ক্লান্তিতে এরা প্রথমত কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ সাগরসংলগ্ন গলাচিপার দ্বীপচরগুলোতে বিচরণ করে তারা যেন সজিবতা ফিরে পায়। এসব অতিথি পাখিদের কলধ্বনিতে মুখরিত এখন গোটা অঞ্চল। তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে চরঞ্চলের মানুষদের। এ সময় পাখিদের উত্যক্ত করার কেউ নেই। কুয়াশাস্নাত সকালের সোনালী রোদে সূর্যস্নান সেড়ে পাখির দল চষে বেড়ায় ছোট শামুক, ঘাস, শষ্যদানা আর পোকামাকড়ের সন্ধানে। আগত এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেনজিং হাঁস, পিয়ং হাঁস, সেরিয়া হাঁস, চোখা হাঁস, কংগাই হাঁস, গঙ্গা কবুতর, গাংচিল, বিলাতি শালিক প্রভৃতি। অতিথি পাখিদের সঙ্গে মিলে মিশে আছে আমাদের দেশিয় পাখিরাও। এগুলোর মধ্যে কানা বগ, পানকৌড়ি, জল কবুতর, কালি ডাহুক ও মাছরাঙ্গা উল্লেখযোগ্য।
পরবাসী বিহঙ্গকুল আর দেশিয় পাখিদের মিলন অভিসারে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে গলাচিপার দ্বীপচরাঞ্চলে। এসব পাখি প্রকৃতির টানে ছুটে আসে আবার প্রকৃতির টানেই গন্তব্যে চলে যায়। বিগত সত্তর-আশির দশক ধরে উল্লেখিত এ অঞ্চলে অসংখ্য পাখির উপস্থিতি রয়েছে বলে স্থানীয় প্রবীণ এবং পাখি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গেছে। গত বছরও এ এলাকায় অসংখ্য প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। তবে এ বছর এর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় নিতান্ত কম। রাষ্ট্রীয় আইনে অতিথি পাখি শিকার নিষিদ্ধ থাকলেও কিছু কিছু অবাঞ্চিত শিকারিদের দৌরাত্ম্যে পাখিদের নিরাপত্তা, চরাঞ্চলে ঘর-বাড়ি তৈরি করা, নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজার করা, বিভিন্ন প্রকার জলজ আগাছা পরিস্কার করে রাসয়নিক সার প্রয়োগ করে মাছ চাষ করা ও ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে পাখিদের খাদ্য (কীটপতঙ্গ) বিনষ্ট করাসহ একাধিক কারণগুলোকে অতিথি পাখির চারণক্ষেত্রের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অতিথি পাখির আগমনী ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ঝোপঝাড় সৃষ্টির মাধ্যমে পাখি প্রজননের সহায়ক পরিবেশ ও যতেষ্ট খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। পাখি চারণক্ষেত্রের আশপাশে ঘড়-বাড়ি তৈরি করতে দেওয়া যাবে না।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পরবাসী এসব অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিনত হবে গলাচিপার প্রত্যন্ত দ্বীপ ও চরাঞ্চল। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান জানান, চরাঞ্চলে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ অব্যাহত রাখতে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় গলাচিপার চরাঞ্চল এখন অতিথি পাখিদের কলধ্বনিতে মুখর। গোটা চরাঞ্চলজুড়ে অতিথি পাখিদের দলবদ্ধভাবে বিচরণের এমন দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। শুধু দ্বীপ চরগুলোতেই নয়, উপজেলার বিস্তৃত নদ-নদীতেও এমন দৃশ্য অবলোকন এখন সহজ ব্যাপার। পাখিদের জলকেলি, খুনসুটি আর কিচিরমিচির কলতানে সৃষ্টি হওয়া আবহে পাখিপ্রেমীদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে।
পরবাসী বিহঙ্গকুল প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষার তাগিদে প্রতি বছর শীত মৌসুমে শীতপ্রধান দেশ থেকে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে অত্র এলাকার চরবাংলা, চরশিবা, চরবিশ্বাস, চরকাজল, চরকলাগাছিয়া, মাঝেরচরসহ ছোট-বড় অসংখ্য দ্বীপ-বালুচর এবং চর সংশ্লিষ্ট বিস্তৃত নদ-নদীতেও। সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শুধু ডানায় ভর করেই এসব পাখি এসে থাকে। একটানা পথ চলার ক্লান্তিতে এরা প্রথমত কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ সাগরসংলগ্ন গলাচিপার দ্বীপচরগুলোতে বিচরণ করে তারা যেন সজিবতা ফিরে পায়। এসব অতিথি পাখিদের কলধ্বনিতে মুখরিত এখন গোটা অঞ্চল। তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে চরঞ্চলের মানুষদের। এ সময় পাখিদের উত্যক্ত করার কেউ নেই। কুয়াশাস্নাত সকালের সোনালী রোদে সূর্যস্নান সেড়ে পাখির দল চষে বেড়ায় ছোট শামুক, ঘাস, শষ্যদানা আর পোকামাকড়ের সন্ধানে। আগত এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লেনজিং হাঁস, পিয়ং হাঁস, সেরিয়া হাঁস, চোখা হাঁস, কংগাই হাঁস, গঙ্গা কবুতর, গাংচিল, বিলাতি শালিক প্রভৃতি। অতিথি পাখিদের সঙ্গে মিলে মিশে আছে আমাদের দেশিয় পাখিরাও। এগুলোর মধ্যে কানা বগ, পানকৌড়ি, জল কবুতর, কালি ডাহুক ও মাছরাঙ্গা উল্লেখযোগ্য।
পরবাসী বিহঙ্গকুল আর দেশিয় পাখিদের মিলন অভিসারে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে গলাচিপার দ্বীপচরাঞ্চলে। এসব পাখি প্রকৃতির টানে ছুটে আসে আবার প্রকৃতির টানেই গন্তব্যে চলে যায়। বিগত সত্তর-আশির দশক ধরে উল্লেখিত এ অঞ্চলে অসংখ্য পাখির উপস্থিতি রয়েছে বলে স্থানীয় প্রবীণ এবং পাখি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গেছে। গত বছরও এ এলাকায় অসংখ্য প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। তবে এ বছর এর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় নিতান্ত কম। রাষ্ট্রীয় আইনে অতিথি পাখি শিকার নিষিদ্ধ থাকলেও কিছু কিছু অবাঞ্চিত শিকারিদের দৌরাত্ম্যে পাখিদের নিরাপত্তা, চরাঞ্চলে ঘর-বাড়ি তৈরি করা, নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজার করা, বিভিন্ন প্রকার জলজ আগাছা পরিস্কার করে রাসয়নিক সার প্রয়োগ করে মাছ চাষ করা ও ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে পাখিদের খাদ্য (কীটপতঙ্গ) বিনষ্ট করাসহ একাধিক কারণগুলোকে অতিথি পাখির চারণক্ষেত্রের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অতিথি পাখির আগমনী ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ঝোপঝাড় সৃষ্টির মাধ্যমে পাখি প্রজননের সহায়ক পরিবেশ ও যতেষ্ট খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। পাখি চারণক্ষেত্রের আশপাশে ঘড়-বাড়ি তৈরি করতে দেওয়া যাবে না।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পরবাসী এসব অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিনত হবে গলাচিপার প্রত্যন্ত দ্বীপ ও চরাঞ্চল। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান জানান, চরাঞ্চলে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ অব্যাহত রাখতে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।