প্রায়ই ক্রেতাশূন্য দোকানে অলস সময় কাটে বিক্রেতাদের। বায়তুল মোকাররমের একটি জুয়েলারি দোকানের চিত্র -সংবাদ
বিকেলের আলোয় চকচক করছে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকানগুলো। দোকানের কাঁচের ভেতরে ঝুলছে স্বর্ণের হার, কানের দুল, নাক ফুল। সেগুলো জ্বল জ্বল করছে।
সাধারণ মানুষ
বিক্রির হার গত বছরের তুলনায়
৪০-৪৫% কমেছে
রুপার বাজারেও নেই স্বস্তি, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই নাখোশ
কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেদীর চোখে সেই আলো নেই। সে দোকানের ভেতরে ঢোকার সাহসও পায় না। দুইমাস পর তার বিয়ে। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু এখনও বিয়ের অন্যতম আকর্ষণ- গয়না কেনা হয়নি।
“মাত্র এক ভরি দুই লাখ টাকার ওপরে! ভাবতেই ভয় লাগে,” বলেন মেহেদী, “বউকে স্বর্ণ না দিলে সমাজ হাসবে, কিন্তু কিনলে সংসার চালাবো কীভাবে?”
এই শহরে এখন এমন অনেক মেহেদী। যাদের ভালোবাসা আছে, কিন্তু স্বর্ণের দামে আটকে আছে স্বপ্ন। তাদের স্বর্ণের গহনার দোকানের সামনে গেলেই মনে হয়, ‘সবই যেন আগুনের মতো জ্বলছে’।
বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বগতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়তে শুরু করে ২০১৯ সাল থেকে। ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণের দর বেড়েছেই। এরপর ২০২৪-২০২৫ সালে এসে দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
২০২২ সালে যখন ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ছিল প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে, এখন সেই একই ভরি স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকায়। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতি ভরিতে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি, যা মূল্যবৃদ্ধির হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশেরও বেশি।
এই বছর এখন পর্যন্ত মোট ৭১ বার স্বর্ণের দামের পরিবর্তন করেছে বাজুস। এর মধ্যে ৪৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে এবং ২৩ বার কমানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে স্বর্ণের দামের এই পরিবর্তন শুধু বাজার নয়, সাধারণ মানুষের মানসিকতার ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের আনন্দ জুয়েলার্স, ভেনাস জুয়েলার্স, সানন্দা জুয়েলার্স সব দোকানেই একই সুর। রূপসাগর অ্যান্ড নিউ আনন্দ জুয়েলার্সের যতন ঘোষ বললেন, “আগে দিনে ১০ জন ক্রেতা আসতো, এখন দুইজন আসে। সবাই দেখে, দাম শুনে হাসে, তারপর বলে ‘পরে আসব’। কেউ আর আসে না।”
স্বর্ণের দামে বিয়ে এখন অনেকের কাছেই সোনার হরিণ
রাজধানীর কয়েকটি স্বর্ণের গয়নার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেসব দোকানে হুলস্থুল চলতো, এখন সেখানে নীরবতা। জানা গেছে, সারা বছরই কিছু কিছু দোকানে ছোট-বড় ক্রেতা কম-বেশি থাকতোই। এখন বিয়ের মৌসুম শুরু হলেও তেমন ক্রেতা থাকে না। আর যারা আসেন তারাও বাজেটের কারণে স্বর্ণের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন।
বিক্রেতারা বলছেন, এই বছর বিয়ের গয়নার অর্ডার প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় গড়ে ৫-৭ লাখ বিয়ে হয়। কিন্তু এই বছর সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গয়নার জন্য অনেক বিয়েও ভেঙে যাচ্ছে। নরসিংদীর স্কুলশিক্ষিকা রুমানা হক জানালেন, “আমাদের বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল। কিন্তু গয়নার বাজেট শুনে ছেলেপক্ষ পিছিয়ে গেছে।”
