নাটোরের লালপুরে কাঁসা কারখানায় কাজ করছেন কারিগর -সংবাদ
কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর পুঁজির অভাব, স্বল্পমূল্যে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর ব্যাপক বিস্তারে মুখথুবড়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী কাঁসা শিল্প। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওঠা ছোট-বড় কাঁসার কারখানাগুলোর বেশিরভাগই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
অ্যালুমিনিয়াম, সীসা, মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিক আর কাঁচের তৈজসপত্রের ভিড়ে কাঁসা-পিতল হারিয়ে যাচ্ছে
এরকম নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে নাটোরের লালপুরের কাঁসারী বাজার, থেমে যাচ্ছে কাঁসা পেটানোর শব্দ। এক সময় যেখানে দৈনন্দিন তৈজসপত্রের অধিকাংশই তৈরি হতো কাঁসা দিয়ে, এখন সেখানে কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর পুঁজির অভাবসহ স্বল্পমূল্যে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে এ শিল্প মুখথুবড়ে পড়ছে।
কালের বিবর্তনে কাঁসাশিল্পের জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে গেছে। অসংখ্য পরিবার জড়িয়ে ছিল এই শিল্পের সঙ্গে। বংশপরম্পরায় চলে আসা এ পেশাটি এখন ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক পরিবার। এখন অ্যালুমিনিয়াম, সীসা, মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিক আর কাঁচের তৈজসপত্রের ভিড়ে কাঁসা-পিতলের প্রচলন হারিয়ে যাচ্ছে। এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আগের মতো কাঁসার তৈজসপত্রের কদর বিদ্যমান। দেশে-বিদেশে কাঁসার বাসনকোসনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এত কিছুর পরও কাঁসা সামগ্রীর কদর একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো গৃহস্থালীর কাজের জন্য কাঁসাজ পণ্য ব্যবহার করছেন।
জানা যায়, নবাবী আমলে বর্গীয় হাঙ্গামার সময় বর্গিদের অত্যাচারে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মহকুমার খাগড়া থেকে কাঁসা বণিক ও শ্রমিক নাটোরের লালপুর, সিংড়ার কলমে ও নবাবগঞ্জে বসতি স্থাপন করে। লালপুরে ৫০টি কারখানায় দক্ষ কারিগররা সুনিপুণ হাতে কাঁসা-পিতলের বগি থালা, টেডি প্লেট, বর প্লেট, বিভিন্ন ডিজাইনের গ্লাস, গলাচিপা কলস, রেকাব, পানদানি, ডাবর, জগ, ঘটি, বাটি, পিকদানি, ফুলদানি, হুক্কা, গামলা, পাতিল, ডেকচি ও ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করতেন।
কাঁসাশিল্পীরা জানান, কাঁসার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত তামা আর রাংয়ের দষ্প্রাপ্যতা এই শিল্পকে সংকটের মুখে দাঁড় করেছে। তামা দেশে কমবেশি পাওয়া গেলেও রাং আমদানি করতে হয় মালয়েশিয়া থেকে। এ ছাড়া বেড়েছে কয়লার দাম। আর এসব কারণে টিকে থাকতে পারছে না কাঁসাশিল্প। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেক কাঁসাশিল্প সংশ্লিষ্ট পরিবার। এখন নানা সংকটের কারণে টিকে আছে মাত্র ৪-৫টি কারখানা। হাঁটিহাঁটি পা-পা করে যে কয়টি কারখানা টিকে রয়েছে, তাও হুমকির মুখে। ভারতে কাঁসার দাম বেশি হওয়ায় চোরাইপথে পাচার হয়। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে অনীহা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় উৎপাদন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ, শুল্কমুক্ত আমদানি-রপ্তানির উদ্যোগ নিলে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী এই কাঁসাশিল্পটি টিকে থাকবে। অন্যথায় শিল্পটি মসলিন শিল্পের মতো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
