ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলামের (৫৭) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবনের ১১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পৌরসভার শেরকান্দি এলাকার মৃত গঞ্জের আলীর ছেলে। নিহত শহিদুলের মেয়ে সুবর্ণা খাতুন বলেন, পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। পৌরসভা তার বেতন দেয়না। সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. ফিরোজুল ইসলাম বাবাকে ব্যাপক কিলঘুষি, লাথি মারে হত্যা করে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রেখেছিল। আমি থানায় মামলা করব। আসামিদের ফাঁসি চাই।
এদিকে পৌরসভায় বেতন নিয়ে এমন ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন নিহত শহিদুলের স্বজনা ও এলাকাবাসী। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পৌরসভায় শেরকান্দি এলাকার অভিযুক্ত ফিরোজুলের বহুতল ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কুমারখালী পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তারা।
পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে নির্মিত প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তারা প্রায় ৪২ মাসের ১০ কোটি টাকা বেতন পাবেন পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট। সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সেসময় ১১৫ নম্বর কক্ষের সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি বন্ধ করতে যান। তখন ফিরোজুলের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কির একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পৌরসভায় কর্মরত অন্যান্যরা ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে পৌরসভায় কর্মকর্তারা দেখেন শহিদুল পাকা মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পৌরসভার বাজার পরিদর্শক নুর ইসলাম বলেন, ফিরোজ কাজ করছিল কার্যালয়ে। তখন শহিদুল বেতন না পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। সেসময় ফিরোজের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তার ভাষ্য, শহিদুল হার্টের রোগী ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। তবে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। নিহত শহিদুলের মুখে আঘাতের ক্ষত। স্বজনারা আহাজারি করছেন।
এ সময় শহিদুলের ভাগ্নি রূপালী খাতুন বলেন, পৌর ভবনের পিছনে আমার বাড়ি। মারামারির খবর শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ১০১ নম্বর কক্ষে তালাবন্ধ মামা। খুলে দেখি মুখে দাঁতে আঘাতের চিহৃ-রক্ত। তাঁর ভাষ্য, মামাকে পৌরসভার লোকজন বেতনের জন্য হত্যা করেছে। সঠিক বিচার চাই।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় শেরকান্দি এলাকায় অবস্থিত সার্ভেয়ার ফিরোজুলের বহুতল বাড়ির কাঁচের জানালা, বৈদ্যুতিক মিটারে ভাঙচুরের ক্ষত। সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে পুলিশ। আর পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, বিচারের দাবিতে বিক্ষিপ্ত জনতার ভিড়। প্রধান প্রবেশপথের কেচি গেইট লাগানো।
এ সময় নিহত শহিদুলের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, হিসাবরক্ষক রফিকুল এবং সার্ভেয়ার ফিরোজুল মিলে ভাইকে হত্যা করেছে। সঠিক বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন পৌরসভার সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী পৌরসভার হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে কার্যালয়ে আয় ব্যয়ের হিসাব করছিলাম। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামিচি শুনে গিয়ে দেখি শহিদুল জোড়ে জোড়ে কথা বলছেন। তখন নিষেধ করে চলে আসি। কিছুক্ষণ পরে শুনি শহিদুল স্ট্রোক করেছে। তার ভাষ্য, কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। প্রায় ৪২ মাসের ১০ কোটি টাকা বেতন বাকী আছে।
প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে বকেয়া বেতন নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তিনি আরো বলেন, উত্তেজিত জনতা সার্ভেয়ারের বাড়ি ভাঙতে গেলে পুলিশ তা ঠেকিয়ে দিয়েছে।
সরকারি প্রশিক্ষণের কাজে জেলার বাইরে থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি কুমারখালী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মিকাইল ইসলামের। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সার্ভেয়ারের কিলঘুষিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলামের (৫৭) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর ভবনের ১১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পৌরসভার শেরকান্দি এলাকার মৃত গঞ্জের আলীর ছেলে। নিহত শহিদুলের মেয়ে সুবর্ণা খাতুন বলেন, পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। পৌরসভা তার বেতন দেয়না। সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. ফিরোজুল ইসলাম বাবাকে ব্যাপক কিলঘুষি, লাথি মারে হত্যা করে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রেখেছিল। আমি থানায় মামলা করব। আসামিদের ফাঁসি চাই।
এদিকে পৌরসভায় বেতন নিয়ে এমন ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন নিহত শহিদুলের স্বজনা ও এলাকাবাসী। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পৌরসভায় শেরকান্দি এলাকার অভিযুক্ত ফিরোজুলের বহুতল ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কুমারখালী পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তারা।
পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে নির্মিত প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তারা প্রায় ৪২ মাসের ১০ কোটি টাকা বেতন পাবেন পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট। সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাড়ি চালক শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সেসময় ১১৫ নম্বর কক্ষের সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি বন্ধ করতে যান। তখন ফিরোজুলের সঙ্গে শহিদুলের তর্কাতর্কির একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পৌরসভায় কর্মরত অন্যান্যরা ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে পৌরসভায় কর্মকর্তারা দেখেন শহিদুল পাকা মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পৌরসভার বাজার পরিদর্শক নুর ইসলাম বলেন, ফিরোজ কাজ করছিল কার্যালয়ে। তখন শহিদুল বেতন না পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। সেসময় ফিরোজের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তার ভাষ্য, শহিদুল হার্টের রোগী ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। তবে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। নিহত শহিদুলের মুখে আঘাতের ক্ষত। স্বজনারা আহাজারি করছেন।
এ সময় শহিদুলের ভাগ্নি রূপালী খাতুন বলেন, পৌর ভবনের পিছনে আমার বাড়ি। মারামারির খবর শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ১০১ নম্বর কক্ষে তালাবন্ধ মামা। খুলে দেখি মুখে দাঁতে আঘাতের চিহৃ-রক্ত। তাঁর ভাষ্য, মামাকে পৌরসভার লোকজন বেতনের জন্য হত্যা করেছে। সঠিক বিচার চাই।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় শেরকান্দি এলাকায় অবস্থিত সার্ভেয়ার ফিরোজুলের বহুতল বাড়ির কাঁচের জানালা, বৈদ্যুতিক মিটারে ভাঙচুরের ক্ষত। সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে পুলিশ। আর পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, বিচারের দাবিতে বিক্ষিপ্ত জনতার ভিড়। প্রধান প্রবেশপথের কেচি গেইট লাগানো।
এ সময় নিহত শহিদুলের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, হিসাবরক্ষক রফিকুল এবং সার্ভেয়ার ফিরোজুল মিলে ভাইকে হত্যা করেছে। সঠিক বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন পৌরসভার সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী পৌরসভার হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে কার্যালয়ে আয় ব্যয়ের হিসাব করছিলাম। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামিচি শুনে গিয়ে দেখি শহিদুল জোড়ে জোড়ে কথা বলছেন। তখন নিষেধ করে চলে আসি। কিছুক্ষণ পরে শুনি শহিদুল স্ট্রোক করেছে। তার ভাষ্য, কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। প্রায় ৪২ মাসের ১০ কোটি টাকা বেতন বাকী আছে।
প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে বকেয়া বেতন নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তিনি আরো বলেন, উত্তেজিত জনতা সার্ভেয়ারের বাড়ি ভাঙতে গেলে পুলিশ তা ঠেকিয়ে দিয়েছে।
সরকারি প্রশিক্ষণের কাজে জেলার বাইরে থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি কুমারখালী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মিকাইল ইসলামের। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।