alt

সাতক্ষীরার উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে নতুন আশা বিনা ধান-১০

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের চাষযোগ্য জমি দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে। সামনে বোরো মৌসুম, কিন্তু সেচ সংকট, খরা ও বেড়ে যাওয়া লবণাক্ততা কৃষকদের মনে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। তবে এই সংকটের মধ্যেই আশার আলো দেখিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্ভাবিত কয়েকটি লবণ সহনশীল ধানের জাত। বিশেষ করে বিনা ধান-১০, বিনা ধান-২৫, বিনা ধান-১৭, বিনা ধান-২৩ ও বিনা ধান-১৯ এখন কৃষকদের কাছে নতুন সম্ভাবনার সমাধান হয়ে উঠেছে।

খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটার উপকূলীয় জমিতে এসব জাতের ধান ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষকদের মতে, অনিশ্চিত আবহাওয়া, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি সত্ত্বেও এসব জাত জমিতে টিকে থাকে ও পর্যাপ্ত ফলন নিশ্চিত করে। কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এসব জাত আগামী দিনে উপকূলীয় কৃষির মেরুদ- হয়ে উঠবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সেচ সংকট, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাতক্ষীরার উপকূলজুড়ে কৃষকদের চাষাবাদ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সঠিক জাত নির্বাচন, জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে জমির পাশে ছোট ছোট মিনি পুকুর খননের মাধ্যমে সেচের পানি সংরক্ষণ করে কৃষকরা অনেকটা উপকার পেতে পারেন বলে মত দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর বলেন, বোরো ধান চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই স্বাদু পানির সংকট, তার ওপর লবণাক্ততা বেশি। তাই আগাম ও লবণসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করলে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন। বোরো ধান চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই স্বাদু পানির সংকট, তার ওপর লবণাক্ততা বেশি। তাই আগাম ও লবণসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করলে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন।

লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে যে কয়েকটি ধান ভালো ফলন দেয়, এর মধ্যে বিনা ধান-১০ অন্যতম। বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর জানান, বিনা ধান-১০ একটি উচ্চ ফলনশীল, আগাম বোরো জাত, যা আলোক-অসংবেদনশীল এবং উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন। এই ধান সাধারণ জাতের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে কাটা যায়, ফলে লবণাক্ততার মাত্রা তীব্র হওয়ার আগেই কৃষক ধান সংগ্রহ করতে পারেন। এর জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন। বিনা ধান-১০ চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার ও কুশি থেকে পাকার সময় পর্যন্ত ১০-১২ ডিএস/মিটার পরিমাণ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটার লবণাক্ত এলাকায় এটি অত্যন্ত উপযুক্ত। লবণাক্ত জমিতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫.৫ টন এবং স্বাভাবিক জমিতে ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, কলারোয়া, তালা ও সাতক্ষীরা সদরের স্বাভাবিক জমিতে বিনাধান-২৫ খুবই ভালো ফলন দেয়। এটি আলোক-অসংবেদনশীল, ১৪৩-১৪৫ দিনের জীবনকাল এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৭.৬ টন ফলন দেয়। বিনাধান-২৫ একটি সুগন্ধি ও উচ্চমানের কোয়ালিটি চাল, যা স্বল্প সময়ে (১২৫-১৩০ দিন) প্রস্তুত হয়। এটি রোগবালাই সহনশীল এবং লবণসহনীয় হওয়ায় বাড়তি সারের প্রয়োজন দেখা যায় না।

বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প সময়ের মধ্যেই চাষযোগ্য এবং ২০-২৫ দিনের চারারোপণ উপযোগী। এই জাতের ফসলে সারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম লাগে। প্রতি গাছে বেশি শীষ ধরে এবং ফলনও বেশি মেলে।

