মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য হাকিম আলী দেওয়ান। গত বছর আলু আবাদ মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছিলেন। আলুর বিক্রয় মূল্যে বড় ধরনের দর পতনের কারণে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
লোকসানের ঘাটতি পোষাতে চলতি আবাদ মৌসুমেও হাকিম আলী দেওয়ান ৪৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানালেন, আলু আবাদ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ।
বাউশিয়া নয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান গত মৌসুমে আলু আবাদ করে দর পতনের কারণে বিশাল অংকের টাকা লোকসানের ঝুকিতে পড়েছিলেন।
হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান, দমে না গিয়ে চলতি আলু আবাদ মৌসুমে ১শ চল্লিশ বিঘা পরিমান জমিতে আলু রোপণ করছেন। হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান আজ বুধবার(২৬ নভেম্বর)বলেন, গত সপ্তাহ হতে রোপণ শুরু হয়েছে আগামী আরো দশ/পনের দিন আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করবেন তিনি। হাসান জাহাঙ্গীর ও হাকিম আলী দেওয়ানের মত আনুমানিক ৪শ আলুচাষী পরিবার গত মৌসুমে লোকসান গুনেও প্রায় সমানতালে গতবারের মত আলুচাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাদের আশা, যদি এ বছর নতুন আলুর ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যায়; তাহলে উসুল হবে অতীতের লোকসান। বর্তমানে পুরানো খাবার আলু প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকায় মিলছে বাজারে। বীজ আলুর দামও প্রায় সমান।
লোকসানের মুখে থাকা বড়কান্দা গ্রামের কৃষক শহিদুল্লাহ নিজের ৬ বিঘা জমিতে আলু রোপণের জন্য মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারে রক্ষিত বীজ আলু উত্তোলন করছেন, গতকাল মঙ্গলবার হিমাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বীজ আলু উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কৃষকেরা যানবাহন নিয়ে অপেক্ষা করছেন সামনের সড়কটিতে।
গত মৌসুমে দরপতনের কারণে গজারিয়ার আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় বিপুল পরিমান আলু রয়ে গেছে হিমাগারে। দুটি হিমাগারের শেড ও অভ্যন্তরীন চেম্বারে স্তুপাকারে ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আলু। হিমাগার দুটির শেডে পঁচে যাওয়া আলু আলাদা করতে দেখা গেছে একদল নারী ও শিশু শ্রমিকদের, আলাদা করা পঁচা আলু স্তুুপাকারে পড়ে রয়েছে মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারের সামনের সড়কের ঢালে। রাস্তার ঢালে রাখা পঁচে যাওয়া আলুর দুর্গন্ধে পথচারীরা নাক চেপে ধরে পাড় হচ্ছেন চলাচলের পথ।
আলু চাষী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের বেধে দেয়া প্রতি কেজি ২২ টাকা দামে কেউ আলু কিনছে না, বাধ্য হয়ে ১২ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গত আলু রোপণ মৌসুমে গজারিয়া উপজেলায় দুইসহস্রাধিক হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় গত বছর উল্লিখিত পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে হেক্টর প্রতি জমিতে আলুর ফলনও ছিল আশাতীত ভালো।
সাধারণত, মাঘ ফাল্গুন মাসে কৃষক জমি থেকে আলু সংগ্রহ করে কিছু আলু বিক্রি করে অধিক পরিমান আলু পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করে থাকেন। চলতি বছর আলু বিক্রয় মৌসুমে দরপতন ও ক্রেতা কম হওয়ায় বিপুল পরিমান আলু হিমাগারে আটকে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লষ্টি সুত্র জানায়,গজারিয়া উপজেলার মেঘনা মাল্টিপারপাসে ৭৫ হাজার বস্তা ও আলহাজ্ব লাল মিয়া সপ্তমুখী খাদ্য প্রকল্প নামক হিমাগারে ৬৫ হাজার বস্তা(প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) রয়ে গেছে।
আলহাজ্ব লাল মিয়া সপ্তমূখী খাদ্য প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মামুনুর রশীদ ও মেঘনা মাল্টি পারপাস হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন মিলন সংবাদকে জানান, দুটি হিমাগারেই ধারন ক্ষমতার অর্ধক পরিমান আলু এখনও রয়ে গেছে।
গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল আরাফাত বিন সিদ্দিক জানান, গত মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৪ হেক্টর পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর আলু রোপন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯শ ৯৮ হেক্টর জমি, তবে রোপণ মৌসুম সমাপ্ত হলে সঠিক পরিমান জানা যাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য হাকিম আলী দেওয়ান। গত বছর আলু আবাদ মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছিলেন। আলুর বিক্রয় মূল্যে বড় ধরনের দর পতনের কারণে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
