সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বিনায়েকপুর দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, ঘুষ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সুপার আব্দুস সামাদসহ চারজন শিক্ষক-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগের আড়ালে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বরখাস্ত হওয়া সহকারী শিক্ষক মোমেনা খাতুনের বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় পরিচালনা কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এনটিআরসির সুপারিশ পেয়ে সম্প্রতি সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করতে আসেন মোমেনা খাতুন। অভিযোগ আছে, সুপার আব্দুস সামাদ তার নিকট দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করে দেন। ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক মোমেনা খাতুন ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, সুপার আব্দুস সামাদ দীর্ঘদিন ধরে আত্মীয়-স্বজনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রভাবিতভাবে পরিচালনা করছিলেন। বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মচারী সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সালাম, শিহাব এবং নৈশপ্রহরী আক্তার হোসেন তিনজনই সুপারের ঘনিষ্ঠজন এবং অভিযোগ আছে তারা বিভিন্ন অনিয়মে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুপারের কক্ষের আলমারিতে তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে যাওয়ায় পুরো পরীক্ষা শিডিউল স্থগিত হয়ে যায়। কর্তব্যরত শিক্ষকরা দাবি করেছেন, সুপার তালাটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাদরাসা ত্যাগ করেন, ফলে প্রশ্নপত্র বের করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি জানাতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে ২৪ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাদরাসায় গিয়ে আলমারির তালা ভেঙে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন এবং পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ঘটনাটি পরিচালনা কমিটির নজরে এলে সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও শক্তিশালী হয়।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান এবং সদস্য সচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিশ্বাস। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ইউএনও নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল মনে করেন, বিনায়েকপুর দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম সামনে আসায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তারা আশা করছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শুধু দায়ীদের শাস্তিই নয়, বরং দাখিল মাদরাসার কার্যক্রমে একটি নতুন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পথ খুলে যাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বিনায়েকপুর দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, ঘুষ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সুপার আব্দুস সামাদসহ চারজন শিক্ষক-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগের আড়ালে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বরখাস্ত হওয়া সহকারী শিক্ষক মোমেনা খাতুনের বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় পরিচালনা কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এনটিআরসির সুপারিশ পেয়ে সম্প্রতি সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করতে আসেন মোমেনা খাতুন। অভিযোগ আছে, সুপার আব্দুস সামাদ তার নিকট দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করে দেন। ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক মোমেনা খাতুন ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, সুপার আব্দুস সামাদ দীর্ঘদিন ধরে আত্মীয়-স্বজনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রভাবিতভাবে পরিচালনা করছিলেন। বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মচারী সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সালাম, শিহাব এবং নৈশপ্রহরী আক্তার হোসেন তিনজনই সুপারের ঘনিষ্ঠজন এবং অভিযোগ আছে তারা বিভিন্ন অনিয়মে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুপারের কক্ষের আলমারিতে তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে যাওয়ায় পুরো পরীক্ষা শিডিউল স্থগিত হয়ে যায়। কর্তব্যরত শিক্ষকরা দাবি করেছেন, সুপার তালাটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মাদরাসা ত্যাগ করেন, ফলে প্রশ্নপত্র বের করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি জানাতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে ২৪ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাদরাসায় গিয়ে আলমারির তালা ভেঙে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন এবং পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ঘটনাটি পরিচালনা কমিটির নজরে এলে সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও শক্তিশালী হয়।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান এবং সদস্য সচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিশ্বাস। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ইউএনও নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল মনে করেন, বিনায়েকপুর দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম সামনে আসায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তারা আশা করছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শুধু দায়ীদের শাস্তিই নয়, বরং দাখিল মাদরাসার কার্যক্রমে একটি নতুন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পথ খুলে যাবে।