বিনাধান-২৩ ও বিনাধান-১৯ জলাবদ্ধতা ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিনাধান-২৩ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে, আর বিনাধান-১৯ খরা সহনশীল ও স্বল্পসময়ের মধ্যে ভালো ফলন দেয়। ধানের পাশাপাশি বিনাসরিষা-৯ উপকূলীয় কৃষকের কাছে বর্তমানে একটি সফল বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই জাতটি ৪৫ থেকে ৬৫ দিনেই প্রস্তুত হয় এবং সামান্য লবণাক্ত জমিতেও চাষযোগ্য। ফলনের পাশাপাশি এর তেলের মানও উচ্চমানসম্পন্ন। একইভাবে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর উদ্ভাবিত ব্রি-৬৭, ব্রি-৯৭ ও ব্রি-৯৯ ধানও লবণাক্ত এলাকায় সফলভাবে চাষযোগ্য বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাজ্জাদুর রহমান। এ অঞ্চলের চাষ পুরোপুরি সেচনির্ভর। ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেচের পানি না থাকলে বিশাল অঙ্কের জমি পতিত পড়ে থাকে। তাই পুকুর ও খালগুলোকে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা জরুরি। বিনাধান-১০ স্থানীয় কৃষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই জাতটি বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য এবং ১২ থেকে ১৪ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণাক্ত পানি সহ্য করতে সক্ষম। কুঁড়ি অবস্থা থেকে পরিপক্ব পর্যায় পর্যন্ত টিকে থাকে এবং প্রতি হেক্টরে উচ্চ ফলন দেয়।

বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প সময়ের মধ্যেই চাষযোগ্য এবং ২০-২৫ দিনের চারারোপণ উপযোগী। এই জাতের ফসলে সারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম লাগে। প্রতি গাছে বেশি শীষ ধরে এবং ফলনও বেশি মেলে। বিনাধান-২৩ ও বিনাধান-১৯ জলাবদ্ধতা ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিনাধান-২৩ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে, আর বিনাধান-১৯ খরা সহনশীল ও স্বল্পসময়ের মধ্যে ভালো ফলন দেয়। ধানের পাশাপাশি বিনাসরিষা-৯ উপকূলীয় কৃষকের কাছে বর্তমানে একটি সফল বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই জাতটি ৪৫ থেকে ৬৫ দিনেই প্রস্তুত হয় এবং সামান্য লবণাক্ত জমিতেও চাষযোগ্য। ফলনের পাশাপাশি এর তেলের মানও উচ্চমানসম্পন্ন। ব্রি ধান৬৭ লবণাক্ত এলাকায় বোরো চাষের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং অন্যান্য ধাপে ৮ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে, যা বিদ্যমান ব্রি ধান-২৮ জাতের পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন এবং ফলন ৩.৮ থেকে ৭.৪ টন পর্যন্ত। ব্রি ধান৯৭ জাতটির চাল মাঝারি মোটা, জীবনকাল ১৪৮-১৫৫ দিন এবং লবণ সহনক্ষমতা প্রতি ধাপে ৮-১০ ডিএস/মিটার। এই জাত ব্রি ধান৬৭ থেকেও বেশি লবণ সহনশীল, এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৩.৯৩ থেকে ৫.৯৫ টন ফলন দেয়।

এদিকে বিএডিসি সাতক্ষীরা অঞ্চলে এ বছর বোরো মৌসুমের জন্য ব্রিধান ৬৭, ৮৮, ১০১, ১০২ ও হাইব্রিড এসএল-৮এইচ জাতের বীজ সরবরাহ করছে। সাতক্ষীরার উপকূলে মাটি ও পানিতে মৌসুম অনুযায়ী লবণাক্ততার ওঠানামা দেখা যায়। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে মে মাসে মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা ১৫ থেকে ২৫ দশমিক ৪ ডেসিসিমেন্স/মিটার পর্যন্ত থাকে। বর্ষার পর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ২ থেকে ৫ দশমিক ৬ ডিএস/মিটার।

বর্তমানে আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের উপকূলীয় কৃষি জমিতে এসব ধান চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছি। কৃষকেরা এখন আর আগের মতো ক্ষতির ভয়ে ধান চাষ থেকে বিরত থাকছেন না। বরং নিজেরাই এসব জাতের বীজ ক্রয় করে চাষ করছেন। আগামী মৌসুমে এই এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সহনশীল জাতের ধানের চাষ অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি। ব্রি সাতক্ষীরা কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, জেলার কালিগঞ্জ অঞ্চলের কৃষি জমিতে লবণাক্ততার সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৫ ডেসিসিমেন্স/মিটার। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম আসাদ জানান, তথ্য অনুযায়ী নদীর পানিতে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লবণাক্ততা ছিল প্রায় ৪০ ডেসিসিমেন্স/মিটার। এরপর জুলাই-সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৯.২২ ডেসিসিমেন্স/মিটারে।

