ভালুকা (ময়মনসিংহ) : কাদিগড় গ্রামে ধান রক্ষায় কৃষকের পাহারা। (ইনসেটে বানরের পাল) -সংবাদ
ভালুকার হবিরবাড়ী ও কাদিগড় বন হতে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বানরের টাক কৃষকের ধানক্ষেত ও বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে চলেছে। ফসল রক্ষায় বানর তাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের পাশে মাচাং বেঁধে দিন রাত পাহাড়া দিচ্ছে।
ভালুকায় অজত্ন অবেহলা, খাদ্যের অভাব ও মনুষ্যসৃষ্ট জটিলতার কারনে প্রকৃতি বান্ধব পশুপাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতির আবাহমান কালের রুপ সৌন্দর্য এখন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক শ্রেণীর বন খেকুদের দ্বারা নির্বিচারে বনজ ও ফলদবৃক্ষ কর্তন, ফসলী ও জলাভূমি ভরাট করে অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা নির্মাণ, প্লাবনভূমি ও মুক্ত জলাশয় গুলি পুঁিজবাদীদের দখলে নিয়ে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক মৎস্যচাষ করা ইত্যাদি কারনে বহু প্রজাতির পশুপাখি সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উল্লেখিত বিষয় গুলিই ছিলো পশু পাখির আবাস স্থল ও খাদ্যের উৎস। ভালুকার হবিরবাড়ী ও কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকার বিশাল শাল গজারী বনে বহু কাল হতেই শত শত বানর, হনুমান,বন বিড়াল, বাঘডাসা, খরগোশ, শিয়াল,খাটাস, সজারু, ঘুইসাপ, মেছুভাগ, বনো শুয়ার ইত্যাদিতে ভরপুর ছিল। অথচ মনুষ্যসৃষ্ট নানা জটিলতায় আজ হারিয়ে গেছে এসব প্রাণীর বেশীর ভাগই। তবে হবিরবাড়ী বনাঞ্চল ও কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকায় এখনও শত শত বানরের বসবাস রয়েছে। এসব বানরের জন্য বন এলাকায় পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় এরা দল বেধে ঝাকে ঝাকে খাদ্যের সন্ধানে চলে আসছে লোকালয়ে।
ক্ষেতের ধান, গাছের কলা, লাউ কুমড়া শাক সবজি সহ বিভিন্ন ফল ফলাদির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে বলে এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন। স্থানীয় কৃষকরা ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে লাঠি নিয়ে ধান ক্ষেতের চারপাশে পাহাড়া দেন। আবার অনেকে ধান ক্ষেতের ধারে মাচা বেঁধে বানর তাড়াতে পাহাড়া বসিয়েছেন। বানরের অত্যাচার হতে রক্ষা পেতে অনেকেই কলা, রুটি, মুড়ি দিয়ে থাকেন। বনের মধ্যে ছোটবড় অনেক বানর খাদ্যাভাবে কাহিল অবস্থায় খাবারে জন্য ছোটাছুটি করে থাকে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ খাদ্যাভাবে রোগা হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক আলফাজ মিয়া জানান তাদের আমন ধান ক্ষেতে বন এলাকা হতে বানরের পাল এসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। তারা নানা কৌশলে বানর তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ এক শ্রেণীর কাঠ পাচারকারী বন খেকুর দল বন এলাকা হতে বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষ কেটে নেয়ায় বানর সহ বিভিন্ন পশু পাখীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী বনজ বৃক্ষের পাশাপাশি বন এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফলদবৃক্ষ রোপন করলে পশু পাখীর খাবার অভাব দুর হবে।এলাকার প্রবীন লোকেরা জানান খাল বিল নদীনালা, ফলফলাদি ও বনজ বৃক্ষের আচ্ছাদনে সমৃদ্ধ ভালুকায় বহু প্রজাতির পশু পাখি এক সময় সর্বত্র চোখে পরতো। সজারু, বন বিড়াল, খেকশিয়াল, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, বেজি, ঘুইসাপ, মুখপুড়া হনুমান, বানর ঝাড় জংলা গাছপালা। কড়ই বিচি, বটগুটা, ডেওয়া, ডেফল, কাওয়াঝিংগা এসব বানর হুনুমান ও পোকপাখালীর খাদ্য ছিল। অথচ এসব গাছ এখন সচরাচর চোখে পরেনা।
