alt

মৌসুম শুরু হলেও এখনও খালি পড়ে আছে লবণ মাঠ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার) : সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের লম্বাঘোনা এলাকায় খালি পড়ে আছে বিস্তৃীর্ণ লবণ মাঠ -সংবাদ

পুরো বাংলাদেশের লবণের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কক্সবাজার জেলায় প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ২৩-২৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়, যা দেশের লবণের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থেকে যায়। তবে কোনো কোনো বছর প্রকৃতির বৈরি আচরণের কারণে লবণ উৎপাদন কিছুটা কম হলেও পরের বছরের উৎপাদন থেকে নির্ধারিত চাহিদা নিবারণ হতো।

বিদেশ থেকে ফের লবণ আমদানি খবরে উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছেন ৪১ হাজার চাষি

কক্সবাজার বিসিকের তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ও ক্ষেত্র বিশেষে আবহাওয়া বৈরি আচরণের কারণে নভেম্বর মাসের শুরুতে লবণ চাষে নামেন চাষিরা। কিন্তু ইতোমধ্যে মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ উৎপাদন এলাকার বেশিরভাগ লবণ মাঠ এখনও খালি পড়ে রয়েছে। বিপুল টাকা লগ্নি করে জমি বর্গা নিয়ে চাষে নামতে গিয়ে চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয় লবণ চাষিরা।

কারণ মৌসুমের শুরুতে আবারও সোডিয়াম সালফেট শিল্প-কারখানার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন বিসিক।

এই খবরটি মাঠপর্যায়ে চাষিরা জানতে পেরে লবণ চাষে এ বছরও কাক্সিক্ষত দাম না পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা এমনটাই জানিয়েছেন চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত মৌসুমের চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ এখনও মাঠে মজুত রয়ে গেছে। সেখানে সরকার নতুন করে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেও আগেকার বছরগুলোর মতো ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় অনেক চাষি এখন চাষে নামতে গিয়ে দুচিন্তায় পড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে দেশে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। এর আগের মৌসুমে উৎপাদন ছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।

চাহিদা পূরণে ঘাটতি থাকলেও মৌসুম শেষ হওয়ার ছয় মাস পর পর্যন্ত ৪ লাখ ২০৩ টন লবণ বিক্রি হয়নি। এসব লবণ এখনও মাঠেই পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের পশ্চিম বড়ভেওলা, দরবেশকাটা, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, রামপুর, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের ৬টি বড় মোকামসহ কক্সবাজারের সাত উপজেলা মিলিয়ে ৫৯ হাজার ৯৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলার (আংশিক) ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে প্রতি বছর লবণ চাষ হয়ে থাকে। বিসিকের তথ্য মতে, উৎপাদন এলাকায় লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৪১ হাজার ৩৫৫ জন চাষি।

বিসিকের তথ্য বলছে, দেশে উৎপাদিত মোট লবণের ৮৭ শতাংশই উৎপাদন হয় কক্সবাজারের সাতটি উপজেলা থেকে। বাকি অংশ উৎপাদিত হয় বাঁশখালী ও পটিয়ার উপকূলীয় এলাকা থেকে। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম চলে। এবারাও নভেম্বর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজার জেলার মধ্যে শুধুমাত্র কুতুবদিয়ার চাষিরা উৎপাদনে নেমেছে। কিন্তু চাষে নেমে তারা লবণের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। বর্তমানে মণপ্রতি লবণের দাম ২৪০ টাকা।

মৌসুমের শুরুতে সমুদ্র উপকুল কুতুবদিয়ার চাষিরা আগেভাগে লবণ চাষে নেমেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা সাংবাদিক আবুল কাশেম সাগর। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে চাষ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার লবণ মাঠের লাগিয়ত (ভাড়া) ও শ্রমিক মজুরি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ চাষিরা। তবে এরইমধ্যে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির খবরে চাষিদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে লবণ আমদানি করা হলে দেশীয় লবণের ভালো দাম পাওয়া যাবে না। আগের বছরের মতো এবারও লোকসান গুনতে হবে। নিরুপায় হয়ে আমাদেরকে এ চাষ ছেড়ে দিতে হবে।’

চকরিয়া উপজেলার বৃহত্তর লবণ চাষি দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ব্যবসায়ী নেতা মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে ‘আমদানির সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে দেশীয় লবণের দাম অনেক কমে গেছে। এখন এক মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩০০ টাকার বেশি। এতে করে চাষিরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতি বছর এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় লবণ শিল্প অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে লবণ চাষ, পরিবহন, গুদামজাত ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে দেশে মজুত লবণ ব্যবহার করে আগামী দুই মাস চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ( বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (লবণ সেলপ্রধান) সরোয়ার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ লবণ মজুত রয়েছে, তা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য দেড় লাখ টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমদানির প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান থেকে অপরিশোধিত লবণ আমদানি করা হবে।

তবে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতা মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ অভিযোগ করে বলছেন, শিল্প-কারখানা ও কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে প্রতি বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি জিইয়ে রেখেছে। সিন্ডিকেট চক্রের এমন কারসাজির কারণে প্রতি বছর দেশীয় লবণ উৎপাদনে জড়িত স্থানীয় চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও অযৌক্তিকভাবে আমদানির অনুমতি দিলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, দেশীয় লবণের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ধরে রাখতে হলে সরকারকে চাষিদের জন্য কার্যকর প্রণোদনা দিতে হবে। জমির ভাড়া, সেচ ব্যবস্থা ও শ্রমিকের পেছনে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমদানির পরিকল্পনা বাতিল করে স্থানীয় চাষির কাছ থেকে লবণ সংগ্রহ ও বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক)-এর উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজারে লবণের দাম কম থাকায় অনেকে বেশিরভাগ উৎপাদন এলাকায় অনেক চাষি মাঠে নামেনি একথা সত্য। তবে এবার দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে লবণ কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তার জন্য গোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই আলোকে এবার সরকারিভাবে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে লবণ কিনে সেটি গোডাউনে মজুত করা হবে।

তিনি বলেন, এখন তো দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিদ্যমান। সেখানে লবণের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাজারে লবণের দাম কম থাকায় প্রান্তিক চাষিরাও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

ছবি

বিভিন্ন স্থানে আগুন ও হাতবোমা

ছবি

সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’, আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘সুযোগ মেলেনি’, বললেন হাসিনা

ছবি

মানিকগঞ্জে ১৪ মাসে হত্যাকাণ্ড ২৩টি, ৪১ অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ছবি

সাদুল্লাপুরে বিনামূল্যে হুইলচেয়ার ও ছাগল বিতরণ

ছবি

কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ

ছবি

নারায়ণগঞ্জে থামিয়ে রাখা বাসে আগুন

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়কে দেড় শতাধিক গর্ত

ছবি

পাখির কলধ্বনিতে মুখর গলাচিপার চরাঞ্চল

ছবি

ঘোড়াশালে ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনতে ক্রেতাদের ভিড়

ছবি

গাজীপুরে রেড ক্রিসেন্টের নির্বাচন: বহুল পরিচিত মৃতরাও ভোটার

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়িতে আরকান আর্মির সদস্য সন্দেহে একজন গ্রেপ্তার, ‘মাদকচক্রে জড়িত’ থাকার অভিযোগ

ছবি

শেরপুরে আমন ধানের পর আলু চাষে চিন্তা কৃষকের

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ডায়রিয়া নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ছবি

কলারোয়ায় ইউএনও’র বিদায় সংবর্ধনা

ছবি

হাটহাজারীতে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

কেশবপুরে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরিতে বিপাকে কৃষক

ছবি

লালপুরে নারী প্রলোভনে চাঁদা আদায়, চক্রের দুই প্রতারক গ্রেপ্তার

ছবি

বাগেরহাটে নাগরিক প্লাটফর্মের সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ছবি