শ্যামনগরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান,ভূগর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় লবণাক্ত হওয়ায় শ্যামনগর ও কালিগঞ্জসহ উপকূলজুড়ে কৃষকেরা চাষাবাদের জন্য পুকুর ও খালের সংরক্ষিত পানির ওপর নির্ভরশীল। নিজস্ব পুকুর না থাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি বোরো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকে বলে

একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে ২০২৪ সালের এক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়, প্রতিটি গ্রামে বড় পুকুর ও জলাধার খনন ও সংরক্ষণ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বন্ধ, খালগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়ার।

সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিএডিসি খাল খনন ও মিষ্টি পানি পরিবহনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান সংস্থার সাতক্ষীরা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইবনে সিনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরায় এবার বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে, যা গত আমন মৌসুমের তুলনায় ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর কম। বিশেষ করে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে, এ দুই উপজেলায় আমনের তুলনায় এবার বোরোতে ২৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমি কম আবাদ হবে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এ অঞ্চলের চাষ পুরোপুরি সেচনির্ভর। ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেচের পানি না থাকলে বিশাল অঙ্কের জমি পতিত পড়ে থাকে। তাই পুকুর ও খালগুলোকে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা জরুরি।

কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন জানান, একসময় এখানে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান হতো। বিএডিসির সেচ ব্যবস্থা ও খাল খননের উদ্যোগের ফলে তা এখন প্রায় সাত হাজার হেক্টরে পৌঁছেছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা আর খরার কারণে ধান চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিনার উদ্ভাবিত এসব জাত আমাদের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। বিনাধান-১০, ১৭, ২৩, ২৫ প্রতিটি জাতই জলবায়ু সহনশীল এবং স্থানীয় পরিবেশে উপযোগী। এই ধানগুলো শুধু টিকে থাকে না, বরং ভালো ফলনও দেয়। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে, লাভ বাড়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের উপকূলীয় কৃষি জমিতে এসব ধান চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছি। কৃষকেরা এখন আর আগের মতো ক্ষতির ভয়ে ধান চাষ থেকে বিরত থাকছেন না। বরং নিজেরাই এসব জাতের বীজ ক্রয় করে চাষ করছেন। আগামী মৌসুমে এই এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সহনশীল জাতের ধানের চাষ অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।’

কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, উপকূলীয় কৃষি ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে হলে আমাদের জলবায়ু-সহনশীল জাতের ধানের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে। বিনা ও ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাত এখন আর শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেই নেই, মাঠে বাস্তব ফল দিচ্ছে। আমরা মনে করি, যদি সরকারের পক্ষ থেকে আরও শক্তিশালী উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে এসব জাত উপকূলীয় কৃষির রূপান্তরে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

ছবি

হবিগঞ্জে নার্স-মিডওয়াইফদের অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

গৌরনদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৫

ছবি

রৌমারীতে ‘মিডডে মিল’ কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

উল্লাপাড়ায় ঘুষ-স্বজনপ্রীতির অভিযোগে মাদরাসার সুপারসহ ৪ জন বরখাস্ত

বটিয়াঘাটায় প্রাণী সম্পদ মেলা অনুষ্ঠিত

ছবি

বাগেরহাটে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

কুষ্টিয়ায় গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ৯টি অবৈধ ইটভাটা

ছবি

দরপতনেও ভাটা পরেনি আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

ছবি

দশমিনায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ

ছবি

শাহজাদপুরে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

বরগুনায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত

ছবি

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মিলাদ

ডিমলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহের কর্মসূচীর উদ্বোধন

ছবি

সরকারি জায়গায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ

ছবি

ভালুকায় ভারতীয় মদ বোঝাই পিকআপ জব্দ

ছবি

গৌরনদীতে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মন্দিও ভাঙার অভিযোগ

ছবি

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিল উপজেলা প্রশাসন উদ্বোধন হলো আধুনিক শিশু পার্ক

মহেশপুর সীমান্তে পৃথক অভিযানে ফেন্সিডিল উদ্ধার ও নারী আটক

ছবি

কুলাউড়ায় আমন ধান কাটার ব্যস্ততা, সোনালী ফসল ঘরে তুলতে উৎসবমুখর কৃষক

ছবি

শেরপুরে টিসিবির ২৪৮ বস্তা চাল জব্দ, ডিলার আটক

ছবি

নড়াইলে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষরা ছেলেকে হত্যা করেছে, দাবি মায়ের

