alt

কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামের নারীদের চাকা

প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : কুমড়াবড়ি শুকচ্ছেন শ্রমিক -সংবাদ

শীতের কোমল রোদ ঝকমক করে উঠেছে। কুয়াশা ভোরের আকাশ থেকে সরে যেতে না যেতেই নন্দীগ্রামের গ্রামীণ আঙিনাগুলোতে শুরু হয়ে যায় এক মৌসুমি উৎসব। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে রাখা হাজারো কুমড়া বড়ি। বাতাসে ডালের মিষ্টি গন্ধ, নারীদের দ্রুত হাতের কারুকাজ, সব মিলিয়ে যেন এক শিল্পের কর্মশালা। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় শীতকাল মানেই কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ততম সময়। এই মৌসুমি খাবারটি শুধু স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয় গ্রামের হাজারো নারীকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ, দিয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি।

কুমড়া বড়ির ইতিহাস দীর্ঘ। ধারণা করা হয়, একসময় দেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের রান্নাঘরে মাসকালাই বা খেসারি ডালের মিহি পেস্ট এবং কুমড়ার মিশ্রণে তৈরি এই বিশেষ বড়িটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে তা বাংলাদেশের গ্রামীণ বাড়িগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শীতকালীন প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে কুমড়া বড়ির নাম অবধারিতভাবেই উঠে আসে। নন্দীগ্রাম উপজেলায় এই খাবারের চাহিদা এতই বেশি যে অনেকেই বছরের দুই মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কুমড়া বড়ি তৈরির ওপর নির্ভর করে পুরো বছরের আয়ের একটি অংশ সুরক্ষিত রাখেন। নন্দীগ্রামের নামুইট, চানপুর, কল্যাণগর, নুন্দহ, কয়াপাড়া, হাটধুমা, চাকলমাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম। ভোররাত থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি, আগে ডাল রোদে শুকানো হয়। পরে সেগুলো ভেঙে পরিষ্কার করে ৩৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।

এরপর শিল-পাটায় ডাল বাটার কাজ শুরু হয়।

শেষ ধাপে নারীরা নানা আকারে দিয়ে কুমড়া বড়ি বানিয়ে রোদে শুকান। রোদে শুকাতে এক থেকে দুই দিন লাগে। তারপরই বড়িগুলো বাজারে বিক্রি উপযোগী হয়। গড়ে প্রতিদিন একজন নারী কারিগর তিন কেজি ডালের বড়ি বানাতে পারেন। এতে তাদের ভালো একটি উপার্জন হয়। শীতের দুই মাসের এ আয় অনেক নারীর কাছেই স্বাবলম্বিতা ও সাহসের উৎস। হাটধুমা গ্রামের হাসিখুশি নারী শাহানারা বেগম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তার মুখেই শোনা গেল এই শীতকালীন শিল্পের সাফল্যের গল্প। “মাসকালাইয়ের আসল কুমড়া বড়ি আমরা প্রতি কেজি ২৫০–৩০০ টাকায় বিক্রি করি। একটু কম মানেরটি ১৮০–২০০ টাকা। শীতের দুই মাসেই যত বড়ি বানাই, তা সারা বছর বিক্রি হয়। আল্লাহর রহমতে সংসারে ভালোই চলে।” তিনি জানান, শুধু নন্দীগ্রাম নয় আশপাশের থানা, উপজেলা এমনকি দূরাঞ্চল থেকেও পাইকাররা এসে বড়ি কিনে নিয়ে যান। ফলে বিক্রি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বানুবলেন এখন নন্দীগ্রামের গ্রামের বধূরা খুব আগ্রহ নিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তারা ঘরে বসেই মৌসুমি খাবার তৈরি করে সংসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের দক্ষতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কুমড়া বড়ি এখন শুধু একটি পারিবারিক খাবার নয় এটি অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণের উদাহরণ হয়ে উঠছে।

ছবি

এলো জুবিনের অপ্রকাশিত গান ‘অবুঝ পাখি’

ছবি

সবকিছু থেকেও কিছুই নেই রায়গঞ্জের বৃদ্ধা ফাতিমার

ছবি

ভোলায় বিরল প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার

ছবি

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

ছবি

বেগমগঞ্জে ১২ মামলার পলাতক আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

গজারিয়ায় প্রান্তিক জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে উপকরণ বিতরণ করলেন বিএনপি নেতা রতন

ছবি

আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে জিও ব্যাগ ব্যবহারে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

চান্দিনায় ৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ কাজে আসছে না

ছবি

তাহিরপুরে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

জামালপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গ্রামপুলিশ

ছবি

গরু দিয়ে দুই একর জমির ধান খাওয়ানোর অভিযোগ

ছবি

নবীগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা

ছবি

লালপুরে মোবাইল হ্যাকিং ও অনলাইন প্রতারণা বিষয়ে মতবিনিময় সভা

ছবি

উখিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বন্যহাতি হত্যা, অভিযুক্ত পলাতক

ছবি

ডিমলায় নিবন্ধন ছাড়াই নিয়োগের অভিযোগ

ছবি

ভূরুঙ্গামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৪

ছবি

চান্দিনার তীরচরে ডাকাতি, ৭ লাখ টাকার মালামাল লুট

ছবি

পাঁচবিবিতে ৫৩১০ জন কৃষকের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ

ছবি

নীলফামারীতে দরপতনেও ভাটা পরেনি আলুর চাষাবাদে

ছবি

রায়গঞ্জে ভগ্নিপতি ও ভাইয়ের স্ত্রীর হাতে গরু ব্যবসায়ী খুন

ছবি

মোরেলগঞ্জে মাঠজুড়ে সোনালী ধানের সমরহ

ছবি

আক্কেলপুরে রেলগেটের উঁচু-নিচুতে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