নাটোরের লালপুরে কাঁসা কারখানায় কাজ করছেন কারিগর -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর পুঁজির অভাব, স্বল্পমূল্যে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর ব্যাপক বিস্তারে মুখথুবড়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী কাঁসা শিল্প। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওঠা ছোট-বড় কাঁসার কারখানাগুলোর বেশিরভাগই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
অ্যালুমিনিয়াম, সীসা, মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিক আর কাঁচের তৈজসপত্রের ভিড়ে কাঁসা-পিতল হারিয়ে যাচ্ছে
এরকম নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে নাটোরের লালপুরের কাঁসারী বাজার, থেমে যাচ্ছে কাঁসা পেটানোর শব্দ। এক সময় যেখানে দৈনন্দিন তৈজসপত্রের অধিকাংশই তৈরি হতো কাঁসা দিয়ে, এখন সেখানে কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর পুঁজির অভাবসহ স্বল্পমূল্যে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে এ শিল্প মুখথুবড়ে পড়ছে।
কালের বিবর্তনে কাঁসাশিল্পের জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে গেছে। অসংখ্য পরিবার জড়িয়ে ছিল এই শিল্পের সঙ্গে। বংশপরম্পরায় চলে আসা এ পেশাটি এখন ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক পরিবার। এখন অ্যালুমিনিয়াম, সীসা, মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিক আর কাঁচের তৈজসপত্রের ভিড়ে কাঁসা-পিতলের প্রচলন হারিয়ে যাচ্ছে। এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আগের মতো কাঁসার তৈজসপত্রের কদর বিদ্যমান। দেশে-বিদেশে কাঁসার বাসনকোসনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এত কিছুর পরও কাঁসা সামগ্রীর কদর একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো গৃহস্থালীর কাজের জন্য কাঁসাজ পণ্য ব্যবহার করছেন।
জানা যায়, নবাবী আমলে বর্গীয় হাঙ্গামার সময় বর্গিদের অত্যাচারে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মহকুমার খাগড়া থেকে কাঁসা বণিক ও শ্রমিক নাটোরের লালপুর, সিংড়ার কলমে ও নবাবগঞ্জে বসতি স্থাপন করে। লালপুরে ৫০টি কারখানায় দক্ষ কারিগররা সুনিপুণ হাতে কাঁসা-পিতলের বগি থালা, টেডি প্লেট, বর প্লেট, বিভিন্ন ডিজাইনের গ্লাস, গলাচিপা কলস, রেকাব, পানদানি, ডাবর, জগ, ঘটি, বাটি, পিকদানি, ফুলদানি, হুক্কা, গামলা, পাতিল, ডেকচি ও ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করতেন।
কাঁসাশিল্পীরা জানান, কাঁসার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত তামা আর রাংয়ের দষ্প্রাপ্যতা এই শিল্পকে সংকটের মুখে দাঁড় করেছে। তামা দেশে কমবেশি পাওয়া গেলেও রাং আমদানি করতে হয় মালয়েশিয়া থেকে। এ ছাড়া বেড়েছে কয়লার দাম। আর এসব কারণে টিকে থাকতে পারছে না কাঁসাশিল্প। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেক কাঁসাশিল্প সংশ্লিষ্ট পরিবার। এখন নানা সংকটের কারণে টিকে আছে মাত্র ৪-৫টি কারখানা। হাঁটিহাঁটি পা-পা করে যে কয়টি কারখানা টিকে রয়েছে, তাও হুমকির মুখে। ভারতে কাঁসার দাম বেশি হওয়ায় চোরাইপথে পাচার হয়। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে অনীহা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব আর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় উৎপাদন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ, শুল্কমুক্ত আমদানি-রপ্তানির উদ্যোগ নিলে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী এই কাঁসাশিল্পটি টিকে থাকবে। অন্যথায় শিল্পটি মসলিন শিল্পের মতো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।