ছবি

আত্রাইয়ে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ পালিত

ছবি

মোরেলগঞ্জে জাতীয় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বর্ণাঢ্য র‌্যালি

ছবি

বীগঞ্জে তদন্ত চলাকালে প্রধান শিক্ষকের উপর অর্তকিত হামলা, দুই শিক্ষক আহত

ছবি

তিন বছরেও শেষ হয়নি খাসিয়ামারা সেতুর কাজ, দুর্ভোগে মানুষ

ছবি

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত

ছবি

নেত্রকোণায় প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার মাছের বেচাকেনা

ছবি

শীতের শুরুতে আগাম আলুচাষে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ঘিওরের কৃষকদের

ছবি

অন্তর্বর্তী সময়ে অতি ডানপন্থিদের আস্ফালন যেমন বেড়েছে, সরকারের দিক থেকে আস্কারাও পেয়েছে: শিক্ষক নেটওয়ার্ক

ছবি

কক্সবাজার জেল গেইট এলাকায় পাহাড় ধ্বংস: প্রকৃতির সামনে নতুন ঝুঁকি

ছবি

কালিহাতীতে পরিত্যক্ত মেশিন ঘরে কিশোরী ধর্ষণ

দুমকিতে জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রিকরণ বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

মোহনগঞ্জে মাদকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল

ছবি

আদমদীঘিতে নিখোঁজের ৩ দিন পর বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

গজারিয়ায় বালু ভরাটে কমছে আমাদি জমি ও মাটির উর্বরতা

ছবি

শীতের আমেজে কদর বেড়েছে গরম কাপড়, লেপ, তোষকের

tab

সাতক্ষীরার উপকূলের লবণাক্ত মাটিতে নতুন আশা বিনা ধান-১০

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের চাষযোগ্য জমি দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে। সামনে বোরো মৌসুম, কিন্তু সেচ সংকট, খরা ও বেড়ে যাওয়া লবণাক্ততা কৃষকদের মনে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। তবে এই সংকটের মধ্যেই আশার আলো দেখিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্ভাবিত কয়েকটি লবণ সহনশীল ধানের জাত। বিশেষ করে বিনা ধান-১০, বিনা ধান-২৫, বিনা ধান-১৭, বিনা ধান-২৩ ও বিনা ধান-১৯ এখন কৃষকদের কাছে নতুন সম্ভাবনার সমাধান হয়ে উঠেছে।

খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটার উপকূলীয় জমিতে এসব জাতের ধান ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষকদের মতে, অনিশ্চিত আবহাওয়া, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি সত্ত্বেও এসব জাত জমিতে টিকে থাকে ও পর্যাপ্ত ফলন নিশ্চিত করে। কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এসব জাত আগামী দিনে উপকূলীয় কৃষির মেরুদ- হয়ে উঠবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সেচ সংকট, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাতক্ষীরার উপকূলজুড়ে কৃষকদের চাষাবাদ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সঠিক জাত নির্বাচন, জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে জমির পাশে ছোট ছোট মিনি পুকুর খননের মাধ্যমে সেচের পানি সংরক্ষণ করে কৃষকরা অনেকটা উপকার পেতে পারেন বলে মত দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর বলেন, বোরো ধান চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই স্বাদু পানির সংকট, তার ওপর লবণাক্ততা বেশি। তাই আগাম ও লবণসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করলে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন। বোরো ধান চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই স্বাদু পানির সংকট, তার ওপর লবণাক্ততা বেশি। তাই আগাম ও লবণসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করলে কৃষকরা ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন।

লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে যে কয়েকটি ধান ভালো ফলন দেয়, এর মধ্যে বিনা ধান-১০ অন্যতম। বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর জানান, বিনা ধান-১০ একটি উচ্চ ফলনশীল, আগাম বোরো জাত, যা আলোক-অসংবেদনশীল এবং উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন। এই ধান সাধারণ জাতের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে কাটা যায়, ফলে লবণাক্ততার মাত্রা তীব্র হওয়ার আগেই কৃষক ধান সংগ্রহ করতে পারেন। এর জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন। বিনা ধান-১০ চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার ও কুশি থেকে পাকার সময় পর্যন্ত ১০-১২ ডিএস/মিটার পরিমাণ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটার লবণাক্ত এলাকায় এটি অত্যন্ত উপযুক্ত। লবণাক্ত জমিতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫.৫ টন এবং স্বাভাবিক জমিতে ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, কলারোয়া, তালা ও সাতক্ষীরা সদরের স্বাভাবিক জমিতে বিনাধান-২৫ খুবই ভালো ফলন দেয়। এটি আলোক-অসংবেদনশীল, ১৪৩-১৪৫ দিনের জীবনকাল এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৭.৬ টন ফলন দেয়। বিনাধান-২৫ একটি সুগন্ধি ও উচ্চমানের কোয়ালিটি চাল, যা স্বল্প সময়ে (১২৫-১৩০ দিন) প্রস্তুত হয়। এটি রোগবালাই সহনশীল এবং লবণসহনীয় হওয়ায় বাড়তি সারের প্রয়োজন দেখা যায় না।

বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প সময়ের মধ্যেই চাষযোগ্য এবং ২০-২৫ দিনের চারারোপণ উপযোগী। এই জাতের ফসলে সারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম লাগে। প্রতি গাছে বেশি শীষ ধরে এবং ফলনও বেশি মেলে।

বিনাধান-২৩ ও বিনাধান-১৯ জলাবদ্ধতা ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিনাধান-২৩ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে, আর বিনাধান-১৯ খরা সহনশীল ও স্বল্পসময়ের মধ্যে ভালো ফলন দেয়। ধানের পাশাপাশি বিনাসরিষা-৯ উপকূলীয় কৃষকের কাছে বর্তমানে একটি সফল বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই জাতটি ৪৫ থেকে ৬৫ দিনেই প্রস্তুত হয় এবং সামান্য লবণাক্ত জমিতেও চাষযোগ্য। ফলনের পাশাপাশি এর তেলের মানও উচ্চমানসম্পন্ন। একইভাবে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর উদ্ভাবিত ব্রি-৬৭, ব্রি-৯৭ ও ব্রি-৯৯ ধানও লবণাক্ত এলাকায় সফলভাবে চাষযোগ্য বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাজ্জাদুর রহমান। এ অঞ্চলের চাষ পুরোপুরি সেচনির্ভর। ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেচের পানি না থাকলে বিশাল অঙ্কের জমি পতিত পড়ে থাকে। তাই পুকুর ও খালগুলোকে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা জরুরি। বিনাধান-১০ স্থানীয় কৃষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই জাতটি বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য এবং ১২ থেকে ১৪ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণাক্ত পানি সহ্য করতে সক্ষম। কুঁড়ি অবস্থা থেকে পরিপক্ব পর্যায় পর্যন্ত টিকে থাকে এবং প্রতি হেক্টরে উচ্চ ফলন দেয়।

বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প সময়ের মধ্যেই চাষযোগ্য এবং ২০-২৫ দিনের চারারোপণ উপযোগী। এই জাতের ফসলে সারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম লাগে। প্রতি গাছে বেশি শীষ ধরে এবং ফলনও বেশি মেলে। বিনাধান-২৩ ও বিনাধান-১৯ জলাবদ্ধতা ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিনাধান-২৩ দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে, আর বিনাধান-১৯ খরা সহনশীল ও স্বল্পসময়ের মধ্যে ভালো ফলন দেয়। ধানের পাশাপাশি বিনাসরিষা-৯ উপকূলীয় কৃষকের কাছে বর্তমানে একটি সফল বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই জাতটি ৪৫ থেকে ৬৫ দিনেই প্রস্তুত হয় এবং সামান্য লবণাক্ত জমিতেও চাষযোগ্য। ফলনের পাশাপাশি এর তেলের মানও উচ্চমানসম্পন্ন। ব্রি ধান৬৭ লবণাক্ত এলাকায় বোরো চাষের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং অন্যান্য ধাপে ৮ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে, যা বিদ্যমান ব্রি ধান-২৮ জাতের পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন এবং ফলন ৩.৮ থেকে ৭.৪ টন পর্যন্ত। ব্রি ধান৯৭ জাতটির চাল মাঝারি মোটা, জীবনকাল ১৪৮-১৫৫ দিন এবং লবণ সহনক্ষমতা প্রতি ধাপে ৮-১০ ডিএস/মিটার। এই জাত ব্রি ধান৬৭ থেকেও বেশি লবণ সহনশীল, এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৩.৯৩ থেকে ৫.৯৫ টন ফলন দেয়।

