শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : এই বাঁশঝাড় থেকে লুট হয় বাঁশ -সংবাদ
মৌলভীবাজার জেলার বিস্তৃত পাহাড়ি বনাঞ্চলে চলছে বাঁশ লুটের মহোৎসব। জেলার চারটি রেঞ্জভুক্ত ২৩টি বাঁশমহাল দীর্ঘদিন ধরে ইজারাবিহীন পড়ে থাকায় ওই শূন্যতার সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে কেটে নেওয়া হচ্ছে বনের মূল্যবান বাঁশ ও বেত। পরে সেগুলো ছড়ার পানিতে ভাসিয়ে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একসময় এসব বাঁশমহাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হতো কোটি টাকা। কিন্তু এখন দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার পাওয়া না যাওয়ায় রাজস্ব আয় শূন্য হয়ে গেছে। একইসঙ্গে বনভূমি পরিণত হয়েছে চোরাকারবারিদের নিরাপদ আশ্রয়ে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার চার রেঞ্জে থাকা ২৩টি বাঁশমহালে মোট ৪০ হাজার ৫৫ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রাজকান্দি রেঞ্জে সাতটি, জুড়ীতে সাতটি, বড়লেখায় চারটি ও কুলাউড়া রেঞ্জে পাঁচটি বাঁশমহাল রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য গত ২০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো নিবন্ধিত মহালদার এতে অংশ নেননি।
রাজকান্দি রেঞ্জের লেওয়াছড়া, বাঘাছড়া, কুরমাছড়া, সোনারাইছড়া ও ডালুয়াছড়া মহাল পরিদর্শনে দেখা গেছে—মহালজুড়ে কাটা বাঁশের অসংখ্য চিহ্ন। রেঞ্জটিকে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁশসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইজারাদার না থাকায় এসব মহাল থেকে প্রতিদিনই কোটি টাকার বাঁশ কেটে পাচার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। বনের গভীরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ কম হওয়ায় এ অঞ্চলে চোরাকারবারিদের তৎপরতা নজরে আসে না। তারা বাঁশ কেটে চিহ্ন মুছে ফেলতে অনেক সময় বনাঞ্চলে আগুনও লাগিয়ে দেয়, ফলে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পুনর্জন্মের সক্ষমতা। বাঁশমহালের কয়েকজন সাবেক ইজারাদার অভিযোগ করেন, সরকারের নির্ধারিত দরপত্রমূল্য এতটাই বেশি যে ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা, লোকসানের ঝুঁকিতেই থাকেন। এ সুযোগে সংঘবদ্ধ চক্র বিনা খরচে বাঁশ কেটে চোরা পথে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটছে। শ্রীমঙ্গলের সাগরদীঘি পাড়ের বাঁশ বিক্রেতা সাদিক আলী বলেন, আমরা নিয়মিত বাজারে বাঁশ বিক্রি করি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাঁশমহালের বাঁশ কিনতে পারি না। বড় বড় ব্যবসায়ীরাই এগুলো দখল করে নিচ্ছে।
সিলেট বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, “বাঁশমহালের ইজারা না হওয়ার পেছনে কিছু প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা রয়েছে। প্রতিটি মহালের বাঁশের পরিমাণ ও পুনর্জন্ম সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য একটি টিম মাঠে কাজ করছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর টেকসই ব্যবস্থাপনায় যেসব মহাল ইজারা দেওয়া সম্ভব হবে, সেখানে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ বাঁশকাটা ও পাচারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : এই বাঁশঝাড় থেকে লুট হয় বাঁশ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
মৌলভীবাজার জেলার বিস্তৃত পাহাড়ি বনাঞ্চলে চলছে বাঁশ লুটের মহোৎসব। জেলার চারটি রেঞ্জভুক্ত ২৩টি বাঁশমহাল দীর্ঘদিন ধরে ইজারাবিহীন পড়ে থাকায় ওই শূন্যতার সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে কেটে নেওয়া হচ্ছে বনের মূল্যবান বাঁশ ও বেত। পরে সেগুলো ছড়ার পানিতে ভাসিয়ে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একসময় এসব বাঁশমহাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হতো কোটি টাকা। কিন্তু এখন দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার পাওয়া না যাওয়ায় রাজস্ব আয় শূন্য হয়ে গেছে। একইসঙ্গে বনভূমি পরিণত হয়েছে চোরাকারবারিদের নিরাপদ আশ্রয়ে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার চার রেঞ্জে থাকা ২৩টি বাঁশমহালে মোট ৪০ হাজার ৫৫ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রাজকান্দি রেঞ্জে সাতটি, জুড়ীতে সাতটি, বড়লেখায় চারটি ও কুলাউড়া রেঞ্জে পাঁচটি বাঁশমহাল রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য গত ২০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো নিবন্ধিত মহালদার এতে অংশ নেননি।
রাজকান্দি রেঞ্জের লেওয়াছড়া, বাঘাছড়া, কুরমাছড়া, সোনারাইছড়া ও ডালুয়াছড়া মহাল পরিদর্শনে দেখা গেছে—মহালজুড়ে কাটা বাঁশের অসংখ্য চিহ্ন। রেঞ্জটিকে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁশসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইজারাদার না থাকায় এসব মহাল থেকে প্রতিদিনই কোটি টাকার বাঁশ কেটে পাচার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। বনের গভীরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ কম হওয়ায় এ অঞ্চলে চোরাকারবারিদের তৎপরতা নজরে আসে না। তারা বাঁশ কেটে চিহ্ন মুছে ফেলতে অনেক সময় বনাঞ্চলে আগুনও লাগিয়ে দেয়, ফলে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পুনর্জন্মের সক্ষমতা। বাঁশমহালের কয়েকজন সাবেক ইজারাদার অভিযোগ করেন, সরকারের নির্ধারিত দরপত্রমূল্য এতটাই বেশি যে ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা, লোকসানের ঝুঁকিতেই থাকেন। এ সুযোগে সংঘবদ্ধ চক্র বিনা খরচে বাঁশ কেটে চোরা পথে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটছে। শ্রীমঙ্গলের সাগরদীঘি পাড়ের বাঁশ বিক্রেতা সাদিক আলী বলেন, আমরা নিয়মিত বাজারে বাঁশ বিক্রি করি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাঁশমহালের বাঁশ কিনতে পারি না। বড় বড় ব্যবসায়ীরাই এগুলো দখল করে নিচ্ছে।
সিলেট বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, “বাঁশমহালের ইজারা না হওয়ার পেছনে কিছু প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা রয়েছে। প্রতিটি মহালের বাঁশের পরিমাণ ও পুনর্জন্ম সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য একটি টিম মাঠে কাজ করছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর টেকসই ব্যবস্থাপনায় যেসব মহাল ইজারা দেওয়া সম্ভব হবে, সেখানে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ বাঁশকাটা ও পাচারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে।