ভালুকা (ময়মনসিংহ) : মল্লিকবাড়ী গ্রামে ধান কাটছেন কৃষক আ: ছাত্তার -সংবাদ
বছর ঘোরে অগ্রাণ মাস এলে কৃষক পরিবারে শুরু হয় মাঠের নতুন ফসল আমন ধান ঘরে তোলার নানা আয়োজনের কর্ম ব্যস্ততা।
হেমন্তের হালকা হিমেল হাওয়ায় কুয়াশার চাদর মোড়ানো মাঠে মাঠে রুপালী শিশির ভেজা ধানের গোছায় কাস্তে চালনায় মেতে উঠে কৃষকের দল। কাক ডাকা ভোর হতেই ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আমন ধান কাটায় মাঠ জুরে কৃষকের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায়। বাড়ীর উঠানে জমতে শুরু করে সোনালী ধানের আঁটির পাহাড়। মাঠে মাঠে চলে দলবদ্ধ শ্রমিকদের দিনভর পাকা ধান কেটে আঁটি বাঁধা আর দিনশেষে গৃহস্থের উঠানে পৌছে দেওয়ার বিরামহীন আসা যাওয়া। বাড়ীর উঠানে জড়ো হওয়া ধান ছাড়ানোর ধপাস ধপাস শব্দে মুখর হয়ে উঠে বাহির বাড়ির আঙ্গিনা। অপর দিকে গৃহস্থ বাড়ীর বউঝি’রা উঠান তৈরী, ধান সিদ্ধর চুলা ও মাচা তৈরী করতে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করেন। তাদের মাঝে দেখা যায় নতুন ফসল ঘরে তুলে গোলা ভরার রঙ্গীন সপ্নের চঞ্চলতা। গৃহস্থ বাড়ীতে কাজের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন গ্রামের মহিলা শ্রমিকরা। অগ্রানের মিষ্টি রোদে মাঠে মাঠে দিগন্ত জোড়া সোনালী রংয়ের পাকা ধান আবাহমান বাংলার ঘরে ঘরে এক অজানা উৎসবের আমেজে ভরে উঠে কৃষান কৃষাণীর মনপ্রাণ। পাকা ধান কাটা ও মাড়াই করে গোলায় উঠানোর পর শুরু হয় নবান্নের নানা উৎসব। সারা রাত নারার আগুনে সিদ্ধ করা ধান পরদিন উঠানে রোদে শুকাতে দিতে গৃহস্থ বউ-ঝিদের মাথার ঘাম পায়ে ঝরে তবু বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ থাকেনা। সাঁঝ বেলায় নাওয়া খাওয়া করে আবার রাতেই শুরু হয় ঢেকিতে চিকুর চিকুর শব্দ তোলে ধান বানার কাজ। ঢেকি নিয়ে কবি, গীতিকাররা লিখে গেছেন ও ধান বানিরে ঢিকিতে পাড় দিয়া, ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দোলিয়া ও ধান বানিরে। ঢেকিতে চালের গুড়া করা হয় যা দিয়ে বিশেষ করে এ সময় নানা রকম শেিতর পিঠা তৈরী করা হয়। খেজুরের কাঁচা রসের খীর পায়েশ, মুখ রোচক সুস্বাদু খাবারের সমারোহে বাড়ি বাড়ি ভীড় জমে আত্মীয় কুটুমদের। শশুরবাড়ী হতে বাপেরবাড়ী বেড়ে যায় বউ ঝিদের আনাগোনা। চলতি আমন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের যেমন স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ ব্রী-ধান ৭১, ব্রী-ধান ৮৭, বীনা ধান ৭ ধানের আবাদ হয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ অধিক ফলনসীল উন্নত জাতের ধানের আবাদ করে দাম ভাল পাওয়ায় কৃষক পরিবারে আনন্দের সীমা নেই। আগাম ব্রী-ধান ৭১ কয়েকদিন পূর্ব হতেই কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ব্রী-ধান ৫১ সহ অন্যান্য জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার মল্লিকবাড়ী গ্রামে ধান কাটছিলেন কৃষক আ: ছাত্তার। তিনি ২০ কাঠা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। একই দিন চামিয়াদী গ্রামে সূর্য্যত আলীর ক্ষেতে আমন ধান কাটছিলেন শ্রমিকরা। কৃষক সূর্য্যত আলী জানান তিনি ১৬ কাঠা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ধান পেঁকে যাওয়ায় শ্রমিকদের ৬০০ টাকা রোজ হিসেবে ধান কাটাচ্ছেন। এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে দামও ভাল পেয়ে তিনি খুশি।
এছারা সোনলী বরণ ব্রি ধান ৩৪ সুগন্ধি চিনিগুড়ি, স্থানীয়জাত কালিজিরা, গুডি শাইল ইত্যাদি সুগন্ধি ধানের চিকন চালে বাঙ্গালীদের ঈদ পার্বন আচার অনুষ্ঠানে আদি কাল হতে রিচফুড পোলাও,ফিন্নি, ক্ষীর পায়েশ ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরী হয়। যে জন্য এসব সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে ব্যপক। তিনি জানান উফসী ও স্থানীয় জাত ধানের বাজার মুল্য বর্তমানে ১০০০ টাকা হতে ১২০০ টাকা মণ দরে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে সুগন্ধি ধান চিনিগুড়ি প্রতিমণ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমণ আবাদে রোগবালাই তেমন ছিলনা, বৃষ্টি হয়েছে উপযুক্ত সময়ে যে কারনে আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরী ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজ হওয়ায় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ভালুকা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়নেই কমবেশী আমন ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভালুকা, মল্লিকবাড়ী, বিরোনিয়া, মেদুয়ারী, রাজৈ, উথুরা, কাচিনা, ডাকাতিয়া ও হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জমি উঁচু ও সমান্তরাল হওয়ায় এসব এলাকায় আমন আবাদ বেশী হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। কৃষকদের অধিক ফলনশীল আগামজাত স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ যেমন ব্রী-ধান ৭১, ব্রী-ধান ৮৭, বীনা ধান ৭ চাষ হয়েছে । স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ আমন ধান কাটার পর ওই জমিতে সরিষার আবাদ করা যাবে। সরিষা উঠিয়ে ওই জমিতে আবার বোরো ধানের আবাদ করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : মল্লিকবাড়ী গ্রামে ধান কাটছেন কৃষক আ: ছাত্তার -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
বছর ঘোরে অগ্রাণ মাস এলে কৃষক পরিবারে শুরু হয় মাঠের নতুন ফসল আমন ধান ঘরে তোলার নানা আয়োজনের কর্ম ব্যস্ততা।
হেমন্তের হালকা হিমেল হাওয়ায় কুয়াশার চাদর মোড়ানো মাঠে মাঠে রুপালী শিশির ভেজা ধানের গোছায় কাস্তে চালনায় মেতে উঠে কৃষকের দল। কাক ডাকা ভোর হতেই ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আমন ধান কাটায় মাঠ জুরে কৃষকের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায়। বাড়ীর উঠানে জমতে শুরু করে সোনালী ধানের আঁটির পাহাড়। মাঠে মাঠে চলে দলবদ্ধ শ্রমিকদের দিনভর পাকা ধান কেটে আঁটি বাঁধা আর দিনশেষে গৃহস্থের উঠানে পৌছে দেওয়ার বিরামহীন আসা যাওয়া। বাড়ীর উঠানে জড়ো হওয়া ধান ছাড়ানোর ধপাস ধপাস শব্দে মুখর হয়ে উঠে বাহির বাড়ির আঙ্গিনা। অপর দিকে গৃহস্থ বাড়ীর বউঝি’রা উঠান তৈরী, ধান সিদ্ধর চুলা ও মাচা তৈরী করতে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করেন। তাদের মাঝে দেখা যায় নতুন ফসল ঘরে তুলে গোলা ভরার রঙ্গীন সপ্নের চঞ্চলতা। গৃহস্থ বাড়ীতে কাজের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন গ্রামের মহিলা শ্রমিকরা। অগ্রানের মিষ্টি রোদে মাঠে মাঠে দিগন্ত জোড়া সোনালী রংয়ের পাকা ধান আবাহমান বাংলার ঘরে ঘরে এক অজানা উৎসবের আমেজে ভরে উঠে কৃষান কৃষাণীর মনপ্রাণ। পাকা ধান কাটা ও মাড়াই করে গোলায় উঠানোর পর শুরু হয় নবান্নের নানা উৎসব। সারা রাত নারার আগুনে সিদ্ধ করা ধান পরদিন উঠানে রোদে শুকাতে দিতে গৃহস্থ বউ-ঝিদের মাথার ঘাম পায়ে ঝরে তবু বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ থাকেনা। সাঁঝ বেলায় নাওয়া খাওয়া করে আবার রাতেই শুরু হয় ঢেকিতে চিকুর চিকুর শব্দ তোলে ধান বানার কাজ। ঢেকি নিয়ে কবি, গীতিকাররা লিখে গেছেন ও ধান বানিরে ঢিকিতে পাড় দিয়া, ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দোলিয়া ও ধান বানিরে। ঢেকিতে চালের গুড়া করা হয় যা দিয়ে বিশেষ করে এ সময় নানা রকম শেিতর পিঠা তৈরী করা হয়। খেজুরের কাঁচা রসের খীর পায়েশ, মুখ রোচক সুস্বাদু খাবারের সমারোহে বাড়ি বাড়ি ভীড় জমে আত্মীয় কুটুমদের। শশুরবাড়ী হতে বাপেরবাড়ী বেড়ে যায় বউ ঝিদের আনাগোনা। চলতি আমন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের যেমন স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ ব্রী-ধান ৭১, ব্রী-ধান ৮৭, বীনা ধান ৭ ধানের আবাদ হয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ অধিক ফলনসীল উন্নত জাতের ধানের আবাদ করে দাম ভাল পাওয়ায় কৃষক পরিবারে আনন্দের সীমা নেই। আগাম ব্রী-ধান ৭১ কয়েকদিন পূর্ব হতেই কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ব্রী-ধান ৫১ সহ অন্যান্য জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার মল্লিকবাড়ী গ্রামে ধান কাটছিলেন কৃষক আ: ছাত্তার। তিনি ২০ কাঠা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। একই দিন চামিয়াদী গ্রামে সূর্য্যত আলীর ক্ষেতে আমন ধান কাটছিলেন শ্রমিকরা। কৃষক সূর্য্যত আলী জানান তিনি ১৬ কাঠা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ধান পেঁকে যাওয়ায় শ্রমিকদের ৬০০ টাকা রোজ হিসেবে ধান কাটাচ্ছেন। এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে দামও ভাল পেয়ে তিনি খুশি।
এছারা সোনলী বরণ ব্রি ধান ৩৪ সুগন্ধি চিনিগুড়ি, স্থানীয়জাত কালিজিরা, গুডি শাইল ইত্যাদি সুগন্ধি ধানের চিকন চালে বাঙ্গালীদের ঈদ পার্বন আচার অনুষ্ঠানে আদি কাল হতে রিচফুড পোলাও,ফিন্নি, ক্ষীর পায়েশ ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরী হয়। যে জন্য এসব সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে ব্যপক। তিনি জানান উফসী ও স্থানীয় জাত ধানের বাজার মুল্য বর্তমানে ১০০০ টাকা হতে ১২০০ টাকা মণ দরে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে সুগন্ধি ধান চিনিগুড়ি প্রতিমণ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আমণ আবাদে রোগবালাই তেমন ছিলনা, বৃষ্টি হয়েছে উপযুক্ত সময়ে যে কারনে আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরী ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজ হওয়ায় সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ভালুকা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়নেই কমবেশী আমন ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভালুকা, মল্লিকবাড়ী, বিরোনিয়া, মেদুয়ারী, রাজৈ, উথুরা, কাচিনা, ডাকাতিয়া ও হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জমি উঁচু ও সমান্তরাল হওয়ায় এসব এলাকায় আমন আবাদ বেশী হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। কৃষকদের অধিক ফলনশীল আগামজাত স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ যেমন ব্রী-ধান ৭১, ব্রী-ধান ৮৭, বীনা ধান ৭ চাষ হয়েছে । স্বল্প জীবনকাল সমৃদ্ধ আমন ধান কাটার পর ওই জমিতে সরিষার আবাদ করা যাবে। সরিষা উঠিয়ে ওই জমিতে আবার বোরো ধানের আবাদ করা হবে।