এদিকে বিএডিসি সাতক্ষীরা অঞ্চলে এ বছর বোরো মৌসুমের জন্য ব্রিধান ৬৭, ৮৮, ১০১, ১০২ ও হাইব্রিড এসএল-৮এইচ জাতের বীজ সরবরাহ করছে। সাতক্ষীরার উপকূলে মাটি ও পানিতে মৌসুম অনুযায়ী লবণাক্ততার ওঠানামা দেখা যায়। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে মে মাসে মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা ১৫ থেকে ২৫ দশমিক ৪ ডেসিসিমেন্স/মিটার পর্যন্ত থাকে। বর্ষার পর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ২ থেকে ৫ দশমিক ৬ ডিএস/মিটার।

বর্তমানে আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের উপকূলীয় কৃষি জমিতে এসব ধান চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছি। কৃষকেরা এখন আর আগের মতো ক্ষতির ভয়ে ধান চাষ থেকে বিরত থাকছেন না। বরং নিজেরাই এসব জাতের বীজ ক্রয় করে চাষ করছেন। আগামী মৌসুমে এই এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সহনশীল জাতের ধানের চাষ অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি। ব্রি সাতক্ষীরা কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, জেলার কালিগঞ্জ অঞ্চলের কৃষি জমিতে লবণাক্ততার সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৫ ডেসিসিমেন্স/মিটার। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম আসাদ জানান, তথ্য অনুযায়ী নদীর পানিতে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লবণাক্ততা ছিল প্রায় ৪০ ডেসিসিমেন্স/মিটার। এরপর জুলাই-সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৯.২২ ডেসিসিমেন্স/মিটারে।

শ্যামনগরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান,ভূগর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় লবণাক্ত হওয়ায় শ্যামনগর ও কালিগঞ্জসহ উপকূলজুড়ে কৃষকেরা চাষাবাদের জন্য পুকুর ও খালের সংরক্ষিত পানির ওপর নির্ভরশীল। নিজস্ব পুকুর না থাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি বোরো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকে বলে

একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে ২০২৪ সালের এক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়, প্রতিটি গ্রামে বড় পুকুর ও জলাধার খনন ও সংরক্ষণ, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বন্ধ, খালগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়ার।

সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিএডিসি খাল খনন ও মিষ্টি পানি পরিবহনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান সংস্থার সাতক্ষীরা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইবনে সিনা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরায় এবার বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে, যা গত আমন মৌসুমের তুলনায় ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর কম। বিশেষ করে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে, এ দুই উপজেলায় আমনের তুলনায় এবার বোরোতে ২৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমি কম আবাদ হবে।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এ অঞ্চলের চাষ পুরোপুরি সেচনির্ভর। ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেচের পানি না থাকলে বিশাল অঙ্কের জমি পতিত পড়ে থাকে। তাই পুকুর ও খালগুলোকে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা জরুরি।

কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন জানান, একসময় এখানে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান হতো। বিএডিসির সেচ ব্যবস্থা ও খাল খননের উদ্যোগের ফলে তা এখন প্রায় সাত হাজার হেক্টরে পৌঁছেছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা আর খরার কারণে ধান চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিনার উদ্ভাবিত এসব জাত আমাদের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। বিনাধান-১০, ১৭, ২৩, ২৫ প্রতিটি জাতই জলবায়ু সহনশীল এবং স্থানীয় পরিবেশে উপযোগী। এই ধানগুলো শুধু টিকে থাকে না, বরং ভালো ফলনও দেয়। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে, লাভ বাড়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের উপকূলীয় কৃষি জমিতে এসব ধান চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছি। কৃষকেরা এখন আর আগের মতো ক্ষতির ভয়ে ধান চাষ থেকে বিরত থাকছেন না। বরং নিজেরাই এসব জাতের বীজ ক্রয় করে চাষ করছেন। আগামী মৌসুমে এই এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সহনশীল জাতের ধানের চাষ অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।’

কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, উপকূলীয় কৃষি ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে হলে আমাদের জলবায়ু-সহনশীল জাতের ধানের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে। বিনা ও ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাত এখন আর শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেই নেই, মাঠে বাস্তব ফল দিচ্ছে। আমরা মনে করি, যদি সরকারের পক্ষ থেকে আরও শক্তিশালী উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে এসব জাত উপকূলীয় কৃষির রূপান্তরে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

back to top