অবৈধ ইট ভাটার রাজ্য সুবর্ণচর, নিশ্চুপ প্রশাসন

ছবি

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনা, চালক আহত

ছবি

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে জেলের মৃত্যু

ছবি

ঝালকাঠিতে নিখোঁজ সবজি বিক্রেতার মরদেহ উদ্ধার

ছবি

রাজৈরে ৩ দোকান আগুনে পুড়ে ছাই

ছবি

ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপিতে মনোনয়ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি মিছিল

ছবি

মানিকগঞ্জে আখ চাষে স্বাবলম্বী হাজারো কৃষক

ছবি

কমে যাচ্ছে খালিশপুর পশুহাটের বেচাকেনা

ছবি

কাজলা নদীর সরকারি জমি দখলের অভিযোগ

ছবি

ঘিওরে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ১২ গ্রামের মানুষের ভরসা

ছবি

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এনসিডি কর্নারে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করা হবে

ছবি

মহিচাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন ‘ব্যবসায়ীর গোডাউন’

ছবি

মুখ থুবড়ে পড়েছে নাটোরের লালপুরের ঐতিহ্য কাঁসা শিল্প

tab

কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামের নারীদের চাকা

প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম (বগুড়া)

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : কুমড়াবড়ি শুকচ্ছেন শ্রমিক -সংবাদ

বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

শীতের কোমল রোদ ঝকমক করে উঠেছে। কুয়াশা ভোরের আকাশ থেকে সরে যেতে না যেতেই নন্দীগ্রামের গ্রামীণ আঙিনাগুলোতে শুরু হয়ে যায় এক মৌসুমি উৎসব। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে রাখা হাজারো কুমড়া বড়ি। বাতাসে ডালের মিষ্টি গন্ধ, নারীদের দ্রুত হাতের কারুকাজ, সব মিলিয়ে যেন এক শিল্পের কর্মশালা। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় শীতকাল মানেই কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ততম সময়। এই মৌসুমি খাবারটি শুধু স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয় গ্রামের হাজারো নারীকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ, দিয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি।

কুমড়া বড়ির ইতিহাস দীর্ঘ। ধারণা করা হয়, একসময় দেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের রান্নাঘরে মাসকালাই বা খেসারি ডালের মিহি পেস্ট এবং কুমড়ার মিশ্রণে তৈরি এই বিশেষ বড়িটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে তা বাংলাদেশের গ্রামীণ বাড়িগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শীতকালীন প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে কুমড়া বড়ির নাম অবধারিতভাবেই উঠে আসে। নন্দীগ্রাম উপজেলায় এই খাবারের চাহিদা এতই বেশি যে অনেকেই বছরের দুই মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কুমড়া বড়ি তৈরির ওপর নির্ভর করে পুরো বছরের আয়ের একটি অংশ সুরক্ষিত রাখেন। নন্দীগ্রামের নামুইট, চানপুর, কল্যাণগর, নুন্দহ, কয়াপাড়া, হাটধুমা, চাকলমাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম। ভোররাত থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি, আগে ডাল রোদে শুকানো হয়। পরে সেগুলো ভেঙে পরিষ্কার করে ৩৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।

এরপর শিল-পাটায় ডাল বাটার কাজ শুরু হয়।

শেষ ধাপে নারীরা নানা আকারে দিয়ে কুমড়া বড়ি বানিয়ে রোদে শুকান। রোদে শুকাতে এক থেকে দুই দিন লাগে। তারপরই বড়িগুলো বাজারে বিক্রি উপযোগী হয়। গড়ে প্রতিদিন একজন নারী কারিগর তিন কেজি ডালের বড়ি বানাতে পারেন। এতে তাদের ভালো একটি উপার্জন হয়। শীতের দুই মাসের এ আয় অনেক নারীর কাছেই স্বাবলম্বিতা ও সাহসের উৎস। হাটধুমা গ্রামের হাসিখুশি নারী শাহানারা বেগম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তার মুখেই শোনা গেল এই শীতকালীন শিল্পের সাফল্যের গল্প। “মাসকালাইয়ের আসল কুমড়া বড়ি আমরা প্রতি কেজি ২৫০–৩০০ টাকায় বিক্রি করি। একটু কম মানেরটি ১৮০–২০০ টাকা। শীতের দুই মাসেই যত বড়ি বানাই, তা সারা বছর বিক্রি হয়। আল্লাহর রহমতে সংসারে ভালোই চলে।” তিনি জানান, শুধু নন্দীগ্রাম নয় আশপাশের থানা, উপজেলা এমনকি দূরাঞ্চল থেকেও পাইকাররা এসে বড়ি কিনে নিয়ে যান। ফলে বিক্রি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বানুবলেন এখন নন্দীগ্রামের গ্রামের বধূরা খুব আগ্রহ নিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তারা ঘরে বসেই মৌসুমি খাবার তৈরি করে সংসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের দক্ষতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কুমড়া বড়ি এখন শুধু একটি পারিবারিক খাবার নয় এটি অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণের উদাহরণ হয়ে উঠছে।

back to top