দশমিনা (পটুয়াখালী) : গ্রামাঞ্চলে শীতের মুখরোচক রস সংগ্রহে খেজুর গাছে ঝুলানো মাটির হাড়ি -সংবাদ
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চল থেকে শীত মৌসুমের মুখরোচক খেজুরের রসসহ খেজুর গাছ কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হতে চলছে। শীতকালে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার এবং বাড়তি আয়ের অন্যতম উপাদান হিসাবে খেজুরের রস ছিল। শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে গাছিরা এক গাছ থেকে অন্য গাছের রস সংগ্রহ করতো। সারি সারি রসের হাড়ি দেখে সাধারন মানুষ আনন্দে আত্বহারা হয়ে যেত। কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর আগের মতো চোখে পড়ছে না।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মত খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। গ্রামের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ এখন আর নেই। আবাদি কিংবা অনাবাদি জমি ও বসতঘরের আশেপাশে খেজুর গাছ থাকলেও মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কেটে ফেলেছে। অনেকে গাছ কেটে জ্বালানি হিসাবে বা টাকার জন্য অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে কালের ক্রমে ধীরে ধীরে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে এই গাছটি কেউ রোপন করছে না। এই গাছ রাস্তা, বসতঘর, আবাদি কিংবা অনাবাদি জমির আশেপাশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে থাকে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে গ্রামাঞ্চলে সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। গ্রামের গাছিরা কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের ভোরে খেজুরের রস সংগ্রহে নেমে পড়তো। এখন আর এই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতি বছর শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেজুর গাছ কাটতে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো। গাছ কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মত কেউ গাছ কাটছে না। ফলে গাছিদের রস সংগ্রহে খুব কম দেখা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় পড়ে খেজুর রসের মন মাতানো সুমিষ্ট ঘ্রাণ আর দেখা মিলছে না।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহাবুল চৌকিদার বলেন,শীত আসলেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য নেমে পড়তাম। খেজুর গাছ কাটার পর পরই গাছগুলোতে রসের হাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে যেত। এই রস আহরন করে গ্রামে গ্রামে খেজুরের মিঠা, পিঠা, পায়েসসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হতো। পর্যাপ্ত পরিমাণে রস না পাওয়ায় এখন আর আগের মত সেই ধরনের খাবার তৈরি করা যায় না। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে অনেক গাছি পরিবার এখনও খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মত রস পাওয়া যায় না। গাছিরা জানায়, খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় অল্প সংখ্যক গাছ কাটা হয়। এতে এক হাড়ি রস আহরন করা হলে তার দাম প্রায় ৮শত টাকার কম নয়। এত দাম দিয়ে কেউ রস কিনতে চায় না। তবে শখের বশে কেউ কেউ ক্রয় করে নিয়ে যায়।
এদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে শীতকালিন পিঠা উৎসবে খেজুরের রসের কোন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় রসের পরিমান কমে গেছে।
ফলে শীত মৌসুমের মুখরোচক খেজুরের রসসহ খেজুর গাছ কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হতে চলছে। নতুন করে কেউ খেজুর গাছ রোপন করছে না। ঐতিহ্য ধরে রাখা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং মুখরোচক রস পেতে খেজুর গাছ রোপন করা একান্ত প্রয়োজন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
দশমিনা (পটুয়াখালী) : গ্রামাঞ্চলে শীতের মুখরোচক রস সংগ্রহে খেজুর গাছে ঝুলানো মাটির হাড়ি -সংবাদ
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চল থেকে শীত মৌসুমের মুখরোচক খেজুরের রসসহ খেজুর গাছ কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হতে চলছে। শীতকালে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার এবং বাড়তি আয়ের অন্যতম উপাদান হিসাবে খেজুরের রস ছিল। শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে গাছিরা এক গাছ থেকে অন্য গাছের রস সংগ্রহ করতো। সারি সারি রসের হাড়ি দেখে সাধারন মানুষ আনন্দে আত্বহারা হয়ে যেত। কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর আগের মতো চোখে পড়ছে না।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মত খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। গ্রামের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ এখন আর নেই। আবাদি কিংবা অনাবাদি জমি ও বসতঘরের আশেপাশে খেজুর গাছ থাকলেও মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কেটে ফেলেছে। অনেকে গাছ কেটে জ্বালানি হিসাবে বা টাকার জন্য অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে কালের ক্রমে ধীরে ধীরে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে এই গাছটি কেউ রোপন করছে না। এই গাছ রাস্তা, বসতঘর, আবাদি কিংবা অনাবাদি জমির আশেপাশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে থাকে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে গ্রামাঞ্চলে সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। গ্রামের গাছিরা কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের ভোরে খেজুরের রস সংগ্রহে নেমে পড়তো। এখন আর এই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতি বছর শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেজুর গাছ কাটতে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো। গাছ কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মত কেউ গাছ কাটছে না। ফলে গাছিদের রস সংগ্রহে খুব কম দেখা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় পড়ে খেজুর রসের মন মাতানো সুমিষ্ট ঘ্রাণ আর দেখা মিলছে না।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহাবুল চৌকিদার বলেন,শীত আসলেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য নেমে পড়তাম। খেজুর গাছ কাটার পর পরই গাছগুলোতে রসের হাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে যেত। এই রস আহরন করে গ্রামে গ্রামে খেজুরের মিঠা, পিঠা, পায়েসসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হতো। পর্যাপ্ত পরিমাণে রস না পাওয়ায় এখন আর আগের মত সেই ধরনের খাবার তৈরি করা যায় না। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে অনেক গাছি পরিবার এখনও খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মত রস পাওয়া যায় না। গাছিরা জানায়, খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় অল্প সংখ্যক গাছ কাটা হয়। এতে এক হাড়ি রস আহরন করা হলে তার দাম প্রায় ৮শত টাকার কম নয়। এত দাম দিয়ে কেউ রস কিনতে চায় না। তবে শখের বশে কেউ কেউ ক্রয় করে নিয়ে যায়।
এদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে শীতকালিন পিঠা উৎসবে খেজুরের রসের কোন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় রসের পরিমান কমে গেছে।
ফলে শীত মৌসুমের মুখরোচক খেজুরের রসসহ খেজুর গাছ কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হতে চলছে। নতুন করে কেউ খেজুর গাছ রোপন করছে না। ঐতিহ্য ধরে রাখা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং মুখরোচক রস পেতে খেজুর গাছ রোপন করা একান্ত প্রয়োজন।