রাজশাহীর বাজারে মুগ ডালের আড়ালে বিক্রি হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর টারট্রাজিন নামের কৃত্রিম রঙ মেশানো মথ ডাল (মাটকি)। রাজশাহী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিক্ষায় দেখা গেছে, বাজার থেকে সংগৃহীত মুগ ডালের অর্ধেকেরও বেশি নমুনায় এই রঙের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ৩ নভেম্বর নগরীর সাহেববাজারের আটটি দোকান থেকে সংগৃহীত ১২টি নমুনার মধ্যে ৬টিতে টারট্রাজিন রঙের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
চকচকে, চিকন দানার মুগ ডাল হিসেবেই এই রঙ মেশানো মথ ডাল বাজারজাত করা হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশি মোটা দানার মুগ ডালে রঙের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এর আগে মথ নামে ডালে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রির বিষয়ে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। গত রোববার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টারট্রাজিন নামে হলুদ রঙ ডালে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত অর্থবছরে মুগ ডালের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে মথ ডাল আমদানি হলেও বাজারে মথ নামে কোনো ডাল বিক্রি হচ্ছে না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক মুগ ডাল আসলে রং মেশানো মথ ডাল।
ইতোমধ্যে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে চারঘাট উপজেলায় পরিচালিত অভিযানে ১২ টন রঙ মেশানো মথ ডাল জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে নিম্নমানের ও পোকামাকড়যুক্ত ডাল মজুদের দায়ে দুইটি ডাল মিলের মালিককে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এবিষয়ে নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, টারট্রাজিন একটি কৃত্রিম রঙ, যা খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ আমরা দেখেছি, বাজারে বিক্রি হওয়া মুগ ডালের অন্তত ৫০ শতাংশেই এই রঙ মেশানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো আমদানি করা মথ ডাল, যাতে রং মিশিয়ে বাজাওে মগডাল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে চিকন ও চকচকে কথিত মুগ ডালে রঙের উপস্থিতি স্পষ্ট।
তিনি আরও জানান, বাজারে যেসব মুগ ডাল অতিরিক্ত চকচকে ও উজ্জ্বল হলুদ রঙের, সেগুলো কেনার আগে সতর্ক হতে হবে। রঙ মেশানো ডাল সাধারণত পানিতে ফেললে রঙ ছেড়ে দেয়। সাধারণ ভোক্তারা চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে এই রঙ পরীক্ষা করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে কিছু ডাল ফেলে নেড়ে দেখলেই বোঝা যায় ডালে রঙ আছে কিনা। যদি পানি হলুদ হয়, বুঝতে হবে ডালে টারট্রাজিন মেশানো। প্রমাণ পেলে নিকটস্থ উপজেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবদেহে টারট্রাজিন রঙের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস.আই.এম রাজিউল ইসলাম। তিনি বলেন,টারট্রাজিন শুধু লিভার নয়, কিডনি, রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। দীর্ঘদিন এ ধরনের রঙ মেশানো খাবার খেলে লিভার সিরোসিস, হজমের সমস্যা এবং সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এটি শরীরে ধীরে ধীরে জমে বিষের মতো কাজ করে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তিনটি সরকারি সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে সস্তা মথ ডাল আমদানি করে তাতে ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি করছে। এটি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। বেলপুকুর এলাকার বিসমিল্লাহ ডাল মিলের ম্যানেজার আলতাফ হোসেন জানান,আমাদের কোনো রঙ মেশানোর উদ্দেশ্য ছিল না। এখন আমরা আর মথ ডাল আমদানি করছি না।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
রাজশাহীর বাজারে মুগ ডালের আড়ালে বিক্রি হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর টারট্রাজিন নামের কৃত্রিম রঙ মেশানো মথ ডাল (মাটকি)। রাজশাহী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিক্ষায় দেখা গেছে, বাজার থেকে সংগৃহীত মুগ ডালের অর্ধেকেরও বেশি নমুনায় এই রঙের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ৩ নভেম্বর নগরীর সাহেববাজারের আটটি দোকান থেকে সংগৃহীত ১২টি নমুনার মধ্যে ৬টিতে টারট্রাজিন রঙের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
চকচকে, চিকন দানার মুগ ডাল হিসেবেই এই রঙ মেশানো মথ ডাল বাজারজাত করা হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশি মোটা দানার মুগ ডালে রঙের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এর আগে মথ নামে ডালে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রির বিষয়ে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। গত রোববার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টারট্রাজিন নামে হলুদ রঙ ডালে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত অর্থবছরে মুগ ডালের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে মথ ডাল আমদানি হলেও বাজারে মথ নামে কোনো ডাল বিক্রি হচ্ছে না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক মুগ ডাল আসলে রং মেশানো মথ ডাল।
ইতোমধ্যে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে চারঘাট উপজেলায় পরিচালিত অভিযানে ১২ টন রঙ মেশানো মথ ডাল জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে নিম্নমানের ও পোকামাকড়যুক্ত ডাল মজুদের দায়ে দুইটি ডাল মিলের মালিককে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এবিষয়ে নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, টারট্রাজিন একটি কৃত্রিম রঙ, যা খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ আমরা দেখেছি, বাজারে বিক্রি হওয়া মুগ ডালের অন্তত ৫০ শতাংশেই এই রঙ মেশানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো আমদানি করা মথ ডাল, যাতে রং মিশিয়ে বাজাওে মগডাল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে চিকন ও চকচকে কথিত মুগ ডালে রঙের উপস্থিতি স্পষ্ট।
তিনি আরও জানান, বাজারে যেসব মুগ ডাল অতিরিক্ত চকচকে ও উজ্জ্বল হলুদ রঙের, সেগুলো কেনার আগে সতর্ক হতে হবে। রঙ মেশানো ডাল সাধারণত পানিতে ফেললে রঙ ছেড়ে দেয়। সাধারণ ভোক্তারা চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে এই রঙ পরীক্ষা করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে কিছু ডাল ফেলে নেড়ে দেখলেই বোঝা যায় ডালে রঙ আছে কিনা। যদি পানি হলুদ হয়, বুঝতে হবে ডালে টারট্রাজিন মেশানো। প্রমাণ পেলে নিকটস্থ উপজেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবদেহে টারট্রাজিন রঙের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস.আই.এম রাজিউল ইসলাম। তিনি বলেন,টারট্রাজিন শুধু লিভার নয়, কিডনি, রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। দীর্ঘদিন এ ধরনের রঙ মেশানো খাবার খেলে লিভার সিরোসিস, হজমের সমস্যা এবং সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এটি শরীরে ধীরে ধীরে জমে বিষের মতো কাজ করে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তিনটি সরকারি সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে সস্তা মথ ডাল আমদানি করে তাতে ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি করছে। এটি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। বেলপুকুর এলাকার বিসমিল্লাহ ডাল মিলের ম্যানেজার আলতাফ হোসেন জানান,আমাদের কোনো রঙ মেশানোর উদ্দেশ্য ছিল না। এখন আমরা আর মথ ডাল আমদানি করছি না।