চুয়াডাঙ্গা : রস সংগ্রহ করছেন গাছি -সংবাদ
সকালের মাঠে এখন হালকা কুয়াশার পরত, ঘাসের আগায় চিকচিক করা শিশির, আর দুপুরের নরম রোদে উত্তরের হিমেল হাওয়া,সব মিলেই জানিয়ে দিচ্ছে শীত দুয়ারে কড়া নাড়ছে। হেমন্তের ঠিক শেষের দিকে এই সময়ে চুয়াডাঙ্গাজুড়ে শুরু হয়েছে খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরির মৌসুমি প্রস্তুতি।
স্থানীয় কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার খেজুর গুড়ের বাণিজ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার চারটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ক্ষেতের আইল, পুকুরপাড় কিংবা রাস্তার ধারে যত্ন-অযত্নে বেড়ে ওঠা অসংখ্য খেজুর গাছ এখন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অন্যতম উৎস। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকেই রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করেন কয়েক হাজার পরিবার। রস-গুড় বিক্রির আয় দিয়ে তারা ৫/৬ মাসের জীবিকা নির্বাহ করেন, ফলে মৌসুমি এই শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
এ সময়টি গাছিদের সবচেয়ে ব্যস্ত মৌসুম। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেউ ডালপালা পরিষ্কার করছেন, কেউ নলি বাধছেন, কেউবা রস নামানোর কলস প্রস্তুত করছেন। গ্রামের পর গ্রামের খেজুরগাছের মাথায় তাই এখন ব্যস্ততার ছাপ স্পষ্ট। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে খেজুরগাছের সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি।
প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত গুড় উৎপাদন সম্ভব। এই হিসাবে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, গত বছর আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। এ বছরও আমরা একই লক্ষ্য ধরে কাজ করছি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রসের মান ভালো হয়, এতে গুড়ের গুণগত মানও উন্নত হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন রসে কোনোভাবে পাখি বা বাদুড় না বসে।
প্রয়োজন হলে কলসের মুখে নেট ব্যবহার করতে হবে। তিনি ভেজালবিরোধী সতর্কতাও যোগ করেন,রঙ ঘন করতে বা পরিমাণ বাড়াতে অনেকেই চিনি ব্যবহার করেন, যা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ও বাজারদর দুই-ই নষ্ট করে। চাষিদের বলবো, প্রয়োজনে দাম একটু বেশি নিন, কিন্তু চিনি মিশাবেন না। খাটি গুড়ের সুনাম রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
উপ-পরিচালক আরও জানান, বেশি করে খেজুরগাছ রোপণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে, অন্যদিকে কৃষকেরা দীর্ঘ কয়েক মাস রস ও গুড় বিক্রি করে নিশ্চিত আয়ের সুযোগ পাবেন। শীতের আমেজ গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার গ্রামবাংলায় আবার জমে উঠছে খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্যবাহী মৌসুমি উৎসব। যা কেবল স্বাদে নয়, অর্থনীতিতেও এনে দেয় নতুন প্রাণ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চুয়াডাঙ্গা : রস সংগ্রহ করছেন গাছি -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
সকালের মাঠে এখন হালকা কুয়াশার পরত, ঘাসের আগায় চিকচিক করা শিশির, আর দুপুরের নরম রোদে উত্তরের হিমেল হাওয়া,সব মিলেই জানিয়ে দিচ্ছে শীত দুয়ারে কড়া নাড়ছে। হেমন্তের ঠিক শেষের দিকে এই সময়ে চুয়াডাঙ্গাজুড়ে শুরু হয়েছে খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরির মৌসুমি প্রস্তুতি।
স্থানীয় কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার খেজুর গুড়ের বাণিজ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার চারটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ক্ষেতের আইল, পুকুরপাড় কিংবা রাস্তার ধারে যত্ন-অযত্নে বেড়ে ওঠা অসংখ্য খেজুর গাছ এখন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অন্যতম উৎস। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকেই রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করেন কয়েক হাজার পরিবার। রস-গুড় বিক্রির আয় দিয়ে তারা ৫/৬ মাসের জীবিকা নির্বাহ করেন, ফলে মৌসুমি এই শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
এ সময়টি গাছিদের সবচেয়ে ব্যস্ত মৌসুম। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেউ ডালপালা পরিষ্কার করছেন, কেউ নলি বাধছেন, কেউবা রস নামানোর কলস প্রস্তুত করছেন। গ্রামের পর গ্রামের খেজুরগাছের মাথায় তাই এখন ব্যস্ততার ছাপ স্পষ্ট। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে খেজুরগাছের সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি।
প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত গুড় উৎপাদন সম্ভব। এই হিসাবে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, গত বছর আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। এ বছরও আমরা একই লক্ষ্য ধরে কাজ করছি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রসের মান ভালো হয়, এতে গুড়ের গুণগত মানও উন্নত হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন রসে কোনোভাবে পাখি বা বাদুড় না বসে।
প্রয়োজন হলে কলসের মুখে নেট ব্যবহার করতে হবে। তিনি ভেজালবিরোধী সতর্কতাও যোগ করেন,রঙ ঘন করতে বা পরিমাণ বাড়াতে অনেকেই চিনি ব্যবহার করেন, যা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ও বাজারদর দুই-ই নষ্ট করে। চাষিদের বলবো, প্রয়োজনে দাম একটু বেশি নিন, কিন্তু চিনি মিশাবেন না। খাটি গুড়ের সুনাম রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
উপ-পরিচালক আরও জানান, বেশি করে খেজুরগাছ রোপণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে, অন্যদিকে কৃষকেরা দীর্ঘ কয়েক মাস রস ও গুড় বিক্রি করে নিশ্চিত আয়ের সুযোগ পাবেন। শীতের আমেজ গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার গ্রামবাংলায় আবার জমে উঠছে খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্যবাহী মৌসুমি উৎসব। যা কেবল স্বাদে নয়, অর্থনীতিতেও এনে দেয় নতুন প্রাণ।