টাঙ্গাইল : আমনের বাম্পার ফলন -সংবাদ
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিকূলতা পেরিয়ে এমন ফলনে কৃষক-কৃষাণীদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। স্বপ্ন পূরণের আশায় তারা দিন গুনেছেন। সেই সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। আর সেই ধান বাজারে বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটাবেন। ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড়, পরিবারের সকল চাহিদা মেটানোর নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।
ইতোমধ্যে অনেক কৃষক নতুন ধান বিক্রি করে বাজার থেকে গরম জিলাপি ও মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হতো নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় হেমন্ত কালের অগ্রহায়ণ মাসের যাত্রা শুরু। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠছে কৃষকের আঙ্গিনা। এ অঞ্চলে কৃষকদের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বাজারে ধানের দাম ভাল এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ভালভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা বেজায় খুশি। বাংলার প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ এলেই কৃষককেরা দিগন্ত জুড়ে ধানকাটা মাড়াই উৎসবে মেতে উঠেন কৃষক। ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক-কৃষাণীরা। ধান তোলার সুভাস ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠছে সোনালী ধানে। নতুন চালের ভাতে ভিন্ন এক আমেজ এনে দেয় কৃষক পরিবারে। অনেক পরিবারে তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর, পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হলেও বাস্তব জীবন থেকে এই উৎসবটি অচেনা এক দূরে চলে যেতে বসলেও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য।
সরজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হেমন্তের হালকা বাতাসে দুলছে পাকা ও আধাপাকা ধানের স্বর্ণালি শীষ। মাঠজুড়ে ধানের সমারোহ যেন সৌন্দর্যের উৎসব। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে বাংলার মাঠ-ঘাট। কোনো কোনো জায়গায় শুরু হয়েছে ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের উঠোনে ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে নতুন ধান। ব্যস্ত সময়ের মাঝে কৃষাণীরাও দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। ধান কাটার পর দ্রুত জমি প্রস্তুত করে সরিষা চাষের পরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই। নতুন করে পাইজাম ধান চাষে রেকর্ড গত কয়েক বছর অতিরিক্ত বন্যার কারণে যেসব জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। এবার সেসব জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকায় রেকর্ড পরিমাণ পাইজাম জাতের ধান চাষ হয়েছে। ফলে আমন উৎপাদন আরও বেড়েছে। স্থানীয় কৃষক আলম মিয়া বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার বন্যার পানি কম থাকায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ধানের দাম কিছুটা কম হলেও খড়ের দাম বেশি। সব মিলিয়ে খরচ মিটিয়ে ভালোই লাভ হবে আশা করছি। কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হতো। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে তার পরিবার। কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ১০ বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্নে তিনি আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন।
নবান্ন উপলক্ষে ২ দিন আগে সকাল বেলা গোসল সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতাম। গত বেশকয়েক বছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত।
চাকরিজীবী তরুণ আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমি ছোট বেলায় গ্রামে দেখেছি, দাদা-দাদী নানা-নানি আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে নবান্ন উৎসব পালন করত। ধান ঘরে তোলার দিন মসজিদের ইমামকে ডেকে দোয়া পড়িয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করা হতো। সবাই মিলে এক সাথে দুপুরের খাবার খেতাম। ইতিহাস লেখক জুবায়ের আলী বলেন, গ্রামেগঞ্জে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে এলেও বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই উৎসবে ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, এবার আমনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে অর্জন হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতিবারের মতো এবারও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হয়েছে। গোপালপুরে ইউনিয়ন ও পৌর শহরের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাই কৃষকের মুখে হাসি। এবারের আমন মৌসুমে এমন অপ্রত্যাশিত বাম্পার ফলন কৃষকদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। কৃষকের মাঠ এখন সোনালি শস্যে ভরে উঠেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
টাঙ্গাইল : আমনের বাম্পার ফলন -সংবাদ
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিকূলতা পেরিয়ে এমন ফলনে কৃষক-কৃষাণীদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। স্বপ্ন পূরণের আশায় তারা দিন গুনেছেন। সেই সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। আর সেই ধান বাজারে বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটাবেন। ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড়, পরিবারের সকল চাহিদা মেটানোর নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।
ইতোমধ্যে অনেক কৃষক নতুন ধান বিক্রি করে বাজার থেকে গরম জিলাপি ও মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হতো নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় হেমন্ত কালের অগ্রহায়ণ মাসের যাত্রা শুরু। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠছে কৃষকের আঙ্গিনা। এ অঞ্চলে কৃষকদের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বাজারে ধানের দাম ভাল এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ভালভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা বেজায় খুশি। বাংলার প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ এলেই কৃষককেরা দিগন্ত জুড়ে ধানকাটা মাড়াই উৎসবে মেতে উঠেন কৃষক। ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক-কৃষাণীরা। ধান তোলার সুভাস ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠছে সোনালী ধানে। নতুন চালের ভাতে ভিন্ন এক আমেজ এনে দেয় কৃষক পরিবারে। অনেক পরিবারে তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর, পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হলেও বাস্তব জীবন থেকে এই উৎসবটি অচেনা এক দূরে চলে যেতে বসলেও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য।
সরজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হেমন্তের হালকা বাতাসে দুলছে পাকা ও আধাপাকা ধানের স্বর্ণালি শীষ। মাঠজুড়ে ধানের সমারোহ যেন সৌন্দর্যের উৎসব। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে বাংলার মাঠ-ঘাট। কোনো কোনো জায়গায় শুরু হয়েছে ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের উঠোনে ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে নতুন ধান। ব্যস্ত সময়ের মাঝে কৃষাণীরাও দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। ধান কাটার পর দ্রুত জমি প্রস্তুত করে সরিষা চাষের পরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই। নতুন করে পাইজাম ধান চাষে রেকর্ড গত কয়েক বছর অতিরিক্ত বন্যার কারণে যেসব জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। এবার সেসব জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকায় রেকর্ড পরিমাণ পাইজাম জাতের ধান চাষ হয়েছে। ফলে আমন উৎপাদন আরও বেড়েছে। স্থানীয় কৃষক আলম মিয়া বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার বন্যার পানি কম থাকায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ধানের দাম কিছুটা কম হলেও খড়ের দাম বেশি। সব মিলিয়ে খরচ মিটিয়ে ভালোই লাভ হবে আশা করছি। কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হতো। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে তার পরিবার। কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ১০ বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্নে তিনি আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন।
নবান্ন উপলক্ষে ২ দিন আগে সকাল বেলা গোসল সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতাম। গত বেশকয়েক বছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত।
চাকরিজীবী তরুণ আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমি ছোট বেলায় গ্রামে দেখেছি, দাদা-দাদী নানা-নানি আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে নবান্ন উৎসব পালন করত। ধান ঘরে তোলার দিন মসজিদের ইমামকে ডেকে দোয়া পড়িয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করা হতো। সবাই মিলে এক সাথে দুপুরের খাবার খেতাম। ইতিহাস লেখক জুবায়ের আলী বলেন, গ্রামেগঞ্জে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে এলেও বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই উৎসবে ভাটা পড়েছে।
এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, এবার আমনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে অর্জন হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতিবারের মতো এবারও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হয়েছে। গোপালপুরে ইউনিয়ন ও পৌর শহরের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাই কৃষকের মুখে হাসি। এবারের আমন মৌসুমে এমন অপ্রত্যাশিত বাম্পার ফলন কৃষকদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। কৃষকের মাঠ এখন সোনালি শস্যে ভরে উঠেছে।