নবীনগর প্রাত:ভ্রমণ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ছবি

রায়গঞ্জে ফিস্টুলা রোগী সনাক্তকরণ সংক্রান্ত অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বাগেরহাটে খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডের অভিযোগ

ছবি

সিলেটে ১৩ গাড়ি পুড়ে ছাঁই

ছবি

গাজনার বিলপাবনার শস্যভান্ডারে জলাবদ্ধতা পেঁয়াজ চাষে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ছবি

সিরাজগঞ্জের জেলে পরিবারের সব খরচই যেন যমুনা নদীর দান

ছবি

সিংগাইরে ইসলামী ব্যাংক শাখায় অগ্নিকা-, ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি

ছবি

হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব, নেই পিঠাপুলির ধুম

ছবি

নড়বড়ে সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পারাপার

ছবি

ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচির উদ্বোধন

ছবি

সোনালি ধানের ঢেউয়ে নবান্ন উৎসব

ছবি

গজারিয়া উপজেলা পোস্ট অফিসে লোকবল সংকট

ছবি

বাগেরহাটে বিদ্যুতায়িত হয়ে শ্রমিক নিহত

ছবি

গজারিয়ায় মৃত্তিকার গুনাগুন বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ছবি

চকরিয়ার মানিকপুরে তিনটি পরিবেশবান্ধব ঝিকঝাক ইটভাটা উচ্ছেদ

ছবি

জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধনে টানা পঞ্চমবারের মতো শীর্ষে দুমকি উপজেলা

ছবি

বোয়ালখালীতে কৃষকের গরু চুরি

tab

মৌসুম শুরু হলেও এখনও খালি পড়ে আছে লবণ মাঠ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার)

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের লম্বাঘোনা এলাকায় খালি পড়ে আছে বিস্তৃীর্ণ লবণ মাঠ -সংবাদ

সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

পুরো বাংলাদেশের লবণের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কক্সবাজার জেলায় প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ২৩-২৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়, যা দেশের লবণের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থেকে যায়। তবে কোনো কোনো বছর প্রকৃতির বৈরি আচরণের কারণে লবণ উৎপাদন কিছুটা কম হলেও পরের বছরের উৎপাদন থেকে নির্ধারিত চাহিদা নিবারণ হতো।

বিদেশ থেকে ফের লবণ আমদানি খবরে উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছেন ৪১ হাজার চাষি

কক্সবাজার বিসিকের তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ও ক্ষেত্র বিশেষে আবহাওয়া বৈরি আচরণের কারণে নভেম্বর মাসের শুরুতে লবণ চাষে নামেন চাষিরা। কিন্তু ইতোমধ্যে মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ উৎপাদন এলাকার বেশিরভাগ লবণ মাঠ এখনও খালি পড়ে রয়েছে। বিপুল টাকা লগ্নি করে জমি বর্গা নিয়ে চাষে নামতে গিয়ে চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয় লবণ চাষিরা।

কারণ মৌসুমের শুরুতে আবারও সোডিয়াম সালফেট শিল্প-কারখানার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন বিসিক।

এই খবরটি মাঠপর্যায়ে চাষিরা জানতে পেরে লবণ চাষে এ বছরও কাক্সিক্ষত দাম না পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা এমনটাই জানিয়েছেন চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত মৌসুমের চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ এখনও মাঠে মজুত রয়ে গেছে। সেখানে সরকার নতুন করে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেও আগেকার বছরগুলোর মতো ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় অনেক চাষি এখন চাষে নামতে গিয়ে দুচিন্তায় পড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে দেশে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। এর আগের মৌসুমে উৎপাদন ছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।

