পটুয়াখালীর উপকূলীলের দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে সংরক্ষিত বনভ’তির গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। বন বিভাগের কাউখালী বীটের আওতাধীন চর সাইনবোর্ডের সংরক্ষিত এলাকার গাছ কেটে তরমুজ চাষ করার সাবার করে ফেলছে কতিপয় প্রভারশালী। দখলের উদ্দেশ্যে তারা এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মান করছে। বন রক্ষায় উপকূলীয় বন বিভাগের মাটি কাটা বন্ধের চেস্টা করা হলেও রাতের আঁধারে দখল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বন উজার ও ভূমি দখল প্রক্রিয়ার সাথে ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর হাত রয়েছে। বন বিভাগ রাঙ্গাবালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ৪১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় এও উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে এ চরের সঙ্গে যে নতুন চর জাগবে, তাও বন বিভাগের আওতায় থাকবে। ঘোষণার পর থেকেই বন বিভাগ চরটিতে ম্যানগ্রোভসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনায়ন শুরু করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চর সাইনবোর্ডের সংরক্ষিত বনে ২০ হেক্টরে ঝাউ, ১০ হেক্টরে করমজা এবং ৩০ হেক্টরে কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ সৃজন করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর এই সংরক্ষিত বনে প্রথমে দুটি বেকু মেশিন নামিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে তরমুজ খেত তৈরির কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় মানিক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই দখল অভিযান পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য অন্তত দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গিয়ে গাছ কাটা ও মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন। বন বিভাগের কাউখালী বীটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল আহমেদ খান বলেন, এটি আমাদের সংরক্ষিত বন। দখলের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দুইটি বেকুু দিয়ে গাছ কেটে বনের ভেতর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয় মানিক মোল্লা ও তাদের লোকজন।
তারা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবি করেন। আমরা কাজ বন্ধ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সেই রাতেই আরও একটি বেকু এনে তিনটি মেশিন দিয়ে রাতভর মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হেক্টর বনভূমির দুই শতাধিক গাছ ধ্বংস হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সংরক্ষিত বনের কয়েক একর জায়গা ঘিরে বড় মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তিনটি বেকুু মেশিন দিয়ে বনের মাটি তুলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ। বনের ভেতরে বড় বড় গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক গাছ উপড়ে ফেলে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সব কাজ রাতের অন্ধকারে করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক মোল্লা বলেন, তারা উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েই চরে তরমুজ খেত করছেন। তবে সেখানকার কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন। উপকূলীয় বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই বনের গেজেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলায় মামলা করা হয়নি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব দাস পুরকায়স্থ বলেন, আসলে বিষয়টি আমি জানতাম না। বন বিভাগ তাদের গেজেটসহ সব কাগজ দিয়ে গেছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদ-নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, নদ-নদী ও প্রবাহমান খালের পাড়ের তীর ভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ
কেউ করতে পারেনা। এটা আইনগতভাবে বৈধ নয়। এভাবে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করা অবৈধ রলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, সংরক্ষিত বন ধ্বংস করার কোনো বিধান নেই। কেই যদি সংরক্ষিত বনের গাছ কাটে বা গুড়িয়ে দেয় সেটা আইন বহিভূত। নদ-নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদ-নদী ও প্রবাহমান খালের পাড়ের তীর ভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে খেত তৈরি করতে পারেনা। এটাও আইনগতভাবে বৈধ নয়। নবীনগরের বগাহানী সেতুটি ভয়াবহ অবস্থা যে কোনো মূহুর্তে ঘটতেপারে বড় দুর্ঘটনা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর উপকূলীলের দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে সংরক্ষিত বনভ’তির গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। বন বিভাগের কাউখালী বীটের আওতাধীন চর সাইনবোর্ডের সংরক্ষিত এলাকার গাছ কেটে তরমুজ চাষ করার সাবার করে ফেলছে কতিপয় প্রভারশালী। দখলের উদ্দেশ্যে তারা এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মান করছে। বন রক্ষায় উপকূলীয় বন বিভাগের মাটি কাটা বন্ধের চেস্টা করা হলেও রাতের আঁধারে দখল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বন উজার ও ভূমি দখল প্রক্রিয়ার সাথে ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর হাত রয়েছে। বন বিভাগ রাঙ্গাবালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ৪১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় এও উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে এ চরের সঙ্গে যে নতুন চর জাগবে, তাও বন বিভাগের আওতায় থাকবে। ঘোষণার পর থেকেই বন বিভাগ চরটিতে ম্যানগ্রোভসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনায়ন শুরু করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চর সাইনবোর্ডের সংরক্ষিত বনে ২০ হেক্টরে ঝাউ, ১০ হেক্টরে করমজা এবং ৩০ হেক্টরে কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ সৃজন করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর এই সংরক্ষিত বনে প্রথমে দুটি বেকু মেশিন নামিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে তরমুজ খেত তৈরির কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় মানিক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই দখল অভিযান পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য অন্তত দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গিয়ে গাছ কাটা ও মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন। বন বিভাগের কাউখালী বীটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল আহমেদ খান বলেন, এটি আমাদের সংরক্ষিত বন। দখলের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দুইটি বেকুু দিয়ে গাছ কেটে বনের ভেতর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয় মানিক মোল্লা ও তাদের লোকজন।
তারা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবি করেন। আমরা কাজ বন্ধ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সেই রাতেই আরও একটি বেকু এনে তিনটি মেশিন দিয়ে রাতভর মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হেক্টর বনভূমির দুই শতাধিক গাছ ধ্বংস হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সংরক্ষিত বনের কয়েক একর জায়গা ঘিরে বড় মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তিনটি বেকুু মেশিন দিয়ে বনের মাটি তুলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ। বনের ভেতরে বড় বড় গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক গাছ উপড়ে ফেলে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সব কাজ রাতের অন্ধকারে করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক মোল্লা বলেন, তারা উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েই চরে তরমুজ খেত করছেন। তবে সেখানকার কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন। উপকূলীয় বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই বনের গেজেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলায় মামলা করা হয়নি।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব দাস পুরকায়স্থ বলেন, আসলে বিষয়টি আমি জানতাম না। বন বিভাগ তাদের গেজেটসহ সব কাগজ দিয়ে গেছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদ-নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, নদ-নদী ও প্রবাহমান খালের পাড়ের তীর ভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ
কেউ করতে পারেনা। এটা আইনগতভাবে বৈধ নয়। এভাবে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করা অবৈধ রলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, সংরক্ষিত বন ধ্বংস করার কোনো বিধান নেই। কেই যদি সংরক্ষিত বনের গাছ কাটে বা গুড়িয়ে দেয় সেটা আইন বহিভূত। নদ-নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদ-নদী ও প্রবাহমান খালের পাড়ের তীর ভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে খেত তৈরি করতে পারেনা। এটাও আইনগতভাবে বৈধ নয়। নবীনগরের বগাহানী সেতুটি ভয়াবহ অবস্থা যে কোনো মূহুর্তে ঘটতেপারে বড় দুর্ঘটনা।