অস্থির বিশ্বে আকাশ ছোঁয়া স্বর্ণ
অস্থির ডলারের বাজার, চলছে যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি। সবমিলিয়ে স্বর্ণকে আবার “নিরাপদ আশ্রয়” ভেবে কিনছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে, তার ঢেউ এসে পড়ছে ঢাকার অলিগলিতেও। বাংলাদেশে আবার ডলারের ঘাটতি, আমদানি শুল্ক, ৫% ভ্যাট আর ৬% মজুরি সবমিলিয়ে এক ভরি স্বর্ণের দাম যেন আগুনের গোলা।
‘ভালোবাসার পথেও বাঁধা স্বর্ণ’
মিরপুরের এক তরুণ যুগল আয়েশা ও তানভীর, বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো। তাদের কথায়, “ভালোবাসা দিয়ে সংসার হয়, কিন্তু সমাজের চোখে সেটা প্রমাণ করতে লাগে গয়না। এখন সেই গয়নাই আমাদের বিয়ের পথে বাঁধা।”
স্বর্ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে রূপাও
এক সময় রুপা ছিল মধ্যবিত্তের বিকল্প স্বপ্ন। এখন সেই স্বপ্নেও আগুন লেগেছে। যেখানে বছরের শুরুতে রুপার দাম ছিল প্রতি ভরি ২২০০-২৫০০ টাকা, বাজুস অনুযায়ী তা বেড়ে ২২ ক্যারেটের রুপার ভরি ৪২৪৬ টাকা, ডিজাইন অনুযায়ী আরও বেশি। অর্থাৎ প্রায় দশ মাসেই বেড়েছে গড়ে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ।
ভার্কুতা বাজারের রুপার গয়না বিক্রি করা দোকানদার রুবেল বলেন, “আগে মেয়েরা বিয়েতে সোনার জায়গায় রুপা বেছে নিত। এখন রুপার দামও এমন হয়েছে যে, সেই স্বপ্নও হাতের বাইরে।”
## কেন বাড়ছে দাম?
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২,৪০০ ডলার ছাড়িয়েছে, আর দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচও বেড়েছে প্রায় ১০%। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, “মানুষ এখন ব্যাংক সঞ্চয়ের চেয়ে স্বর্ণের বিনিয়োগকে নিরাপদ ভাবছে। এতে বাজারে চাহিদা বাড়ছে, ফলে দামও বাড়ছে।”
ঢাকার বায়তুল মোকাররমের এক পুরনো জুয়েলারি দোকানের মালিক বললেন, এখন স্বর্ণ যেন শুধু গয়না নয়, অনেকটা নেশার মতো। বিনিয়োগকারীরা এখন মূলত দামের অনিশ্চয়তার ভয় থেকেই স্বর্ণ কিনছেন। সবাই মনে করছেন, যে কোনো দিন আবার দাম লাফিয়ে বাড়তে পারে, এই আশঙ্কাই তাদের বাজারে টেনে আনছে। তবে তার বিশ্বাস, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাবে।”
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে স্বর্ণের অলংকার। তবে বিয়ে-শাদিতে স্বর্ণের অলংকার দেয়ার প্রচলন রয়েছে। আগামী দু-তিন বছরে যেসব সামর্থ্যবান পরিবারে বিয়ে-শাদি রয়েছে, তারা অলংকার বানাতে আসছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এখন “গোল্ডেন ফিভার”। কিন্তু এই জ্বরে সাধারণ মানুষ জ্বলছে। নতুন বিয়ে, উৎসব বা উপহার সব কিছুতেই বাজেট বাড়ছে। অনেকেই পুরনো গয়না গলিয়ে নতুন বানানোর পথে। তবে বিক্রেতারাও খুশি নন। বিক্রির হার গত বছরের তুলনায় ৪০-৪৫% কমে গেছে।
ড. মো. শওকত আলী (অর্থনীতিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) বলেছেন, “বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি এখনও অস্বচ্ছ। আমদানি রেকর্ড এবং বাজারের সরবরাহের হিসাব মিলছে না, ফলে চোরাচালান ও অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বাজারকে প্রভাবিত করছে।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
