ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত হয়েছে ১০ বছর আগে। এরপর থেকে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে নির্মিত একটি দোচালা ঘরে চলছে পাঠদান। এই চিত্র খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গজালিয়া অগ্নিবীণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। উপজেলা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এলাকায় মাগুরখালী ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত হয় এটি। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মাত্র ১৫ বছরে সেই ভবনের দেয়াল, ছাদ, পলেস্তারা ও জানালা-দরজা ধসে পড়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তখন থেকেই ভবনটিতে পাঠদান বন্ধ। এরপর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে গোলপাতার ছাউনি এবং কাঠের বেড়া দিয়ে দোচালা একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে দুটি কক্ষে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান শেষে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। একটি কক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অন্যটিতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে। কাঠ দিয়ে নির্মিত ঘরটিতে নেই জানালা। দুটি কক্ষে রয়েছে একটি করে বাঁশের বেড়ার দরজা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের চারপাশে ফাঁকা এবং সামনে বালুভর্তি মাঠ থাকায় গরমের দিনে তাদের ক্লাসে বসে থাকতে কষ্ট হয়। বাতাসে গরম হল্কার সঙ্গে উড়ে আসে ধুলাবালি। ফ্যান চললেও তাতে গরম কমে না। আবার বর্ষা মৌসুমে গোলপাতার ছাউনি চুইয়ে পানি পড়ে ক্লাসে। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলছে পাঠদান। শিক্ষকদের বসা ও দাপ্তরিক কাজের জন্য মাঠের এক কোনায় নির্মাণ করা হয়েছে কাঠ ও টিনের একটি ছোট ঘর। সেখানেও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশান মন্ডল ও পঞ্চম শ্রেণির মারিয়া খাতুন জানায়, বৃষ্টি হলেই ঝুপড়ি ঘরে পানি পড়ে বই, খাতাসহ তাদের জামাকাপড় ভিজে যায়। গরমের সময় ধুলাবালি চোখে মুখে যায়। প্রচন্ড গরমের মধ্যে তাদের ক্লাস করতে হয়।
দুইজন অভিভাবক জ্যোৎস্না বৈরাগী ও বিপ্লব সানা বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুম দুটোই শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার মান ধরে রাখতে বিদ্যালয়ে ভালো পরিবেশের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত নতুন ভবনের দাবি জানান।বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোজ কুমার রায় ও সুব্রত মন্ডল বলেন, স্কুল পরিচালনার জন্য গ্রামবাসীর সহযোগিতায় একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জরাজীর্ণ ঘরেই চলছে পাঠদান। দাপ্তরিক কাজ ও পাঠদানে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তারা।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিদ্যালয়টির জন্য নতুন ভবনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাত্র ১৫ বছরে বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত হয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মুহাম্মদ দারুল হুদা বলেন, এলাকাটি অনেক নিচু ও লবণাক্ত। লবণপানির প্রভাবে ভবনের ছাদ এবং দেয়াল দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ওই সময় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে খুব বেশি উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। এসব কারণে বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত হয়েছে ১০ বছর আগে। এরপর থেকে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে নির্মিত একটি দোচালা ঘরে চলছে পাঠদান। এই চিত্র খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গজালিয়া অগ্নিবীণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। উপজেলা সদর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এলাকায় মাগুরখালী ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত হয় এটি। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মাত্র ১৫ বছরে সেই ভবনের দেয়াল, ছাদ, পলেস্তারা ও জানালা-দরজা ধসে পড়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তখন থেকেই ভবনটিতে পাঠদান বন্ধ। এরপর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে গোলপাতার ছাউনি এবং কাঠের বেড়া দিয়ে দোচালা একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে দুটি কক্ষে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান শেষে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। একটি কক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অন্যটিতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে। কাঠ দিয়ে নির্মিত ঘরটিতে নেই জানালা। দুটি কক্ষে রয়েছে একটি করে বাঁশের বেড়ার দরজা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের চারপাশে ফাঁকা এবং সামনে বালুভর্তি মাঠ থাকায় গরমের দিনে তাদের ক্লাসে বসে থাকতে কষ্ট হয়। বাতাসে গরম হল্কার সঙ্গে উড়ে আসে ধুলাবালি। ফ্যান চললেও তাতে গরম কমে না। আবার বর্ষা মৌসুমে গোলপাতার ছাউনি চুইয়ে পানি পড়ে ক্লাসে। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলছে পাঠদান। শিক্ষকদের বসা ও দাপ্তরিক কাজের জন্য মাঠের এক কোনায় নির্মাণ করা হয়েছে কাঠ ও টিনের একটি ছোট ঘর। সেখানেও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশান মন্ডল ও পঞ্চম শ্রেণির মারিয়া খাতুন জানায়, বৃষ্টি হলেই ঝুপড়ি ঘরে পানি পড়ে বই, খাতাসহ তাদের জামাকাপড় ভিজে যায়। গরমের সময় ধুলাবালি চোখে মুখে যায়। প্রচন্ড গরমের মধ্যে তাদের ক্লাস করতে হয়।
দুইজন অভিভাবক জ্যোৎস্না বৈরাগী ও বিপ্লব সানা বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুম দুটোই শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার মান ধরে রাখতে বিদ্যালয়ে ভালো পরিবেশের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত নতুন ভবনের দাবি জানান।বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোজ কুমার রায় ও সুব্রত মন্ডল বলেন, স্কুল পরিচালনার জন্য গ্রামবাসীর সহযোগিতায় একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জরাজীর্ণ ঘরেই চলছে পাঠদান। দাপ্তরিক কাজ ও পাঠদানে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তারা।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিদ্যালয়টির জন্য নতুন ভবনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাত্র ১৫ বছরে বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত হয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মুহাম্মদ দারুল হুদা বলেন, এলাকাটি অনেক নিচু ও লবণাক্ত। লবণপানির প্রভাবে ভবনের ছাদ এবং দেয়াল দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ওই সময় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে খুব বেশি উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। এসব কারণে বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।