লোকসানের ঘাটতি পোষাতে চলতি আবাদ মৌসুমেও হাকিম আলী দেওয়ান ৪৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানালেন, আলু আবাদ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ।
বাউশিয়া নয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান গত মৌসুমে আলু আবাদ করে দর পতনের কারণে বিশাল অংকের টাকা লোকসানের ঝুকিতে পড়েছিলেন।
হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান, দমে না গিয়ে চলতি আলু আবাদ মৌসুমে ১শ চল্লিশ বিঘা পরিমান জমিতে আলু রোপণ করছেন। হাসান জাহাঙ্গীর প্রধান আজ বুধবার(২৬ নভেম্বর)বলেন, গত সপ্তাহ হতে রোপণ শুরু হয়েছে আগামী আরো দশ/পনের দিন আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করবেন তিনি। হাসান জাহাঙ্গীর ও হাকিম আলী দেওয়ানের মত আনুমানিক ৪শ আলুচাষী পরিবার গত মৌসুমে লোকসান গুনেও প্রায় সমানতালে গতবারের মত আলুচাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাদের আশা, যদি এ বছর নতুন আলুর ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যায়; তাহলে উসুল হবে অতীতের লোকসান। বর্তমানে পুরানো খাবার আলু প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকায় মিলছে বাজারে। বীজ আলুর দামও প্রায় সমান।
লোকসানের মুখে থাকা বড়কান্দা গ্রামের কৃষক শহিদুল্লাহ নিজের ৬ বিঘা জমিতে আলু রোপণের জন্য মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারে রক্ষিত বীজ আলু উত্তোলন করছেন, গতকাল মঙ্গলবার হিমাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বীজ আলু উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কৃষকেরা যানবাহন নিয়ে অপেক্ষা করছেন সামনের সড়কটিতে।
গত মৌসুমে দরপতনের কারণে গজারিয়ার আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় বিপুল পরিমান আলু রয়ে গেছে হিমাগারে। দুটি হিমাগারের শেড ও অভ্যন্তরীন চেম্বারে স্তুপাকারে ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আলু। হিমাগার দুটির শেডে পঁচে যাওয়া আলু আলাদা করতে দেখা গেছে একদল নারী ও শিশু শ্রমিকদের, আলাদা করা পঁচা আলু স্তুুপাকারে পড়ে রয়েছে মেঘনা মাল্টিপারপাস হিমাগারের সামনের সড়কের ঢালে। রাস্তার ঢালে রাখা পঁচে যাওয়া আলুর দুর্গন্ধে পথচারীরা নাক চেপে ধরে পাড় হচ্ছেন চলাচলের পথ।
আলু চাষী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের বেধে দেয়া প্রতি কেজি ২২ টাকা দামে কেউ আলু কিনছে না, বাধ্য হয়ে ১২ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গত আলু রোপণ মৌসুমে গজারিয়া উপজেলায় দুইসহস্রাধিক হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় গত বছর উল্লিখিত পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে হেক্টর প্রতি জমিতে আলুর ফলনও ছিল আশাতীত ভালো।
সাধারণত, মাঘ ফাল্গুন মাসে কৃষক জমি থেকে আলু সংগ্রহ করে কিছু আলু বিক্রি করে অধিক পরিমান আলু পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করে থাকেন। চলতি বছর আলু বিক্রয় মৌসুমে দরপতন ও ক্রেতা কম হওয়ায় বিপুল পরিমান আলু হিমাগারে আটকে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লষ্টি সুত্র জানায়,গজারিয়া উপজেলার মেঘনা মাল্টিপারপাসে ৭৫ হাজার বস্তা ও আলহাজ্ব লাল মিয়া সপ্তমুখী খাদ্য প্রকল্প নামক হিমাগারে ৬৫ হাজার বস্তা(প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) রয়ে গেছে।
আলহাজ্ব লাল মিয়া সপ্তমূখী খাদ্য প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মামুনুর রশীদ ও মেঘনা মাল্টি পারপাস হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন মিলন সংবাদকে জানান, দুটি হিমাগারেই ধারন ক্ষমতার অর্ধক পরিমান আলু এখনও রয়ে গেছে।
গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল আরাফাত বিন সিদ্দিক জানান, গত মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৪ হেক্টর পরিমান জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর আলু রোপন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯শ ৯৮ হেক্টর জমি, তবে রোপণ মৌসুম সমাপ্ত হলে সঠিক পরিমান জানা যাবে।