চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা বলে পরিচিত রংপুরে আমন ধানের মৌসুমের শুরুতেই আবারো চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। চালের ধরণে ৫-৭ টাকা কেজিতে দাম বেড়েছে।
রংপুর জেলার চাহিদা মাত্র আড়াই লাখ টন। ফলে চালের দাম বৃদ্ধির কোন কারণ দেখছেন না কৃষি কর্মকর্তা
প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র, অভিযোগ সাধারণ মানুষের
আড়তগুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল থাকলেও দাম বাড়ছেই।
এদিকে হঠাৎ চালের চড়া দামে স্বল্প আয়ের মানুষরা পড়েছে বিপাকে। চালের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অনেক পরিবার তিন বেলার পরিবর্তে দু বেলা ভাত খেতে বাধ্য হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র।
বিভাগীয় নগরী রংপুরে দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ৪৪ টাকা কেজির মোটা চাল ৬ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, এক সপ্তাহের ব্যাবধানে তা বেড়ে এখন ৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কাটারীভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেজি, মিনিকেট ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরাশাইল কেজিপ্রতি চার টাকা বেড়ে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিআর ২৮ এর কেজিতে বেড়েছে আট টাকা। ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি স্বর্ণার কেজিতেও বেড়েছে চার টাকা। ৫২ টাকার পরিবর্তে এখন কেজিপ্রতি ৫৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
আড়তদাররা বলছেন, বড় বড় মিলাররা হাজার হাজার বস্তা চাল গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তারা বড় বড় মিলারদের দায়ি করলেও সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে শুক্রবার, (২১ নভেম্বর ২০২৫) সকালে রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। ফলে রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ব্যবসায়ীরা।
সেখানকার অন্যতম আড়তদার রহমান মিয়াকে আড়তে পাওয়া না গেলেও, তার ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন স্বীকার করেন এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুই হাজারেরও বেশি চাল মজুত ছিল। এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা বিক্রি হয়েছে। আবারো হাজারেরও বেশি বস্তা চাল তারা কিনেছেন। কিন্তু অনেক আগের কেনা চাল কেমন করে দু’দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা দাম বাড়লো- তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
আরেক বড় আড়তদারের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন একই কথা। তাদের গোডাউনে দেড়- দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। এক সপ্তাহ আগে তাদের চাল কেনা হয়। সেই চালের দর কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বাড়লো কিভাবে- তার উত্তরে তিনি জানান, আমাদের আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বেড়েছে। তাই তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে থেকে মজুত রাখা চাল কেন আগের দামে বিক্রি করা হলো না- এ প্রশ্নের কোন উত্তর তার কাছে নেই। শুধু ‘মালিকের আদেশ’ বলে চালিয়ে দিলেন।
দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জে শতাধিক চালের আড়তদার রয়েছেন। সেখানেও অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তা চাল আগের দরে কেনা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামের চালের আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এক সাথে চালে দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ধানের দাম বৃদ্ধি পাবার কোন কারণ নেই, উল্লেখ করে এটা সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিদ নুরুল আযম।
তবে আড়তদার বলছেন, আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যে চালের দাম কমবে।
ভোক্তারা যা বললেন
চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নআয়ের মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। রিকশাচারক মনিরুল, ভ্যানচালক রহমত মিয়াসহ অনেকেই জানান, আমাদের আয় বাড়েনি। অথচ চালের দাম বাড়ছেই। ৪৪ টাকা কেজির মোটা চাল ৫০ টাকায় উঠেছে। ফলে তিন বেলার পরিবর্তে দু’বেলাও আধা পেট ভাত খেতে হচ্ছে তাদের।
একই কথা জানালেন গৃহবধূ আঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, যেভাবে চালের দাম বাড়ছে, তাতে তাদের পক্ষে চলা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দাম কমাতে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলছেন
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান, বোরো মৌসুমে রংপুর জেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ’ ২৩ হেক্টরজমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। রংপুর জেলার চাহিদা মাত্র আড়াই লাখ টন। ফলে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছেন না সিরাজুল ইসলাম।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা বলে পরিচিত রংপুরে আমন ধানের মৌসুমের শুরুতেই আবারো চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। চালের ধরণে ৫-৭ টাকা কেজিতে দাম বেড়েছে।
