ছবিতে দেয়ারা নারিকেল বাড়িয়া স্কুলে আবাসিক হোটেল,পাশের স্কুলটি দীর্ঘদিন বন্ধের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে -সংবাদ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নাড়িকেল বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে লেবারদের আবাসিক হোটেলের মতো ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে এলাকার বাইরে থেকে আসা লেবারদের অস্থায়ীভাবে রাত্রিযাপন করার জায়গা হিসেবে। এ অঞ্চলের দশটি বিদ্যালয়ে মোট ৪৭৪ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছেকিন্তু বাস্তবে ৫০জন শিক্ষার্থীও নেই, কিন্তু ৩২ জন শিক্ষক রয়েছেশুধু মাত্র উপজেলার রেজিষ্টারবইয়ে বাস্তবে নেই। কোন স্কুলে শিক্ষক পাওয়া যায় না, আবার কোথাও শিক্ষার্থীর খবর পাওয়া গেলেও তাদের বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায় না। কারন স্কুলে লেবার ভাড়া দেওয়ার কারনে ক্লাস রুম ফাকা নেই, তাই স্কুলে ক্লাস রুমে যাওয়ার ভাগ্য অনেকেরই হয় না। মাস/বছরে ২/১ স্কুলে যায়, শুধু মাত্র খাতায় নাম সহি করতো তবে স্কুলে গুলোর বেশীরভাগ শিক্ষক শিক্ষা অফিসের আশ-পাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখাযায়। দেয়ারা নারিকেল বাড়িয়াই শুধু এমন দশা তা নয়, চরনাছিরপুর, চরমানাইর সহ প্রায় সবগুলো সরকারি স্কুলের একই হাল। বিদ্যালয়গুলো কাগজে-কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ।
দিয়ারা নারকেল বাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে খাতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেয়া আছে, কিন্তু বাস্তবে কোন শিক্ষার্থী নেই, কেননা বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সর্বনি¤œ ৪০% শিক্ষার্থীর নাম দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কতজন প্রকৃত শির্ক্ষাথীর নাম দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখলেই সঠিক তথ্য জানা যাবে। ৭২ জন, শিক্ষক নিয়োগ আছেন ৪ জন, বেথুয়া সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬১ জন,শিক্ষক ৩ জন, চর হকিয়তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ানি কারন এই স্কুলটা প্রায় সার বছরই তালা বদ্ধ থাকে, অনেক শিক্ষক স্কুলটি কোথায় জানে না। ৫২ জন, শিক্ষক ৪জন, পশ্চিম চরখুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৪৩ জন, শিক্ষক ৩জন, চরখুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩ জন, শিক্ষক ৩ জন,নুরউদ্দিন সর্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮০ জন, শিক্ষক ৩ জন, বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, শিক্ষক ৪ জন,কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪ জন,শিক্ষক ২ জন, মোজাফফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৬ জন,শিক্ষক ৩ জন, কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬ জন শিক্ষার্থী শিক্ষক আছেন ৩ জন।এসব স্কুলের শিক্ষার্থী শুধু কাগজেই জানা যায়, বাস্তবে এতখ্যের কোন প্রকার মিল নেই। অপর দিকে চরমানাইর, চরনাছিরপুরের একই ঘটনা, স্কুল ঘর শিক্ষক/শিক্ষার্খীর জন্যে অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু কেউ আসে না। চরনাছিরপুর স্কুলে শিক্ষক ৩জন কোন শিক্ষার্খী উপস্থিত থাকে না। ঐ স্কুলের শিক্ষিকা ইয়াছমিন আক্তার কখনো স্কুলে উপস্থিত থাকে না। মাঝে-মধ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়ি এসে হাজিরা থাতা সহি করে এবং শিক্ষককে কিছু উপহার দিয়ে চলে যায়, এই হলো তার শিক্ষকতা। চর মানাইর স্কুল গুলোর একই অবস্থা, ৭৪ নং অর্জুন পট্টি স্কুলে শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতাও নেই, তাহলে স্কুলের অবস্থা কী তা অনুমেয়। যদিও ২/১ স্কুলে ১১টার শিক্ষক উপস্থিত হলেও বেলা ১২টার দিকে স্কুল ত্যাগ চলে যায়।