প্রায়ই ক্রেতাশূন্য দোকানে অলস সময় কাটে বিক্রেতাদের। বায়তুল মোকাররমের একটি জুয়েলারি দোকানের চিত্র -সংবাদ
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
বিকেলের আলোয় চকচক করছে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকানগুলো। দোকানের কাঁচের ভেতরে ঝুলছে স্বর্ণের হার, কানের দুল, নাক ফুল। সেগুলো জ্বল জ্বল করছে।
সাধারণ মানুষ
বিক্রির হার গত বছরের তুলনায়
৪০-৪৫% কমেছে
রুপার বাজারেও নেই স্বস্তি, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই নাখোশ
কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেদীর চোখে সেই আলো নেই। সে দোকানের ভেতরে ঢোকার সাহসও পায় না। দুইমাস পর তার বিয়ে। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু এখনও বিয়ের অন্যতম আকর্ষণ- গয়না কেনা হয়নি।
“মাত্র এক ভরি দুই লাখ টাকার ওপরে! ভাবতেই ভয় লাগে,” বলেন মেহেদী, “বউকে স্বর্ণ না দিলে সমাজ হাসবে, কিন্তু কিনলে সংসার চালাবো কীভাবে?”
এই শহরে এখন এমন অনেক মেহেদী। যাদের ভালোবাসা আছে, কিন্তু স্বর্ণের দামে আটকে আছে স্বপ্ন। তাদের স্বর্ণের গহনার দোকানের সামনে গেলেই মনে হয়, ‘সবই যেন আগুনের মতো জ্বলছে’।
বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বগতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়তে শুরু করে ২০১৯ সাল থেকে। ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণের দর বেড়েছেই। এরপর ২০২৪-২০২৫ সালে এসে দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
২০২২ সালে যখন ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ছিল প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে, এখন সেই একই ভরি স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকায়। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতি ভরিতে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি, যা মূল্যবৃদ্ধির হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশেরও বেশি।
এই বছর এখন পর্যন্ত মোট ৭১ বার স্বর্ণের দামের পরিবর্তন করেছে বাজুস। এর মধ্যে ৪৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে এবং ২৩ বার কমানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে স্বর্ণের দামের এই পরিবর্তন শুধু বাজার নয়, সাধারণ মানুষের মানসিকতার ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের আনন্দ জুয়েলার্স, ভেনাস জুয়েলার্স, সানন্দা জুয়েলার্স সব দোকানেই একই সুর। রূপসাগর অ্যান্ড নিউ আনন্দ জুয়েলার্সের যতন ঘোষ বললেন, “আগে দিনে ১০ জন ক্রেতা আসতো, এখন দুইজন আসে। সবাই দেখে, দাম শুনে হাসে, তারপর বলে ‘পরে আসব’। কেউ আর আসে না।”
স্বর্ণের দামে বিয়ে এখন অনেকের কাছেই সোনার হরিণ
রাজধানীর কয়েকটি স্বর্ণের গয়নার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেসব দোকানে হুলস্থুল চলতো, এখন সেখানে নীরবতা। জানা গেছে, সারা বছরই কিছু কিছু দোকানে ছোট-বড় ক্রেতা কম-বেশি থাকতোই। এখন বিয়ের মৌসুম শুরু হলেও তেমন ক্রেতা থাকে না। আর যারা আসেন তারাও বাজেটের কারণে স্বর্ণের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন।
বিক্রেতারা বলছেন, এই বছর বিয়ের গয়নার অর্ডার প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় গড়ে ৫-৭ লাখ বিয়ে হয়। কিন্তু এই বছর সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গয়নার জন্য অনেক বিয়েও ভেঙে যাচ্ছে। নরসিংদীর স্কুলশিক্ষিকা রুমানা হক জানালেন, “আমাদের বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল। কিন্তু গয়নার বাজেট শুনে ছেলেপক্ষ পিছিয়ে গেছে।”