রংপুর জেলার চাহিদা মাত্র আড়াই লাখ টন। ফলে চালের দাম বৃদ্ধির কোন কারণ দেখছেন না কৃষি কর্মকর্তা
প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র, অভিযোগ সাধারণ মানুষের
আড়তগুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল থাকলেও দাম বাড়ছেই।
এদিকে হঠাৎ চালের চড়া দামে স্বল্প আয়ের মানুষরা পড়েছে বিপাকে। চালের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অনেক পরিবার তিন বেলার পরিবর্তে দু বেলা ভাত খেতে বাধ্য হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র।
বিভাগীয় নগরী রংপুরে দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ৪৪ টাকা কেজির মোটা চাল ৬ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, এক সপ্তাহের ব্যাবধানে তা বেড়ে এখন ৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কাটারীভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেজি, মিনিকেট ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরাশাইল কেজিপ্রতি চার টাকা বেড়ে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিআর ২৮ এর কেজিতে বেড়েছে আট টাকা। ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি স্বর্ণার কেজিতেও বেড়েছে চার টাকা। ৫২ টাকার পরিবর্তে এখন কেজিপ্রতি ৫৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
আড়তদাররা বলছেন, বড় বড় মিলাররা হাজার হাজার বস্তা চাল গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তারা বড় বড় মিলারদের দায়ি করলেও সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে শুক্রবার, (২১ নভেম্বর ২০২৫) সকালে রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। ফলে রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ব্যবসায়ীরা।
সেখানকার অন্যতম আড়তদার রহমান মিয়াকে আড়তে পাওয়া না গেলেও, তার ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন স্বীকার করেন এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুই হাজারেরও বেশি চাল মজুত ছিল। এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা বিক্রি হয়েছে। আবারো হাজারেরও বেশি বস্তা চাল তারা কিনেছেন। কিন্তু অনেক আগের কেনা চাল কেমন করে দু’দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা দাম বাড়লো- তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
আরেক বড় আড়তদারের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন একই কথা। তাদের গোডাউনে দেড়- দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। এক সপ্তাহ আগে তাদের চাল কেনা হয়। সেই চালের দর কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বাড়লো কিভাবে- তার উত্তরে তিনি জানান, আমাদের আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বেড়েছে। তাই তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে থেকে মজুত রাখা চাল কেন আগের দামে বিক্রি করা হলো না- এ প্রশ্নের কোন উত্তর তার কাছে নেই। শুধু ‘মালিকের আদেশ’ বলে চালিয়ে দিলেন।
দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জে শতাধিক চালের আড়তদার রয়েছেন। সেখানেও অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তা চাল আগের দরে কেনা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামের চালের আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এক সাথে চালে দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ধানের দাম বৃদ্ধি পাবার কোন কারণ নেই, উল্লেখ করে এটা সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিদ নুরুল আযম।
তবে আড়তদার বলছেন, আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যে চালের দাম কমবে।
ভোক্তারা যা বললেন
চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নআয়ের মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। রিকশাচারক মনিরুল, ভ্যানচালক রহমত মিয়াসহ অনেকেই জানান, আমাদের আয় বাড়েনি। অথচ চালের দাম বাড়ছেই। ৪৪ টাকা কেজির মোটা চাল ৫০ টাকায় উঠেছে। ফলে তিন বেলার পরিবর্তে দু’বেলাও আধা পেট ভাত খেতে হচ্ছে তাদের।
একই কথা জানালেন গৃহবধূ আঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, যেভাবে চালের দাম বাড়ছে, তাতে তাদের পক্ষে চলা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দাম কমাতে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলছেন
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান, বোরো মৌসুমে রংপুর জেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ’ ২৩ হেক্টরজমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। রংপুর জেলার চাহিদা মাত্র আড়াই লাখ টন। ফলে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখছেন না সিরাজুল ইসলাম।