গাছে গাছে ভূতুম পেঁচা, শকুন, লালচিল, গাংচিল, ঈগল, হলদেপাখি, বউকথাকও, কাঠকুড়ালী, বানাশপাখী, বাদুর, ইষ্টিকুটুম, টিক্কা ময়না, টিয়া, বাওই, বুলবুলি, ঘুঘু, হরিয়ালী, আর খালে বিলে সাদা বক, কানিবক, সারস,ডাহুক, কালেম, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, হটটিটি, বলাকা ইত্যাদি আরও কত নাম না জানা পাখি। কিছু পাখি খালবিলের পোকা মাকর ছোটবড় মাছ খেয়ে বাঁচতো আর কিছু গাছের ফল মুল খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে বেঁচে থাকতো। বর্তমানে জল জঙ্গল কোথাও পশুপাখির নিরাপদ আবাস স্থল ও খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় ক্রমশ এরা প্রকৃতি হতে হারিয়ে যাচ্ছে। সন্ধায় বটবৃক্ষে বাদুরের চিঁচিমিচি, বাঁশবনে শালিকের কিচির মিচির কলরব,শিয়ালের হাঁক, রাত হলে টিনের চালে গাছের ডালে লাউড স্পিকারের শব্দের মত ভূতুম পাখীর ভূতু-ভূতু বিকট ডাক, নানা ভঙ্গিতে সুর করে ভয় দেখানো পেঁচার ডাক যেন এখন ঠাকুমার ঝুলির রুপকথার গল্প।
মৎস্য খামারে একটা দুটা মাছ খায় বলে নেটের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি মারা হচ্ছে। অথচ এসব বিষয়ে কোন নজরদারি নেই। বনের পশুপাখি সংরক্ষনে স্থানীয় বন বিভাগের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ছাড়াও অপরিকল্পিত ভাবে শিল্প কারখানার বর্জ মিশ্রিত কালো পানি খাল বিল ও নদী নালায় ফেলার কারনে পশু পাখীর খাদ্য পোকা মাকর মাছ সহ জলজ প্রাণী বিনষ্ট হওয়ায় পশু পাখীর ক্ষতি সাধন হচ্ছে। মুক্ত জলাশয় গুলি পুনরায় অবমুক্ত করন ও বন সংরক্ষনের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার ঐতিয্য মানুষের পরিবেশ সুবান্ধব পশু পাখির কলরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় বন কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান জানান তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বানরের খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন। বানরসহ পশু পাখীর খাবার উৎস্য তৈরীর লখ্যে বন এলাকায় বিভিন্ন ফল বাগান সৃজনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : কাদিগড় গ্রামে ধান রক্ষায় কৃষকের পাহারা। (ইনসেটে বানরের পাল) -সংবাদ
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
ভালুকার হবিরবাড়ী ও কাদিগড় বন হতে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বানরের টাক কৃষকের ধানক্ষেত ও বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে চলেছে। ফসল রক্ষায় বানর তাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের পাশে মাচাং বেঁধে দিন রাত পাহাড়া দিচ্ছে।
ভালুকায় অজত্ন অবেহলা, খাদ্যের অভাব ও মনুষ্যসৃষ্ট জটিলতার কারনে প্রকৃতি বান্ধব পশুপাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতির আবাহমান কালের রুপ সৌন্দর্য এখন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক শ্রেণীর বন খেকুদের দ্বারা নির্বিচারে বনজ ও ফলদবৃক্ষ কর্তন, ফসলী ও জলাভূমি ভরাট করে অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা নির্মাণ, প্লাবনভূমি ও মুক্ত জলাশয় গুলি পুঁিজবাদীদের দখলে নিয়ে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক মৎস্যচাষ করা ইত্যাদি কারনে বহু প্রজাতির পশুপাখি সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উল্লেখিত বিষয় গুলিই ছিলো পশু পাখির আবাস স্থল ও খাদ্যের উৎস। ভালুকার হবিরবাড়ী ও কাচিনা ইউনিয়নের কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকার বিশাল শাল গজারী বনে বহু কাল হতেই শত শত বানর, হনুমান,বন বিড়াল, বাঘডাসা, খরগোশ, শিয়াল,খাটাস, সজারু, ঘুইসাপ, মেছুভাগ, বনো শুয়ার ইত্যাদিতে ভরপুর ছিল। অথচ মনুষ্যসৃষ্ট নানা জটিলতায় আজ হারিয়ে গেছে এসব প্রাণীর বেশীর ভাগই। তবে হবিরবাড়ী বনাঞ্চল ও কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকায় এখনও শত শত বানরের বসবাস রয়েছে। এসব বানরের জন্য বন এলাকায় পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় এরা দল বেধে ঝাকে ঝাকে খাদ্যের সন্ধানে চলে আসছে লোকালয়ে।