চাহিদা পূরণে ঘাটতি থাকলেও মৌসুম শেষ হওয়ার ছয় মাস পর পর্যন্ত ৪ লাখ ২০৩ টন লবণ বিক্রি হয়নি। এসব লবণ এখনও মাঠেই পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের পশ্চিম বড়ভেওলা, দরবেশকাটা, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, রামপুর, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের ৬টি বড় মোকামসহ কক্সবাজারের সাত উপজেলা মিলিয়ে ৫৯ হাজার ৯৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলার (আংশিক) ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে প্রতি বছর লবণ চাষ হয়ে থাকে। বিসিকের তথ্য মতে, উৎপাদন এলাকায় লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৪১ হাজার ৩৫৫ জন চাষি।

বিসিকের তথ্য বলছে, দেশে উৎপাদিত মোট লবণের ৮৭ শতাংশই উৎপাদন হয় কক্সবাজারের সাতটি উপজেলা থেকে। বাকি অংশ উৎপাদিত হয় বাঁশখালী ও পটিয়ার উপকূলীয় এলাকা থেকে। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম চলে। এবারাও নভেম্বর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজার জেলার মধ্যে শুধুমাত্র কুতুবদিয়ার চাষিরা উৎপাদনে নেমেছে। কিন্তু চাষে নেমে তারা লবণের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। বর্তমানে মণপ্রতি লবণের দাম ২৪০ টাকা।

মৌসুমের শুরুতে সমুদ্র উপকুল কুতুবদিয়ার চাষিরা আগেভাগে লবণ চাষে নেমেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা সাংবাদিক আবুল কাশেম সাগর। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে চাষ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার লবণ মাঠের লাগিয়ত (ভাড়া) ও শ্রমিক মজুরি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ চাষিরা। তবে এরইমধ্যে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির খবরে চাষিদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে লবণ আমদানি করা হলে দেশীয় লবণের ভালো দাম পাওয়া যাবে না। আগের বছরের মতো এবারও লোকসান গুনতে হবে। নিরুপায় হয়ে আমাদেরকে এ চাষ ছেড়ে দিতে হবে।’

চকরিয়া উপজেলার বৃহত্তর লবণ চাষি দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ব্যবসায়ী নেতা মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে ‘আমদানির সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে দেশীয় লবণের দাম অনেক কমে গেছে। এখন এক মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩০০ টাকার বেশি। এতে করে চাষিরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতি বছর এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় লবণ শিল্প অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে লবণ চাষ, পরিবহন, গুদামজাত ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে দেশে মজুত লবণ ব্যবহার করে আগামী দুই মাস চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন ( বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (লবণ সেলপ্রধান) সরোয়ার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ লবণ মজুত রয়েছে, তা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য দেড় লাখ টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমদানির প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান থেকে অপরিশোধিত লবণ আমদানি করা হবে।

তবে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতা মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ অভিযোগ করে বলছেন, শিল্প-কারখানা ও কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে প্রতি বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি জিইয়ে রেখেছে। সিন্ডিকেট চক্রের এমন কারসাজির কারণে প্রতি বছর দেশীয় লবণ উৎপাদনে জড়িত স্থানীয় চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও অযৌক্তিকভাবে আমদানির অনুমতি দিলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, দেশীয় লবণের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ধরে রাখতে হলে সরকারকে চাষিদের জন্য কার্যকর প্রণোদনা দিতে হবে। জমির ভাড়া, সেচ ব্যবস্থা ও শ্রমিকের পেছনে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমদানির পরিকল্পনা বাতিল করে স্থানীয় চাষির কাছ থেকে লবণ সংগ্রহ ও বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক)-এর উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজারে লবণের দাম কম থাকায় অনেকে বেশিরভাগ উৎপাদন এলাকায় অনেক চাষি মাঠে নামেনি একথা সত্য। তবে এবার দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে লবণ কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তার জন্য গোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই আলোকে এবার সরকারিভাবে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে লবণ কিনে সেটি গোডাউনে মজুত করা হবে।

তিনি বলেন, এখন তো দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিদ্যমান। সেখানে লবণের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাজারে লবণের দাম কম থাকায় প্রান্তিক চাষিরাও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

back to top