মানিকগঞ্জে পালাকার ও অনুসারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল করে -সংবাদ
মানিকগঞ্জে পালাকার গ্রেপ্তার ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও মব-সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
২৫৮ নাগরিকের বিবৃতি
পালাকার গ্রেপ্তার, অনুসারীদের ওপর হামলা এবং ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে মব-সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ২৫৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। মানিকগঞ্জের পালাকার আবুল সরকারের মুক্তিও দাবি করেছেন তারা।
মানিকগঞ্জের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের স্বাক্ষরে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) নাগরিকদের এ বিবৃতি আসে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আজফার হোসেন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া, লেখক ও অধ্যাপক মানস চৌধুরী, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, অভিনেতা ও নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, শিল্পী সংগঠক অমল আকাশ, চলচ্চিত্রকার নূরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রমুখ।
ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল রোববার তার অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালান।
২৫৮ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যেন ইসলাম ধর্মের ‘সোল এজেন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। দুই শতাধিক মাজার ভাঙা, অসংখ্য ব্যক্তিকে মুরতাদ-কাফের-শাতিম ঘোষণা, কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানো, রাস্তার জটাধারী বাউল-ফকিরদের ধরে ধরে চুল কেটে দেয়া, নারীদের চলাচল ও পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা, নাচ-গান ও নাটকের অনুষ্ঠান এমনকি খেলাধুলা ও মেলার মতো আয়োজন প- করার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত ও ভিন্ন-আচারের মানুষদের নির্মূল করাই যেন তাদের লক্ষ্য।’
এসব ক্ষেত্রে বারবার ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিদাতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ‘মব সন্ত্রাস’ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং তারা শুরু থেকেই নীরবতা অবলম্বন করে এ ধরনের ঘটনার প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কখনো ‘প্রেশারগ্রুপ’ ইত্যাদি নাম দিয়ে এসব ঘটনা হালকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেড় বছর পরও সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রমনা মানুষের হতাশা বাড়ছে এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার সুযোগও তৈরি হচ্ছে।
### দ্রুত আইনি ব্যবস্থা অপরিহার্য: আসক
বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তার ভক্ত ও অনুরাগীদের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে হামলা, মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে আসক। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত বাউলশিল্পীর ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রক্রিয়া, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, ‘শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে আরও সংঘাত, সহিংসতা এবং সামাজিক অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে পারে।’
‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার ও গণজমায়েতে হামলা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এটি সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ।’
নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আসক বলেছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সংস্কৃতিচর্চার স্বাধীনতা সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাউল ঐতিহ্যসহ দেশের সব সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ধারা রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনো গোষ্ঠীর মতাদর্শিক অবস্থান বা সামাজিক চাপের অজুহাতে শিল্প-সংস্কৃতির ওপর হামলা বা বাধা দেয়ার চেষ্টা আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।’
সম্প্রতি বাউলশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হুমকি ও হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, ‘এসব ঘটনায় কার্যকর ও সময়োপযোগী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দেশে শিল্প-সংস্কৃতিবিরোধী গোষ্ঠী আরও উৎসাহিত হয়ে উঠছে এবং একই সঙ্গে হামলার ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। চলমান এই প্রবণতা আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য গভীর হুমকি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
##### দোষীদের বিচার দাবি এইচআরএসএসের
মানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। পাশাপাশি তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার মানিকগঞ্জ জেলা স্টেডিয়াম এলাকায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছিলেন তার ভক্ত ও অনুসারীরা। একই সময়ে ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে পাল্টা কর্মসূচি থেকে তাদের (আবুল সরকারের অনুসারী) ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এমনকি প্রাণ বাঁচাতে বাউল অনুরাগীদের অনেকেই স্টেডিয়াম সংলগ্ন ডোবায় ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন।
দেশের যে কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা, শিল্পী ও শিল্প অনুরাগীদের নিরাপত্তা রক্ষা করা, রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অথচ বাউলদের ওপর এ হামলা কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ওপর আঘাত নয়; বরং দেশের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও হুমকি, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মব সহিংসতার শামিল।’
এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরএসএস। বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এসব নৈরাজ্য ও উগ্রতা দিন দিন রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়কেই মারাত্মক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসনের নীরবতা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানানো হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মানিকগঞ্জে পালাকার ও অনুসারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল করে -সংবাদ
