ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পালাকার ও বয়াতি মহারাজ আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কবি–চিন্তক ফরহাদ মজহার। ভবিষ্যতে বাউলদের নিয়ে মানিকগঞ্জেই সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আবুল সরকারের মুক্তির দাবি এবং মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন ফরহাদ মজহার। সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদের ডাকে এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে যোগ দিয়ে বাউল-ফকির, সাধুসন্তদের পরবর্তী মহাসম্মেলন মানিকগঞ্জে করার ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মানিকগঞ্জে যাঁরা এই নিরীহ বাউলদের পেটাচ্ছেন, আমি থাকব, আমাকে পেটাবেন, আমি পিটুনি খাব। আমরা প্রতিহিংসা করি না। কিন্তু আপনাদের একটা শিক্ষা দিয়ে যাব।’
ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর সোমবার রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা যেটাকে ইসলামের নামে চালাচ্ছেন, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই। আপনি নিজে মনে করেন ঠিক, এটাই মনে করতেছেন কোরআনে আছে, এটাই ভাবতেছেন হাদিসে আছে। এগুলা নাই।’
সহিংসতা ইসলামের পথ নয় মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যারা নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম করে, সহিংসতা করে, তারা কখনোই রসুলের উম্মত হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। ফলে আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, আজ যেভাবে আমাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ধারা হামলা করছে, আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের সঙ্গে এই লড়াইটা চালিয়ে যান।’
রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল করার চেষ্টাকারীদের হুঁশিয়ার করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাংলাদেশকে আরও গভীর গহ্বরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করছেন, আপনারা সাবধান হয়ে যান। চক্রান্ত চিরদিন লুক্কায়িত থাকে না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এনসিপি থেকে শুরু করে বিএনপি এবং জামায়াত—আপনাদের বলব, আপনারা ভোটের জন্য যদি অন্যায়ের বিরোধিতা না করেন, আপনারা যদি জালিমের পক্ষে থাকেন, আপনারা ভাববেন না যে এ দেশের জনগণ জালিমের সহযোগীদের ভোট দিয়ে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে আনবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। আজকে এই ফকির, বয়াতি, সাধুসন্ত—এই মজলুমের পক্ষে যদি আপনারা না দাঁড়ান, আপনাদের আল্লাহ যেমন ক্ষমা করবেন না, এ দেশের মানুষও আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
‘যারা হামলা করল, তারাই কেস দিল’
প্রতিবাদ সমাবেশে বয়াতি আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর আবার মানিকগঞ্জে তাঁর ছেলেদের ওপরও হামলা করা হয়েছে।
আলেয়া বেগম আরও বলেন, ‘যারা আঘাত করল, মাথা ফাটাইলো, তারা আবার ফেসবুকে এসে, আবার লাইভে এসে বলতেছে যে আমাদের ওপরে বাউলরা হামলা করেছে। তাহলে কত বড় মিথ্যাবাদী! আবার বলে, “একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর”। এত বড় দুঃসাহস! এত বড় কথা তারা কিসের ইন্ধনে আর কার শক্তিতে বলে।’
থানার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলেয়া বেগম বলেন, ‘যারা হামলা করল, তারাই থানায় গিয়ে আমাদের বাউলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে, কেস করেছে। পুলিশ আমার ছেলেদের ডেকে থানায় আনে। এখানে একটা মিটমাট করি। তাহলে ওই মোল্লাদের কেস নিয়েছে এবং আমি যখন গেলাম, তখন আমার অভিযোগ নিতে তারা গড়িমসি শুরু করল। বলছে যে একটু অপেক্ষা করেন, তাড়াহুড়ার কী আছে? অভিযোগ করে দিলেও হবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
পালাকার ও বয়াতি মহারাজ আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কবি–চিন্তক ফরহাদ মজহার। ভবিষ্যতে বাউলদের নিয়ে মানিকগঞ্জেই সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আবুল সরকারের মুক্তির দাবি এবং মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন ফরহাদ মজহার। সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদের ডাকে এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে যোগ দিয়ে বাউল-ফকির, সাধুসন্তদের পরবর্তী মহাসম্মেলন মানিকগঞ্জে করার ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মানিকগঞ্জে যাঁরা এই নিরীহ বাউলদের পেটাচ্ছেন, আমি থাকব, আমাকে পেটাবেন, আমি পিটুনি খাব। আমরা প্রতিহিংসা করি না। কিন্তু আপনাদের একটা শিক্ষা দিয়ে যাব।’
ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর সোমবার রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা যেটাকে ইসলামের নামে চালাচ্ছেন, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই। আপনি নিজে মনে করেন ঠিক, এটাই মনে করতেছেন কোরআনে আছে, এটাই ভাবতেছেন হাদিসে আছে। এগুলা নাই।’
সহিংসতা ইসলামের পথ নয় মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যারা নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম করে, সহিংসতা করে, তারা কখনোই রসুলের উম্মত হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। ফলে আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, আজ যেভাবে আমাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ধারা হামলা করছে, আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের সঙ্গে এই লড়াইটা চালিয়ে যান।’
রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল করার চেষ্টাকারীদের হুঁশিয়ার করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাংলাদেশকে আরও গভীর গহ্বরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করছেন, আপনারা সাবধান হয়ে যান। চক্রান্ত চিরদিন লুক্কায়িত থাকে না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এনসিপি থেকে শুরু করে বিএনপি এবং জামায়াত—আপনাদের বলব, আপনারা ভোটের জন্য যদি অন্যায়ের বিরোধিতা না করেন, আপনারা যদি জালিমের পক্ষে থাকেন, আপনারা ভাববেন না যে এ দেশের জনগণ জালিমের সহযোগীদের ভোট দিয়ে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে আনবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। আজকে এই ফকির, বয়াতি, সাধুসন্ত—এই মজলুমের পক্ষে যদি আপনারা না দাঁড়ান, আপনাদের আল্লাহ যেমন ক্ষমা করবেন না, এ দেশের মানুষও আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
‘যারা হামলা করল, তারাই কেস দিল’
প্রতিবাদ সমাবেশে বয়াতি আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর আবার মানিকগঞ্জে তাঁর ছেলেদের ওপরও হামলা করা হয়েছে।
আলেয়া বেগম আরও বলেন, ‘যারা আঘাত করল, মাথা ফাটাইলো, তারা আবার ফেসবুকে এসে, আবার লাইভে এসে বলতেছে যে আমাদের ওপরে বাউলরা হামলা করেছে। তাহলে কত বড় মিথ্যাবাদী! আবার বলে, “একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর”। এত বড় দুঃসাহস! এত বড় কথা তারা কিসের ইন্ধনে আর কার শক্তিতে বলে।’
থানার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলেয়া বেগম বলেন, ‘যারা হামলা করল, তারাই থানায় গিয়ে আমাদের বাউলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে, কেস করেছে। পুলিশ আমার ছেলেদের ডেকে থানায় আনে। এখানে একটা মিটমাট করি। তাহলে ওই মোল্লাদের কেস নিয়েছে এবং আমি যখন গেলাম, তখন আমার অভিযোগ নিতে তারা গড়িমসি শুরু করল। বলছে যে একটু অপেক্ষা করেন, তাড়াহুড়ার কী আছে? অভিযোগ করে দিলেও হবে।’