এই হলো চরাঞ্চালেরস্কুলের শিক্ষার অবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় বাইরে থেকে আসা কৃষিশ্রমকরা বিদ্যালয়ের কক্ষে অস্থায়ীভাবে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে এসব কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীর মতে, আশপাশের বিদ্যালয়গুলোতেও পাঠদান প্রায় বন্ধ। কোথাও দুই-একজন শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী নেই। শ্রেণিকক্ষে ধুলা জমে আছে, মাঠে নেই শিশুদের কোলাহল। তারা আরও জানান, সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে আজ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, এর আগে কখনো তাদের দেখা মেলেনি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু মানুষ বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকে। কয়েকদিন হলো তাদের এখানে দেখছি। এই স্কুলেই তারা রান্না-বান্না করে। তারা টাকা দিয়ে ঘর ব্যবহার করে। এটা তো সরকারি স্কুল এখানে এমন হওয়া ঠিক নয়।
চরখুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন শ্রমিক থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মান্নান শিকদার নামে স্থানীয় এক মাতব্বর তার জমি চাষের জন্য বাইরে থেকে কিছু শ্রমিক এনেছেন। তারাই মূলত স্কুলে থাকছেন। তাদের ভাড়া দেওয়া হয়নি, তারা জোর করে থাকছেন। বিষয়টি আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের পাঠদান কীভাবে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে তেমন শিক্ষার্থী নেই। একটি রুমেই কষ্ট করে ক্লাস নিতে হয়।
এছাড়া ইউনিয়নের মোজাফফরপুর, বিশ্বনাথপুর আকন্দি, নুরুদ্দিন সরদারেরকান্দি ও কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়,অনেক বিদ্যালয়ে ঘুরে ২/১জন প্রক্সি শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না। জানা যায়, এসব স্কুলে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত না আসায় শিক্ষার্থীরাও তেমন স্কুলে আসে না। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।
রফিক শেখ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমাদের এলাকার স্কুলগুলো শুধু নামেই আছে। শিক্ষকরা মাসে এক-দুদিন এসে সই করে চলে যান। বাচ্চারা পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে ঘরে বসে সময় নষ্ট করছে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি। কেননা স্কুলে শিক্ষকরা আসে না, শিক্ষার্থীরা লেখা-পড়া হয় না,অফিসে অভিযোগ করেও কোন ফয়দা হয় না। অনেক শিক্ষক গর্ব করে বলে , উপরের সাথে যোগাযোগ করেই আমি চলে থাকি।তাই আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে কোন লাভ নেই,আমরা মাশোহারা দিয়ে চলি।কাকে বলবেন, কী বলবেন, কোন ব্যাবস্থা হবেনা রোকেয়া বেগম নামের আরেক অভিভাবক জানান, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা নিয়মিত স্কুলে যাক, কিন্তু শিক্ষক না থাকায় তারা পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে মাঠে কাজে যাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা এই ভাবে চলতে থাকলে, অল্প দিনের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে শিক্ষা নামক শব্দটা হারিয়ে যাবে, সেই শব্দটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।এখনই ঠিক না হলে এই এলাকার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, শিক্ষকরা তাদের নিজেদর কথাও তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, চরাঞ্চলে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হয় না।
ফকিরকান্দি (১৫০০) স্কুল, মোজাফফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চল এলাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সত্যিই কঠিন। বর্ষার সময় নদীর তীরে কাঁদা-পানির কারনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া সম্ভব হয় না। বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। অনেক সময় হাটা-চলায় সমস্যা হয়,যে কারনো প্রতিদিন স্কুলে পৌঁছানো যায় না। এ জন্যই আমরা দুপুরে স্কুল ছুটি দিয়ে দেই। এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জানান, বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়া বা শ্রমিক থাকার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবিতে দেয়ারা নারিকেল বাড়িয়া স্কুলে আবাসিক হোটেল,পাশের স্কুলটি দীর্ঘদিন বন্ধের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে -সংবাদ
রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নাড়িকেল বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে লেবারদের আবাসিক হোটেলের মতো ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে এলাকার বাইরে থেকে আসা লেবারদের অস্থায়ীভাবে রাত্রিযাপন করার জায়গা হিসেবে। এ অঞ্চলের দশটি বিদ্যালয়ে মোট ৪৭৪ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছেকিন্তু বাস্তবে ৫০জন শিক্ষার্থীও নেই, কিন্তু ৩২ জন শিক্ষক রয়েছেশুধু মাত্র উপজেলার রেজিষ্টারবইয়ে বাস্তবে নেই। কোন স্কুলে শিক্ষক পাওয়া যায় না, আবার কোথাও শিক্ষার্থীর খবর পাওয়া গেলেও তাদের বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায় না। কারন স্কুলে লেবার ভাড়া দেওয়ার কারনে ক্লাস রুম ফাকা নেই, তাই স্কুলে ক্লাস রুমে যাওয়ার ভাগ্য অনেকেরই হয় না। মাস/বছরে ২/১ স্কুলে যায়, শুধু মাত্র খাতায় নাম সহি করতো তবে স্কুলে গুলোর বেশীরভাগ শিক্ষক শিক্ষা অফিসের আশ-পাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখাযায়। দেয়ারা নারিকেল বাড়িয়াই শুধু এমন দশা তা নয়, চরনাছিরপুর, চরমানাইর সহ প্রায় সবগুলো সরকারি স্কুলের একই হাল। বিদ্যালয়গুলো কাগজে-কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ।
দিয়ারা নারকেল বাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে খাতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেয়া আছে, কিন্তু বাস্তবে কোন শিক্ষার্থী নেই, কেননা বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সর্বনি¤œ ৪০% শিক্ষার্থীর নাম দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কতজন প্রকৃত শির্ক্ষাথীর নাম দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখলেই সঠিক তথ্য জানা যাবে। ৭২ জন, শিক্ষক নিয়োগ আছেন ৪ জন, বেথুয়া সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬১ জন,শিক্ষক ৩ জন, চর হকিয়তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ানি কারন এই স্কুলটা প্রায় সার বছরই তালা বদ্ধ থাকে, অনেক শিক্ষক স্কুলটি কোথায় জানে না। ৫২ জন, শিক্ষক ৪জন, পশ্চিম চরখুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৪৩ জন, শিক্ষক ৩জন, চরখুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩ জন, শিক্ষক ৩ জন,নুরউদ্দিন সর্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮০ জন, শিক্ষক ৩ জন, বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, শিক্ষক ৪ জন,কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪ জন,শিক্ষক ২ জন, মোজাফফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৬ জন,শিক্ষক ৩ জন, কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬ জন শিক্ষার্থী শিক্ষক আছেন ৩ জন।এসব স্কুলের শিক্ষার্থী শুধু কাগজেই জানা যায়, বাস্তবে এতখ্যের কোন প্রকার মিল নেই। অপর দিকে চরমানাইর, চরনাছিরপুরের একই ঘটনা, স্কুল ঘর শিক্ষক/শিক্ষার্খীর জন্যে অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু কেউ আসে না। চরনাছিরপুর স্কুলে শিক্ষক ৩জন কোন শিক্ষার্খী উপস্থিত থাকে না। ঐ স্কুলের শিক্ষিকা ইয়াছমিন আক্তার কখনো স্কুলে উপস্থিত থাকে না। মাঝে-মধ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়ি এসে হাজিরা থাতা সহি করে এবং শিক্ষককে কিছু উপহার দিয়ে চলে যায়, এই হলো তার শিক্ষকতা। চর মানাইর স্কুল গুলোর একই অবস্থা, ৭৪ নং অর্জুন পট্টি স্কুলে শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতাও নেই, তাহলে স্কুলের অবস্থা কী তা অনুমেয়। যদিও ২/১ স্কুলে ১১টার শিক্ষক উপস্থিত হলেও বেলা ১২টার দিকে স্কুল ত্যাগ চলে যায়।