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
মানিকগঞ্জে পালাকার গ্রেপ্তার ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও মব-সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
২৫৮ নাগরিকের বিবৃতি
পালাকার গ্রেপ্তার, অনুসারীদের ওপর হামলা এবং ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে মব-সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ২৫৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। মানিকগঞ্জের পালাকার আবুল সরকারের মুক্তিও দাবি করেছেন তারা।
মানিকগঞ্জের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের স্বাক্ষরে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) নাগরিকদের এ বিবৃতি আসে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আজফার হোসেন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া, লেখক ও অধ্যাপক মানস চৌধুরী, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, অভিনেতা ও নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, শিল্পী সংগঠক অমল আকাশ, চলচ্চিত্রকার নূরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রমুখ।
ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল রোববার তার অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালান।
২৫৮ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যেন ইসলাম ধর্মের ‘সোল এজেন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। দুই শতাধিক মাজার ভাঙা, অসংখ্য ব্যক্তিকে মুরতাদ-কাফের-শাতিম ঘোষণা, কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানো, রাস্তার জটাধারী বাউল-ফকিরদের ধরে ধরে চুল কেটে দেয়া, নারীদের চলাচল ও পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা, নাচ-গান ও নাটকের অনুষ্ঠান এমনকি খেলাধুলা ও মেলার মতো আয়োজন প- করার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত ও ভিন্ন-আচারের মানুষদের নির্মূল করাই যেন তাদের লক্ষ্য।’
এসব ক্ষেত্রে বারবার ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিদাতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ‘মব সন্ত্রাস’ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং তারা শুরু থেকেই নীরবতা অবলম্বন করে এ ধরনের ঘটনার প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কখনো ‘প্রেশারগ্রুপ’ ইত্যাদি নাম দিয়ে এসব ঘটনা হালকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেড় বছর পরও সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রমনা মানুষের হতাশা বাড়ছে এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার সুযোগও তৈরি হচ্ছে।
### দ্রুত আইনি ব্যবস্থা অপরিহার্য: আসক
বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তার ভক্ত ও অনুরাগীদের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে হামলা, মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে আসক। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত বাউলশিল্পীর ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রক্রিয়া, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, ‘শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে আরও সংঘাত, সহিংসতা এবং সামাজিক অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে পারে।’
‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার ও গণজমায়েতে হামলা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এটি সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ।’
নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আসক বলেছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সংস্কৃতিচর্চার স্বাধীনতা সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাউল ঐতিহ্যসহ দেশের সব সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ধারা রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনো গোষ্ঠীর মতাদর্শিক অবস্থান বা সামাজিক চাপের অজুহাতে শিল্প-সংস্কৃতির ওপর হামলা বা বাধা দেয়ার চেষ্টা আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।’
সম্প্রতি বাউলশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হুমকি ও হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক বলেছে, ‘এসব ঘটনায় কার্যকর ও সময়োপযোগী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দেশে শিল্প-সংস্কৃতিবিরোধী গোষ্ঠী আরও উৎসাহিত হয়ে উঠছে এবং একই সঙ্গে হামলার ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। চলমান এই প্রবণতা আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য গভীর হুমকি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
##### দোষীদের বিচার দাবি এইচআরএসএসের
মানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। পাশাপাশি তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার মানিকগঞ্জ জেলা স্টেডিয়াম এলাকায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছিলেন তার ভক্ত ও অনুসারীরা। একই সময়ে ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে পাল্টা কর্মসূচি থেকে তাদের (আবুল সরকারের অনুসারী) ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এমনকি প্রাণ বাঁচাতে বাউল অনুরাগীদের অনেকেই স্টেডিয়াম সংলগ্ন ডোবায় ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন।
দেশের যে কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা, শিল্পী ও শিল্প অনুরাগীদের নিরাপত্তা রক্ষা করা, রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অথচ বাউলদের ওপর এ হামলা কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ওপর আঘাত নয়; বরং দেশের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও হুমকি, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মব সহিংসতার শামিল।’
এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরএসএস। বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এসব নৈরাজ্য ও উগ্রতা দিন দিন রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়কেই মারাত্মক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাছাড়া প্রশাসনের নীরবতা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানানো হয়।