সুবর্ণচর (নোয়াখালী) : অবাধে চলছে অবৈধ ইট ভাটা -সংবাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা খাদ্য শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বেশ। কৃষকের সেই ভান্ডারে অবাধে চলছে অবৈধ ইট ভাটা ব্যবসা। দেখলে মনে হবে এটি আলাদা এক ইট বানানোর রাজ্য। আর সেই রাজপ্রসাদ ক্ষমতাবলে শাসন করে যাচ্ছে সময়ের পরিবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা, প্রশাসনের অসাধু একটি চক্র, এক শ্রেণির লোভী সাংবাদকর্মীরা। তারা মালিক পক্ষের সাথে মাসিক মাসোহারা নিয়ে লিয়াজোঁ করে ড্রাম চিমনি অর্থাৎ বাংলা ভাটার জোয়ারে হুমকির মুখে পেলে দিয়েছে উপজেলার কৃষি উৎপাদন খাতটিকে।
ড্রাম চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইট ভাটাগুলোতে ব্যবহৃত কাচা লাড়কী পোড়ানোর ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
সচেতন একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এখনও ৯টি অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কেউ কাঁচা ইট তৈরি শেষ করে ভাটা নতুন করে চালু করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও একাধিক রাউন্ড ইট প্রস্তুত করে সাজিয়ে উচ্চ মূল্যে বিক্রি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যা ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজে। এসব ভাটাগুলোর বেশিরভাগ নিম্মমানের ইট প্রস্তুত করার অভিযোগ পুরনো। অবৈধ ৯টি ইট ভাটার মালিক পক্ষ খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন, মিডিয়া ম্যানেজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাটা মালিক দৈনিক সংবাদকের এ প্রতিবেদকের নিকট সব দপ্তর ম্যানেজের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমাদের হাত-পা বাঁধা, তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ ব্যবসাটি পরিচালনা করতে প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের ম্যানেজের প্রয়োজন। সেই কারণে আমাদের মালিক পক্ষের একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সব ম্যানেজ করেন। গত বছর উপজেলায় অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে অর্থদণ্ড এবং কয়েকটি ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
অভিযানে জরিমানা আদায় করা ভাটাগুলো হলো- মেসার্স একেবি ব্রিকসকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, মেসার্স তাহেরা ব্রিকসকে ১লক্ষ টাকা, জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
এছাড়াও যমুনা ব্রিকস, মেসার্স মুক্তা ব্রিকস, আল্লারদান ব্রিকস ও আলিফ ব্রিকসকে যথাক্রমে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করে ভাটা গুলো গুড়িয়ে দেন প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এরপর মেসার্স আইডা ব্রিকস, মেসার্স আমানত ব্রিকস এবং মুক্তা ও তাহিরা ব্রিকসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, চর আমান উল্যাহ ও চরক্লার্ক ২টি ইউনিয়নে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। বর্তমানে তা আর নেই। ইটভাটা গুলোর কারণে অনেক জমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মানবদেহ, প্রাণীজগৎ, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ভাটাগুলোর বিষাক্ত কালো ধোয়াতেই। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। উনারা কি পদক্ষেপ নেন অবশ্যই দেখবেন আপনারা।
অবৈধ ইট ভাটা, পরিবেশ দুষণ, খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাবেয়া আসফার সায়মা সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান,আমরা আগামীকালেই অভিযান পরিচালনা করছি। একদিনে হয়তো সবগুলোকে ভেঙে দেওয়া যাবে না। তবে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি জানান, অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে আছি অভিযানের জন্য। অভিযান পরিচালনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অচিরেই এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ফের গুড়িয়ে দেওয়া হবে অবৈধ ভাটাগুলো।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সুবর্ণচর (নোয়াখালী) : অবাধে চলছে অবৈধ ইট ভাটা -সংবাদ
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা খাদ্য শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বেশ। কৃষকের সেই ভান্ডারে অবাধে চলছে অবৈধ ইট ভাটা ব্যবসা। দেখলে মনে হবে এটি আলাদা এক ইট বানানোর রাজ্য। আর সেই রাজপ্রসাদ ক্ষমতাবলে শাসন করে যাচ্ছে সময়ের পরিবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা, প্রশাসনের অসাধু একটি চক্র, এক শ্রেণির লোভী সাংবাদকর্মীরা। তারা মালিক পক্ষের সাথে মাসিক মাসোহারা নিয়ে লিয়াজোঁ করে ড্রাম চিমনি অর্থাৎ বাংলা ভাটার জোয়ারে হুমকির মুখে পেলে দিয়েছে উপজেলার কৃষি উৎপাদন খাতটিকে।
ড্রাম চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইট ভাটাগুলোতে ব্যবহৃত কাচা লাড়কী পোড়ানোর ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
সচেতন একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এখনও ৯টি অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কেউ কাঁচা ইট তৈরি শেষ করে ভাটা নতুন করে চালু করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও একাধিক রাউন্ড ইট প্রস্তুত করে সাজিয়ে উচ্চ মূল্যে বিক্রি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যা ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজে। এসব ভাটাগুলোর বেশিরভাগ নিম্মমানের ইট প্রস্তুত করার অভিযোগ পুরনো। অবৈধ ৯টি ইট ভাটার মালিক পক্ষ খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন, মিডিয়া ম্যানেজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাটা মালিক দৈনিক সংবাদকের এ প্রতিবেদকের নিকট সব দপ্তর ম্যানেজের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমাদের হাত-পা বাঁধা, তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ ব্যবসাটি পরিচালনা করতে প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের ম্যানেজের প্রয়োজন। সেই কারণে আমাদের মালিক পক্ষের একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সব ম্যানেজ করেন। গত বছর উপজেলায় অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে অর্থদণ্ড এবং কয়েকটি ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
অভিযানে জরিমানা আদায় করা ভাটাগুলো হলো- মেসার্স একেবি ব্রিকসকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, মেসার্স তাহেরা ব্রিকসকে ১লক্ষ টাকা, জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
এছাড়াও যমুনা ব্রিকস, মেসার্স মুক্তা ব্রিকস, আল্লারদান ব্রিকস ও আলিফ ব্রিকসকে যথাক্রমে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করে ভাটা গুলো গুড়িয়ে দেন প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এরপর মেসার্স আইডা ব্রিকস, মেসার্স আমানত ব্রিকস এবং মুক্তা ও তাহিরা ব্রিকসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, চর আমান উল্যাহ ও চরক্লার্ক ২টি ইউনিয়নে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। বর্তমানে তা আর নেই। ইটভাটা গুলোর কারণে অনেক জমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মানবদেহ, প্রাণীজগৎ, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ভাটাগুলোর বিষাক্ত কালো ধোয়াতেই। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। উনারা কি পদক্ষেপ নেন অবশ্যই দেখবেন আপনারা।
অবৈধ ইট ভাটা, পরিবেশ দুষণ, খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাবেয়া আসফার সায়মা সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান,আমরা আগামীকালেই অভিযান পরিচালনা করছি। একদিনে হয়তো সবগুলোকে ভেঙে দেওয়া যাবে না। তবে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি জানান, অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে আছি অভিযানের জন্য। অভিযান পরিচালনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অচিরেই এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ফের গুড়িয়ে দেওয়া হবে অবৈধ ভাটাগুলো।