এই হলো চরাঞ্চালেরস্কুলের শিক্ষার অবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় বাইরে থেকে আসা কৃষিশ্রমকরা বিদ্যালয়ের কক্ষে অস্থায়ীভাবে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে এসব কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীর মতে, আশপাশের বিদ্যালয়গুলোতেও পাঠদান প্রায় বন্ধ। কোথাও দুই-একজন শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী নেই। শ্রেণিকক্ষে ধুলা জমে আছে, মাঠে নেই শিশুদের কোলাহল। তারা আরও জানান, সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে আজ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, এর আগে কখনো তাদের দেখা মেলেনি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু মানুষ বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকে। কয়েকদিন হলো তাদের এখানে দেখছি। এই স্কুলেই তারা রান্না-বান্না করে। তারা টাকা দিয়ে ঘর ব্যবহার করে। এটা তো সরকারি স্কুল এখানে এমন হওয়া ঠিক নয়।
চরখুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন শ্রমিক থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মান্নান শিকদার নামে স্থানীয় এক মাতব্বর তার জমি চাষের জন্য বাইরে থেকে কিছু শ্রমিক এনেছেন। তারাই মূলত স্কুলে থাকছেন। তাদের ভাড়া দেওয়া হয়নি, তারা জোর করে থাকছেন। বিষয়টি আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের পাঠদান কীভাবে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে তেমন শিক্ষার্থী নেই। একটি রুমেই কষ্ট করে ক্লাস নিতে হয়।
এছাড়া ইউনিয়নের মোজাফফরপুর, বিশ্বনাথপুর আকন্দি, নুরুদ্দিন সরদারেরকান্দি ও কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়,অনেক বিদ্যালয়ে ঘুরে ২/১জন প্রক্সি শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না। জানা যায়, এসব স্কুলে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত না আসায় শিক্ষার্থীরাও তেমন স্কুলে আসে না। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।
রফিক শেখ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমাদের এলাকার স্কুলগুলো শুধু নামেই আছে। শিক্ষকরা মাসে এক-দুদিন এসে সই করে চলে যান। বাচ্চারা পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে ঘরে বসে সময় নষ্ট করছে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি। কেননা স্কুলে শিক্ষকরা আসে না, শিক্ষার্থীরা লেখা-পড়া হয় না,অফিসে অভিযোগ করেও কোন ফয়দা হয় না। অনেক শিক্ষক গর্ব করে বলে , উপরের সাথে যোগাযোগ করেই আমি চলে থাকি।তাই আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে কোন লাভ নেই,আমরা মাশোহারা দিয়ে চলি।কাকে বলবেন, কী বলবেন, কোন ব্যাবস্থা হবেনা রোকেয়া বেগম নামের আরেক অভিভাবক জানান, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা নিয়মিত স্কুলে যাক, কিন্তু শিক্ষক না থাকায় তারা পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে মাঠে কাজে যাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা এই ভাবে চলতে থাকলে, অল্প দিনের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে শিক্ষা নামক শব্দটা হারিয়ে যাবে, সেই শব্দটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।এখনই ঠিক না হলে এই এলাকার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, শিক্ষকরা তাদের নিজেদর কথাও তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, চরাঞ্চলে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হয় না।
ফকিরকান্দি (১৫০০) স্কুল, মোজাফফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চল এলাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সত্যিই কঠিন। বর্ষার সময় নদীর তীরে কাঁদা-পানির কারনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া সম্ভব হয় না। বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। অনেক সময় হাটা-চলায় সমস্যা হয়,যে কারনো প্রতিদিন স্কুলে পৌঁছানো যায় না। এ জন্যই আমরা দুপুরে স্কুল ছুটি দিয়ে দেই। এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জানান, বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়া বা শ্রমিক থাকার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।