ক্ষেতের ধান, গাছের কলা, লাউ কুমড়া শাক সবজি সহ বিভিন্ন ফল ফলাদির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে বলে এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন। স্থানীয় কৃষকরা ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে লাঠি নিয়ে ধান ক্ষেতের চারপাশে পাহাড়া দেন। আবার অনেকে ধান ক্ষেতের ধারে মাচা বেঁধে বানর তাড়াতে পাহাড়া বসিয়েছেন। বানরের অত্যাচার হতে রক্ষা পেতে অনেকেই কলা, রুটি, মুড়ি দিয়ে থাকেন। বনের মধ্যে ছোটবড় অনেক বানর খাদ্যাভাবে কাহিল অবস্থায় খাবারে জন্য ছোটাছুটি করে থাকে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ খাদ্যাভাবে রোগা হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক আলফাজ মিয়া জানান তাদের আমন ধান ক্ষেতে বন এলাকা হতে বানরের পাল এসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। তারা নানা কৌশলে বানর তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ এক শ্রেণীর কাঠ পাচারকারী বন খেকুর দল বন এলাকা হতে বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষ কেটে নেয়ায় বানর সহ বিভিন্ন পশু পাখীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী বনজ বৃক্ষের পাশাপাশি বন এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফলদবৃক্ষ রোপন করলে পশু পাখীর খাবার অভাব দুর হবে।এলাকার প্রবীন লোকেরা জানান খাল বিল নদীনালা, ফলফলাদি ও বনজ বৃক্ষের আচ্ছাদনে সমৃদ্ধ ভালুকায় বহু প্রজাতির পশু পাখি এক সময় সর্বত্র চোখে পরতো। সজারু, বন বিড়াল, খেকশিয়াল, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, বেজি, ঘুইসাপ, মুখপুড়া হনুমান, বানর ঝাড় জংলা গাছপালা। কড়ই বিচি, বটগুটা, ডেওয়া, ডেফল, কাওয়াঝিংগা এসব বানর হুনুমান ও পোকপাখালীর খাদ্য ছিল। অথচ এসব গাছ এখন সচরাচর চোখে পরেনা।
গাছে গাছে ভূতুম পেঁচা, শকুন, লালচিল, গাংচিল, ঈগল, হলদেপাখি, বউকথাকও, কাঠকুড়ালী, বানাশপাখী, বাদুর, ইষ্টিকুটুম, টিক্কা ময়না, টিয়া, বাওই, বুলবুলি, ঘুঘু, হরিয়ালী, আর খালে বিলে সাদা বক, কানিবক, সারস,ডাহুক, কালেম, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, হটটিটি, বলাকা ইত্যাদি আরও কত নাম না জানা পাখি। কিছু পাখি খালবিলের পোকা মাকর ছোটবড় মাছ খেয়ে বাঁচতো আর কিছু গাছের ফল মুল খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে বেঁচে থাকতো। বর্তমানে জল জঙ্গল কোথাও পশুপাখির নিরাপদ আবাস স্থল ও খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় ক্রমশ এরা প্রকৃতি হতে হারিয়ে যাচ্ছে। সন্ধায় বটবৃক্ষে বাদুরের চিঁচিমিচি, বাঁশবনে শালিকের কিচির মিচির কলরব,শিয়ালের হাঁক, রাত হলে টিনের চালে গাছের ডালে লাউড স্পিকারের শব্দের মত ভূতুম পাখীর ভূতু-ভূতু বিকট ডাক, নানা ভঙ্গিতে সুর করে ভয় দেখানো পেঁচার ডাক যেন এখন ঠাকুমার ঝুলির রুপকথার গল্প।
মৎস্য খামারে একটা দুটা মাছ খায় বলে নেটের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি মারা হচ্ছে। অথচ এসব বিষয়ে কোন নজরদারি নেই। বনের পশুপাখি সংরক্ষনে স্থানীয় বন বিভাগের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ছাড়াও অপরিকল্পিত ভাবে শিল্প কারখানার বর্জ মিশ্রিত কালো পানি খাল বিল ও নদী নালায় ফেলার কারনে পশু পাখীর খাদ্য পোকা মাকর মাছ সহ জলজ প্রাণী বিনষ্ট হওয়ায় পশু পাখীর ক্ষতি সাধন হচ্ছে। মুক্ত জলাশয় গুলি পুনরায় অবমুক্ত করন ও বন সংরক্ষনের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার ঐতিয্য মানুষের পরিবেশ সুবান্ধব পশু পাখির কলরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় বন কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান জানান তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বানরের খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন। বানরসহ পশু পাখীর খাবার উৎস্য তৈরীর লখ্যে বন এলাকায় বিভিন্ন ফল বাগান সৃজনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।