মূল ভূখন্ড থেকে নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত বৈরী প্রকৃতির সাথে বসবাস করে আসছেন। বন্যা, খরা, নদী ভাঙন এবং শৈত্যপ্রবাহ ছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য তারা যোগাযোগ প্রতিকূলতার কারণে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। ফলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদেরকে সবসময় হিমসিম খেতে হয়। এজন্য এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, যারা সত্যিকার অর্থে চরাঞ্চলের মানুষদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেই প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চান তারা। বিশেষ করে যারা নদী ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কাজ করবেন, চরাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি নিয়ে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে খুঁজছেন তারা। সেই সাথে জেলা জুড়ে আলাদাভাবে চর মন্ত্রণালয়ের দাবি জোড়ালো হয়ে উঠছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীতে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষের বসবাস। যাদের অধিকাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করেন। প্রতিনিয়ত নদ-নদীর ভাঙনে তারা সর্বশান্ত হন। আবার নতুনভাবে নতুন কোন জেগে ওঠা চরে জীবন শুরু করেন। এভাবে বারবার ভাঙন কবলিত চরবাসীরা চান স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে তারা নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবেন। তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবেন। হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাবেন এবং চরাঞ্চলে বিভিন্ন উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সঠিক মূল্যে সহজ যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারবেন। এমন প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চান তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফেচকার চরের গর্ভবতী গৃহবধূ কদভানু বেগম জানান, আমাগো সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অসুস্থ্য রোগী বা গর্ভবতী মহিলাদের জরুরী সেবা পাওয়া। এরআগে আমার একটা বাচ্চা প্রসব করার সময় চর থেকে নদী পথে কুড়িগ্রামে যাওয়ার পথে নৌকাতেই প্রসব হয়ে শিশুটি মারা যায়।
একই এলাকার পোড়ার চরের গৃহবধূ ছমিরণ বেওয়া জানান, চরে প্রাইমারী স্কুল আছে, কিন্তু হাইস্কুল বা কলেজ নাই! ফলে মেয়েদের পড়াতে না পেরে আমরা বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হই। আমাগো এলাকায় যাতে মেয়ে শিশুদের বাল্যবিবাহ দিতে না হয় এজন্য সেই ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চাই যারা এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এবং কাজ করবেন। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াসাম এলাকার কৃষক কামরুল জানান, প্রতিনিয়ত তিস্তা নদীর ভাঙনে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাই। ভাঙন শুরু হলেই লোক দেখানো কাজ শুরু হয়। মানুষজন রিলিফ নিয়ে চরে ছুটে যান। আমরা রিলিফ বা করুণা চাই না। আমরা নদী ভাঙনে স্থায়ী সমাধান চাই। কারণ একরের পর একর মূল ভূখন্ডের জমি তিস্তা গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি জমিগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল গ্রামের মকবুল হোসেন জানান, চরে আমরা গবাদিপশু পালন করে প্রচুর দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনে সহযোগিতা করি। কিন্তু আমরা এগুলো সঠিক মূল্যে বাজারজাত করতে পারি না। এ ব্যাপারে এমপি প্রার্থীদের সহযোগিতা চাই। যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, চরের মানুষ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর তারা আর চরাঞ্চলের মানুষের খোঁজ খবর নেন না। যারা দায়িত্বে আছেন এবং যারা দায়িত্ব পাবেন তারা যেন চরের বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন।
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি খায়রুল আনম বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙন চরের মানুষের প্রধান সমস্যা। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। চরের মানুষের সত্যিকার ভাগ্যন্নোয়নে দরকার আলাদা চর মন্ত্রণালয়ে, তাহলে সমস্যাগুলোর উত্তোরণ সম্ভব।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
মূল ভূখন্ড থেকে নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত বৈরী প্রকৃতির সাথে বসবাস করে আসছেন। বন্যা, খরা, নদী ভাঙন এবং শৈত্যপ্রবাহ ছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য তারা যোগাযোগ প্রতিকূলতার কারণে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। ফলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদেরকে সবসময় হিমসিম খেতে হয়। এজন্য এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, যারা সত্যিকার অর্থে চরাঞ্চলের মানুষদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেই প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চান তারা। বিশেষ করে যারা নদী ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কাজ করবেন, চরাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি নিয়ে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে খুঁজছেন তারা। সেই সাথে জেলা জুড়ে আলাদাভাবে চর মন্ত্রণালয়ের দাবি জোড়ালো হয়ে উঠছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীতে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষের বসবাস। যাদের অধিকাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করেন। প্রতিনিয়ত নদ-নদীর ভাঙনে তারা সর্বশান্ত হন। আবার নতুনভাবে নতুন কোন জেগে ওঠা চরে জীবন শুরু করেন। এভাবে বারবার ভাঙন কবলিত চরবাসীরা চান স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে তারা নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবেন। তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবেন। হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাবেন এবং চরাঞ্চলে বিভিন্ন উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সঠিক মূল্যে সহজ যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারবেন। এমন প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চান তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফেচকার চরের গর্ভবতী গৃহবধূ কদভানু বেগম জানান, আমাগো সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অসুস্থ্য রোগী বা গর্ভবতী মহিলাদের জরুরী সেবা পাওয়া। এরআগে আমার একটা বাচ্চা প্রসব করার সময় চর থেকে নদী পথে কুড়িগ্রামে যাওয়ার পথে নৌকাতেই প্রসব হয়ে শিশুটি মারা যায়।
একই এলাকার পোড়ার চরের গৃহবধূ ছমিরণ বেওয়া জানান, চরে প্রাইমারী স্কুল আছে, কিন্তু হাইস্কুল বা কলেজ নাই! ফলে মেয়েদের পড়াতে না পেরে আমরা বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হই। আমাগো এলাকায় যাতে মেয়ে শিশুদের বাল্যবিবাহ দিতে না হয় এজন্য সেই ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চাই যারা এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এবং কাজ করবেন। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াসাম এলাকার কৃষক কামরুল জানান, প্রতিনিয়ত তিস্তা নদীর ভাঙনে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাই। ভাঙন শুরু হলেই লোক দেখানো কাজ শুরু হয়। মানুষজন রিলিফ নিয়ে চরে ছুটে যান। আমরা রিলিফ বা করুণা চাই না। আমরা নদী ভাঙনে স্থায়ী সমাধান চাই। কারণ একরের পর একর মূল ভূখন্ডের জমি তিস্তা গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি জমিগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল গ্রামের মকবুল হোসেন জানান, চরে আমরা গবাদিপশু পালন করে প্রচুর দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনে সহযোগিতা করি। কিন্তু আমরা এগুলো সঠিক মূল্যে বাজারজাত করতে পারি না। এ ব্যাপারে এমপি প্রার্থীদের সহযোগিতা চাই। যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, চরের মানুষ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর তারা আর চরাঞ্চলের মানুষের খোঁজ খবর নেন না। যারা দায়িত্বে আছেন এবং যারা দায়িত্ব পাবেন তারা যেন চরের বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন।
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি খায়রুল আনম বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙন চরের মানুষের প্রধান সমস্যা। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। চরের মানুষের সত্যিকার ভাগ্যন্নোয়নে দরকার আলাদা চর মন্ত্রণালয়ে, তাহলে সমস্যাগুলোর উত্তোরণ সম্ভব।