অস্থির বিশ্বে আকাশ ছোঁয়া স্বর্ণ
অস্থির ডলারের বাজার, চলছে যুদ্ধ, বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি। সবমিলিয়ে স্বর্ণকে আবার “নিরাপদ আশ্রয়” ভেবে কিনছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে, তার ঢেউ এসে পড়ছে ঢাকার অলিগলিতেও। বাংলাদেশে আবার ডলারের ঘাটতি, আমদানি শুল্ক, ৫% ভ্যাট আর ৬% মজুরি সবমিলিয়ে এক ভরি স্বর্ণের দাম যেন আগুনের গোলা।
‘ভালোবাসার পথেও বাঁধা স্বর্ণ’
মিরপুরের এক তরুণ যুগল আয়েশা ও তানভীর, বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো। তাদের কথায়, “ভালোবাসা দিয়ে সংসার হয়, কিন্তু সমাজের চোখে সেটা প্রমাণ করতে লাগে গয়না। এখন সেই গয়নাই আমাদের বিয়ের পথে বাঁধা।”
স্বর্ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে রূপাও
এক সময় রুপা ছিল মধ্যবিত্তের বিকল্প স্বপ্ন। এখন সেই স্বপ্নেও আগুন লেগেছে। যেখানে বছরের শুরুতে রুপার দাম ছিল প্রতি ভরি ২২০০-২৫০০ টাকা, বাজুস অনুযায়ী তা বেড়ে ২২ ক্যারেটের রুপার ভরি ৪২৪৬ টাকা, ডিজাইন অনুযায়ী আরও বেশি। অর্থাৎ প্রায় দশ মাসেই বেড়েছে গড়ে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ।
ভার্কুতা বাজারের রুপার গয়না বিক্রি করা দোকানদার রুবেল বলেন, “আগে মেয়েরা বিয়েতে সোনার জায়গায় রুপা বেছে নিত। এখন রুপার দামও এমন হয়েছে যে, সেই স্বপ্নও হাতের বাইরে।”
## কেন বাড়ছে দাম?
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২,৪০০ ডলার ছাড়িয়েছে, আর দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচও বেড়েছে প্রায় ১০%। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, “মানুষ এখন ব্যাংক সঞ্চয়ের চেয়ে স্বর্ণের বিনিয়োগকে নিরাপদ ভাবছে। এতে বাজারে চাহিদা বাড়ছে, ফলে দামও বাড়ছে।”
ঢাকার বায়তুল মোকাররমের এক পুরনো জুয়েলারি দোকানের মালিক বললেন, এখন স্বর্ণ যেন শুধু গয়না নয়, অনেকটা নেশার মতো। বিনিয়োগকারীরা এখন মূলত দামের অনিশ্চয়তার ভয় থেকেই স্বর্ণ কিনছেন। সবাই মনে করছেন, যে কোনো দিন আবার দাম লাফিয়ে বাড়তে পারে, এই আশঙ্কাই তাদের বাজারে টেনে আনছে। তবে তার বিশ্বাস, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাবে।”
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে স্বর্ণের অলংকার। তবে বিয়ে-শাদিতে স্বর্ণের অলংকার দেয়ার প্রচলন রয়েছে। আগামী দু-তিন বছরে যেসব সামর্থ্যবান পরিবারে বিয়ে-শাদি রয়েছে, তারা অলংকার বানাতে আসছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এখন “গোল্ডেন ফিভার”। কিন্তু এই জ্বরে সাধারণ মানুষ জ্বলছে। নতুন বিয়ে, উৎসব বা উপহার সব কিছুতেই বাজেট বাড়ছে। অনেকেই পুরনো গয়না গলিয়ে নতুন বানানোর পথে। তবে বিক্রেতারাও খুশি নন। বিক্রির হার গত বছরের তুলনায় ৪০-৪৫% কমে গেছে।
ড. মো. শওকত আলী (অর্থনীতিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) বলেছেন, “বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি এখনও অস্বচ্ছ। আমদানি রেকর্ড এবং বাজারের সরবরাহের হিসাব মিলছে না, ফলে চোরাচালান ও অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বাজারকে প্রভাবিত করছে।”